Ajker Patrika

ইসরায়েল অভিমুখে রহস্যময় ক্ষেপণাস্ত্রের ভিডিও ভাইরাল, যা জানা গেল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ১১: ০৪
ইরানের হাইপারসনিক ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
ইরানের হাইপারসনিক ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

গত বুধবার রাতের আকাশে একটি বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্রের তীব্র গতিতে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ইরান এবার কী ছুড়ল? কেউ কেউ এটিকে উল্কার সঙ্গে তুলনা করছেন, আবার কেউ জিজ্ঞাসা করছেন, ‘এটি কি হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল?’ অবশ্য দ্রুতই নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এটি ছিল ইরানের নতুন হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাত্তাহ’। এটির গতি ম্যাক ১৫। অর্থাৎ, এটি শব্দের পাঁচ গুণ গতিতে উড়তে পারে। যেখানে শব্দের গতি ঘণ্টায় ৭৬৭ মাইল।

এই উৎক্ষেপণ ছিল ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’র একাদশ ধাপ। এটি ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ইরানি ভূখণ্ডের গভীরে সামরিক স্থাপনাগুলোতে পাল্টা বিমান হামলা চালায়। এই আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের চক্র আজ শুক্রবার টানা অষ্টম দিনে প্রবেশ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে এই সংঘাত।

ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের এই ব্যবহারকে একটি ‘সন্ধিক্ষণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। জানা গেছে, এই সলিড-ফুয়েল (কঠিন জ্বালানি) ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ভেদ করে দেশটির মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। আইআরজিসি ওই সময় বলেছিল, ‘শক্তিশালী এবং অত্যন্ত কৌশলী ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আজ রাতে ভীতসন্ত্রস্ত জায়নবাদীদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বারবার কাঁপিয়ে দিয়েছে, এটি তেল আবিবের যুদ্ধবাজ মিত্রদের কাছে ইরানের শক্তির একটি স্পষ্ট বার্তা। তারা এখনো বিভ্রম এবং মিথ্যা ধারণায় ডুবে আছে।’

আকাশে ‘রহস্যময়’ ক্ষেপণাস্ত্রের ভিডিও ভাইরাল কয়েক ঘণ্টা পর আইআরজিসি উৎক্ষেপণের ভিডিও প্রকাশ করে। দ্রুতই সেটি ভাইরাল হয়। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা ক্ষেপণাস্ত্রের গতি এবং মাঝপথে আকস্মিক গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা দেখে বিস্মিত হন। ঘণ্টায় ১৩ থেকে ১৫ ম্যাক গতিতে এ ধরনের গতিবিধি এটিকে বিদ্যমান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির পাঁচ গুণেরও বেশি (ঘণ্টায় প্রায় ৬ হাজার ১০০ কিলোমিটার) গতিতে ছুটতে পারে। শুধু তাই নয়, এটি মাঝপথে গতিপথ পরিবর্তনও করতে পারে। এই উচ্চ গতি এবং কৌশলী সক্ষমতা এটিকে শনাক্ত বা প্রতিহত করা কঠিন করে তোলে। আইআরজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় সমস্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় সংক্ষিপ্তভাবে হাইপারসনিক গতিতে পৌঁছায়। এ কারণে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ইরানের হাইপারসনিক ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
ইরানের হাইপারসনিক ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র আসলে কী?

ফাত্তাহ একটি প্রিসিশন গাইডেড (নির্ভুল), টু-স্টেজ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি কঠিন জ্বালানিতে চলে, অর্থাৎ সলিড ফুয়েল মিসাইল। এর পাল্লা ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার (প্রায় ৮৭০ মাইল)। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতরে ও বাইরে উভয় স্থানেই চলতে সক্ষম। ২০২৩ সালে প্রথম ফাত্তাহ উন্মোচন করে ইরান। এটি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমে একটি গোলাকার প্রপেল্যান্ট ব্যবহার করে সক্রিয় হয়। ওড়ার সময় সব দিকে গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। এতে এটিকে শনাক্ত এবং প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

গতিতে কৌশলগত অগ্রগতি

ফাত্তাহর মাধ্যমে ইরান কার্যকর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এই তালিকায় আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারত ছিল। ঐতিহ্যবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের বিপরীতে, হাইপারসনিক অস্ত্রগুলো উড়ন্ত অবস্থায় গতির সঙ্গে গতিপথ পরিবর্তনের মতো কৌশল ব্যবহার করে। এটি অধিকাংশ আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এড়াতে সক্ষম।

প্রেস টিভি জানিয়েছে, গত বুধবারের অভিযানটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে তীব্র ছিল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থামাতে ব্যর্থ হয়েছে।

পাল্টা হামলা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালায়। ফিলিস্তিন ক্রনিকলের মতে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান কারমানশাহের একটি সামরিক ঘাঁটিতে পাঁচটি হেলিকপ্টার, একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সুবিধা এবং সেন্ট্রিফিউজ তৈরির সঙ্গে যুক্ত একটি স্থানে আঘাত হানে।

তেহরানে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েল জানিয়েছে, এই হামলাগুলো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল।

সংঘাতের শেষ কোথায়

উভয় পক্ষই নতুন সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। এতে সংঘাত আরও বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে ব্যর্থ করে দিচ্ছে যে, তা নজিরবিহীন। এর বিপরীতে, ইরানের অভ্যন্তরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা, ইসরায়েলের দীর্ঘ পাল্লার অভিযানের সক্ষমতার প্রমাণ।

সামরিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু না হলে এই অঞ্চল আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করবে। অবশ্য আজ শুক্রবারই জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কূটনৈতিক সমাধান প্রচেষ্টার জন্য দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এবার ৫ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

ডিসির কক্ষে সাংবাদিককে মারতে তেড়ে আসেন বিএনপি নেতা শফিকুল

সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের অর্ধেকই চট্টগ্রামের জন্য

নিয়ম ভেঙে ভবন নির্মাণ, আপত্তি জানানো পৌর কর্মীকে ছাদ থেকে ধাক্কা

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হত্যার ইসরায়েলি ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিল তেহরানের গোয়েন্দারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত