Ajker Patrika

বিজেপি আড়াই শ আসনও পাবে না এবার, দাবি ভারতীয় নির্বাচন বিশ্লেষকের

আপডেট : ১৩ মে ২০২৪, ২১: ৪০
বিজেপি আড়াই শ আসনও পাবে না এবার, দাবি ভারতীয় নির্বাচন বিশ্লেষকের

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ সোমবার। পর্যায়ক্রমে আরও তিন ধাপে এই নির্বাচন শেষ হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি আশা করছে, এবার ৪০০ আসনের বেশি পেয়ে তারা আবারও সরকার গঠন করবে। তবে নির্বাচনে মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে বিজেপির এমন আশাকে দুরাশা বলছেন ভারতীয় সিফোলজিস্ট বা নির্বাচন বিশেষজ্ঞ যোগেন্দ্র যাদব। বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে এমন মত দিয়েছেন তিনি। 

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ভোটের বুথফেরত জরিপ ও জনমত সমীক্ষা করার বিষয়ে যোগেন্দ্রের অভিজ্ঞতা প্রায় ৩০ বছরের। ভোটের আগে জনমত যাচাইয়ের জন্য তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন। লোকনীতি নামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থাও এ ধরনের জরিপ পরিচালনা করে। 

আজ যোগেন্দ্র দাবি করেছেন, ভারতীয় নির্বাচনের পাশা বদলানো শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে তাঁর মনে হয়েছে, এবার বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে অনেক কম আসন পাবে। 

ভারতের ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ২৭২টি আসনে জেতা জরুরি। তবে যোগেন্দ্র মত দিয়েছেন, ২৭২ আসনের চেয়েও অনেক কম আসন পাবে এবার বিজেপি। এমনকি শরিকদের (এনডিএ) নিয়েও এবার সরকার গঠনে ব্যর্থ হতে পারে নরেন্দ্র মোদির দল। গত নির্বাচনে ৩০৩ আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। 

যোগেন্দ্র জানান, কর্ণাটকে মোট ২৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে গত নির্বাচনে বিজেপি ২৬টি আসনে জয় পেয়েছিল। এবার অন্তত ১০টি আসন সেখানে হারাতে চলেছে দলটি।

মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসনের মধ্যে ৪২টিতে জিতেছিল মোদির দল। যোগেন্দ্র দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্রে খুব কম করে হলেও এবার ২০টি আসন হারাতে চলেছে দলটি। অর্থাৎ খুব বেশি হলে ২২টি আসনে জিততে পারে তারা। 

রাজস্থানে ২৫ আর গুজরাটে ২৬টি লোকসভা আসন রয়েছে। গত নির্বাচনে এই ৫১টি আসনের সব কটিতেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। তবে এবার সেখানে তারা ১০টি আসন হারাতে চলেছে বলে মত দিয়েছেন যোগেন্দ্র।

এদিকে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি ও হিমাচল প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন যোগেন্দ্র। তিনি জানান, চারটি রাজ্যেই বিজেপি এবার বেশ চাপে আছে। বিশেষ করে, হরিয়ানায় সবচেয়ে বেশি চাপে আছে দলটি। এই রাজ্যের ১০টি আসনের মধ্যে গত নির্বাচনে ১০টিতেই জিতেছিল তারা। কিন্তু এবার সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। এই চার রাজ্যে বিজেপির আরও ১০ আসন কমবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যোগেন্দ্র।  

নির্বাচন বিশ্লেষক আরও মত দিয়েছেন—বিজেপি মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও ঝাড়খন্ডেও কমপক্ষে ১০টি আসন হারাবে এবার। আর উত্তরাখন্ড ও উত্তর প্রদেশ মিলিয়ে মোট ৮৫টি আসনের মধ্যে দলটি গতবার ৬৯ আসন পেলেও এবার সেখানে ১৫টি আসন কমে যেতে পারে। 

শুধু যোগেন্দ্র নন, প্রথম তিন দফার ভোটের পর উত্তর প্রদেশে বিজেপির পক্ষে পরিস্থিতি অনুকূল নয় বলে মত দিয়েছিলেন আরও বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষক। 

বিজেপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বিহারেও গিয়েছিলেন যোগেন্দ্র। পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে ঘুরে আসার পর তাঁর মনে হয়েছে, সেখানেও এবার ভরাডুবি হবে গেরুয়া শিবিরের। বিহারে ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে গত নির্বাচনে ৩৯টিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এবার সেখানে ১৫টি আসন হারাতে পারে দলটি। যোগেন্দ্রের গণিত অনুযায়ী, বিহারে এবার ২৪টি আসনে জয় পেতে পারে ক্ষমতাসীনেরা। 

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গসহ আসাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাকি ৬ রাজ্য মিলিয়ে মোট ৬৫টি আসন রয়েছে। যোগেন্দ্রের দাবি এর মধ্যেও অন্তত ১০টি আসন কমবে বিজেপির। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গতবার জয় পাওয়া আসনগুলোর মধ্যে প্রায় ১০০টি আসনই হারাবে বিজেপি। 

তবে কিছু কিছু এলাকায় বিজেপি শিবিরের আসন বাড়বে বলেও মত দিয়েছেন যোগেন্দ্র যাদব। তাঁর মতে, তামিলনাড়ু, কেরালা ও তেলেঙ্গানা মিলিয়ে খুব বেশি হলে ৫টি আসন বাড়তে পারে দলটির। আর অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে জোটে থাকার কারণেও তাদের ১০টি আসন বাড়তে পারে। 

সর্বশেষে যোগেন্দ্রের নির্বাচনী মডেলের হিসাব বলছে, গত নির্বাচনের তুলনায় এবার ৭০ আসন কম পাবে গেরুয়া শিবির। এ হিসাবে বিজেপির আসন দাঁড়াবে ২৩৩টি। আর এনডিএ জোটের অন্য শরিকেরা পেতে পারে ৩৫টি আসন। সব মিলিয়ে ২৬৮টি আসনে জিততে পারে এই জোট। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য এই সংখ্যাটি যথেষ্ট নয়। 

যোগেন্দ্র বলেন, ‘এত দিন ভোটের ভবিষ্যতের কথা বলতাম। কিন্তু আজ দেশের ভবিষ্যতের জন্য সিফোলজিস্ট হিসাবে এই গণিত প্রকাশ করছি। সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, বিজেপি জিতে গেছে। তাই অনেকেই ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়েছেন। বাস্তব ছবিটা দেশকে দেখানো দরকার বলে আমি মনে করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত