Ajker Patrika

ইসরায়েলকে চমকে দিয়ে ইরানি ড্রোনের আঘাত

আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, ২৩: ০০
ইরানের ড্রোন হামলার পর আক্রান্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করতে ঘটনাস্থলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্য ও জরুরি সেবার কর্মীরা। গতকাল বেইত শেইন শহরে। ছবি: এএফপি
ইরানের ড্রোন হামলার পর আক্রান্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করতে ঘটনাস্থলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্য ও জরুরি সেবার কর্মীরা। গতকাল বেইত শেইন শহরে। ছবি: এএফপি

সামরিক শক্তিতে বরাবরই নিজেকে অপরাজেয় হিসেবে জাহির করা ইসরায়েলকে সত্যিই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে ইরান। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলকে ইতিমধ্যেই ব্যতিব্যস্ত করার পর গতকাল শনিবার দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে সফল ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ইরানের দুটি ড্রোন ইসরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে সফলভাবে আঘাত হানে। বিষয়টি স্বীকার করে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, তাদের সুরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে এমন একমুখী হামলা একটি ‘বিরল ঘটনা’।

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়ে আবারও হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরান বলেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের যোগ দেওয়া হবে ‘অত্যন্ত ভয়ংকর’। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় আরেক পরমাণুবিজ্ঞানী নিহতের কথা স্বীকার করেছে ইরান। ইসরায়েল গতকাল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায়ও হামলা চালিয়েছে।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে জর্ডান সীমান্তসংলগ্ন বেইত শেইন শহরে একটি ইরানি ড্রোন সফলভাবে আঘাত হানে। এতে একটি দোতলা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনটির দরজা-জানালা উড়ে গেছে ও এক পাশে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয় ড্রোনটি দক্ষিণাঞ্চলের একটি খোলা জায়গায় আঘাত হানে।

দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে ১২ জুন রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তবে হামলার পাল্টা জবাব দিতে সময় নেয়নি তেহরান।

১৩ জুন ইসরায়েলে প্রায় ১৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে তারা। এর পর থেকে প্রতিদিনই প্রায় ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

ইসরায়েল দাবি করেছে, সংঘাত শুরুর পর ইরান থেকে ছোড়া বেশির ভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগেই তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, গতকাল ইসরায়েলে হামলার উদ্দেশ্যে অন্তত ছয়টি ড্রোন পাঠায় ইরান। এর মধ্যে দুটি ছাড়া অন্যগুলো আরাভা মরুভূমি, গোলান মালভূমিসহ অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছানোর আগেই ঠেকিয়ে দেওয়া হয়।

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা

ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গতকাল ভোরে তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইস্পাহানে একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। তবে এতে সেখান থেকে কোনো ক্ষতিকর পদার্থ ছড়ানোর খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক সংস্থা আইএইএর পক্ষ থেকে স্থাপনাটি সম্পর্কে কোনো হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়নি।

আইডিএফ জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাতভর তারা ইরানের মধ্যাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম ও বিভিন্ন অবকাঠামোয় হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে ইরান থেকে ছোড়া একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে আস্থা নেই ট্রাম্পের

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে নিজের অনাস্থার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই অনাস্থার কথা জানান তিনি। ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে, এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য তাঁর কাছে আছে কি না। কেননা সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, তাদের কাছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থা ভুল বলেছে।’

ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসি গ্যাবার্ড। জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক গ্যাবার্ড এখন বলছেন, তাঁর ধারণা, ‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই’ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম ইরান। তিনি আগে বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা আছে বলে মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি ইরানের

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গতকাল ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি সম্মেলনে যোগ দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে‍ তিনি বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা হবে ‘অত্যন্ত ভয়ংকর’।

ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের সমালোচনা করে আরাঘচি বলেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানের পথ খুঁজতে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে আমাদের জনগণের ওপর যখন বোমা হামলা চালানো হচ্ছে, তখন আমরা আলোচনায় যেতে পারি না।’

দশম পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত

ইসরায়েলি হামলায় আরেক পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে ইরান। এ নিয়ে চলতি সংঘাতে ১০ পরমাণুবিজ্ঞানীকে হারালো দেশটি। ড. ইসার তাবাতাবেই গোমশেহ নামের ওই বিজ্ঞানীকে গত সপ্তাহের শেষ দিকে তাঁর বাড়িতে হত্যা করা হয়। হামলায় তাঁর স্ত্রী মানসুরেহ হাজিসালেমও নিহত হন।

খামেনির উত্তরসূরি নির্ধারণের গুঞ্জন

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে তিন ধর্মীয় নেতাকে নির্বাচন করে রেখেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। ইরানি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হত্যাচেষ্টার প্রেক্ষাপটে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ নেতা তিনটি নাম প্রস্তাব করেছেন। সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ওই তিনজনের মধ্য থেকে তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ তালিকায় খামেনির ছেলে মোজতাবার নাম নেই বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তা পরিষদে উত্তপ্ত বাদানুবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের শুক্রবারের বৈঠকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে উত্তপ্ত বাদানুবাদ হয়। উভয় পক্ষই নিজের মিত্রদের নিয়ে চলমান সংঘাতের জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে দায় চাপাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বৈঠক থেকে যুদ্ধ থামানো ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানানো হয়। তবে এর প্রক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইসরায়েল এমন একটি পক্ষ, যারা শিশুসহ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে এবং অন্য দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে। জবাবে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ইরান ‘ভুক্তভোগী সেজে নাটক করছে।’

এদিকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের শুক্রবারের আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে গঠনমূলক আলোচনা সম্ভব নয়।

হতাহতের সংখ্যা

ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে নিজেদের পক্ষে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৪৩০ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৫০০ জন আহতের কথা জানিয়েছে তেহরান। অন্যদিকে ইরানের হামলায় তাদের অন্তত ২৫ জন নিহত এবং ২ হাজার ৫১৭ জন আহতের কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর পক্ষে স্বতন্ত্রভাবে কোনো সংখ্যা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ০১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দিওয়ালিকে কেন্দ্র করে ভারতে ছেয়ে গেছে ‘কার্বাইড গান’ নামে নতুন একটি খেলনা। কিন্তু এই খেলনাই এখন ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে। বিপজ্জনক এই খেলনার বিস্ফোরণে দেশটির শুধু মধ্যপ্রদেশ রাজ্যেই অন্তত ১৪ শিশু স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে এবং তিন দিনে রাজ্যজুড়ে ১২০ জনেরও বেশি শিশুকে গুরুতর চোখের আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ‘কার্বাইড গান’ দেখতে সাধারণ খেলনার মতো হলেও, এটি আসলে এক ধরনের রাসায়নিক বিস্ফোরক যন্ত্র। প্লাস্টিক বা টিনের পাইপে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও পানি মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই যন্ত্র। মিশ্রণে উৎপন্ন হয় অ্যাসিটিলিন গ্যাস, যা আগুনের সংস্পর্শে এলে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। খেলনাটির দাম মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ রুপি হলেও, এর ক্ষতি ভয়াবহ।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের শুধু হামিদিয়া হাসপাতালেই ৭২ ঘণ্টায় ২৬ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই প্রদেশের বিদিশা জেলা। সেখানকার স্থানীয় বাজারে খেলনাটি দেদারসে বিক্রি হচ্ছিল। এ অবস্থায় গত ১৮ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে খেলনাটির বিক্রয় বন্ধে নির্দেশ দিলেও দেওয়ালির সময় তা আর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি।

চোখ হারানো শিশুদের চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি কোনো আতশবাজি নয়, বরং একটি রাসায়নিক বোমা। ভোপাল মেমোরিয়াল হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ড. হেমলতা যাদব জানিয়েছেন, এই খেলনাটিতে যে বিস্ফোরণ ঘটে তাতে চোখের কর্নিয়া, আইরিস ও রেটিনা সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে ড. আদিতি দুবে সতর্ক করে বলেছেন, অ্যাসিটিলিন গ্যাস শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে মস্তিষ্কে প্রদাহ, মাথা ঘোরা, এমনকি দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিভ্রংশ ঘটাতে পারে।

ভোপালের এখনো প্রায় ৬০ জন আহত শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ বিদিশা জেলায় অন্তত ছয়জন বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছে এবং রাজ্যজুড়ে অভিযান চলছে।

অন্যদিকে বিহারের রাজধানী পাটনায়ও অন্তত ৫০ শিশুর দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আইজিআইএমএস হাসপাতালের চোখের বিশেষজ্ঞ ড. বিভূতি প্রসন্ন সিনহা জানিয়েছেন, সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও রাজ্যজুড়ে ১৫০–২০০ জন গুরুতর বা আংশিকভাবে আহত হয়েছেন বলে ধারণা।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোই এই ‘কার্বাইড গান’–এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে বহু ভিডিওতে দেখা গেছে, মানুষ নিজে হাতে বানিয়ে এই যন্ত্র বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে—যার শেষ পরিণতি এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

কলকাতা প্রতিনিধি  
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত এলাকা থেকে পাঁচজন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় একই সঙ্গে এক ভারতীয় নারীকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিরা গতকাল বৃহস্পতিবার সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর চ্যাংরাবান্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডোরাডাবরি সীমান্তসংলগ্ন একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন।

খবর পেয়ে মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে এক ভারতীয় নারীকে আটক করা হয়েছে। আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম—মো. রবিউল ইসলাম, মো. আরিফুল, মো. সোহাগ হোসেন, মো. লাজু ও রুবেল ইসলাম।

মেখলিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহবাজ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তাঁরা গরু পাচার, বিভিন্ন চোরাচালান ও সীমান্তের অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত থাকতে পারেন। আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে যে ভারতীয় নারী রয়েছেন, তিনি স্থানীয় বাসিন্দা এবং তাঁদের আশ্রয় দিয়ে আইন ভঙ্গ করেছেন। ওসি আরও জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতা, বর্ণবাদ ও নাৎসি প্রশংসা: যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক গ্রুপ চ্যাটের অন্ধকার দিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সহিংসতা, বর্ণবাদ ও নাৎসি প্রশংসা: যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক গ্রুপ চ্যাটের অন্ধকার দিক

তিনটি আলাদা ঘটনায় চলতি মাসে ফাঁস হওয়া ব্যক্তিগত অনলাইন গ্রুপ চ্যাটগুলো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বার্তাগুলোতে উঠে এসেছে বর্ণবাদী, ইহুদিবিদ্বেষী ও সহিংস বক্তব্য, যা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যক্তিদের থেকেই এসেছে।

জনসমক্ষে আসা ব্যক্তিগতভাবে পাঠানো এ বার্তাগুলোর মধ্যে রয়েছে বর্ণবাদী গালাগাল, নাৎসিদের প্রশংসা এবং রাজনৈতিক সহিংসতার হুমকি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, প্রকাশিত হওয়ার ও সমালোচিত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কেন এমন মতামত প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।

এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে যে, দেশটিতে সহিংস ভাষা ও বর্ণবাদী বক্তব্য ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে কয়েক দশক ধরে কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত নাগরিক অধিকার বিজয়ের পর, যা এ ধরনের মতাদর্শগুলোকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই ব্যক্তিগত পরিসরে সহিংস বা বর্ণবাদী মতামত প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেক্সট মেসেজ ফাঁস হওয়ার এ ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্য, কারণ এগুলো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের চিন্তাভাবনা জনসমক্ষে নিয়ে এসেছে।

পলিটিকোর ১৪ অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ডজনের বেশি তরুণ রিপাবলিকান নেতা জানুয়ারি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত টেলিগ্রামে একে অপরের কাছে বর্ণবাদী এবং ইহুদিবিদ্বেষী বার্তা পাঠান। তাঁরা কৃষ্ণাঙ্গদের ‘বানর’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁদের একজন দ্বিধাহীনভাবে বলেন, ‘আমি হিটলারকে ভালোবাসি।’

এর আগে ৩ অক্টোবর ন্যাশনাল রিভিউ প্রকাশিত আরেকটি ফাঁস হওয়া বার্তায় দেখা যায়, ভার্জিনিয়ার শীর্ষ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা পদপ্রার্থী ডেমোক্র্যাট নেতা জে জোনস ২০২২ সালে একটি ব্যক্তিগত টেক্সট পাঠিয়ে বলেছিলেন, ওই অঙ্গরাজ্যের এক রিপাবলিকানকে গুলি করে মেরে ফেলা উচিত।

আর এ সপ্তাহে একটি ফেডারেল পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থী পল ইনগ্রাসিয়া তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।

কারণ তাঁর সম্পর্কে প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি একটি ব্যক্তিগত টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদানে নিজেকে ‘নাৎসিপ্রবণ’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং এ খবর প্রকাশের পর তিনি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের সমর্থন হারান।

সমাজবিজ্ঞানী অ্যালেক্স টারভির মতে, গ্রুপ চ্যাটে উসকানিমূলক বক্তব্য অব্যাহত থাকার কারণ একধরনের ভ্রান্ত নিরাপত্তাবোধ। অথচ অনলাইনে পাঠানো সব বার্তারই স্থায়ী রেকর্ড থাকে এবং তা যেকোনো সময় ফাঁস হতে পারে।

টারভি মনে করেন, গ্রুপ চ্যাটের সদস্যরা কখনো কখনো ভুল করে ধরে নেন, তাঁরা তাঁদের সহ-অংশগ্রহণকারীদের বিশ্বাস করেন; যদিও রাজনীতিতে আনুগত্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং উদ্দেশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এখানে ঘনিষ্ঠতার ভ্রম কাজ করে। মনে হয় যেন একান্ত আলাপ হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আপনি ধরে নিচ্ছেন, গ্রুপ চ্যাটের প্রতিটি সদস্য চিরকাল আপনাকে রক্ষা করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরব সাগরে ১ বিলিয়ন ডলারের মাদক জব্দ করল পাকিস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৩৬
পাকিস্তান নৌবাহিনীর একটি বহর। ছবি: এএফপি
পাকিস্তান নৌবাহিনীর একটি বহর। ছবি: এএফপি

আরব সাগরে যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে পাকিস্তান নৌবাহিনী। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশের সমন্বয়ে গঠিত বহুজাতিক নৌবাহিনী জোট ‘কম্বাইন্ড মেরিটাইম ফোর্সেস’ (সিএমএফ)।

বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ পিএনএস ইয়ারমুক গত সপ্তাহে টানা ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ‘রাষ্ট্রহীন’ নৌযান আটক করেছে। জাহাজ দুটিতে বিপুল ক্রিস্টাল মেথ (মেথামফেটামিন) ও অল্প পরিমাণ কোকেন পাওয়া যায়। আটক নৌযানগুলোর উৎপত্তিস্থল বা গন্তব্য সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

সিএমএফ টাস্কফোর্সের কমান্ডার ও সৌদি নৌবাহিনীর কমোডর ফাহাদ আলজোইয়াদ বলেছেন, সিএমএফের ইতিহাসে এটি অন্যতম সফল মাদকবিরোধী অভিযান। পিএনএস ইয়ারমুকের মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ মাদক জব্দ করা সম্ভব হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড এই অভিযানের প্রশংসা করে লিখেছে, ‘সৌদি নেতৃত্বাধীন কম্বাইন্ড টাস্কফোর্স ও পাকিস্তান নৌবাহিনীর ইয়ারমুক জাহাজ ৪৮ ঘণ্টায় আরব সাগরে দুটি ছোট নৌযানে তল্লাশি চালিয়ে ৯৭২ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে।’

এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর একই অঞ্চলে সৌদি নেতৃত্বাধীন কমান্ডের অধীনে থাকা পাকিস্তান নৌবাহিনীর পিএনএস ইয়ামামা-২৭৪ নামের জাহাজটি ১২ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের মাদক জব্দ করেছিল। সে সময়ের অভিযানে ১৫৫ কেজি ক্রিস্টাল মেথ ও ৬৫ কেজি কোকেন উদ্ধার হয়েছিল।

ধারাবাহিক এই অভিযানের মাধ্যমে আরব সাগরে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান রোধে পাকিস্তান নৌবাহিনী ও তার আন্তর্জাতিক সহযোগীদের ভূমিকা আরও জোরদার হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত