Ajker Patrika

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে আর ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র: ইসরায়েলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি। ছবি: জেএনএস
ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি। ছবি: জেএনএস

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অনুসরণ করছে না’। এমন মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি।

ব্লুমবার্গ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাকাবিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখনো কি যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত এই প্রাক্তন আর্কানসাস গভর্নর আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কথা ভাবা হলে তা যেন ইসরায়েলের কোনো ভূখণ্ড ছাড়াই হয়। তিনি এমনকি প্রস্তাব দেন, ‘একটি মুসলিম দেশের’ কিছু অংশ নিয়ে সেই রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে।

বিবিসিকে দেওয়া পৃথক এক সাক্ষাৎকারে মাইক হাকাবি বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলোর মোট ভূমির পরিমাণ ইসরায়েলের চেয়ে ৬৪৪ গুণ বেশি। সুতরাং যদি সত্যিই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের এত আগ্রহ থাকে, তাহলে হয়তো কেউ বলবে—আমরা এর জন্য জায়গা দিতে চাই।’

এদিকে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, হাকাবির এই বক্তব্য দীর্ঘদিনের মধ্যপ্রাচ্যনীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট সরে আসাকে তুলে ধরছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে এ সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে অনেক বেশি অনীহা দেখিয়েছিলেন, যদিও এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মধ্যপ্রাচ্যনীতি। দ্বিতীয় মেয়াদে এই বিষয়ে তাঁর অবস্থান কী—তা এখনো স্পষ্ট নয়।

হাকাবির এই বক্তব্য প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে—এই মন্তব্যে তা প্রকাশ্যেই উঠে এসেছে।

গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে যা দেখা যাচ্ছে—গাজা থেকে জনগণকে উচ্ছেদের প্রতি প্রশাসনের প্রকাশ্য সমর্থন, ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ ও দখল নীতিকে বৈধতা দেওয়া—এসবের পর হাকাবির মন্তব্য মোটেও অপ্রত্যাশিত নয় বলে মনে করেন জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি আরব স্টাডিজের গবেষক ও ফিলিস্তিনি আলোচকদের সাবেক উপদেষ্টা খালেদ এলগিন্ডি।

তিনি বলেন, “এই প্রশাসন ফিলিস্তিনের শারীরিক ও রাজনৈতিক অস্তিত্ব—দুটোই মুছে দিতে বদ্ধপরিকর। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই এর ইঙ্গিত ছিল, যেখানে তারা এমন এক ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র’ সমর্থন করেছিল, যার ছিল না কোনো সার্বভৌমতা, বরং যা চিরকাল ইসরায়েলের দখলে থাকার মতোই পরিকল্পিত ছিল। এখন অন্তত তারা সেই ভানটুকুও করছে না।”

আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির ফিলিস্তিন/ইসরায়েল প্রোগ্রামের প্রধান ইউসুফ মুনায়ার মনে করেন, হাকাবির বক্তব্য আসলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতিকেই প্রকাশ্যে উচ্চারণ করেছে।

মুনায়ার বলেন, ‘মাইক হাকাবি যা বলছেন, তা আসলে বহু দশক ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমে প্রকাশ পেয়ে আসছে। এটি বিভিন্ন প্রশাসনের সময়ও অব্যাহত থেকেছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে যত প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তব নীতি কখনোই সেসব প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মেলেনি; বরং তা সবসময় সেগুলোর ভিত্তি দুর্বল করেছে।’

রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবির এ অবস্থান নতুন নয়; এটি ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে তাঁর দীর্ঘদিনের সমর্থনেরই প্রতিফলন। ২০০৮ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে তিনি বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনি বলে কিছু নেই।’

মুনায়ারের মতে, হাকাবির বিশেষত্ব হলো তিনি যা অনেক নীতিনির্ধারক মুখে বলেন না, সেটাই নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে বলেন। তিনি বলেন, ‘হাকাবিকে আলাদা করেছে এই বিষয়টাই। তিনি এতটাই নির্লজ্জ যে, ফিলিস্তিনি জনগণকে সম্পূর্ণ মুছে দেওয়ার লক্ষ্যটিকে প্রকাশ্যেই স্বীকার করতে পারেন।’

বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় চলমান যুদ্ধে যখন বহু হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন—তখন হাকাবির পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্পষ্ট বিরোধিতা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের জন্য কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

গবেষক খালেদ এলগিন্ডি বলেন, এটি ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর জন্য এক ধরনের সংকট তৈরি করবে। তারা এখনো দুই রাষ্ট্র সমাধানে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যদিও সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকেই প্রাধান্য দিয়েছে।

এদিকে হাকাবির মন্তব্য প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র একটি ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা ‘আদদামির’ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের আরও পাঁচটি দাতব্য সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এসব সংস্থা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সহায়তা দেয় বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আদদামিরের মূল কাজ হচ্ছে, দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েল বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক ফিলিস্তিনিদের জন্য আইনি সহায়তা দেওয়া।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, আদদামির দীর্ঘদিন ধরে পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি)-কে সমর্থন ও সহযোগিতা করছে। পিএফএলপিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পিএফএলপির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ ইসরায়েল ২০২২ সালে পশ্চিম তীরে ‘আদদামির’ কার্যালয়সহ আরও কয়েকটি সংগঠনে অভিযান চালায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মে ডে’ কল দিয়ে নীরব হয়ে যান আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত ফ্লাইটের পাইলট

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের শতকোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এখন বৈঠকে রাজি নন

ব্যাটারিচালিত রিকশার ৪৮ হাজার চার্জিং পয়েন্ট

নেছারাবাদে রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবী নেতাকে কুপিয়ে জখম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত