Ajker Patrika

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঠেকাতে জেরুজালেমে নতুন ইহুদি বসতি গড়ছে ইসরায়েল

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ৩৩
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঠেকাতে জেরুজালেমে নতুন ইহুদি বসতি গড়ছে ইসরায়েল

ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণের গতি ব্যাপক বাড়িয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে দেশটি ফিলিস্তিনের অপর ভূখণ্ড গাজায় আগ্রাসন শুরুর পাশাপাশি পশ্চিম তীর, বিশেষ করে জেরুজালেমে বসতি নির্মাণ প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মূলত জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত করতেই এই পরিকল্পনা ইসরায়েলের। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ যদিও অবৈধ, তবু দেশটি সেটিকে থোড়াই কেয়ার করছে। জেরুজালেমের আশপাশে ও পশ্চিম তীরে অন্তত তিন বসতি স্থাপন প্রকল্প ইসরায়েল বিগত ছয় মাসের মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। 

ইসরায়েলের এ ধরনের অমানবিক আচরণের বিষয়টি উঠে এসেছে দেশটির মানবাধিকার সংস্থা বিমকমের সারি ক্রনিশের কথায়। তিনি বলেছেন, ‘অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিচালিত এসব প্রকল্প বিগত ছয় মাসে নজিরবিহীন গতি পেয়েছে।’ 

ক্রনিশ বলেন, ‘গত বছরের ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে পশ্চিম তীরে যেখানে অধিকাংশ ইসরায়েলি সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে সেখানে ইসরায়েলি পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ সব বাধা উপেক্ষা করে নজিরবিহীন গতিতে এই বসতি স্থাপনের বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’ 

ইসরায়েল ১৯৮০ সালে জর্ডানের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। পরে ১৯৮০ সালে অঞ্চলটিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করে নেয়। এর পর থেকেই সেখানে ধীরে ধীরে ইহুদিদের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হয় দেশটি। 

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর থেকেই জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়নের কথা জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে কথা বলছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অবৈধ বসতি স্থাপনকারীর ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েল সেটিকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যেই এমনটা করছে। 

বিগত ছয় মাসে; গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর ইসরায়েলি পরিকল্পনা বিভাগ সব মিলিয়ে তিনটি বসতির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে দুটি পূর্ব জেরুজালেমে। যা বিগত ১ দশকের বেশি সময়ের প্রথম প্রথম বসতি স্থাপনের উদ্যোগ। 

এই দুটি বসতি মূলত ইসরায়েলের উচ্চ নিরাপত্তার কিদমাত জায়নের বর্ধিত অংশ এবং জেরুজালেমের পূর্ব দিকে অবস্থিত ফিলিস্তিনি এলাকা রাস আল-আমুদের খুবই কাছে অবস্থিত। গার্ডিয়ানের কাছে আসা নথি থেকে দেখা গেছে, ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে হামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কিদমাত জায়ন প্রকল্প বাড়ানোর অনুমতি দেয়। 

এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি অঞ্চল বাইত সাফাফার পাশে পূর্ব জেরুজালেমে গিভাত হামাতোস ও গিভাত শাকেদ নামে দুটি আবাসন প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক বিরোধিতার কারণে দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় গিভাত হামাতোস প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার পর মাস খানিক আগে তা আবারও ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছে। অবশ্যই ২০২০ সালে থেকেই এই প্রকল্পের কাজ নতুন করে শুরু হয়েছিল। তবে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি এই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। 

বাইত সাফাফার যে অংশে এই প্রকল্প চলমান সেখানে কোনো ফিলিস্তিনির সুউচ্চ দালান তৈরির অনুমোদন নেই। কিন্তু ইসরায়েল ঠিকই ৭০০ সুউচ্চ দালান নির্মাণ প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ দিলেও কানে তুলছে না জেরুজালেম পৌর কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে বাইত সাফাফার বাসিন্দা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতা আহমেদ সালমান (৭১) বলেন, ‘আমাদের পরিবার এখানে আড়াই শ বছর ধরে আছে...কিন্তু এখন আমি দেখতে পাচ্ছি না, কীভাবে আমার সন্তান ও নাতি-নাতনিরা এখানে জীবন কাটাবে।’ 

আহমেদ সালমান আরও বলেন, ‘একসময় পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা নষ্ট হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর পর তাঁরা আমাদের সব আপত্তি অগ্রাহ্য করে প্রকল্পের অনুমতি দিয়েছে। আমরা আবারও আবেদন করেছি, কোনো আশা নেই আর।’ 

এদিকে বাইত সাফাফার কাছে লোয়ার অ্যাকুইডাক্ট নামে আরও একটি আবাসন প্রকল্প চালু করেছে ইসরায়েল। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর এই লোয়ার অ্যাকুইডাক্ট প্রকল্পের অনুমতি দেওয়া হয়। 

এসব প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জেরুজালেমে অবস্থিত ইসরায়েলি মানবাধিকার এনজিও ‘ইর আমিমের’ কর্মী অ্যামি কোহেন বলেন, ‘অনেক বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা কৌশলগতভাবে পূর্ব জেরুজালেমের দক্ষিণের এলাকাগুলো ঘিরে করা হয়েছে। এখানে বসতি নির্মিত হলে তা ফিলিস্তিনিদের অবস্থানকে আরও সংকুচিত করবে। 

অ্যামি কোহেন আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পগুলো বেথলেহাম ও দক্ষিণ পশ্চিম তীর থেকে পূর্ব জেরুজালেমের (ফিলিস্তিনিদের) সরাসরি প্রবেশ বন্ধ করে দেবে। এ ধরনের পদক্ষেপগুলো পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি কার্যকর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলোকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ 

উল্লেখ্য, জেরুজালেমের জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ, যার ৪০ শতাংশই ফিলিস্তিনি। তবে ইসরায়েল সরকারের পরিকল্পনা হলো, জেরুজালেমে ইসরায়েলি ইহুদিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা। এর আগে, ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল জর্ডানের কাছ থেকে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। পরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করে নেয়। কিন্তু বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃত নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কট্টরপন্থী টিএলপিকে নিষিদ্ধ করল পাকিস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
১৩ অক্টোবর পাকিস্তানের লাহোরে টিএলপির বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়। ছবি: এএফপি
১৩ অক্টোবর পাকিস্তানের লাহোরে টিএলপির বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়। ছবি: এএফপি

কট্টরপন্থী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানকে (টিএলপি) আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার। আজ শুক্রবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের কাছে এই প্রজ্ঞাপনের একটি কপি এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, ফেডারেল সরকার বিশ্বাস করে, টিএলপি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত এবং এ-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাই সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৯৭-এর ধারা ১১বি (১)(এ) অনুযায়ী টিএলপিকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে পাঞ্জাব প্রদেশ সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী টিএলপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয় ফেডারেল মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, এই সিদ্ধান্ত একযোগে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভাকে জানায়, টিএলপি বারবার সহিংসতা উসকে দিয়েছে এবং দেশব্যাপী অস্থিরতা তৈরি করেছে।

২০১৫ সালে টিএলপি একটি আন্দোলনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৬ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। টিএলপি পাকিস্তানে বিতর্কিত একটি ইসলামপন্থী দল, যারা প্রায়ই সহিংস বিক্ষোভের জন্য পরিচিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে টিএলপি আলোচনায় আসে দেশের ধর্ম অবমাননা আইনের (ব্লাসফেমি আইন) পক্ষে প্রচার চালিয়ে। এর পর থেকে দলটি বেশ কয়েকবার সহিংস বিক্ষোভ করেছে, বিশেষত বিদেশে কোরআন অবমাননার ঘটনায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২১ সালের নিষেধাজ্ঞা ছয় মাস পর তুলে নেওয়া হয়েছিল—শর্ত ছিল, দলটি আর সহিংসতায় জড়াবে না। কিন্তু তারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ইমরান খানের তৎকালীন সরকার সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় টিএলপিকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩৩
ছবি: এনডিটিভি
ছবি: এনডিটিভি

ভারতের মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় একটি হাসপাতালে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এক নারী চিকিৎসক ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। গত পাঁচ মাসে পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) তাঁকে চারবার ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করে গেছেন তিনি।

ওই চিকিৎসক এসআই গোপাল বাদনের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ বাঁ হাতের তালুতে লিখে গেছেন।

ওই চিকিৎসক লিখেছেন, বাদনের লাগাতার হয়রানিই তাঁকে নিজের জীবন দিতে বাধ্য করেছে। এ ছাড়া আরও এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রশান্ত বাংকারের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ হাতে লিখে যান ওই নারী।

তাঁর হাতে লেখা ছিল, ‘পুলিশ ইন্সপেক্টর গোপাল বাদনেই আমার মৃত্যুর কারণ। সে আমাকে চারবার ধর্ষণ করেছে। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে সে আমাকে ধর্ষণ করেছে। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সাতারা জেলায় ফাল্টান মহকুমা হাসপাতালে মেডিকেল কর্মকর্তা ছিলেন ওই চিকিৎসক। আত্মহত্যার কয়েক মাস আগে গত ১৯ জুন ফাল্টান সাবডিভিশনাল অফিসের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশকে (ডিএসপি) লেখা এক চিঠিতে একই ধরনের অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

চিঠিতে ওই চিকিৎসক ফাল্টান গ্রামীণ পুলিশ বিভাগের দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ আনেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান।

চিঠিতে তিনি গোপাল বাদনে, সাবডিভিশনাল পুলিশ ইন্সপেক্টর পাটিল ও অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ ইন্সপেক্টর লাদপুত্রের নাম উল্লেখ করেন।

চিঠিতে ওই চিকিৎসক বলেছিলেন, ‘চরম মানসিক চাপের মধ্যে আছি। অনুরোধ করছি, গুরুতর বিষয়টি তদন্ত করা হোক এবং দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

একাধিক সূত্র বলছে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নির্দেশে গোপাল বাদনেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল রাতের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ মহারাষ্ট্রজুড়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

রাজ্য কংগ্রেস নেতা বিজয় নামদেভরাও ওয়াদেত্তিবার এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বিজয় নামদেভরাও বলেন, ‘যখন রক্ষকই ভক্ষক হয়! পুলিশের কাজ হলো সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু তারাই যদি একজন নারী চিকিৎসককে নির্যাতন করে, ন্যায়বিচার তাহলে কীভাবে হবে? মেয়েটি যখন অভিযোগ করেছিল, তখন কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? রাজ্য সরকার বারবার পুলিশকে আড়াল করছে। ফলে পুলিশের নৃশংসতা বাড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেষ হলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মহাসম্মেলন, ইশতেহারে তিন বিষয়ে জোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বৃহস্পতিবার শেষ হলো চার দিনব্যাপী মহাসম্মেলন। ছবি: সিনহুয়া
বৃহস্পতিবার শেষ হলো চার দিনব্যাপী মহাসম্মেলন। ছবি: সিনহুয়া

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) চার দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির প্লেনাম (পূর্ণাঙ্গ সভা) শেষ হলো গতকাল বৃহস্পতিবার। এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং।

সভা শেষে প্রকাশিত ইশতেহারে চীনের পরবর্তী পঞ্চবার্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এই ইশতেহার থেকে চীনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, সামরিক শুদ্ধি অভিযান এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান বার্তা পাওয়া যায়।

ধারণার চেয়েও বড় হতে পারে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান

প্লেনাম বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির ২০৫ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ১৬৮ জনের উপস্থিতি চীন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে জল্পনা বাড়িয়েছে। প্লেনামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সভায় গুরুতর কারণ ছাড়া এতো নেতার অনুপস্থিতি স্বাভাবিক নয়। জানা গেছে, একজন সদস্যের মৃত্যু এবং ১০ জন বহিষ্কারের পরও ২৬ জন ক্যাডার অনুপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, অনুপস্থিত ছিলেন কয়েক ডজন ‘বিকল্প’ প্রতিনিধি। এই বৃহৎ অনুপস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, পার্টির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা পরিদর্শন দলগুলোর সর্বশেষ ‘দুর্নীতি বিরোধী’ অভিযানে সরকারিভাবে ঘোষিত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অপসারিত হয়েছেন।

সেনাবাহিনীতেও চিত্রটি অত্যন্ত স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদমর্যাদার ৩৩ জন জেনারেলের মধ্যে ২২ জন প্লেনামে যোগ দেননি। যদিও ৮ জনের অপসারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, বাকি ১৪ জনের অনুপস্থিতি রহস্যজনক।

এই ঘটনাকে সি চিনপিংয়ের শক্তি না দুর্বলতা হিসেবে দেখা হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। এটি কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন একজন নেতার পদক্ষেপ, নাকি পদমর্যাদা নির্বিশেষে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত একজন দৃঢ় নেতার ইঙ্গিত? তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—পার্টির পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে এই অভিযান থামবে না। কেন্দ্রীয় নীতি গবেষণা কার্যালয়ের পরিচালক জিয়াং জিনকুয়ান জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবিচল দৃঢ়তা বজায় রাখা হবে, এর কোনো শেষ সীমা নেই।

প্রযুক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে চীনের ঝোঁক

ইশতেহারে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো ‘বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি’ অর্জন করা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য বিরোধের কারণে চীন বিশেষত কম্পিউটার চিপ এবং উন্নত সফটওয়্যার-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাচ্ছে। সিপিসি-র এই পদক্ষেপের মূল কথা হলো: কোনো বিষয়ে সন্দেহ থাকলে, তা নিজেদেরই তৈরি করতে হবে।

সিপিসি নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াও এটিকে স্পষ্ট করে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ শব্দ উল্লেখ করে বলেছে, ‘দেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বৃহত্তর স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও শক্তি অর্জন করতে হবে এবং নতুন গুণগত উৎপাদনশীল শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে।’ সি চিনপিংয়ের এই ‘নতুন গুণগত উৎপাদনশীল শক্তি’ সামরিক প্রয়োগসহ উচ্চ-স্তরের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে বোঝায়, যা বেসরকারি খাত, রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ এবং পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মধ্যে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গড়ে উঠবে। এর মূল লক্ষ্য হলো—আমেরিকান নির্ভরতা ছাড়াই উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করা।

আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা। ছবি: সিনহুয়া
আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা। ছবি: সিনহুয়া

স্থানীয় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের আরেকটি বড় প্রভাব হলো রপ্তানি বাজার হারানো। চীন ঐতিহ্যগতভাবে রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এটি অর্থনীতির জন্য একটি কঠিন ধাক্কা। অর্থনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিচ্ছিলেন যে চীনকে অভ্যন্তরীণ ভোগ বা ব্যয়ের ওপর বেশি জোর দিয়ে অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে হবে।

আমেরিকান শুল্কের কারণে চীনে তৈরি পণ্যের রপ্তানি কিছুটা কমেছে। এই ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে, চীন এখন তার বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে মনোযোগ দিতে চাচ্ছে। ইশতেহার অনুযায়ী, দেশে একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করতে হবে এবং উন্নয়নের একটি নতুন প্যাটার্ন তৈরি করতে দ্রুত কাজ করতে হবে।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আবাসন সংকট এবং উচ্চ বেকারত্বের কারণে যখন জনগণ সঞ্চয় করতে বেশি আগ্রহী, তখন তাদের কীভাবে বেশি ব্যয় করতে উৎসাহিত করা হবে—সে বিষয়ে এই বৈঠকে কোনো সুনির্দিষ্ট নতুন ধারণা উঠে আসেনি। একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরির কথা বলা হলেও, বাস্তবে তা কার্যকর করতে কী পদক্ষেপের প্রয়োজন সেটি স্পষ্ট নয়।

সূত্র: বিবিসি

বিষয়:

চীন
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

একসঙ্গে দুই চাকরি: যুক্তরাষ্ট্রে ৪৯ লাখ রুপি আয়ের পর ধরা খেলেন ভারতীয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মেহুল গোস্বামী। ছবি: এনডিটিভি
মেহুল গোস্বামী। ছবি: এনডিটিভি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গোপনে ঠিকাদার হিসেবে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিযোগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩৯ বছর বয়সী মেহুল গোস্বামী নামের ওই নাগরিকের বিরুদ্ধে করদাতাদের অর্থ অপচয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের পুলিশের মহাপরিদর্শকের কার্যালয় এবং সারাটোগা কাউন্টি শেরিফের কার্যালয়ের যৌথ তদন্তে জানা গেছে, মেহুলের এই অবৈধ কার্যকলাপের ফলে করদাতাদের ৫০ হাজার ডলার (প্রায় ৪০ লাখ রুপি) অপব্যবহার হয়েছে।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেসের জন্য দূর থেকে কাজ করতেন মেহুল। এটিই ছিল তাঁর মূল চাকরি। কিন্তু পাশাপাশি ২০২২ সালের মার্চ থেকে সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি গ্লোবালফাউন্ড্রিজে ঠিকাদার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

একটি বেনামি ই-মেইল থেকে বিষয়টি ফাঁস হলে মেহুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

পুলিশের মহাপরিদর্শক লুসি ল্যাং বলেন, সরকারি কর্মচারীদের সততার সঙ্গে জনগণের সেবা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেহুল গোস্বামীর এহেন আচরণ সেই আস্থার গুরুতর লঙ্ঘন। সরকারি চাকরিতে থাকার সময় দ্বিতীয় পূর্ণকালীন চাকরি করা সরকারি সম্পদ ও করদাতার অর্থের অপব্যবহার।

১৫ অক্টোবর সারাটোগা কাউন্টি শেরিফ কার্যালয় মেহুলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত