Ajker Patrika

টিউলিপকে মন্ত্রী করা ছিল ‘আত্মঘাতী’, লেবার পার্টিতে আত্মগ্লানি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১: ২৮
Thumbnail image
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

লেবার পার্টির সামনে সতর্ক সংকেত সবসময়ই ছিল। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে ২০১৫ সালে টিউলিপ সিদ্দিকের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছিল, তা থেকেই সতর্ক হওয়া যেত। কিন্তু ওই ছবি লেবার পার্টির ভেতর উদ্বেগ সৃষ্টি করলেও সেটাকে গুরুত্ব দেয়নি দলে নীতিনির্ধারকরা। তাঁরা এখন আত্মগ্লানিতে ভুগছেন।

ওই সময় লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্ন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন টিউলিপ। ২০১৩ সালে এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল রাশিয়ার ক্রেমলিনে গিয়েছিল। ওই প্রতিনিধি দলে হাসিনার সঙ্গে ছিলেন টিউলিপ, খালার পাশে দাঁড়ানো টিউলিপসহ ছবিটি তখনই তোলা হয়।

এই প্রসঙ্গে ব্রিটেনের ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডকে টিউলিপ বলেন, ‘আমি খালার প্রতিনিধি দলের অংশ ছিলাম না। তাঁর সঙ্গে তেমন একটা দেখা হয় না বলে, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। ওই সাক্ষাতের সময় পুতিন বললেন, ‘তোমার পরিবার এখানে আছে? আমি একটি ছবি তুলতে চাই।’ এখন বুঝতে পারি, এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটা আমার ভাবা উচিত ছিল। আমার মনে হয়, পুতিন হয়তো ভাবছিলেন, ‘কার সঙ্গে আমি অস্ত্র চুক্তি করছি, কে এই মেয়ে?’

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে টিউলিপের সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হওয়ার পর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) কেউ কেউ এখন আফসোস করছেন। তাঁরা বলছেন, টিউলিপ সরকারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার আগে এর প্রভাব ও পরিণতি নিয়ে আরও চিন্তা করা উচিত ছিল। তাঁরা ভুল করে ফেলেছেন।

লেবার পার্টির এক এমপিকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, ‘এটি ছিল একেবারেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সবাই জানত, তিনি বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য, যাদের ক্ষমতা এবং অর্থ-প্রতিপত্তির সঙ্গে গভীর সংযোগ আছে। কে আর ভেবেছিল যে, তাকে এ দায়িত্ব দেওয়ার পর এত ঝক্কি সামলাতে হবে!’

মন্ত্রী হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিক কোনো বিধিলঙ্ঘন করেননি বলে তদন্তে বের হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বতন্ত্র উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস বলেছেন, ‘তাঁর (টিউলিপ) আর্থিক লেনদেন বা সম্পত্তির ক্ষেত্রে কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি।’

তবে ম্যাগনাস তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নিজের কর্মকাণ্ডে কোনো অনিয়ম নেই দাবির পক্ষে টিউলিপ উল্লেখযোগ্য তথ্য দিলেও অতিক্রান্ত সময় বিবেচনায় বিষয়টি দুঃখজনক। কারণ, আবাসন নিয়ে চূড়ান্ত তথ্য দেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ যে ফ্ল্যাটে বসবাস করেন, তা তার পরিবারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে এসেছে বলে জানালেও তিনি এর মালিকানা হস্তান্তরের ফর্মে স্বাক্ষর করেন।

একজন সরকারী কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘কেউ একটি ফ্ল্যাট উপহার পেলে এর উৎস সম্পর্কে জানবে না— এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’

টিউলিপের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘সরকারে ফিরে আসার জন্য আপনার দরজা সবসময় খোলা থাকবে।’

টিউলিপের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন এমা রেনল্ডস, যিনি আগে লবিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু তাকে নিয়ে বিতর্ক লেবার পার্টির মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা ব্রিটেনে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকারের চলমান প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

ডাউনিং স্ট্রিটের এই ঘটনা প্রমাণ করে, সঠিক নিয়োগের জন্য কেবল ব্যক্তিগত যোগ্যতা নয়। বরং সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর অতীত ও সম্পর্কগুলোও বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত