Ajker Patrika

ইরানি ক্রিপ্টো ফার্মের ৯ কোটি ডলার খেয়ে দিল ইসরায়েলি হ্যাকাররা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ২৩: ৫৮
ছবি: প্রিডেটরি স্প্যারো
ছবি: প্রিডেটরি স্প্যারো

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা একটি হ্যাকিং গ্রুপ ইরানের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি কোম্পানি নোবিটেক্স থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ চুরি করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থ এমন কিছু স্থানে পাঠানো হয়েছে যেখান থেকে তা আর উদ্ধার করা সম্ভব নয়। কার্যত এই বিপুল অর্থ ‘পুড়ে ছাই’ করে দেওয়া হয়েছে।

‘গোঞ্জেস্কে দারান্দে’ (Gonjeshke Darande) বা প্রিডেটরি স্প্যারো নামে পরিচিত এই হ্যাকিং গ্রুপটি ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে সাইবার হামলা চালানোর জন্য কুখ্যাত। তারা নিজেদের ‘হ্যাকটিভিস্ট’ (হ্যাকার অ্যাকটিভিস্ট) গ্রুপ হিসেবে দাবি করে। এক বছরের বেশি সময় ধরে কোনো বড় ধরনের হামলা না চালালেও, ইসরায়েলের ইরান আক্রমণের পর তারা আবারও সক্রিয় হয়েছে।

মঙ্গলবার (জুন ১৭) নোবিটেক্সে এই হামলার দায় স্বীকার করে দলটি। তাদের দাবি, নোবিটেক্স ‘সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন’ করে এবং নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের জন্য শাসকদের মূল হাতিয়ার। এই হ্যাকিং গ্রুপটির সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হয়। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এটি নতুন করে শুরু হওয়া সাইবার হামলার একটি অংশ।

হ্যাকাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম ও এক্সে এই তথ্য জানিয়েছে। তারা আরও দাবি করেছে, এর আগে সোমবার (জুন ১৬) তারা ইরানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক সেপাহতেও হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ‘ইলিপ্টিক’ জানিয়েছে, নোবিটেক্স থেকে প্রায় ৯ কোটি ডলার হ্যাকারদের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। এই হ্যাকিংয়ের উদ্দেশ্য আর্থিক লাভের চেয়ে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া বলেই মনে করা হচ্ছে, কারণ হ্যাকাররা এমন কিছু ‘ভ্যানিটি অ্যাড্রেস’ (বিশেষভাবে তৈরি ক্রিপ্টো ঠিকানা) ব্যবহার করেছে যেখানে ‘F*ckIRGCterrorists’ (আইআরজিসি সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে গালি)-এর মতো শব্দগুচ্ছ রয়েছে। এর অর্থ হলো, হ্যাকারদের কাছে এই ঠিকানাগুলোর ব্যক্তিগত কি (private key) নেই। অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ এই অর্থ কার্যত নষ্ট করা হয়েছে।

নোবিটেক্স ইরানের প্রধান ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নোবিটেক্সের ৭ মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। অতীতে এর সঙ্গে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এবং ইরানি সরকারি ব্যক্তিদের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। ওপেন সোর্স তদন্তে সুপ্রিম লিডার আলী খামেনির আত্মীয় এবং আইআরজিসি-এর সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়িক অংশীদারদের নোবিটেক্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ইলিপ্টিক আরও জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত আইআরজিসি অপারেটিভরা র‍্যানসমওয়্যার অপারেশন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করার জন্য নোবিটেক্স ব্যবহার করেছে।

অন্যদিকে, সেপাহ ব্যাংককে আইআরজিসি’র নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক হিসেবে দেখা হয় এবং এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়ানো ও ইরানের সামরিক কার্যক্রম, বিশেষ করে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে।

‘প্রিডেটরি স্প্যারো’ বেশ কয়েক বছর ধরেই ইরানে সাইবার হামলা চালিয়ে আসছে। তাদের সবচেয়ে কুখ্যাত হামলা ছিল ২০২২ সালে একটি ইরানি স্টিল প্ল্যান্টে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড ঘটানো। এটি একটি বিরল উদাহরণ, যেখানে একটি সাইবার হামলা বাহ্যিক ক্ষতি ঘটিয়েছে এবং অনেক মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে। এর আগে ২০২১ সালে, তারা ইরানের জ্বালানি বিতরণ ব্যবস্থায় ব্যাপক বিভ্রাট ঘটিয়েছিল এবং রেলওয়ে সিস্টেমেও হামলা চালিয়েছিল, যার ফলে দেশজুড়ে রেল যোগাযোগে বিলম্ব হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত