Ajker Patrika

রাশিয়ার যে ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের সমকক্ষ নেই পশ্চিমাদের কাছে

রাশিয়ার একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: প্রাভদা
রাশিয়ার একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: প্রাভদা

বিশ্ব যখন রাশিয়ার সাম্প্রতিক ওরেশনিক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করছে, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আসন্ন আক্রমণের জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করছে। গত ২৮ নভেম্বর পুতিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, রাশিয়া কিয়েভের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কেন্দ্রগুলোতে হামলা করতে পারে কিনা? জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট সোভিয়েত আমলের একটি কৌতুক শুনিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সোভিয়েত আমলে আবহাওয়া পূর্বাভাস নিয়ে একটি কৌতুক প্রচলিত ছিল: আজকের পূর্বাভাস—আজ যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।’

পুতিনের ভাষ্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, রাশিয়া চাইলেই ইউক্রেনের কৌশলগত নীতি নির্ধারণী কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানতে পারে। তারই প্রমাণ দিতেই যেন, রাশিয়া আজ শনিবার কিয়েভের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ—এর প্রধান কার্যালয়ে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হেনেছে।

রাশিয়ার অস্ত্রাগারে ইউক্রেনে অতিসম্প্রতি ব্যবহার করা ওরেশনিক ছাড়াও আরও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে—যেমন: কিনঝাল, বুলাভা, ইয়ারস, ইস্কান্দার এবং সারমাত। প্রতিটিরই দেশের কৌশলগত প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং এটি রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের প্রযুক্তিগত স্তরকেই উদ্ভাসিত করে।

ওরেশনিক

রুশ সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেনের কারখানাগুলোতে ওরেশনিক (হ্যাজেল গাছ) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর পর এই ক্ষেপণাস্ত্রটির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। পশ্চিমা বিশ্ব তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা করার অনুমতি ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায়।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ওরেশনিক একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যা মাখ ১০ বা শব্দের গতির চেয়ে ১০ গুণ বেশি পর্যন্ত গতিতে চলতে সক্ষম। আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটিকে পরাস্ত করতে পারবে না। কিছু সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ওরেশনিককে আরএস-২৬ রুবেজের অনুরূপ বলে মনে করেন। ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছয়টি ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং এক মেগাটন ওজনের পারমাণবিক ওয়ারহেডও বহন করতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৮ থেকে ১৯ মিনিটের মধ্যে ইউরোপের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।

কিনঝাল

রাশিয়া কিনঝাল (ড্যাগার) ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথম ব্যবহার করে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে। তবে ২০১৮ সালের মার্চে কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র রুশ ক্ষেপণাস্ত্র বহরে যুক্ত করা হয়। এটি মাক ১২ বা শব্দের গতির চেয়ে ১২ গুণ বেশি গতিতে চলতে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে মিগ-৩১ এবং এসইউ-৩৪ বিমান থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে টু-২২ এম ৩ বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হবে। ২০২২ সালে, একটি কিনঝাল মিসাইল কিয়েভে পাঁচটি প্যাট্রিয়ট লঞ্চার ধ্বংস করে। এটি ৫০০ কেজি ওজনের প্রচলিত বা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং এর পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি।

বুলাভা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ২০২৪ সালের ৭ মে আর-৩০ বুলাভা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রুশ বাহিনীতে যুক্ত করার এক আদেশে স্বাক্ষর করেন। প্রাথমিকভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ১৯৯৮ সালে তৈরি করা হয়। তবে পরীক্ষা করা হয় ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে। মূলত সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপের জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে তৈরি করা হয়। এটি এই ধরনের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র যা সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পরে তৈরি হয়। রাশিয়ার প্রজেক্ট-৯৫৫ এবং ৯৫৫-এ বোরেই সাবমেরিন এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রধান বাহক। বুলাভার পাল্লা ৯ হাজার ৩০০ কিলোমিটার এবং এটি ৬ থেকে ১০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে।

স্যাটান

আর-৩৬ এম স্যাটান একটি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এর দৈর্ঘ্য ৩৩ দশমিক ৬৫ মিটার এবং ওজন ২০৮ টন। পাল্লা ১৬ হাজার কিলোমিটার। এটি দুটি ধাপের তরল জ্বালানির ক্ষেপণাস্ত্র। এটি ১৯৭৩ সালে প্রথম পরীক্ষা করা হয়। তখন থেকেই এটি সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। ১৯৮৮ সালে আর-৩৬ এম ২ ভোভোদা নামে একটি সংস্করণ চালু হয়। আধুনিক মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এটি বেশ কার্যকর।

টোপল-এম

আরটি-২ এমপি ২ টোপল-এম একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল। যার দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৭ মিটার এবং ব্যাস ১ দশমিক ৮৬ মিটার, ওজন ৪৭ দশমিক ১ টন। এর পাল্লা ১১ হাজার কিলোমিটার। এটি তিন-স্তর বিশিষ্ট সলিড ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র। যার মূল কাঠামোটি ফাইবারগ্লাসের। এটি প্রথমবার ১৯৯৪ সালের শেষে নিক্ষেপ করা হয়। ২০১২ সালের শেষে রাশিয়ার ৬০টি সাইলোতে এবং ১৮টি মোবাইল মিসাইল সিস্টেমে এই ক্ষেপণাস্ত্র চালু ছিল।

ইয়ারস

আর-২৪ ইয়ারস ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য ২৩ মিটার এবং ব্যাস ২ মিটার, পাল্লা ১১ হাজার কিলোমিটার। প্রথম নিক্ষেপ করা হয় ২০০৭ সালে হয়। টোপল-এম এর তুলনায় ইয়ারসের একাধিক ওয়ারহেড এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা অতিক্রমের ব্যবস্থা। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ইয়ারসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে কার্যকর করে তোলে।

ইউআর-১০০এন

ইউআর-১০০এন তৃতীয় প্রজন্মের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল। এটি একাধিক স্বাধীনভাবে চলতে সক্ষম রিএন্ট্রি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। এর দৈর্ঘ্য ২৪ দশমিক ৩ মিটার দীর্ঘ এবং আড়াই মিটার ব্যাসের এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ১০৫ দশমিক ৬ টন। এটি ১০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এটিকে প্রথম পরীক্ষা করা হয় ১৯৭৩ সালের ৯ এপ্রিল বাইকোনুর পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে।

মলোদেৎস

১৫জেডএইচ৬০ মলোদেৎস একটি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এটি ২২ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ এবং ২ দশমিক ৪ মিটার ব্যাসের এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ১০৪ দশমিক ৫ টন এবং এর পাল্লা ১০ হাজার কিলোমিটার। এটি একটি তিন-স্তরের সলিড ফুয়েল আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র। এটি রেল ও স্থির অবকাঠামো থেকে ব্যবহার করা যায়। এটি ১৯৮৭ সালে সোভিয়েত আমলে রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হয়।

কেএইচ-১০১—কেএইচ-১০২

এটি নতুন প্রজন্মের কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। ৭ দশমিক ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ক্ষেপণাস্ত্রটির ব্যাস ৭৪২ মিলিমিটার এবং ওজন ২.২-২. ৪ টন। পাল্লা ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার। এটি ৪০০ কেজির দুটি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এবং দুটিই পৃথক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

বুরিয়া

কেএইচ-২২ বুরিয়া ক্রুজ মিসাইল ১৯৬০-এর দশকে প্রথম প্রস্তুত করা হয়। এটি আধুনিক ইউক্রেনীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে। এটি একটি দূর-পাল্লার সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যা টু-২২ এবং টু-৯৫ বোম্বার থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এর পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং গতি মাক ৫ বা শব্দের গতির চেয়ে ৫ গুণ বেশি। এটি শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—যেমন মার্কিন প্যাট্রিয়ট সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে পারে।

ইস্কান্দার

রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের সময় ইউক্রেনে ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করে। ২০০৭ সালে প্রথম এটিকে কমিশন করা হয়। ইস্কান্দার আকাশ প্রতিরক্ষা, কমান্ড পোস্ট এবং অবকাঠামোগত সুবিধা ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ৪৮০ কেজি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। পাল্লা ৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার।

জিরকন

৩ এম ২২ জিরকন একটি হাইপারসনিক অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্র। এর গতি মাক ৯ এবং পাল্লা ১ হাজার কিলোমিটারের বেশি। এটি ফ্রিগেট ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য জাহাজ ও সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা। এর পাল্লা ৪৫০-১০০০ কিলোমিটার, দৈর্ঘ্য ৮-৯.৫ মিটার এবং ৩০০-৪০০ কেজি ওয়ারহেড বহন করতে পারে।

সারমাত

আরএস-২৮ সারমাত একটি পঞ্চম প্রজন্মের কৌশলগত মিসাইল সিস্টেম। এটি বহু-স্তরের তরল জ্বালানির আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র। এটি বোম্বার্ডমেন্ট প্রযুক্তি এবং হাইপারসনিক আঁভাগার্দ ওয়ারহেডের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বাইপাস করতে সক্ষম। ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল এর প্রথম পরীক্ষা করা হয় এবং একই বছর এর ধারাবাহিক উৎপাদন শুরু হয়। ২০২৩ সালে এই কমপ্লেক্সটি যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়। কিন্তু ব্যবহার করা হয়নি।

ক্যালিব্র

ক্যালিব্র বা ক্যালিবার একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এই সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রকল্পগুলো ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে তৈরি। ২০১৯ সাল থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার নৌবাহিনী ব্যবহার শুরু করেছে। ভূমি থেকে নিক্ষেপ করা যায়, এই ক্ষেপণাস্ত্রের এমন একটি সংস্করণ উন্নয়নের কাজ চলছে। এর সর্বোচ্চ পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটার।

তথ্যসূত্র: প্রাভদা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাশুড়িকে রাখতে আপত্তি স্ত্রীর, যুবকের আত্মহত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শাশুড়ির দায়িত্ব নিতে আপত্তি জানিয়েছেন স্ত্রী। এ কারণে এক যুবক আবাসিক ভবনের ১৫ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের বৃহত্তর ফরিদাবাদে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

িহত ব্যক্তির নাম যোগেশ কুমার। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের বাসিন্দা। গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপিস্ট হিসাবে কাজ করতেন। ৯ বছর আগে নেহা রাওয়াত নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় বছরের একটি সন্তান রয়েছে এ দম্পতির।

যোগেশের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন তাঁর চাচা প্রকাশ সিং। তিনি বলেন, যোগেশকে তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন হয়রানি করছিলেন। তারা চাইতেন না যোগেশের মা তাদের সঙ্গে থাকুক।

প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন, যোগেশ ও নেহা আগে নয়ডাতে থাকতেন। নেহা সেখানে চাকরি করতেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মরত থাকায় সন্তানের ঠিকমতো যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না বলে যোগেশ তাঁর মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। নেহা এতে রাজি হননি।

ছয় মাস আগে যোগেশ সন্তানকে নিয়ে ফরিদাবাদের সেক্টর ৮৭-এর পার্ল সোসাইটিতে চলে আসেন। নেহা নয়ডাতে থেকে যান। এ সময় যোগেশ সন্তানের দেখভাল করতে তাঁর মাকে নিয়ে আসেন।

যোগেশের চাচা অভিযোগে আরও বলেন, এক মাস আগে ওই বাসায় এসে যোগেশের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন নেহা। সে সময় যোগেশের মায়ের সেখানে থাকা নিয়ে আপত্তি তোলেন তিনি।

পরে নেহার দুই ভাই আশীষ রাওয়াত ও অমিত রাওয়াত এসে যোগেশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে যোগেশ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে তাঁর চাচা প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন।

চাচার অভিযোগ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার যোগেশ নেহাকে নিয়ে গোয়ালিয়রে যান। ফেরার পথে নেহাকে নয়ডায় নামিয়ে দিয়ে একাই পার্ল সোসাইটির ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। পরদিন শুক্রবার রাতে পার্ল সোসাইটির ১৫ তলা থেকে লাফ দেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

এ ঘটনায় ভুপানি থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে যোগেশের স্ত্রী নেহা রাওয়াত, তাঁর বাবা-মা বীর সিং রাওয়াত ও শান্তি রাওয়াত এবং দুই ভাই আশীষ ও অমিত রাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

ভুপানি থানার এসএইচও ইন্সপেক্টর সংগ্রাম দাহিয়া বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেনাবাহিনীর বেতন দিতে ট্রাম্পকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান, রহস্যময় দাতাটি কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর এক বন্ধু তাঁকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন যাতে, মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের বেতন দেওয়া যায়। কারণ, মার্কিন সরকারে শাটডাউন তথা অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে, সরকার রাষ্ট্রীয় কোনো কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে পারছে না। তবে কে এই অর্থ দিয়েছেন তাঁর পরিচয় প্রকাশিত হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবর বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা দানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই অর্থ ১৩ লাখ ২০ হাজার সেনাসদস্যের বেতন প্রদানে ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। তবে প্রতিরক্ষা দপ্তর দাতার পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে এ নিয়ে উঠেছে নৈতিকতার প্রশ্ন।

শনিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ওই দাতা ‘আমার বড় সমর্থক’ এবং ‘মার্কিন নাগরিক।’ তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে, কারণ কংগ্রেস এখনো বাজেট অনুমোদনে ব্যর্থ। গত সপ্তাহে প্রশাসন সাময়িকভাবে সেনাদের বেতন দিয়েছে, সামরিক গবেষণার বাজেট থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে এনে। তবে মাসের শেষের বেতন দিবসে কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

রোববার অচলাবস্থার ২৫ তম দিন পার হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম অচলাবস্থাগুলোর একটি হতে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র শন পারনেল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই দান এমন শর্তে দেওয়া হয়েছে যে তা সেনাসদস্যদের বেতন ও ভাতার খরচ মেটাতে ব্যবহার করা হবে।’ তিনি জানান, দপ্তরের ‘সাধারণ উপহার গ্রহণের নীতিমালা’ অনুযায়ী এই অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে।

ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবারই দানের বিষয়টি আভাস দিয়েছিলেন, তবে তখনো দাতার নাম গোপন রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি স্বীকৃতি চান না।’ শনিবার এশিয়া সফরে রওনা হওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি এক অসাধারণ ভদ্রলোক, এক দেশপ্রেমিক, এক মহান পৃষ্ঠপোষক। তিনি প্রচারবিমুখ।’

ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি চান না তাঁর নাম বলা হোক—যা আমার পরিচিত রাজনীতির জগতে বেশ অস্বাভাবিক। সেখানে তো সবাই চায় তাদের নাম উচ্চারিত হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি ১৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন যেন সেনারা বেতন পায়। এটা বিশাল অঙ্কের অর্থ। তিনি আমার বড় সমর্থকও বটে।’

এই অর্থ সেনাপ্রতি প্রায় ১০০ ডলারের সমান। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস প্রতিরক্ষা বাজেট পুনর্বিন্যাস করে বেতন দিতে পেরেছিল, কিন্তু ৩১ অক্টোবরের পরবর্তী বেতন দিবসে কী হবে, তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কংগ্রেস এমন কোনো বিল পাস করতে পারেনি যা সেনাদের বেতন নিশ্চিত রাখবে।

অচলাবস্থার কারণে অধিকাংশ সরকারি কর্মী ছুটিতে আছেন বা বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, ১০ হাজার ডলারের বেশি দান নৈতিকতা পর্যালোচনার আওতায় আসে, যাতে নিশ্চিত করা যায় দাতার কোনো ব্যবসায়িক দাবি, মামলা, বা প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে কোনো স্বার্থ সংঘাত নেই।

বিদেশি নাগরিকের দান হলে তা আরও কঠোর যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। যদিও পেন্টাগন মাঝে মাঝে দান গ্রহণ করে, সাধারণত সেই অর্থ স্কুল, হাসপাতাল, লাইব্রেরি, জাদুঘর বা সমাধিক্ষেত্রের মতো নির্দিষ্ট প্রকল্পে ব্যয় হয়। তবে এবার সেনাবাহিনীকে বেতন দিতে নাম-গোপন দান গ্রহণে সমালোচনা উঠেছে।

সিনেটের প্রতিরক্ষা বরাদ্দ উপকমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য, ডেলাওয়্যারের সিনেটর ক্রিস কুনস বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীকে নাম-গোপন দানের অর্থে চালানো এক ভয়াবহ নজির। এতে আশঙ্কা তৈরি হয় যে আমাদের সৈন্যরা বিদেশি শক্তির হাতে ‘কেনা সৈন্যে’ পরিণত হচ্ছে কি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের নাগরিকত্ব বাতিল করল মাদাগাস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ক্ষমতাচ্যুত মাদাগাস্কারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত মাদাগাস্কারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ছবি: সংগৃহীত

গত সপ্তাহে মাদাগাস্কারে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। এবার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করেছে দায়িত্ব নেওয়া নতুন সরকার।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হেরিনৎসালামা রাজাওনারিভেলো স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, স্থানীয় আইন অনুযায়ী, যারা বিদেশি নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাদাগাস্কারের নাগরিকত্ব হারাবেন।

প্রায় এক দশক আগে ফরাসি নাগরিকত্ব লাভ করেন ৫১ বছর বয়সী রাজোয়েলিনা। এ কারণে ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তিনি ফরাসি নাগরিকত্বের কথা প্রকাশ করেন। সন্তানদের ফ্রান্সে পড়াশোনার সুবিধার জন্য এই নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন বলে যুক্তি দেখান তিনি। সে সময় নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে সেই দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি এবং জয়ী হন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট নিয়ে ‘জেন জি মাদা’ নামে তরুণদের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজোয়েলিনা প্রথমে তাঁর জ্বালানি মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন, পরে পুরো মন্ত্রিসভাকেই ভেঙে দেন। কিন্তু তাতেও তাঁর পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন থামেনি।

বিক্ষোভকারীরা আশা করেছিলেন, রাজোয়েলিনা পদত্যাগ করবেন, যাতে দেশটি একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগোতে পারে।

কিন্তু তিনি ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। শেষ পর্যন্ত কর্নেল মাইকেল রান্ড্রিয়ানিরিনার নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করা হয়। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রাজোয়েলিনা।

গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজোয়েলিনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, তিনি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ আছেন এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই আছে। তখন গুঞ্জন ওঠে, তিনি ফরাসি একটি বিমানে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের বিশ্বাস, রাজোয়েলিনা দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছেন।

এই ভিডিওর ঘণ্টাকয়েক পরেই পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে হামলা চালিয়ে সিনেট, সাংবিধানিক আদালত ও জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কেবল জাতীয় সংসদকে রেখে অন্য সব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হয়।

বর্তমানে রান্ড্রিয়ানিরিনা শপথ গ্রহণ করেছেন এবং নতুন সরকার গঠন করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মাদাগাস্কার অভ্যুত্থানের ইতিহাসে ভরা। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়। তিনি তখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এক সাবেক ডিজে। পরে সেনাবাহিনী গঠিত একটি ট্রানজিশনাল কাউন্সিল তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের বর্জিত এক ‘নির্বাচনে’ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় ‘অনন্ত যুদ্ধ শুরুর কৃত্রিম পরিস্থিতি’ তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁর এবং তাঁর দেশের বিরুদ্ধে এক ‘যুদ্ধ শুরুর কৃত্রিম পরিস্থিতি’ সাজাচ্ছে। তিনি এমন এক সময়ে এই কথা বললেন, যার আগে ওয়াশিংটন বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজটি পাঠিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের দিকে। একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভেনেজুয়েলায় ‘স্থল অভিযানের’ ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর বিষয়টি লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির বাড়ানোর মাধ্যমে বড় ধরনের উত্তেজনা উসকে দেওয়ার পরিস্থিতি নির্দেশ করছে। জল্পনা চলছে—ওয়াশিংটন হয়তো ভেনেজুয়েলার সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছে।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে মাদুরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ‘এক নতুন চিরস্থায়ী যুদ্ধ তৈরি করছে।’ আর ঠিক তার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই রণতরী একসঙ্গে ৯০টি বিমান ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার বহন করতে পারে।

ট্রাম্প কোনো প্রমাণ না দিয়েই মাদুরোকে ভেনেজুয়েলাভিত্তিক অপরাধচক্র ত্রেন দে আরাগুয়ার নেতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। জবাবে মাদুরো বলেন, ‘তারা এক বিকৃত জাল গল্প বানাচ্ছে—একটি অশালীন, অপরাধপ্রবণ ও সম্পূর্ণ ভুয়া বর্ণনার গল্প। ভেনেজুয়েলা এমন একটি দেশ, যেখানে কোকা পাতা উৎপন্নই হয় না।’

ত্রেন দে আরাগুয়া মূলত ভেনেজুয়েলার একটি কারাগার থেকে গড়ে ওঠা অপরাধী চক্র। বৈশ্বিক মাদক পাচারে এই গ্যাংয়ের কোনো ভূমিকা নেই; বরং এটি খুন, চাঁদাবাজি ও মানবপাচারের মতো অপরাধে জড়িত।

গত বছর ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে মাদুরোকে ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ তার পদত্যাগের দাবি তুলেছে। এদিকে, অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় সিআইএ-এর অভিযান অনুমোদন করেছেন এবং দেশটিতে অবস্থিত কথিত মাদকচক্রের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান বিবেচনা করছেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী দশটি নৌকায় বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে আটটি হামলা হয়েছে ক্যারিবীয় সাগরে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এসব নৌকা দেশে মাদক পাচারে জড়িত ছিল। এসব হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনো লোপেজ শনিবার জানান, দেশটি উপকূল রক্ষার জন্য সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে, যাতে কোনো ‘গোপন অভিযান’ প্রতিহত করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ৭২ ঘণ্টা আগে শুরু করা উপকূল প্রতিরক্ষা মহড়া চালাচ্ছি—যাতে আমরা শুধু বড় সামরিক হুমকি নয়, মাদক পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরির গোপন অভিযান থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারি।’

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ভেনেজুয়েলার সৈন্যরা নয়টি উপকূলীয় রাজ্যে মোতায়েন রয়েছে এবং মাদুরোর বেসামরিক মিলিশিয়ার এক সদস্যের হাতে রুশ তৈরি ইগলা-এস কাঁধে বহনযোগ্য বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। পাদরিনো বলেন, ‘সিআইএ শুধু ভেনেজুয়েলায় নয়, সারা বিশ্বেই সক্রিয়। তারা যেকোনো অঞ্চল থেকে অসংখ্য সিআইএ-সম্পৃক্ত ইউনিট পাঠাতে পারে, কিন্তু তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।’

গত আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র আটটি নৌযান, দশটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন মোতায়েন করেছে কথিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে। তবে কারাকাসের দাবি, এই কর্মকাণ্ড আসলে সরকার উৎখাতের ছদ্মবেশী পরিকল্পনা।

শনিবার মাদুরো জানান, তিনি বিরোধী রাজনীতিক লিওপোলদো লোপেজের নাগরিকত্ব বাতিল ও পাসপোর্ট জব্দের জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাঁর অভিযোগ, লোপেজ দেশটিতে বিদেশি আগ্রাসনকে উৎসাহিত করছেন। ২০২০ সাল থেকে স্পেনে নির্বাসিত লোপেজ প্রকাশ্যে ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ পাঠানো এবং মাদকবাহী জাহাজে হামলার সমর্থন করেছেন।

২০১৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার পর লোপেজ তিন বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। পরে তাকে ১৩ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয় ‘ষড়যন্ত্র ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার’ অভিযোগে। পরে তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়, এবং ২০২০ সালে সামরিক সহায়তায় মুক্তি পেয়ে দেশত্যাগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত