Ajker Patrika

বিশ্বে প্রথম ভোটে বিচারক নির্বাচিত করছে মেক্সিকো

অনলাইন ডেস্ক
মেক্সিকোতে বিচারক নির্বাচন পদ্ধতির বিরুদ্ধে স্থানীয়দের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
মেক্সিকোতে বিচারক নির্বাচন পদ্ধতির বিরুদ্ধে স্থানীয়দের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

বিশ্বের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ হিসেবে সরাসরি জনগণের ভোটে সব পর্যায়ের আদালতের বিচারক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেক্সিকো। এই বিষয়ে একটি আইনও পাশ করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। সেই অনুসারে আগামীকাল রোববার এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তবে অনেকেই এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন অনেকে। কেউ পক্ষে, আবার কেউবা বিপক্ষে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মেক্সিকো সরকার বলছে, সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব স্তরের আদালতের বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনে সরাসরি ভোটগ্রহণ জরুরি। তাদের মতে, নজিরবিহীন ভোট দুর্নীতি ও দায়মুক্তির লাগাম টানতে এই ব্যবস্থা জরুরি। সমালোচকেরা অবশ্য বলছেন, এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করবে। তাদের আশঙ্কা, বিতর্কিত প্রার্থীদের অংশগ্রহণ করতে পারেন। যেমন, কুখ্যাত মাদক সম্রাট হোয়াকিন ‘এল চ্যাপো’ গুজম্যানের সাবেক আইনজীবী যদি ভোটে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন তবে এর পরিণতি খারাপ হতে পারে।

আগামীকাল রোববার ভোটারেরা কয়েক হাজার ফেডারেল, জেলা ও স্থানীয় বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন করবেন। বাকি পদগুলোর জন্য ২০২৭ সালে আরেকটি নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন পদ্ধতি সাধারণ নির্বাচনের মতো হলেও যে কেউ এতে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রার্থীদের আইন ডিগ্রি, আইনি বিষয়ে অভিজ্ঞতা, সুনাম এবং কোনো ফৌজদারি রেকর্ড না থাকা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে হলে ন্যূনতম ১০ বছর এবং তার নিচের আদালতগুলোর জন্য ন্যূনতম পাঁচ বছর আইন পেশায় যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা লাগবে।

বিচার বিভাগের কর্মীসহ বিরোধীরা এই সংস্কার বন্ধ করতে বেশ কয়েকটি আন্দোলন করলেও তা সফল হয়নি। ২৮ বছর বয়সী আইনজীবী অলিম্পিয়া রোহাস লুভিয়ানো বলেন, ‘বিচার এমন কিছু নয়, যার জন্য আপনি ভোট দেবেন।’ তাঁর মতে, এর জন্য অভিজ্ঞ ও বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন লোকের প্রয়োজন।

তবে রাজধানীর বিচারক মারিয়া দেল রোসিও মোরালেস ম্যাজিস্ট্রেট পদে প্রার্থী হয়ে খুশি। তিনি বলেন, ‘আমার শহর ও দেশের ভালোর জন্য আমি এটি করব।’

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাউম ভোটারেরা কম অংশগ্রহণ করবে এমন আশঙ্কাকে গুরুত্ব দেননি। এই অভিজ্ঞ বামপন্থী নেত্রী বলেন, ‘মানুষ খুব বুদ্ধিমান এবং তারা জানে কাকে ভোট দেবে।’ তবে স্থানীয় এল ইউনিভার্সাল ও এল পাইস পত্রিকার সমীক্ষা অনুযায়ী, মাত্র অর্ধেক ভোটার নির্বাচনের তারিখ জানেন এবং মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট দেবেন বলে নিশ্চিত।

অবশ্য বিচারক নির্বাচনের বিষয়টি নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পুরো বিচার ব্যবস্থা জুড়ে বিচারক নির্বাচন করা একমাত্র দেশ হতে যাচ্ছে মেক্সিকো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বলিভিয়ায় ভোটারেরা স্থানীয় পর্যায়ে কিছু বিচারক নির্বাচন করেন। মেক্সিকোতে এই সংস্কারের প্রবক্তা হলেন মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর। তিনি বিচার ব্যবস্থাকে ‘ঘৃণ্য’, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতদের স্বার্থরক্ষাকারী বলে সমালোচনা করেছিলেন।

মেক্সিকোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এসবের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো শাস্তি হয়নি। এর মধ্যে ২০১৪ সালে একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের ৪৩ জন শিক্ষার্থীর নিখোঁজ অন্যতম। অভিযোগ আছে, মাদক চোরাকারবারি ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্তৃপক্ষের হাতে তারা নিখোঁজ হয়েছিল। অনেককে গ্রেপ্তার করা হলেও কোনো দোষী সাব্যস্ত হয়নি।

নিউইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, মেক্সিকোর ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা ‘অপরাধমূলক সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অপব্যবহারের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গভীরভাবে অকার্যকর।’ লোপেজ ওব্রাডর বিচার বিভাগের, বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রায়শই বিতর্কে জড়িয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর কিছু নীতি আটকে দিয়েছিল।

অক্টোবরে ওব্রাডরের স্থলাভিষিক্ত শেইনবাউম এই ব্যাপক পরিবর্তনের কট্টর সমর্থক। তাঁর বিরোধীরা বলছেন, এটি গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নষ্ট করবে। শেইনবাউমের ক্ষমতাসীন দল এরই মধ্যে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। বিরোধীরা সতর্ক করেছেন যে, নির্বাচিত বিচারকেরা অপরাধীদের চাপের কাছে আরও বেশি দুর্বল হতে পারেন। কারণ, মেক্সিকোতে শক্তিশালী মাদক কার্টেলগুলো নিয়মিত ঘুষ ও ভয় দেখিয়ে কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে।

অধিকার গোষ্ঠী ‘ডিফেন্সরস’ প্রায় ২০ জন প্রার্থীকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক কার্টেলের সঙ্গে যোগসাজশ, দুর্নীতি ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। যদিও নির্বাচনে দাঁড়ানোর পূর্বশর্ত হলো—কোনো ফৌজদারি রেকর্ড না থাকা। এই ব্যক্তিদের মধ্যে সিলভিয়া দেলগাদোও রয়েছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দী সিনালোয়া কার্টেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ‘এল চাপোর’ সাবেক আইনজীবী। ডিফেন্সরস তাঁকে এমন এক প্রার্থী হিসেবে বর্ণনা করেছে, যিনি ‘কথিত মাদক চোরাকারবারিদের রক্ষা করেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন, সারজিসকে বললেন সেনা কর্মকর্তা

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

হঠাৎ ব্যাংকের ভেতরে সবাই অচেতন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত