Ajker Patrika

জানুয়ারিতেই হতে পারে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, সেনা প্রস্তুত করছে ইন্দোনেশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৫
১৫ মাসের সামরিক অভিযানে গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ। ফাইল ছবি
১৫ মাসের সামরিক অভিযানে গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ। ফাইল ছবি

আগামী বছরের শুরুর দিকেই গাজায় জাতিসংঘ অনুমোদিত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই বাহিনীতে যোগ দিতে সেনা প্রস্তুত করতে শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আগামী মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক সেনা মোতায়েন করা হতে পারে, যারা জাতিসংঘের অনুমোদিত একটি স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠন করবে। তবে ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্র করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী হামাসের সঙ্গে লড়াই করবে না। তাঁরা বলেন, বহু দেশ এতে অবদান রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং মার্কিন কর্মকর্তারা বর্তমানে এই বাহিনীর আকার, কাঠামো, বাসস্থান, প্রশিক্ষণ এবং নিয়মাবলি নিয়ে কাজ করছেন।

কর্মকর্তারা জানান, গাজার জন্য আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর পরিকল্পনা করতে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে দোহায় অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে একটি সম্মেলনের আয়োজন করবে। তাঁরা বলেন, ২৫টির বেশি দেশ এই সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে নেতৃত্ব কাঠামো এবং গাজা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

কর্মকর্তারা জানান, একজন আমেরিকান টু-স্টার জেনারেলকে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এই বাহিনী মোতায়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রথম ধাপে দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে ১০ অক্টোবর একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি শুরু হয় এবং হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে ও ইসরায়েল আটক ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে দিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের জন্য বর্তমানে পর্দার আড়ালে অনেক নীরবে পরিকল্পনা চলছে। আমরা একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে চাই।’

এদিকে ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে—তারা গাজায় স্বাস্থ্য ও নির্মাণ-সংক্রান্ত কাজের জন্য ২০ হাজার পর্যন্ত সৈন্য মোতায়েন করতে প্রস্তুত। ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রিকো সিরাইত বলেন, ‘এটি এখনো পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে।’

‘আমরা এখন মোতায়েন করা বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তুত করছি।’

ইসরায়েল এখনো গাজার ৫৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাকি হামাস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাস করে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এই পরিকল্পনার অনুমোদন দেবে তথাকথিত বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ। এই বাহিনী বর্তমানে ইসরায়েলের দখলে থাকা এলাকায় মোতায়েন করা হবে। এরপর ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা অনুসারে আন্তর্জাতিক এই বাহিনী নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করলে ইসরায়েলি সেনারা ‘নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত মানদণ্ড, মাইলফলক এবং সময়সীমার ভিত্তিতে’ ধীরে ধীরে সরে যাবে।

১৭ নভেম্বর গৃহীত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব বোর্ড অব পিস এবং এর সঙ্গে কাজ করা দেশগুলোকে আইএসএফ প্রতিষ্ঠা করার অনুমোদন দিয়েছে। ট্রাম্প বুধবার বলেছেন, কোন বিশ্বনেতারা ‘বোর্ড অব পিসে’ থাকবেন, তা আগামী বছরের শুরুতে ঘোষণা করা হবে।

নিরাপত্তা পরিষদ আইএসএফকে নতুন প্রশিক্ষিত ও পরীক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করে নিরাপত্তা স্থিতিশীল করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে ‘গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার মাধ্যমে, যার মধ্যে সামরিক, সন্ত্রাসী এবং আক্রমণাত্মক পরিকাঠামো ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণ প্রতিরোধ, সেই সঙ্গে অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে অস্ত্রের স্থায়ীভাবে অপসারণও অন্তর্ভুক্ত।’

তবে এটি ঠিক কীভাবে কাজ করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বৃহস্পতিবার উল্লেখ করেছেন, আইএসএফকে নিরাপত্তা পরিষদ গাজাকে ‘সমস্ত প্রয়োজনীয় উপায়ে’ নিরস্ত্রীকরণের জন্য অনুমোদন দিয়েছে, যার অর্থ বলপ্রয়োগ।

তবে হামাস জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি আলোচনা করেনি এবং গোষ্ঠীটির অবস্থান হলো, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা নিরস্ত্র হবে না।

বিপরীতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপটি নিরস্ত্রীকরণ এবং অস্ত্র প্রত্যাহারের দিকে এগোবে।

তিনি বলেন, ‘এখন একটি প্রশ্ন উঠেছে: আমেরিকায় আমাদের বন্ধুরা এই কাজটি করার জন্য একটি বহুজাতিক টাস্ক ফোর্স প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতে চায়।’

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, আমি এটিকে স্বাগত জানাই। এখানে কি স্বেচ্ছাসেবকেরা আছেন? আসতে পারেন। আমরা জানি, এই বাহিনী কিছু নির্দিষ্ট কাজ করতে পারে...কিন্তু কিছু জিনিস তাদের ক্ষমতার বাইরে এবং সম্ভবত মূল কাজটি তাদের ক্ষমতার বাইরে; তবে আমরা তা দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...