Ajker Patrika

ভারতের বড় কোম্পানিগুলো কেন প্রায়ই উত্তরাধিকার সংকটে পড়ে

অনলাইন ডেস্ক
ভারতের প্রয়াত বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী সঞ্জয় কাপুর ও তাঁর সাবেক স্ত্রী কারিশমা কাপুর। ছবি: বিবিসি
ভারতের প্রয়াত বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী সঞ্জয় কাপুর ও তাঁর সাবেক স্ত্রী কারিশমা কাপুর। ছবি: বিবিসি

ভারতের অন্যতম শীর্ষ অটোমোটিভ যন্ত্রাংশ নির্মাতা ‘সোনা কমস্টার’-এর উত্তরাধিকার ও মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এই বিরোধের সূত্রপাত হয় সম্প্রতি কোম্পানিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় কাপুরের আকস্মিক মৃত্যুর পর থেকেই।

বিবিসি জানিয়েছে, ৫৩ বছর বয়সী সঞ্জয় কাপুর গত ১২ জুন যুক্তরাজ্যের সারে এলাকায় পোলো খেলার সময় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি ছিলেন ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মালিক। মূলত পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছিলেন বিপুল এই সম্পদ।

‘সোনা কমস্টার’-এর ১০টি উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে ভারত, চীন, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে। দিল্লির অভিজাত মহলে পরিচিত সঞ্জয় ছিলেন পোলোপ্রেমী এবং তিনি ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়ামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেও জানা যায়।

তাঁর মৃত্যুর পরই বিপুল সম্পদের উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। এই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সঞ্জয়ের মা রানি কাপুর, তিনি সোনা কমস্টারের সাবেক চেয়ারম্যান। গত ২৪ জুলাই তিনি কোম্পানির বোর্ডে চিঠি পাঠিয়ে ছেলের মৃত্যুকে ‘অত্যন্ত সন্দেহজনক’ বলে উল্লেখ করেন এবং মৃত্যুর পর বোর্ডের গৃহীত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

রানি কাপুর দাবি করেন, ছেলের মৃত্যুর পর মানসিক ও আবেগজনিত দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে জোরপূর্বক এবং কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথিতে স্বাক্ষর করানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালের একটি উইল অনুযায়ী, প্রয়াত স্বামীর সমস্ত সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী এখন তিনি। এর মধ্যে সোনা গ্রুপের প্রধান শেয়ারও রয়েছে। কিন্তু সোনা কমস্টার কর্তৃপক্ষ এসব দাবি অস্বীকার করে জানিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে রানি কাপুরের কোনো ভূমিকা কোম্পানিতে নেই। বোর্ড তাঁর চিঠি উপেক্ষা করে গত ২৫ জুলাই নির্ধারিত বার্ষিক সাধারণ সভায় সঞ্জয়ের স্ত্রী প্রিয়া সচদেবকে নন-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়। প্রিয়া ছিলেন সঞ্জয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী কারিশমা কাপুর। ২০০৩ সালে কারিশমা ও সঞ্জয় বিয়ে করলেও ২০১৬ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সঞ্জয়ের উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনায় তাই কারিশমা ও তাঁর দুই সন্তানের নামও উচ্চারিত হচ্ছে।

ভারতে পারিবারিক ব্যবসায় উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব নতুন নয়। দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানি পরিবার নিয়ন্ত্রিত। তবে এর মধ্যে মাত্র ৬৩ শতাংশ কোম্পানির স্পষ্ট উত্তরাধিকার পরিকল্পনা আছে। আর উত্তরাধিকার পরিকল্পনা না থাকার কারণে কোনো প্রভাবশালী ব্যবসায়িক পরিবারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে মালিকানা ও পরিচালনা নিয়ে প্রায়ই সংঘাত দেখা দেয়।

এর আগে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, রেমন্ড গ্রুপ, লোধা গ্রুপসহ বহু প্রতিষ্ঠানে এমন বিরোধ শিরোনাম হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই কোম্পানির সুনাম ও শেয়ারমূল্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বাজাজ পরিবার বা গদরেজ গ্রুপের মতো কিছু পরিবার সুপরিকল্পিত উত্তরাধিকার কৌশল গ্রহণ করে বিরোধ এড়াতে সক্ষম হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক স্থিতি রক্ষায় পরিবারগুলোকে সময়মতো উত্তরাধিকার প্রস্তুতি শুরু করা উচিত, যাতে পরবর্তী প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে শেখানো যায় এবং ব্যবস্থাপনা দলও ধাপে ধাপে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

এনসিপি নেতার বাড়িতে কাফনের কাপড়, চিরকুটে লেখা—‘প্রস্তুত হ রাজাকার’

৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার, অর্থ ফেরতের নির্দেশ

গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষোভ দেখালেন মৎস্যচাষি

যাচ্ছিলেন বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে, গণপিটুনিতে প্রাণ হারালেন জামাই-শ্বশুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত