Ajker Patrika

গাজায় নিহত আরও ১২০, ত্রাণকেন্দ্রগুলো যেন ‘মানব কসাইখানা’

অনলাইন ডেস্ক
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় প্রাণ হারিয়েছে আরও ১২০ জন। এ নিয়ে গাজায় প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়াল ৫৫ হাজারে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। নিহতদের মধ্যে ৫৭ জনই বিতর্কিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটিরিয়ান ফাউন্ডেশন জিএইচএফের ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও সাড়ে তিন শতাধিক।

যদিও ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে নাটকীয় সাফল্য অর্জন করেছে জিএইচএফ। তবে, শুরু থেকেই নতুন এই মানবিক সংস্থা বিতর্কিত ছিল। আর ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর পর তো তা একপ্রকার প্রতিষ্ঠিতই। প্রতিদিনই এই সংস্থার ত্রাণ নিতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে অসহায়-ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর। গণহত্যা, হতাশা আর খাদ্যের জন্য মরিয়া মানুষগুলোকে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে হত্যা করে এই বিতরণকেন্দ্রগুলো এখন ‘মানব কসাইখানা’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। গত ২৭ মে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রাফাহ ও নেৎজারিম করিডরে গড়ে ওঠা এসব কেন্দ্রে অন্তত ২২০ জন নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, নেৎজারিম করিডর এলাকায় তাদের সেনারা ‘সতর্কতামূলক গুলি’ চালিয়েছিল, যেখানেই মূলত অধিকাংশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে গাজায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। তারা ‘ক্ষুধা’কে হত্যাযজ্ঞের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা জিএইচএফের মাধ্যমে কোনো ত্রাণ সরবরাহ করবে না। জাতিসংঘের মতে, বেসরকারি ঠিকাদার এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিচালিত এই প্রক্রিয়া মানবিক মানদণ্ডের পরিপন্থী।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এই বিতরণব্যবস্থাকে দৃষ্টিভ্রম হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, গাজায় ত্রাণসহায়তা সরবরাহে তাদের মতো অভিজ্ঞ সংস্থাগুলোকে সরিয়ে রেখে জিএইচএফের মতো নতুন একটি সংস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া মানেই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।

ইসরায়েল বর্তমানে ইউএনআরডব্লিউএ এবং অন্য পুরোনো আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে।

আন্তর্জাতিক সংকট বিশ্লেষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ক্রিস নিউটন আল জাজিরাকে জানান, ইসরায়েলের এই বিশৃঙ্খল ত্রাণব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে গাজাবাসীকে ক্ষুধার্ত ও অসহায় করে দক্ষিণ দিকে ঠেলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে। নিউটন বলেন, জিএইচএফ জনপ্রতি দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ ক্যালোরি সরবরাহের কথা বলছে, তবে তা জরুরি পরিস্থিতির ন্যূনতম চাহিদার অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা নয়, বরং ত্রাণের প্রক্রিয়াকে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ আরও জোরালো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত