Ajker Patrika

ইসরায়েলের হামলায় নিহত ইরানের সেনাপ্রধান কে এই বাঘেরি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ০০: ১৩
ইরানের সদ্য নিহত সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি। ছবি: সিএনএন
ইরানের সদ্য নিহত সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি। ছবি: সিএনএন

ইরানে আজ শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দেশটির সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা ছাড়াও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত হানা হয়। এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি নিহত হয়েছেন। তিনি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ এবং দেশের সর্বোচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা ছিলেন।

কে ছিলেন মোহাম্মদ বাঘেরি

মোহাম্মদ বাঘেরি মোহাম্মদ হোসেইন আফশোরদি নামেও পরিচিত। ১৯৬০-এর দশকে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ও ইরানের পুরো সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম দেখভাল করতেন। পাশাপাশি তিনি এসব বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়েরও দায়িত্বেও ছিলেন।

তাঁর সামরিক জীবন সম্পর্কে বিশদভাবে খুব বেশি কিছু জানা না গেলেও তিনি আইআরজিসিতে একজন অভিজ্ঞ ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক নানা নিষেধাজ্ঞা ও একাডেমিক অর্জনের বাইরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তথ্য খুব কমই প্রকাশ পেয়েছে।

যুদ্ধজীবন ও পরিবার

১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের পর ১৯৮০ সালে আইআরজিসিতে যোগ দেন বাঘেরি। ওই বছরই শুরু হয় ইরান-ইরাক যুদ্ধ, যেখানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এই যুদ্ধে তাঁর বড় ভাই হাসান বাঘেরি নিহত হন। হাসান বাঘেরি আইআরজিসির সামরিক গোয়েন্দা শাখার প্রতিষ্ঠাতা এবং মাত্র ২৭ বছর বয়সে একটি ডিভিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

ভাইয়ের মৃত্যুর পর ১৯৮৩ সালে আইআরজিসির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হন মোহাম্মদ বাঘেরি। যুদ্ধ শেষে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন; যেমন উপপ্রধান (ডেপুটি) গোয়েন্দা ও অপারেশনপ্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনীর সাধারণ কার্যক্রমের প্রধান।

২০১৬ সালে তিনি মেজর জেনারেল সাইয়্যেদ হাসান ফিরোজাবাদির স্থলাভিষিক্ত হয়ে আইআরজিসির চিফ অব স্টাফ হন। তিনি বিপ্লবী এই বাহিনীর একটি ‘এলিট ফোর্স’-এর সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন, যাদের দায়িত্ব ছিল বিশেষ ও স্পর্শকাতর মিশন পরিচালনা করা, বিশেষ করে বিমানঘাঁটি-ভিত্তিক অভিযানের ক্ষেত্রে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা

২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বাঘেরিকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাঁকে রাশিয়ায় ড্রোন সরবরাহের অভিযোগে নিষিদ্ধ করে। এ ছাড়া কানাডা ও যুক্তরাজ্যও ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশে চলমান বিক্ষোভ দমন অভিযানের জন্য তাঁকে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

বর্তমান পরিস্থিতি

বাঘেরির মৃত্যুর পর ইরান সরকার আহমাদ বাহিদিকে (সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) অন্তর্বর্তী সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

বাঘেরির পাশাপাশি ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের প্রধান হোসেইন সালামি ও সশস্ত্র বাহিনীর উপপ্রধান গোলাম আলি রাশিদও নিহত হয়েছেন। এই হামলায় ইরানের ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানীও প্রাণ হারিয়েছেন।

এই হামলা এমন সময় ঘটল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান আগামী রোববার ওমানের মাসকটে পারমাণবিক আলোচনার আরেকটি রাউন্ড শুরু করতে যাচ্ছিল। হামলার ফলে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ; যেমন সৌদি আরব, ওমান ও কাতার এই হামলার নিন্দা জানিয়ে একে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত