Ajker Patrika

মায়ের চিকিৎসার জন্য আসাম গিয়ে স্থানীয় যুবককে বিয়ে, নাগরিকত্বের অপেক্ষায় বাংলাদেশি নারী

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চিকিৎসার জন্য ২০০৭ সালে ভারতের আসামে গিয়েছিল বাংলাদেশের সিলেটের এক পরিবার। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে পরিবারের এক মেয়ে স্থানীয় এক যুবকের প্রেমে পড়ে। শেষমেশ তাঁকে বিয়ে করে সেখানেই থেকে যান তিনি। তবে তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ কখনোই প্রশস্ত ছিল না। ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার হিন্দুসহ ছয়টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে একটি আইন পাস করে। সেই আইনের মাধ্যমে এবার ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওই নারী।

মায়ের চিকিৎসার জন্য যখন ভারতে গিয়েছিলেন ওই নারী, তখন তাঁর বয়স অনেকটাই কম। হাসপাতালেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় আসামের বদরপুরের এক যুবকের। তিনিও তাঁর বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য শিলচরে গিয়েছিলেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার প্রক্রিয়া অনেকটাই জটিল এবং এই সময় ওই মেয়ের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন যুবকটি। সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব ও প্রেম। এদিকে মায়ের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার আগে, ওই নারী প্রেমের কথা জানান পরিবারকে।

দুজনেই হিন্দু পরিবারের হওয়ায় হিন্দু রীতি মেনে তাদের বিয়ে হয় এবং বাংলাদেশি ওই নারী থেকে যান ভারতে। পরে তাদের এক সন্তানও হয়। করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর শহরে স্বামীর সঙ্গে সুখে সংসার করছেন ওই নারী। কিন্তু ভারতের নাগরিক কখনোই হননি তিনি। এরই মধ্যে নতুন করে এনআরসির প্রক্রিয়া শুরু হয় আসামে। বহু মানুষের কাছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে নোটিশ আসে। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় আসামে। সমস্যায় পড়েন ওই নারী।

এরপর, ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ পেশ করে বর্তমান বিজেপি সরকার। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন, শিখ এবং পারসি সম্প্রদায়ের মানুষেরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আইন পাশ হলেও বহুদিন এর প্রণয়নবিধি প্রকাশ করেনি সরকার। এ বছরের মার্চে সেই আইনের প্রণয়ন বিধি প্রকাশ হয়। তারপরই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন ওই নারী।

এপ্রিল মাসে আসামের বরাক উপত্যকার বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শরণার্থী এই আইনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বদরপুরের ওই নারীও। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।

স্থানীয় আইনজীবীদের মতে, সিএএ—এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দাবি করতে গেলে আবেদনকারীকে প্রথমে প্রমাণ করতে হয়, তিনি ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে তাঁর দেশ ছেড়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এবং ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত বারোটা পর্যন্ত যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন, শুধু তারাই আবেদন করতে পারেন। ভারতে প্রবেশ করার পর এই দেশে থাকার প্রমাণও দিতে হয় এই আইনে নাগরিকত্ব চাইলে।

ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারক ধর্মানন্দ দেব জানান, গত বছর ভারতের নির্বাচন কমিশন আসামের বদরপুরের একটি অংশকে করিমগঞ্জ জেলা থেকে বাদ দিয়ে কাছাড়ের সঙ্গে জুড়ে দেয়। বদরপুরের ওই নারী প্রথমে করিমগঞ্জের বাসিন্দা হিসেবে আবেদন করেছিলেন। তবে পরে দেখা যায়, তাঁর বাড়ি কাছাড় জেলার আওতায়। ফলে তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন এবং পরে আবারও আবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা সেখানেই থাকেন। ২০০৭ সাল থেকে এদেশেই রয়েছেন তিনি। ফলে সিএএ-তে আবেদনে প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে অসুবিধে হয়নি তার। এবার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আশাবাদী শিগগিরই তিনি ভারতের নাগরিক হবেন।

ধর্মানন্দের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়নের বিধি কিছুটা অসম্পূর্ণ এবং জটিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যারা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তারা সবাই সেই দেশের নথি সঙ্গে করে আনতে পারেননি। অথচ সিএএ—এর বিধিতে বলা হয়েছে আবেদনকারীকে অন্তত এমন একটি নথি দেখাতেই হবে। হয়তো এই কারণেই অনেকে আবেদন করছেন না। আবার প্রক্রিয়াটি এতটাই জটিল, অনেকে তা সামাল দিতে পারেন না। আমরা স্বেচ্ছায় তাদের সাহায্য করছি এবং আমার হাত ধরে এখন পর্যন্ত নয়জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে একজন নাগরিকত্ব পেয়েছেন।’

ডয়চে ভেলের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই নারীর পরিবার কথা বললেও তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তাদের আইনজীবী এখনই ওই নারীর নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ, নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে হেলিপ্যাডে দেবে গেল হেলিকপ্টারের চাকা, ঠেলে তুলল নিরাপত্তাকর্মীরা

কলকাতা প্রতিনিধি  
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বাহিনী ও নিরাপত্তাকর্মীরা ঠেলে হেলিকপ্টারের চাকা গর্ত থেকে বের করে আনেন। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বাহিনী ও নিরাপত্তাকর্মীরা ঠেলে হেলিকপ্টারের চাকা গর্ত থেকে বের করে আনেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেরালার পাথানামথিট্টায় আজ বুধবার সকালে একটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে, যা মুহূর্তে সংবাদের শিরোনামে চলে এসেছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর চার দিনের কেরালা সফরের দ্বিতীয় দিনে উদ্দেশ্য ছিল বিখ্যাত শবরিমালা মন্দির দর্শন। সূচি অনুযায়ী ঠিক করা ছিল রাষ্ট্রপতির হেলিকপ্টার কেরালার নীলাক্কালে অবতরণ করবে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শেষ মুহূর্তে নির্ধারিত স্থান নীলাক্কাল থেকে বদলে প্রমাদমের রাজীব গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামকে বেছে নেওয়া হয়।

এ জন্য গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে তড়িঘড়ি করে প্রমাদমের রাজীব গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি নতুন কংক্রিট হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু নামার পরপরই ঘটে যায় এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। হেলিকপ্টারের একটি চাকা সদ্য ঢালাই দেওয়া কংক্রিটের দুর্বল অংশে আটকে যায় এবং নিচের মাটি বসে গিয়ে ছোট গর্ত তৈরি হয়। পরে আশপাশে উপস্থিত পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তাকর্মীরা তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এসে ঠেলাঠেলি করে সেই চাকা গর্ত থেকে বের করে আনেন।

টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, হেলিকপ্টারটি স্থির অবস্থায় রয়েছে, চাকা আধা বসা অবস্থায় আর চারদিক থেকে কয়েকজন কর্মী ঠেলে সেটিকে ওপরে তোলার চেষ্টা করছেন।

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দাবি, হেলিপ্যাডের কংক্রিট পুরোপুরি শুকায়নি, ফলে চাকার নিচের অংশ বসে গিয়েছিল। তবে স্বস্তির খবর, রাষ্ট্রপতি বা তাঁর সঙ্গে থাকা কেউ আহত হননি এবং সফরসূচিও ব্যাহত হয়নি। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর রাষ্ট্রপতি মুর্মু নির্ধারিত সড়কপথে পাম্বার উদ্দেশে যাত্রা করেন।

স্থানীয় প্রশাসন জানায়, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে অবতরণের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রপতির মতো উচ্চ নিরাপত্তার ব্যক্তির সফরে কীভাবে এমন ত্রুটি ঘটল? প্রশাসনিক গাফিলতি নাকি সময়ের চাপে তৈরি হেলিপ্যাডের গুণগত ত্রুটি—তা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে।

স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শেষ মুহূর্তে জায়গা বদল করি, রাতে দ্রুত হেলিপ্যাড বানানো হয়, কিন্তু কংক্রিট পুরোপুরি শক্ত হয়নি, তাই এ রকম সমস্যা হয়েছে।’

প্রমাদমের বাসিন্দারা জানান, হেলিকপ্টার ঠেলে তুলতে পুলিশ-ফায়ার সার্ভিসের ছোটাছুটি দেখে তাঁরা অবাক হয়েছেন। তবে জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিতভাবে চলেছে এবং রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারবিরোধী বড় সংস্কারের উদ্যোগ, আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের আপত্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩৭
যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারবিরোধী বড় সংস্কারের উদ্যোগ, আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের আপত্তি

ব্রিটেনে আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের সংগঠনগুলো দেশটির অর্থপাচারবিরোধী নীতিতে বড় ধরনের সংস্কারের অংশ হিসেবে তাদের ফাইন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথোরিটির (এফসিএ) তত্ত্বাবধানে আনার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। ব্রিটেনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির অর্থপাচারবিরোধী দুর্বলতা মোকাবিলায় ২৩টি সংস্থা থেকে প্রায় ৬০ হাজার আইন ও হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তদারকি দায়িত্ব সরিয়ে তা এফসিএ-এর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, যেসব সংস্থা বর্তমানে এই তদারকি করে ফি আয় করে থাকে, তারা এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এতে খরচ বাড়বে, ব্যবসায় বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দেবে এবং অনেকের ফি হারিয়ে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস ইনস্টিটিউটের (আইসিএইডব্লিউ) নিয়ন্ত্রক বোর্ডের চেয়ারম্যান পারজিন্দার বাসরা বলেছেন, এ সিদ্ধান্তে তারা ‘হতাশ।’ তাঁর ভাষায়, ‘এটি প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি চাপ ও খরচ তৈরি করবে, যা ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করবে।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর ইনস্টিটিউট শিগগিরই মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবে, যাতে এই সিদ্ধান্তের সব দিক আলোচনায় আসে এবং বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া যায়।

অনেক বিশেষজ্ঞ বহুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, যুক্তরাজ্যের পেশাজীবী সেবাখাত—বিশেষ করে আইনজীবী, হিসাবরক্ষক এবং ট্রাস্ট ও কোম্পানি সেবা প্রদানকারীদের তদারকিতে নানা সংস্থা জড়িত থাকায় এখানে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয় এবং দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থ সহজেই ঢুকে পড়ে।

অর্থ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের সর্বশেষ মূল্যায়নে দেখা গেছে, বিশেষত পেশাজীবী সেবাখাতে তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা ও অসামঞ্জস্যতা যুক্তরাজ্যের অর্থপাচারবিরোধী কাঠামোর একটি ‘গুরুতর ঝুঁকি।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের গবেষণা ও অনুসন্ধান বিভাগের প্রধান স্টিভ গুডরিচ বলেন, ‘এই সংস্কার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। যুক্তরাজ্যের ভাঙা অবৈধ অর্থ তদারকি ব্যবস্থাকে ঠিক করার পথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

অভিযানভিত্তিক সংস্থা স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, এই ক্ষমতা এফসিএ—এর হাতে গেলে ‘আইন ও হিসাবরক্ষণ খাতে বড় ধাক্কা লাগবে, কারণ এত দিন তাদের তদারকি সংস্থাগুলো তাদের প্রতি নরম আচরণ করেছে।’

তবে এ নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে ব্যয়বহুল মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে এবং এফসিএ এত বড় দায়িত্ব সামলাতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউনট্যান্টস অ্যাসোসিয়েশনের কৌশল ও পরিচালনা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ম্যাগি ম্যাকগি বলেন, ‘এই পরিবর্তন কার্যত অর্থপাচারবিরোধী প্রয়োগের দক্ষতা কমিয়ে দেবে, যা জনগণের স্বার্থবিরোধী।’

তিনি আরও বলেন, এটি হবে ‘এক বিশাল প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ’, যার সঙ্গে বাড়তি ব্যয় ও তথ্য-নিরাপত্তার ঝুঁকি জড়িত থাকবে, আর এতে ‘বিদ্যমান বহু মূল্যবান দক্ষতা হারিয়ে যাবে।’ কিছু আইন বিশেষজ্ঞও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিংসলি ন্যাপলি নামের আইন সংস্থার অর্থপাচারবিরোধী বিভাগের পরিচালক ও সাবেক সলিসিটর্স রেগুলেশন অথোরিটির কর্মকর্তা কোলেট বেস্ট বলেন, ‘আইন সেবা খাতের জন্য এফসিএ প্রকৃত তদারকি সংস্থা নয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায়, পরিবর্তন কার্যকর হতে কত সময় লাগবে, তাদের নতুন করে এফসিএ অনুমোদন নিতে হবে কি না, আর এ সময়ে অর্থপাচারবিরোধী তদারকি কীভাবে চলবে।’

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসআরএ—এর এক মুখপাত্র বলেন, তারা ‘হতাশ’ যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থপাচারবিরোধী তদারকিতে যে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ করেছে, তা আরও এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, এ সিদ্ধান্ত ‘অত্যন্ত জটিল এক নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সরল করবে।’ তবে এটি কার্যকর হতে হলে সংসদে অনুমোদন, অর্থায়নের নিশ্চয়তা এবং একটি বিস্তারিত রূপান্তর ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই পরিবর্তনের সময়সূচি ‘পার্লামেন্টের সময়সূচির ওপর নির্ভরশীল’ বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তারা আরও বলেছে, এফসিএ-কে নতুন দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়া হবে এবং নভেম্বর মাসে অতিরিক্ত তদারকি ক্ষমতা নিয়ে পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সিটি মন্ত্রী লুসি রিগবি বলেন, ‘পেশাজীবী সেবাখাতে ২৩টি পৃথক তদারকি সংস্থা থাকার ফলে নজরদারি ও প্রয়োগে অসামঞ্জস্য তৈরি হয় এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জটিল হয়ে ওঠে।’

এফসিএ-র বাজার তদারকি ও প্রয়োগ বিভাগের যৌথ নির্বাহী পরিচালক স্টিভ স্মার্ট বলেন, এই পরিবর্তন ‘পেশাজীবী সেবা খাতের তদারকি সহজ করবে’ এবং ‘আমাদের অপরাধ শনাক্ত ও ব্যাহত করার সক্ষমতা বাড়াবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কয়েক প্রজন্মকে ভোগাবে গাজার স্বাস্থ্য বিপর্যয়: ডব্লিউএইচও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষের চাহিদা মোকাবিলায় সেখানে ব্যাপক পরিমাণে সহায়তা পৌঁছানো জরুরি বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষের চাহিদা মোকাবিলায় সেখানে ব্যাপক পরিমাণে সহায়তা পৌঁছানো জরুরি বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

ফিলিস্তিনের গাজায় এমন এক স্বাস্থ্য বিপর্যয় চলছে, যার প্রভাব থাকতে পারে ‘আগামী কয়েক প্রজন্ম ধরে’। এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।

বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, গাজার জনগণের চাহিদা মোকাবিলায় এখন ব্যাপক পরিমাণে সহায়তা পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। হামাসের সঙ্গে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় চিকিৎসাসামগ্রীসহ অন্যান্য সহায়তা প্রবেশের অনুমতি কিছুটা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। তবে এসব সহায়তা গাজার ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ‘অনেক নিচে’ বলে মন্তব্য করেন ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক।

তাঁর এ মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন গত শনি ও রোববার গাজায় নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। হোয়াইট হাউস যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে বর্ণনা করেছে; যার মধ্যে গাজায় সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো এবং উভয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া তা বণ্টনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তেদরোস যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানালেও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গাজায় সহায়তার প্রবাহ প্রত্যাশার তুলনায় বেশ কম।

মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, গাজার মানুষ এখন দুর্ভিক্ষ, আঘাত, ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং পানি ও পয়োনিষ্কাশন অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে সৃষ্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন। এর ওপরে আছে গাজায় মানবিক সহায়তার সীমিত প্রবেশাধিকার। সবকিছু মিলে তৈরি হয়েছে এক মারাত্মক সংমিশ্রণ, যা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ, প্রায় বর্ণনাতীত করে তুলেছে।

গাজার দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তেদরোস বলেন, দুর্ভিক্ষের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়াবহ সংকট যুক্ত হলে এটি এমন এক সংকটে পরিণত হয়, যার প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বহন করতে হবে।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএর প্রধান টম ফ্লেচার এ সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, সহায়তা সংস্থাগুলো ‘অনাহার সংকট’ সামলাতে কিছুটা অগ্রগতি করেছে। তবে আরও সহায়তা দরকার।

গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, ১০ অক্টোবরের পর থেকে ৬ হাজার ৭০০ টনের বেশি খাদ্যবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, কিন্তু এটি এখনো তাদের নির্ধারিত দৈনিক ২ হাজার টনের লক্ষ্যের অনেক নিচে।

ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, গাজায় প্রতিদিন ৬০০টি সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশ করা দরকার, কিন্তু বাস্তবে দৈনিক গড়ে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০টি ট্রাক যাচ্ছে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তেদরোস বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তাকে চলমান সংঘাত থেকে যেন আলাদা রাখা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ল্যুভর জাদুঘর থেকে চুরি হওয়া গয়নার মূল্য ১০২ মিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০৭
ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হওয়া গয়না। ছবি: এএফপি
ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হওয়া গয়না। ছবি: এএফপি

ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হওয়া গয়নাগুলোর মূল্য ১০২ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ হাজার ৪৬০ কোটি ২৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা), জানিয়েছেন দেশটির একজন প্রসিকিউটর। মিউজিয়ামের কিউরেটরের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানান তিনি।

আরটিএল রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রসিকিউটর লরা বেকো জানান, চুরি যাওয়া অঙ্কটি বিশাল। তবে শুধু অর্থমূল্যই নয়, এসব গয়না ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অমূল্য।

প্রসিকিউটর বেকো বলেন, এসব গয়নার মূল্য ঘোষণা করা হলো এই ভেবে যে মূল্য জানলে চোরেরা আশা করছি গয়নাগুলো ভাঙা বা নষ্ট করার আগে দ্বিতীয়বার ভাববে।

তিনি আরও বলেন, এসব গয়না গলানোর বা ভাঙার চিন্তা করাটা খুবই খারাপ হবে। তবে গয়না নিজেদের কাছে রাখা তাদের জন্য সহজ হবে না।

চুরি হওয়া গয়নাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৮১০ সালে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের (প্রথম নেপোলিয়ন) দ্বিতীয় স্ত্রী মারি-লুইজকে বিয়ে করার সময় উপহার দেওয়া একটি দুর্লভ পান্না হার। এই হারে ৩২টি পান্না ও ১ হাজার ১৩৮টি হীরা ছিল। একই সেটের এক জোড়া কানের দুলও চুরি হয়েছে।

আরেকটি চুরি হওয়া গয়না হলো সম্রাজ্ঞী ইউজেনির (তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী) একটি টায়রা। এতে ২১২টি মুক্তা ও প্রায় ৩ হাজার হীরা বসানো ছিল। এ ছাড়া ২ হাজার ৪০০ হীরায় সাজানো একটি বেল্ট এবং ১৮৫৫ সালের একটি সাদা হীরার ব্রোচও চুরি হয়েছে।

এ ছাড়া ফ্রান্সের শেষ রানি মেরি-অমেলির একটি নীলকান্তমণির টায়রাও চুরি হয়েছে। এই টায়রায় ছিল ২৪টি নীলকান্তমণি ও ১ হাজার ৮৩টি হীরা। টায়রাটির সেট হিসেবে থাকা একটি হার এবং এক জোড়া দুল থেকে একটি দুলও নিয়ে গেছে চোরেরা।

মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে ‘চেরি পিকার’ (ট্রাকের ওপর বসানো একধরনের হাইড্রোলিক মই) ও ‘অ্যাঙ্গেল গ্রাইন্ডার’ ব্যবহার করে জাদুঘরের জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে এই দুধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়। চোরেরা ল্যুভরের বিখ্যাত ‘অ্যাপোলো গ্যালারি’-তে ঢুকে পড়েছিল বলে জানান ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লরঁ নিউনে। তিনি বলেন, ‘এটি নিঃসন্দেহ যে চোরেরা আগেই জাদুঘরটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।’

চুরির ঘটনার পর সম্রাজ্ঞী ইউজেনির একটি রাজমুকুট ল্যুভর মিউজিয়ামের বাইরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় এটি ফেলে রেখে যায় চোরেরা। ৫৬টি পান্না ও ১ হাজার ৩৫৪টি হীরায় অলংকৃত এই রাজমুকুট এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, যত দ্রুত সম্ভব গয়নাগুলো উদ্ধার না করা গেলে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। এগুলোতে থাকা মূল্যবান ধাতু ও রত্ন ভেঙে দেশের বাইরে পাচার করার আশঙ্কা রয়েছে।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে প্যারিসের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে সোনার রেপ্লিকা চুরি হয় এবং লিমোজের এক জাদুঘর থেকে ৬৫ লাখ ইউরো মূল্যের পোর্সেলিন হারিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত