Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত

মধ্যপ্রাচ্যে চীনা কূটনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ

  • প্রশ্নের মুখে বেইজিং, ইরানের সামরিক স্থাপনা রক্ষার সক্ষমতা নেই।
  • যুদ্ধবিরতি চাইলেও ইসরায়েলের সমালোচনা করছে না চীন।
  • বন্ধ হতে পারে সস্তায় ইরানি তেল কেনার সুযোগ।
  • মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ, তাইওয়ানে সুবিধা পাবে চীন।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত আবাসিক ভবন খতিয়ে দেখছেন ইসরায়েলের নিরাপত্তাকর্মীরা। গতকাল দক্ষিণ ইসরায়েলের বিরশেবা এলাকায়। ছবি: এএফপি
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত আবাসিক ভবন খতিয়ে দেখছেন ইসরায়েলের নিরাপত্তাকর্মীরা। গতকাল দক্ষিণ ইসরায়েলের বিরশেবা এলাকায়। ছবি: এএফপি

ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে কঠিন চাপে পড়েছে চীন। ২০২৩ সালে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে শান্তিচুক্তিতে মধ্যস্থতা করে বেইজিং বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে তারা এখন বৈশ্বিক কূটনীতির অন্যতম শক্তি। কিন্তু চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং যুক্তরাষ্ট্রের এতে সরাসরি জড়িত হওয়ার হুমকিতে সেই কূটনৈতিক সক্ষমতা এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। যদিও এমন সংকটময় মুহূর্তে বেইজিংয়ের করণীয় আসলে খুবই সীমিত।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, চীনের জন্য ইরান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র। দেশটি একদিকে তেল সরবরাহের জন্য ইরানের ওপর নির্ভর করে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানেও দুই দেশের যথেষ্ট মিল রয়েছে।

ইরানের দক্ষিণে হরমুজ প্রণালি দিয়ে চীনের মোট তেল আমদানির প্রায় অর্ধেক প্রবাহিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্যের বিপরীতে চীন দীর্ঘদিন ধরে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করেছে। তবে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ইরানকে সামরিকভাবে রক্ষার সক্ষমতা কার্যত বেইজিংয়ের নেই।

ওয়াশিংটনের আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক জ্যাক কুপার বলেন, চীন চাইলেও ইরানে সেনা পাঠিয়ে সামরিক স্থাপনাগুলো রক্ষা করতে পারবে না। তাদের হাতে সে সক্ষমতা নেই। বরং তারা পেছন থেকে কিছু সরঞ্জাম, লজিস্টিক সহায়তা বা মানবিক সহায়তা পাঠাতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে চীন মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সংঘাত যদি দীর্ঘায়িত হয় আর যুক্তরাষ্ট্র তাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে বেইজিং কিছুটা কৌশলগত সুবিধাও পেতে পারে। কেননা মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংঘাতের ডামাডোলে এশিয়ার অন্য অংশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ সরে যাবে। এই সুযোগে চীনের জন্য তাইওয়ান প্রশ্নে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যেতে পারে।

ইরান ও ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। গত বৃহস্পতিবার ফোনে কথা হয় দুই নেতার। এ সময় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরায়েলের কোনো সমালোচনা করেননি চীনা নেতা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও সরাসরি কোনো বার্তা দেননি।

সি চিন পিং বলেন, বৃহৎ শক্তিগুলোর উচিত উসকানি না দিয়ে উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করা। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই একই সুরে কথা বলেছেন। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে তিনি হামলার ‘বিরোধিতা’ করলেও তেমন কোনো কঠোর ভাষা ব্যবহার করেননি। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে ওয়াং ই বলেন, ‘পুরো অঞ্চল অনিশ্চিত এক গহ্বরে পতিত হতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা নির্লিপ্ত থাকতে পারি না।’

এসব ফোনালাপ ও বক্তব্য-বিবৃতির বাইরে সংকট নিরসনে চীন এখনো দৃশ্যমান কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়নি; বরং সংঘাতকবলিত এলাকা থেকে নিজেদের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার দিকে বেশি জোর দিয়েছে দেশটি। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ইরান ও ইসরায়েল থেকে তাদের ১ হাজারের বেশি নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক চীননীতি-বিষয়ক উপদেষ্টা জুলিয়ান গেওয়ার্টজ বলেন, বেইজিং এখন দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য শুধু নিজেদের স্বার্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে সেখানে মূল ফোকাস ইরানের সামরিক দুর্বলতা। অনেকে বলছেন, চীনের সমর্থন শর্তহীন নয় এবং সেই সমর্থনের একটি সীমা রয়েছে। সাবেক মার্কিন কূটনীতিক বারবারা লিফের ভাষায়, ‘মধ্যপ্রাচ্যে কেউ চীনকে প্রথম ফোন করে না। কারণ, সবাই জানে—চীন শুধু নিজেরটা দেখবে।’

চীনের ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের অধ্যাপক ঝু ঝাওই বলেন, চীন কখনো ইরানকে অন্ধভাবে রক্ষা করবে না। সর্বোচ্চ করণীয় হতে পারে জাতিসংঘের মাধ্যমে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ।

এই নীরবতা ও সীমাবদ্ধতা শুধু চীনের একার নয়। তেহরানের প্রধান মিত্র রাশিয়ার অবস্থানও প্রায় একই রকমের। ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইরান রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করেছে। তবে এখন তেহরানের বিপদে মস্কো শুধু বিবৃতি দিয়ে তার দায় সারছে।

এই নিষ্ক্রিয়তা ‘অক্ষশক্তি’ ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। চীন, রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়াকে কেউ কেউ একত্রে অক্ষশক্তি বললেও বাস্তবে আসলে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তবে এই সংঘাত চীনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, তাদের অর্থনীতি এখনো বিশ্ববাজারনির্ভর। এ ক্ষেত্রে তেলই এখন তাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনার জায়গা। কেননা ইরানের রপ্তানি করা প্রায় সব তেল কিনছে চীন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ছদ্মবেশী ট্যাংকার বহর ব্যবহার করে বাজার থেকে অনেক কম দামে এটি কিনছে তারা। ফলে বাড়তি দামে তেল কিনতে হলে চীনা অর্থনীতির ওপর তার সরাসরি প্রভাব পড়বে।

একদিকে অর্থনীতিতে এখনো করোনা মহামারি-পরবর্তী ধাক্কা সামলাতে ব্যস্ত চীন। তার ওপর যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ। এখন ইরান থেকে কম দামে তেল কেনা অনিশ্চিত হয়ে পড়লে, তা দেশটির জন্য নতুন সংকট তৈরি করবে। স্বভাবতই একসঙ্গে এত সংকট সামাল দেওয়া সহজ হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আইআরজিসির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন খামেনি

পরবর্তী লক্ষ্য কোন দেশ, জানাল ইসরায়েল

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হত্যার ইসরায়েলি ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিল তেহরানের গোয়েন্দারা

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট গড়তে ইরানের কাছে অর্থ চাইলেন জেনারেল ডাল্লা

শাবিপ্রবি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ, ২ ছাত্র গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত