Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সপ্তম দিন: নতুন অস্ত্রে আক্রমণ ইরানের

  • ইরানে হামলার পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প। ২ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন।
  • মধ্যপ্রাচ্যের দিকে একের পর এক রণতরি নিয়ে যাচ্ছে মার্কিন বাহিনী।
  • বুধবার রাতের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৭০ জন আহত।
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ০২: ৩৪
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। ছবি: এএফপি
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। ছবি: এএফপি

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে এবার সরাসরি জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনার প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছেন। এই অনুমোদনের আগেই ইরান ঘিরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউস বলেছে, ইরানে যুক্তরাষ্ট্র অভিযান চালাবে কি না, সে বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে আবার হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।

এদিকে এমন সময়ে ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হলো, যখন ইসরায়েলে নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা শুরু করেছে ইরান। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। গত বুধবার রাতে ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৭০ জন আহত হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো জানাননি তিনি। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইরান পরমাণু কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিলে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাবে না। যদি কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে না আসে, তাহলে মার্কিন হামলা শুরু হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, ইরানে ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর বিষয়ে আগ্রহী ট্রাম্প।

এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও। তাঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ব্যক্তিগতভাবে সম্মতি দিয়েছেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। তিনি আশায় ছিলেন, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসবে। এ নিয়ে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইরান বিষয়ে আমার চিন্তাভাবনা সম্পর্কে কিছুই জানে না।’

এদিকে ইরানের হামলার বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করলে ট্রাম্প বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়। সবাই আমাকে এটা নিয়ে প্রশ্ন করছে, কিন্তু আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’

২ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প

বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে হোয়াইট হাউস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে অভিযান চালাবে কি না, সে বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এক ব্রিফিংয়ে ট্রাম্পের একটি বিবৃতি পড়ে শোনান। তাতে বলা হয়, ট্রাম্প চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও সুযোগ দিতে চান। বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, তা আদৌ হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়; এই প্রেক্ষাপটে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব যে সেখানে (ইরানে) যাওয়া (অভিযান চালানো) উচিত হবে কি না।’

মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি

মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার রাতে বিবিসি জানায়, মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড আগামী সপ্তাহের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করা হবে।

মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাজনৈতিক সাময়িকী পলিটিকোয় একাধিক খবর প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ইউএসএস নিমিতজ রণতরি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। সোমবার থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ইউএসএস কার্ল ভিনসন রণতরি ইতিমধ্যে আরব সাগরে রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে রণতরি ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান। এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন গত সপ্তাহে দুই যুদ্ধজাহাজ ইসরায়েলের কাছে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধবিমান সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ইউরোপের ঘাঁটিগুলোয়। প্রতিরক্ষা বাহিনীর দুটি সূত্র পলিটিকোকে জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অভিযানের জন্য এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইরানের শক্তিশালী হামলা

বুধবার রাতে ইরানের তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এর মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনা নাতানজও ছিল। জবাবে গত বুধবার রাতে ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা চালায় ইরান। দেশটির বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ জানায়, বুধবার রাতে প্রথমবারের মতো সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়া এই রাতে ইসরায়েলের সরোকা হাসপাতালের পাশে একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরান। তবে সেই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে ওই হাসপাতালে। এর পর থেকে সেখানে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেই। প্রথম ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সেখানে ৮০ জনের মতো আহত হয়েছে। পরে সর্বশেষ গতকাল রাতে সিএনএন জানায়, বুধবার রাতে ইরান যেসব হামলা চালিয়েছে, তাতে আহত কমপক্ষে ২৭১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে ইরানের এই তীব্র হামলার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলও। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, ইরান এখন যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে, তাতে একাধিক ওয়ারহেড থাকছে। ফলে একই ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক স্থানে আঘাত হানছে। এই হামলাকে ইরানের সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তারা।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এফি দেফরিন বলেন, ইরান এ পর্যন্ত ৪৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ড্রোন ছুড়েছে ১ হাজারের বেশি। ইরানের বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এরপরও ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্র আছে ইরানের। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো সাধারণ অভিযান নয়। এটা আমাদের জন্য অনেক জটিল একটি অভিযান।’

আরও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

বুধবার রাতের পর আবারও গতকাল হামলা চালিয়েছে ইরান। গতকাল হামলা শুরুর পর হাইফা শহরে সতর্কসংকেত বাজানো হয়েছে। ইসরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দিচ্ছে। ইসরায়েলিদের নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

এদিকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস গতকাল জানায়, তেল আবিব ও হাইফা শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ১০০ ধরনের অস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব শহরের সামরিক স্থাপনার আশপাশে থাকা মানুষদের সরে যেতে বলেছে ইরান।

খামেনিকে হত্যার হুমকি

এদিকে ইসরায়েলে হাসপাতালে হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। ‘খামেনিকে আর বাঁচতে দেওয়া যায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। এ ছাড়া গতকাল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক এক্স বার্তায় (সাবেক টুইটার) বলেন, ইরানের টাইরান্ট গতকাল সকালে হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। ওই বার্তায় খামেনিকে হত্যার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি আরও লেখেন, তেহরানের এই টাইরান্টকে এর মূল্য দিতে হবে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে যে সহযোগিতা করছে, সে জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই ইসরায়েলকে অনেক সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের আকাশসীমা নিরাপদ রাখতে এবং দেশটির শহরগুলো রক্ষায় সাহায্য করছে মার্কিন বাহিনী।

এদিকে এমন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো মন্তব্য করেননি খামেনি। তিনি দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দীপাবলিতে ভারতীয়দের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশি হাইকমিশনের ভিডিও প্রকাশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভিডিও থেকে নেওয়া
ভিডিও থেকে নেওয়া

কালীপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষে ভারতীয়দের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ। গতকাল রোববার (১৯ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অ্যানিমেশন ভিডিও শেয়ার করে এ শুভেচ্ছা জানান।

ভিডিওটি শেয়ার করে রিয়াজ হামিদুল্লাহ লেখেন, ‘আমি এটি শেয়ার করছি কারণ এটি বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের লালিত মূল্যবোধের পাশাপাশি সংস্কৃতিগত বহুত্ববাদ ও সহনশীলতার প্রতিফলন ঘটায়। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনকেও তুলে ধরে।’

প্রকাশিত অ্যানিমেশন ভিডিওটিতে দেখা যায় ভাইফোঁটা, কালীপূজা ও দীপাবলির প্রতীক হিসেবে প্রদীপ জ্বালানোর দৃশ্য।

ভিডিওটির সঙ্গে সংযুক্ত লেখায় বলা হয়েছে, ‘বাংলা কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাতে বাংলাদেশজুড়ে হাজারো প্রদীপ জ্বলে ওঠে—যেন দেবী কালী মুণ্ডমালিনীর ত্রিনয়নের অগ্নিতেজে অন্ধকার ভেদ করে অসংখ্য তারা জেগে উঠছে। মায়ের আহ্বানের মন্ত্রধ্বনিতে নদীমাতৃক এই ভূখণ্ডে মেয়েরা ভাইদের কপালে শুভচিহ্ন এঁকে দেয়। ভারতের, বাংলাদেশের ও বিশ্বের প্রত্যেক হিন্দু ভাই-বোনকে জানাই শুভ দীপাবলি, কালীপূজা ও ভাইফোঁটার শুভেচ্ছা।’

ভিডিওতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধী কংগ্রেসসহ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যমকে ট্যাগ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র: দ্য প্রিন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি নারীকে মুখোশধারী ইসরায়েলির বেধড়ক পিটুনি ভাইরাল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ৫২
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

পশ্চিমতীরের তুরমুস আয়া গ্রামে মুখোশধারী এক ইসরায়েলি দখলদারের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি নারী। রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে জলপাই সংগ্রহের সময় ওই নারীকে একটি লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। এই ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জ্যাসপার ন্যাথানিয়েল।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক যুবক বড় কাঠের লাঠি দিয়ে এক নারীর মাথায় আঘাত করে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় ওই নারীকে আরও দুইবার আঘাত করেন তিনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আহত নারীর নাম উম সালেহ আবু আলিয়া।

ভিডিও ধারণ করা ন্যাথানিয়েল বলেছেন, ‘প্রথম আঘাতেই আলিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারপরও হামলাকারী নির্মমভাবে লাঠি চালিয়ে যায়।’

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের সদস্যরা পৌঁছানোর পর ঘটনাস্থল ছত্রভঙ্গ করা হয়। অবৈধ বসতি নির্মাণকারীদের যে কোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দাও জানায় এই বাহিনী। তবে ন্যাথানিয়েল অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা হামলার আগেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এবং সাংবাদিক ও সহায়তাকারীদের আটকে রেখেছিল। সৈন্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুখোশধারী উপনিবেশকারীরা আক্রমণ চালায়।

পাঁচ সন্তানের মা আবু আলিয়া বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার মাথার দুই জায়গায় গুরুতর আঘাত পাওয়া গেছে। তিনি আগে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন, এখন স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন।

তুরমুস আয়া গ্রামে এদিন অন্তত ১৫ জন মুখোশধারী উপনিবেশকারীকে আরও কয়েকজন ফিলিস্তিনি কৃষক ও সহায়তাকারীদের ওপর পাথর ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় তারা ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং কয়েকটির জানালা ভেঙে দেয়।

জলপাই সংগ্রহ ফিলিস্তিনি সংস্কৃতি ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে প্রতিবছর এই মৌসুমে দখলদারদের হামলা, রাস্তা বন্ধ এবং জমিতে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। জাতিসংঘের মানবিক দপ্তর জানিয়েছে, ৭ থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিম তীরে ৭১টি উপনিবেশকারী হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার অর্ধেকই জলপাই সংগ্রহ মৌসুমে।

২০২৫ সালেই পশ্চিমতীর জুড়ে উপনিবেশকারীদের হাতে ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই হামলাগুলোর মূল লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনিদের ভয় দেখিয়ে জমি ছাড়তে বাধ্য করা—যাতে ইসরায়েলি উপনিবেশকারীরা তা দখল করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীন যাবেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০১৭ সালের নভেম্বরে চীনের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
২০১৭ সালের নভেম্বরে চীনের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বছরের শুরুর দিকে চীন সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আজ সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আগামী বছরের শুরুতে চীন সফরে যাব।’

এর আগের দিন ফক্স বিজনেসের সংবাদ উপস্থাপক মারিয়া বার্টিরোমোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি আসন্ন অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, যা নভেম্বরের শুরু থেকে কার্যকর হতে পারে বলে জানান। চীনা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের প্রতিক্রিয়ায় নতুন এ পদক্ষেপের কথা বলেন তিনি। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে বার্টিরোমোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, এত উচ্চমাত্রার শুল্ক দীর্ঘ মেয়াদে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমি চীনকে ধ্বংস করতে চাই না।’

উল্লেখ্য, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই পরস্পরের ওপর অন্তত ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিল। পরে আলোচনার মাধ্যমে চীনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১০ শতাংশ আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে চীনা পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক বজায় রয়েছে, যা আগের শুল্কের ওপর যুক্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পরীক্ষায় সফল ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস, আরও যেসব অস্ত্রে শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পরীক্ষায় সফল ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস, আরও যেসব অস্ত্রে শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত

প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে যাচ্ছে ভারত। দেশটি নতুন প্রজন্মের ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োগের উপযোগী হবে বলে জানিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের এই উন্নত সংস্করণে পরিবর্তিত র‍্যামজেট ইঞ্জিন ও অত্যাধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ এটি সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

বর্তমানে ভারতের হাতে থাকা ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর গতি শব্দের গতির প্রায় তিন গুণ (মাক ২.৮)। এই ক্ষেপণাস্ত্রই গত মে মাসে পাকিস্তানে চালানো অপারেশন সিঁদুরের সময় ব্যবহার করা হয়েছিল।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মসের র‍্যামজেট ইঞ্জিনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন প্রায় শেষ। এখন কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ইনর্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম (আইএনএস) ও বৈশ্বিক স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমের নির্ভুলতা যাচাই করা হচ্ছে, যাতে শত্রুপক্ষের জ্যামিং প্রতিরোধ করা যায়।

তিনি আরও জানান, নৌবাহিনী ও স্থল বাহিনীর হাতে থাকা ইতিমধ্যে ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র আছে। এগুলোর সফটওয়্যার ও ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমে সামান্য পরিবর্তন করে নতুন ৮০০ কিলোমিটার সংস্করণে উন্নীত করা যাবে। মৌলিক ক্ষেপণাস্ত্র ও লঞ্চার একই থাকবে, শুধু সফটওয়্যারের কিছু অংশে পরিবর্তন আনলেই হবে।

এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) তাদের ‘অস্ত্র’ (Astra) সিরিজের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। অস্ত্র মার্ক-২ সংস্করণের পাল্লা আগের ১৬০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ২০০ কিলোমিটারের বেশি করা হচ্ছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনী ইতিমধ্যে ১০০ কিলোমিটার পাল্লার ২৮০টিরও বেশি অস্ত্র মার্ক-১ ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। নতুন মার্ক-২ সংস্করণের উৎপাদন ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও উন্নত অস্ত্র মার্ক-৩ সংস্করণ তৈরির কাজও চলছে, যা সলিড-ফুয়েল ডাকটেড র‍্যামজেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৩৫০ কিলোমিটার দূরের টার্গেটে আঘাত করতে পারবে। তবে এটি কার্যকর হতে তিন বছর সময় লাগবে। রাশিয়া, ফ্রান্স ও ইসরায়েল থেকে আমদানি করা ব্যয়বহুল ‘পিএল-১৫ বিভিআরএএএম’ ক্ষেপণাস্ত্রের বিকল্প এই ‘অস্ত্র’ মার্ক-৩ সিরিজ।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, গত ৭ মে পাকিস্তানের নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলার সময় পাকিস্তানি বাহিনী চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে ২০০ কিলোমিটার পাল্লার পিএল-১৫ বিভিআরএএএম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এতে শুরুর দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনী বিপাকে পড়ে। তবে ব্রহ্মস ব্যবহারের পর সফল হয় ভারতীয় বাহিনী।

ইতিমধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রায় ২০টি যুদ্ধজাহাজে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে গত বছর ১৯ হাজার ৫১৯ কোটি রুপি ব্যয়ে নৌবাহিনীর জন্য ২২০টিরও বেশি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অপারেশন সিঁদুরের পর বিমানবাহিনীর জন্যও ১১০টি আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের অনুমোদন দেয় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, যার মূল্য প্রায় ১০ হাজার ৮০০ কোটি রুপি।

ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ভবিষ্যতে ভারতের প্রস্তাবিত ইন্টিগ্রেটেড রকেট ফোর্সের (আইআরএফ) অংশ হবে। এতে প্রলয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (৪০০ কিলোমিটার পাল্লা) এবং নির্ভয় ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ (১,০০০ কিলোমিটার পাল্লা) অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত