Ajker Patrika

ইসরায়েলে অরক্ষিত আরব বেদুইনদের আশ্রয়হীনতার করুণ চিত্র

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, ১৭: ৫৭
নেগেভ মরুভূমির দক্ষিণে একটি গ্রামের কাছে ইসরায়েলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ব্যাটারির পাশ দিয়ে গাধার পিঠে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন এক বেদুইন। ছবি: এএফপি
নেগেভ মরুভূমির দক্ষিণে একটি গ্রামের কাছে ইসরায়েলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ব্যাটারির পাশ দিয়ে গাধার পিঠে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন এক বেদুইন। ছবি: এএফপি

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। ইসরায়েলের মানুষ সার্বক্ষণিক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আতঙ্কে ভুগছে। এরই মধ্যে তেল আবিব ও হাইফার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বহু স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এই পরিস্থিতির মধ্যেও ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের আরব বেদুইন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ রয়ে গেছে সম্পূর্ণ অরক্ষিত ও অবহেলিত।

রাজধানী তেল আবিব কিংবা অন্যান্য ইহুদিপ্রধান শহরে যখন অত্যাধুনিক ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং বোমা আশ্রয়কেন্দ্রের সুষ্ঠু অবকাঠামো রয়েছে, তখন নেগেভ মরুভূমির অসংখ্য বেদুইন পরিবার যেসব গ্রামে বসবাস করে, ইসরায়েল সরকার সেসব গ্রামকে বসতি হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় না। সেখানে বাসিন্দাদের জন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। এমনকি সরকারিভাবে স্বীকৃত কোনো বাসস্থানের অধিকারও নেই তাদের।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলে বসবাসরত আনুমানিক ৩ লাখ বেদুইনের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বাস করে প্রত্যন্ত গ্রামে। এসব গ্রামকে ইসরায়েল সরকার বসতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে সেগুলো উন্নয়ন পরিকল্পনা, মৌলিক নাগরিক সেবা এবং নিরাপত্তা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ তো দূরের কথা, স্থায়ী বসতিও প্রায়শ অবৈধ অবকাঠামো হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং উচ্ছেদের নোটিশ জারি করা হয়।

ইরান থেকে ছোড়া এক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নেগেভের একটি বেদুইন গ্রামে ৭ বছর বয়সী এক শিশু গুরুতর আহত হয়েছে। তার পরিবার টিনের ছাউনি ও প্লাস্টারবোর্ড দিয়ে নির্মিত অস্থায়ী ঘরে বসবাস করে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের স্বীকৃত ইহুদি বসতিগুলোর প্রতিটি ভবনে বোমা আশ্রয়কেন্দ্র থাকার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ডিজাইন করা হয়েছে মূলত মানচিত্রে স্বীকৃত নগর এলাকাগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে। অস্বীকৃত বেদুইন গ্রামগুলো বহু বছর ধরে ‘খোলা জায়গা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। ফলে সেগুলোর দিকে ছোড়া রকেট, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয় না। তাই এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা সরাসরি হামলার শিকার হচ্ছে।

অরক্ষিত বাড়িতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বেদুইনরা। ছবি: সংগৃহীত
অরক্ষিত বাড়িতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বেদুইনরা। ছবি: সংগৃহীত

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ইসরায়েলের ভূমি ও পরিকল্পনাসংক্রান্ত বৈষম্যমূলক নীতিই বেদুইন জনগোষ্ঠীকে এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপদ আবাসন এবং স্বাস্থ্যসেবার ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে তাদের বঞ্চিত রাখা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসরায়েল সরকার বেদুইনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে প্রায়শই তাদের পরিকল্পিত শহরে স্থানান্তরের কথা বলে, যা স্বভাবতই গ্রহণ করতে নারাজ বেদুইনরা। নগরজীবনকে তারা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা ও পৈতৃক ভূমি থেকে উচ্ছেদের সমতুল্য মনে করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ ইসরায়েলের বেদুইন জনগোষ্ঠীর মধ্যে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের (পিটিএসডি) হার ইসরায়েলি ইহুদিদের তুলনায় অনেক বেশি। বোমা আশ্রয়কেন্দ্র, সাইরেন সতর্কতা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর অভাব এই মানসিক চাপকে আরও তীব্র করে তুলছে।

২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর, দক্ষিণ ইসরায়েলের বেদুইন গ্রাম উম্ম আল-খিরানে বেদুইন স্বেচ্ছাসেবকেরা কংক্রিটের রকেট শেল্টারে রং করছেন। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল
২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর, দক্ষিণ ইসরায়েলের বেদুইন গ্রাম উম্ম আল-খিরানে বেদুইন স্বেচ্ছাসেবকেরা কংক্রিটের রকেট শেল্টারে রং করছেন। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল

ইসরায়েলের কিছু মানবিক সহায়তা সংস্থা ও বেদুইন-ইহুদি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ বেদুইন গ্রামগুলোতে সীমিতসংখ্যক কংক্রিটের আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ‘অবৈধ অবকাঠামো’সংক্রান্ত বিধিনিষেধ এবং সরকারি স্বীকৃতির অভাবে এসব উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। একজন এনজিও কর্মী বলেন, ‘যতক্ষণ না সরকার এই গ্রামগুলোকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং সমতাভিত্তিক উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করছে, ততক্ষণ এই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কার্যক্রম শুধু সাগরে একফোঁটা জল।’

তথ্যসূত্র: ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত