Ajker Patrika

কোয়াডের পর এবার দক্ষিণ চীন সাগরকেন্দ্রিক জোট ‘স্কোয়াডে’ যেতে পারে ভারত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১০: ৫৫
ফিলিপাইনের সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল ব্রাউনার। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিপাইনের সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল ব্রাউনার। ছবি: সংগৃহীত

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত জোট কোয়াডের অন্যতম সদস্য ভারত। কোয়াড যখন এই অঞ্চলে অবস্থান ক্রমাগত শক্তিশালী করছে, তখন ভারত দক্ষিণ চীন সাগরকেন্দ্রিক আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বহুপক্ষীয় জোটে যোগ দিতে পারে। এই জোটের নাম ‘স্কোয়াড’। এর বর্তমান সদস্য দেশগুলো হলো—জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিলিপাইন। এই এখন গোষ্ঠী ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। কোয়াড জোটের বর্তমান সদস্য দেশগুলো হলো—জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। আর স্কোয়াডে ভারতের পরিবর্তনে যুক্ত হয়েছে ফিলিপাইন। ফিলিপাইন ও জাপান দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতির চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাই দেশ দুটি বেইজিংকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায় বলে জানিয়েছেন ফিলিপাইনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল রোমিও এস. ব্রাউনার।

স্কোয়াড এখনো অনানুষ্ঠানিক জোট হলেও সদস্য দেশগুলো গত এক বছর ধরে দক্ষিণ চীন সাগরে যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করে আসছে। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বহুপক্ষীয় সম্মেলন ‘রাইসিনা ডায়ালগে’ জেনারেল ব্রাউনার বলেন, ‘জাপান এবং আমাদের অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আমরা স্কোয়াড সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি, যাতে ভারত এবং সম্ভবত দক্ষিণ কোরিয়াও এতে যোগ দেয়।’

যখন জেনারেল ব্রাউনার ভারতের স্কোয়াডে যোগদানের বিষয়ে মন্তব্য করেন, তখন একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জাপানের প্রতিরক্ষা প্রধান, ভারতের নৌবাহিনীপ্রধান, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের প্রধান এবং অস্ট্রেলিয়ার যৌথ অপারেশনস প্রধান।

জেনারেল ব্রাউনার আরও বলেন, ফিলিপাইন তাদের প্রতিরোধ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইছে এবং স্কোয়াডের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। স্কোয়াডকে তিনি একটি অনানুষ্ঠানিক সহযোগিতা কাঠামো হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে সামরিক কার্যক্রম, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান এবং যৌথ মহড়া ও অভিযান পরিচালিত হয়।

ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়াকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন ফিলিপাইন ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে এবং দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষ দেখা যাচ্ছে।

চীন দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরো অংশ নিজের বলে দাবি করে এবং আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। বেইজিং পুরো সাগরটিকে তাদের একচেটিয়া অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও সামরিক অঞ্চল হিসেবে গণ্য করে, যা ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক আদালত ও জাতিসংঘের আদালত খারিজ করে দিয়েছিল।

কিন্তু চীন এই রায় প্রত্যাখ্যান করে। বেইজিং দক্ষিণ চীন সাগর সংলগ্ন দেশগুলোর—ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও ভিয়েতনামের—সার্বভৌমত্বের দাবিকেও আমলে নেয় না। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ চীন সাগর বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্য পথ, যেখানে প্রতি বছর তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য পরিবহন হয়।

জেনারেল ব্রাউনার বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে মিল খুঁজে পাই কারণ আমাদের একটি সাধারণ প্রতিপক্ষ আছে। আমি এটি বলতে ভয় পাই না—চীন আমাদের উভয়ের প্রতিপক্ষ। তাই আমাদের একসঙ্গে কাজ করা এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ।’

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিপাইন ইতিমধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেছে। জেনারেল ব্রাউনার জানান, তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় ভারতকে স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবেন।

তবে সেই বৈঠকের পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, আলোচনা চলেছে, কিন্তু স্কোয়াডে যোগদানের বিষয়টি আদৌ আলোচিত হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত