Ajker Patrika

৩ স্প্যানিশ ভাই-বোনকে খুনের নেপথ্যে ‘অনলাইন রোমাঞ্চ’

আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ৩০
৩ স্প্যানিশ ভাই-বোনকে খুনের নেপথ্যে ‘অনলাইন রোমাঞ্চ’

রহস্যজনক তিন খুনের ঘটনাটি সাড়া ফেলেছে স্পেনজুড়ে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই এক পাকিস্তানিকে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ। খুন হওয়া তিনজনের মধ্যে অ্যামেলিয়ার বয়স ৬৭ বছর, তাঁর বোন অ্যাঞ্জেলেসের বয়স ৭৪ বছর। আর তাঁদের ভাই জোস গুইতেরেসের বয়স ৭৭ বছর। বয়সে প্রবীণ হলেও এই তিনটি খুনের পেছনে নিহত দুই বোনের অনলাইন রোমাঞ্চই দায়ী বলে মনে করছে পুলিশ। নিহতদের বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীদের মন্তব্য এবং সন্দেহভাজন খুনির স্বীকারোক্তি থেকে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে নিজেদের বাড়িতেই খুন হন ভাই-বোনেরা। তাঁদের মরদেহগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। স্পেনের মাদ্রিদের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মোরাতা দি তাজুনা শহরে তাঁরা বাস করতেন। ছিমছাম এই শহরটিতে মাত্র ৮ হাজার মানুষের বসবাস।

সিভিল গার্ড নামধারী স্থানীয় পুলিশ বলছে, দিলওয়ার হোসাইন নামে সন্দেহভাজন খুনির কাছ থেকে বিপুল অর্থ ঋণ করেছিলেন অ্যামেলিয়া ও অ্যাঞ্জেলেস। এই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই ভাইসহ খুন হয়েছেন তাঁরা। মূলত অনলাইনে অনিয়ন্ত্রিত সম্পর্ক এবং দুর্নীতির কারণেই অনেক ঋণ করতে হয়েছিল দুই বোনকে।

অ্যামেলিয়া ও অ্যাঞ্জেলেস কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিচয় দেওয়া একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে অনলাইন প্রেমে জড়িয়ে পড়েছিলেন সেই বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকে ধারণা দিয়েছে তাঁদের প্রতিবেশী ও বন্ধুরা। এই সম্পর্কের জেরে দুই বোন মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয় দেওয়া এডওয়ার্ড নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর বন্ধুর কাছে ৪ লাখ ইউরোরও বেশি অর্থ পাঠিয়েছিলেন। ফেসবুকের মাধ্যমেই তাঁদের সম্পর্কগুলো তৈরি হয়েছিল এবং এই মাধ্যমেই মার্কিন যুবকদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হতো।

তবে অ্যামেলিয়া ও অ্যাঞ্জেলেসের ভাই জোস গুইতেরেস ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। আমেরিকায় অর্থ পাঠানোর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগসূত্রই ছিল না।

অনলাইন সম্পর্কগুলোর জন্য নিহত ভাই-বোনদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, মার্কিন প্রেমিকদের কাছে অর্থ পাঠানোর জন্য প্রায় সময়ই পরিচিত মানুষদের কাছে হাত পাততেন দুই বোন। চড়া সুদে ঋণ নিতেন স্থানীয় কারবারিদের কাছ থেকে। এমনকি তাঁরা মোরাতা দি তাজুনা শহরের মেয়র ও যাজকের কাছেও হাত পেতেছিলেন।

খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দিলওয়ার হোসেন নিহতদের বাড়িতে কয়েক মাস ভাড়া ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছিলেন দুই বোন। দিলওয়ারের দাবি অনুযায়ী, ঋণের অঙ্কটাও ছিল অনেক বেশি। এমনকি অন্য জায়গা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে দুই বোনকে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যথাসময়ে এই ঋণের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হন অ্যামেলিয়া ও অ্যাঞ্জেলেস।

ঋণের জের ধরেই এর আগে দুইবার অ্যামেলিয়াকে আঘাত করেছিলেন দিলওয়ার। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয়বার হাতুড়ি দিয়ে আঘাতের পর অ্যামেলিয়াকে হাসপাতালেও যেতে হয়েছিল। এই অভিযোগে দিলওয়ারকে সেই সময় দুই বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক। তবে সাত মাস জেলে থাকার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে মুক্ত হন তিনি।

তিন ভাই-বোনকে সপ্তাহখানেক ধরে দেখা যাচ্ছে না—প্রতিবেশীদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বাড়ির ভেতর থেকে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁদের বন্ধু এনরিক ভ্যালিল্লা বলেন, ‘অ্যাঞ্জেলেস ছিলেন একজন শিক্ষক এবং অ্যামেলিয়াও শিক্ষিত ছিলেন। তাঁরা কেউ বোকা ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন সাধারণ মানুষের মতোই, যাঁরা প্রেমে পড়েছিলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত