Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছায়ই কি কাতার থেকে কার্যক্রম চালায় হামাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

‘মধ্যস্থতাকারী’—শব্দটা যেন কাতারের প্রতিশব্দই হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দ্বন্দ্ব চলছে এমন দুই দেশের সঙ্গে বেশ আলাদাভাবে সুসম্পর্ক রয়েছে কাতারের। এবং বরাবরই বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা নিশ্চিতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় দেখা যায় এই আরব দেশটিকে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্র-ইরান, হামাস-ইসরায়েল, সিরিয়া-ইসরায়েলসহ আরও অনেকের কথা।

বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাত শুরুর পর থেকেই দুপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য কাতারের এই ‘মধ্যস্থতাকারী’ ভাবমূর্তি বিশ্ববাসীর কাছে আরও শক্ত হয়েছে। মূলত দেশটির রাজধানী দোহায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষস্থানীয় বহু নেতার বসবাসের কারণে সেটি ইসরায়েল ও হামাসের আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার, ওই সব নেতাদের কয়েকজনকে লক্ষ্য করে দোহায় হামলা চালায় ইসরায়েল। তবে, ওই হামলায় হামাস নেতাদের কেউ হতাহত হননি বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—হামাস নেতারা কেন কাতারে বসবাস করে? আর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কই বা কী?

কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ২০১১ সালে সিরিয়া ছাড়েন হামাস নেতা খালিদ মিশাল। এক বছর পর ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো কাতারে রাজনৈতিক কার্যালয় খোলে হামাস। কাতারের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই হামাস নেতাদের কাতারে থাকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

২০২৩ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে একটি মতামত নিবন্ধ লিখেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত তৎকালীন রাষ্ট্রদূত শেখ মেশাল বিন হামাদ আল থানি। সেখানে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছায়ই কাতার থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে হামাস। ওই নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ওয়াশিংটন চাইছিল হামাসের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যোগাযোগ করার জন্য দোহায় একটি অফিস খোলা হোক।’

দোহায় কার্যালয় হওয়ায় হামাসের উচ্চপদস্থ অনেক নেতাই কাতারে বসবাস করেন। হামাসের এক সময়ের রাজনৈতিক প্রধান খালিদ মিশাল ২০১২ সাল থেকে কাতারেই অবস্থান করছেন। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে জর্ডানে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও খালিদ মিশালের পর হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইসমাইল হানিয়াও ২০১৭ সালে কাতারে বসবাস শুরু করেন। এ ছাড়া খলিল আল-হায়া, মুসা আবু মারজুকসহ অনেকেই কাতারে অবস্থান করছেন।

কাতারকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা দেশটিকে প্রভাবশালী ভূমিকায় এনেছে। ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েলি অবরোধে থাকা গাজায় দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে কাতার, পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন ইস্যুতেও তারা অন্যতম বড় সমর্থক। হামাসকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়াকে এই দুই দিকের মিলিত ফলাফল হিসেবে দেখা হয়।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত ওই মতামত নিবন্ধে কাতারি রাষ্ট্রদূত শেখ মিশাল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে হামাসের অফিসের উপস্থিতি মূলত মধ্যস্থতার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এটি বহুবার ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, হামাসের অফিস থাকার বিষয়টিকে সমর্থন হিসেবে দেখা উচিত নয়, বরং এটি এক ধরনের পরোক্ষ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল হিসেবে কাজ করছে।

এর আগে, গত বছর কিছু পক্ষ মধ্যস্থতার প্রক্রিয়াকে নিজেদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে অভিযোগ করে মধ্যস্থতার ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন জাসিম আল থানি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত