Ajker Patrika

সংকট নিরসনে মার্কিন দূতের সঙ্গে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি ফোনালাপ

অনলাইন ডেস্ক
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ। ছবি: সংগৃহীত
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ। ছবি: সংগৃহীত

চলমান ইরান-ইসরায়েল সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে ইসরায়েল-ইরানে হামলা শুরু করার পর থেকে সংকটের কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিন কূটনীতিক জানিয়েছেন, আরাঘচি বলেছেন—ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে তেহরান কোনো আলোচনায় ফিরবে না। ইসরায়েল ১৩ জুন হামলা শুরু করে। তাঁরা আরও বলেন, আলোচনায় মে মাসের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানকে দেওয়া একটি প্রস্তাব নিয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, একটি আঞ্চলিক কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ইরানের বাইরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালু করা হোক। তবে তেহরান এখন পর্যন্ত এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তারা রয়টার্সের মন্তব্য চাওয়া সত্ত্বেও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি। সর্বশেষ, ফোনালাপ ছিল এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া আলোচনার মধ্যে সবচেয়ে গভীর ও অর্থবহ সরাসরি যোগাযোগ। ওমান ও ইতালিতে পূর্ববর্তী বৈঠকগুলোতে তারা মুখোমুখি হলেও কথা খুবই সংক্ষিপ্ত ছিল এবং আলোচনা ছিল পরোক্ষ।

তেহরানের ঘনিষ্ঠ এক আঞ্চলিক কূটনীতিক জানান, আরাঘচি উইটকফকে বলেছেন, ‘ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিলে পারমাণবিক ইস্যুতে তেহরান নমনীয়তা দেখাতে পারে।’ এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, ‘আরাঘচি উইটকফকে বলেছেন, ইরান পারমাণবিক আলোচনায় ফিরতে রাজি, তবে ইসরায়েল হামলা চালাতে থাকলে সেটা সম্ভব নয়।’

এপ্রিল থেকে পাঁচ দফা পরোক্ষ আলোচনা শেষে এই দুই কর্মকর্তা আগে কখনো সরাসরি যোগাযোগ করেননি। রয়টার্সকে আরেক আঞ্চলিক কূটনীতিক বলেন, ‘প্রথম ফোনকলটি ওয়াশিংটন থেকেই হয়। তখনই অচলাবস্থার সমাধানে নতুন একটি প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চান, ইরান তার মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করুক। তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলছেন, তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার কোনোভাবেই আলোচনা-সাপেক্ষ নয়।

ট্রাম্প এখনো খোলাসাভাবে জানাননি, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবেন কিনা—যদিও ইসরায়েল বলছে, তারা ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে হামলা চালাচ্ছে। তবে ট্রাম্প বলেন, কূটনীতির সুযোগ এখনো আছে এবং ইরানের কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে আলোচনায় আসতে চায়।

এই সপ্তাহের শুরুতে কানাডার জি-৭ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ট্রাম্প তাকে জানিয়েছেন যে—যুক্তরাষ্ট্র একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে এবং তারপর বিস্তৃত আলোচনায় যেতে চায়। তবে ট্রাম্প এ দাবিকে নাকচ করে দেন। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। তিনিও জি-৭ সম্মেলনে ছিলেন।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির পক্ষভুক্ত ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি (যাদের একত্রে ই-থ্রি বলা হয়) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত রোববার আরাঘচির সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ে ফোনালাপে অংশ নেয়। ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই ও এক ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার জেনেভায় এই পক্ষগুলোর আরেকটি বৈঠক হবে।

জি-৭ সম্মেলনে এক জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, ‘ট্রাম্প পরিষ্কার করেছেন, তিনি দ্রুত সামরিক অভিযান বন্ধ করতে চান এবং চান ইরান সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলুক। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে হলে ইরানকে তাঁর দাবি মেনে নিতে হবে।’

কূটনীতিকদের মতে, ইসরায়েলি হামলা এবং ট্রাম্পের কঠোর বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে তেহরান এখনই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রকাশ্য আলোচনা করতে পারবে না। তবে ইউরোপীয়দের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে কূটনৈতিক পথ এগিয়ে নেওয়া তাদের জন্য তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত