
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। সময় যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তত বাড়ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে ইউক্রেনীয় এক বাবার ডায়েরিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো—
২৪ ফেব্রুয়ারি-যুদ্ধের প্রথম দিন
হামলার প্রথম দিনটি ছিল আমার ১৫ তম বিয়ে বার্ষিকী। আমরা বন্ধুদের সঙ্গে একটি পার্টির পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা একটি রেস্তোরাঁয় একটি টেবিলও বুক করেছিলাম। কিন্তু খুব সকালে ৫টার মতো হবে তখন—আমার পরিবার এবং ১০ বছরের শিশু রুশ রকেটের শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। প্রথম চিন্তা ছিল, আমরা যা নিতে পারি, তা নিয়ে চলে যাব। কিন্তু সমস্ত রাস্তা যানবাহনে অবরুদ্ধ ছিল, এবং তারা সারাক্ষণ আমাদের ওপর গোলাবর্ষণ করছিল। এটা ভয়ংকর ছিল। পরে আমরা কাছাকাছি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কে গিয়েছিলাম এবং সেখানে সারা দিন কাটিয়েছিলাম।
প্রথম দিনে সেখানে প্রায় ৬০ জন লোক ছিল। সেখানে ঠান্ডা ছিল। সেখানে কোনো গরম হওয়ার উপায় ছিল না এবং মানুষ মেঝের ওপর শুয়ে ছিল। মাঝেমধ্যে আমরা বিভিন্ন জিনিস নিতে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাই। আমরা ১৪ তলায় থাকতাম এবং লিফটটি তখনো কাজ করছিল। সেই প্রথম দিন আমরা কুকিজ এবং ক্রিস্পের মতো জিনিস খাচ্ছিলাম। আমরা ওই দিন আমাদের গাড়িতে পার্কিংয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমার ছেলে পেছনের সিটে, আমার স্ত্রী এবং আমি সামনে, অর্ধেক বসে এবং অর্ধেক শুয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা। এটি আমার জন্য আরামদায়ক ছিল না।
ওই সময় আমরা আমাদের বিয়ে বার্ষিকী সম্পর্কে চিন্তা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের একসঙ্গে থাকা দুর্দান্ত ১৫ বছর সম্পর্কে ভাবছিলাম। আমাদের ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট ১০ বছরের ছেলে রয়েছে, যাকে আমরা খুব ভালোবাসি। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিনটি ছিল শুধু ভয়ের।
২৫ ফেব্রুয়ারি
গাড়িতে ঘুম থেকে উঠে ভয়ংকর অনুভূতি হয়েছিল। আমার পিঠে এমন ব্যথা হচ্ছিল, যা আগে কখনো হয়নি। সকালে বোমা বিস্ফোরণ ছিল না। প্রায় শান্তই ছিল। ‘শান্ত’ শব্দের অর্থ হলো—তখন ১০ টির বদলে মাত্র দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল। এই সুযোগে আমরা বাড়িতে গিয়ে তাড়াতাড়ি সকালের নাশতা করে নিলাম। ইউক্রেনীয়রা বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ এবং আমরা আমাদের প্রায় সব প্রতিবেশীকে খুব ভালোভাবে চিনি। তাই যারা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেনি, তাদের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা শুরু করি। এই কাজের মধ্যে ছিল অ্যাপার্টমেন্টে পানির বোতল ভর্তি করা, খাবার আনা, মায়েরা যাতে শিশুদের খাওয়াতে পারে, তার জন্য গাড়ির পার্কিংয়ে জায়গা তৈরি করা এবং নারীদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য জায়গা তৈরি করা।
ওই দিনই আমরা বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু ট্রাফিকের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আর আমরা ভাবছিলাম, হয়তো এই পাগলামি বন্ধ হবে। কিন্তু সেই রাতে আমরা আবার আন্ডারগ্রাউন্ডে ঘুমালাম।
২৬ ফেব্রুয়ারি
তৃতীয় দিন কিছু বন্ধু গাড়ি পার্কে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাওয়ার এবং স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা গোসল করতে, খাবার রান্না করতে, ছেলেকে পড়াতে এবং তাকে অনলাইনে দাবা খেলতে দিতে চেয়েছি। আমরা আমাদের জানালা টেপ দিয়ে আবৃত করে দিই। এদিন থেকে লিফট আর কাজ করছিল না। আমার ছেলে খুব সাহসী। সে কান্না না করার চেষ্টা করছে। সে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতবারই জানালার বাইরে থেকে সাইরেন বাজছে, আমরা ততবারই আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ছুটছিলাম। আমি দেখতে পাচ্ছি আমার ছেলে ভয় পেয়েছে। কিন্তু সে আতঙ্কিত হচ্ছে না।
সেদিন আমি আমাদের উঠোনের বাইরে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমরা কাছাকাছি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। পরে আমি টেলিগ্রামের মাধ্যমে খবরটি পড়লাম যে, রুশ সেনারা শহরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তাতে বলা হয়েছিল যে, রুশ সেনারা শহরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
যে মুহূর্তে আপনি গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন, আপনি ভয় পাচ্ছেন না। কারণ, আপনার ভয় পাওয়ার সময় নেই। আপনাকে কেবল আপনার ছেলেকে গাড়ির পার্কে নিরাপদে নিয়ে যেতে হবে।
২৭ ফেব্রুয়ারি
রোববার নাগাদ আশপাশের কিছু ছোট দোকান আবার খুলেছে। এই যুদ্ধ আমাদের বাস্তবতাকে রূপান্তরিত করেছিল। ওই সময় একটি খোলা দোকান বা গ্যাস স্টেশনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো মনে হয়েছিল। কিন্তু আপনি এসব স্থানে যখন সারিবদ্ধ হন, তখন আপনাকে হত্যা করা হতে পারে।
দোকানগুলোতে সরবরাহ কম ছিল। কিন্তু শেলফগুলো খালি ছিল না। পূর্ববর্তী গ্রাহকদের ধন্যবাদ। তবে যারা এখনো সারিবদ্ধ রয়েছে, তাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে। আমি গাড়ির পার্কিংয়ে এসে আমাদের পরিবার এবং অন্যান্য লোকেদের মধ্যে খাবার ভাগ করে নিলাম। এখন মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রত্যেকের জন্য আরও খাবার, পানি, টয়লেট পেপার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে শুরু করেছি।
ওই রাতে আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সবাইকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছি যে, তারা নিরাপদে রয়েছে কি না। আমার স্ত্রী এবং ছেলে আমাদের বেডরুমে শুয়েছিল, এবং আমি আমার ছেলের ঘরে শুয়েছিলাম। আমরা ছেলের ঘরের কাছেই সাইরেন ছিল। আমি যে এটি শুনছিলাম সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ঘুমানোর সময় জানালা খোলা রেখেছিলাম। ঠিক আছে, কিন্তু আপনি এটিকে সত্যিই ঘুম বলতে পারবেন না। কারণ, তখন আপনি শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। আপনি নথি এবং খাবারসহ একটি ব্যাগের পাশে ঘুমের পোশাক পরে ঘুমাচ্ছেন। এখানে সবাই ক্লান্ত।
২৮ ফেব্রুয়ারি
সোমবার শহরের কয়েকটি বড় দোকান কয়েক ঘণ্টা খোলা ছিল। আমি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলাম। একা গিয়েছিলাম। তবে আমার স্ত্রীর ফোনে সংযুক্ত ছিলাম, যাতে ক্রমাগত আমার ফোন থেকে আমার অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে।
প্রতিবারই পরিচয়পত্র পরীক্ষার জন্য একটি রাস্তার মোড়ে আমাকে থামানো হয়েছিল। আমি আমাদের সেনাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনাদের কী দরকার?’ আমি তাদের জন্য সিগারেট এবং পানি এনেছিলাম। এই লোকেদের আমি ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের রক্ষা করছেন, ইউক্রেনকে রক্ষা করছেন। ঠান্ডায় বাইরে ঘুম ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছেন।
রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেন ছোট এবং আমাদের সেনাবাহিনী অনেক ছোট। তবে এখানকার মানুষের সাহস বেশি। তারা দেখিয়েছে যে, তারা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত। এটি আমার আশা জোগাচ্ছে।
১ মার্চ
মঙ্গলবার আমি যখন গ্যাস নিয়ে ফিরছিলাম, তখন আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে। সে আমাকে বলে, আমরা হলোকাস্ট মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স থেকে ধোঁয়া আসতে দেখেছি। আমি এ খবর শুনে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। কারণ, আমি ইহুদি। আমার বাবার বয়স ৮৩। তিনি হলোকাস্ট থেকে বেঁচে গেছেন। ওই ঘটনায় আমার পরিবারের অর্ধেক সদস্যই মারা যান। আমরা প্রায়ই স্মৃতিসৌধে যেতাম কারণ, আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে ইতিহাস জানুক।
আমার বাবার বোমা থেকে বাঁচার জন্য মাঠ পেরিয়ে দৌড়ানোর স্মৃতি রয়েছে। এখন আমার ছেলেরও এমন স্মৃতি হবে। তবে এবার হিটলার নয়, এবার মারছে পুতিন। আমি সম্পূর্ণ হতবাক এবং বিষণ্ন। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, ইউক্রেনে আমাদের প্রেসিডেন্ট একজন ইহুদি। আমরা সবাই আমাদের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করি। আমরা তাঁকে নিয়ে খুব গর্বিত।
আমি রাশিয়ার লোকদের চিনি। তাদের অর্ধেকই আর আমার বন্ধু নয়। তাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমি তাদের ব্লক করে দিয়েছি। তারা যে ফালতু লেখা লিখছে, তা আমি পড়তে চাই না। রাশিয়ার টিভি চ্যানেল তাদের মস্তিষ্ক ধুয়ে দিয়েছে। যেমন, এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, ‘এটি টিভি নয়, এটি বিকিরণ।’
২ মার্চ
বুধবার রুশ সেনারা আমাদের বলে যে, কিয়েভ ছেড়ে গেলে ভালো হয়। আমি আর আমার স্ত্রী তখনো যাব কি না, ভাবছিলাম। আমাদের দুটি বিষয় আটকাচ্ছিল। প্রথমটি হলো—আমার স্ত্রীর বাবা-মা চেরনিহাইভে আছেন। আমরা তাদের সেই নরক থেকে বের করে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলাম, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে আসতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমি এখনো এখানে লোকেদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।
আমি খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা যদি আমার বাড়িতে আসে তবে আমার লড়াই করার একমাত্র উপায়—আমি আমার পরিবারকে রক্ষা করব। যারা আমাদের রক্ষা করে এবং যাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদের সাহায্য করার জন্য আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম।
আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, যদি আমাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে যেতে আমরা যদি পশ্চিম ইউরোপে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে আমাদের আলাদা পোশাক দরকার। সেখানে স্কিইং জ্যাকেট এবং শীতের জামাকাপড় লাগবে না। এগুলো আমরা প্রথম দিনে প্যাক করেছিলাম। লিফটটি অকেজো থাকায় আমাকে এক এক করে ১৪ তলায় সিঁড়ি বেয়ে চারটি স্যুটকেস নিয়ে যেতে হয়েছিল।
৩ মার্চ
আমরা অবশেষে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি স্নায়ুচাপে পীড়িত ছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার (ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট) ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে (রুশ প্রেসিডেন্ট) ভ্লাদিমির পুতিনের কথোপকথনের পর এবং সমস্ত ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে শুনে আমরা এখন বুঝতে পেরেছি যে, তিনি এই সমস্ত দেশকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত থামবেন না। আমরা পুতিনের রাশিয়ায় থাকতে প্রস্তুত নই।
তবে সিদ্ধান্তটি বিশেষত আমার ছেলে এবং স্ত্রীর সুরক্ষার জন্য নেওয়া। আমরা তাকে আর যুদ্ধ দেখতে দিতে চাই না। আর চাই না যে, সে বোমা ও গোলার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠুক। তার নানা-নানিকে ছাড়া চলে যাওয়ায় তিনি খুব দুঃখিত ছিলেন। আমরা তাদের ছেড়ে যেতে চাইনি, তবে আমার ছেলের যত্ন নেওয়া দরকার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন ইয়াসিন আরাফাত

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। সময় যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তত বাড়ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে ইউক্রেনীয় এক বাবার ডায়েরিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো—
২৪ ফেব্রুয়ারি-যুদ্ধের প্রথম দিন
হামলার প্রথম দিনটি ছিল আমার ১৫ তম বিয়ে বার্ষিকী। আমরা বন্ধুদের সঙ্গে একটি পার্টির পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা একটি রেস্তোরাঁয় একটি টেবিলও বুক করেছিলাম। কিন্তু খুব সকালে ৫টার মতো হবে তখন—আমার পরিবার এবং ১০ বছরের শিশু রুশ রকেটের শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। প্রথম চিন্তা ছিল, আমরা যা নিতে পারি, তা নিয়ে চলে যাব। কিন্তু সমস্ত রাস্তা যানবাহনে অবরুদ্ধ ছিল, এবং তারা সারাক্ষণ আমাদের ওপর গোলাবর্ষণ করছিল। এটা ভয়ংকর ছিল। পরে আমরা কাছাকাছি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কে গিয়েছিলাম এবং সেখানে সারা দিন কাটিয়েছিলাম।
প্রথম দিনে সেখানে প্রায় ৬০ জন লোক ছিল। সেখানে ঠান্ডা ছিল। সেখানে কোনো গরম হওয়ার উপায় ছিল না এবং মানুষ মেঝের ওপর শুয়ে ছিল। মাঝেমধ্যে আমরা বিভিন্ন জিনিস নিতে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাই। আমরা ১৪ তলায় থাকতাম এবং লিফটটি তখনো কাজ করছিল। সেই প্রথম দিন আমরা কুকিজ এবং ক্রিস্পের মতো জিনিস খাচ্ছিলাম। আমরা ওই দিন আমাদের গাড়িতে পার্কিংয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমার ছেলে পেছনের সিটে, আমার স্ত্রী এবং আমি সামনে, অর্ধেক বসে এবং অর্ধেক শুয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা। এটি আমার জন্য আরামদায়ক ছিল না।
ওই সময় আমরা আমাদের বিয়ে বার্ষিকী সম্পর্কে চিন্তা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের একসঙ্গে থাকা দুর্দান্ত ১৫ বছর সম্পর্কে ভাবছিলাম। আমাদের ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট ১০ বছরের ছেলে রয়েছে, যাকে আমরা খুব ভালোবাসি। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিনটি ছিল শুধু ভয়ের।
২৫ ফেব্রুয়ারি
গাড়িতে ঘুম থেকে উঠে ভয়ংকর অনুভূতি হয়েছিল। আমার পিঠে এমন ব্যথা হচ্ছিল, যা আগে কখনো হয়নি। সকালে বোমা বিস্ফোরণ ছিল না। প্রায় শান্তই ছিল। ‘শান্ত’ শব্দের অর্থ হলো—তখন ১০ টির বদলে মাত্র দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল। এই সুযোগে আমরা বাড়িতে গিয়ে তাড়াতাড়ি সকালের নাশতা করে নিলাম। ইউক্রেনীয়রা বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ এবং আমরা আমাদের প্রায় সব প্রতিবেশীকে খুব ভালোভাবে চিনি। তাই যারা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেনি, তাদের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা শুরু করি। এই কাজের মধ্যে ছিল অ্যাপার্টমেন্টে পানির বোতল ভর্তি করা, খাবার আনা, মায়েরা যাতে শিশুদের খাওয়াতে পারে, তার জন্য গাড়ির পার্কিংয়ে জায়গা তৈরি করা এবং নারীদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য জায়গা তৈরি করা।
ওই দিনই আমরা বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু ট্রাফিকের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আর আমরা ভাবছিলাম, হয়তো এই পাগলামি বন্ধ হবে। কিন্তু সেই রাতে আমরা আবার আন্ডারগ্রাউন্ডে ঘুমালাম।
২৬ ফেব্রুয়ারি
তৃতীয় দিন কিছু বন্ধু গাড়ি পার্কে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাওয়ার এবং স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা গোসল করতে, খাবার রান্না করতে, ছেলেকে পড়াতে এবং তাকে অনলাইনে দাবা খেলতে দিতে চেয়েছি। আমরা আমাদের জানালা টেপ দিয়ে আবৃত করে দিই। এদিন থেকে লিফট আর কাজ করছিল না। আমার ছেলে খুব সাহসী। সে কান্না না করার চেষ্টা করছে। সে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতবারই জানালার বাইরে থেকে সাইরেন বাজছে, আমরা ততবারই আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ছুটছিলাম। আমি দেখতে পাচ্ছি আমার ছেলে ভয় পেয়েছে। কিন্তু সে আতঙ্কিত হচ্ছে না।
সেদিন আমি আমাদের উঠোনের বাইরে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমরা কাছাকাছি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। পরে আমি টেলিগ্রামের মাধ্যমে খবরটি পড়লাম যে, রুশ সেনারা শহরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তাতে বলা হয়েছিল যে, রুশ সেনারা শহরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
যে মুহূর্তে আপনি গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন, আপনি ভয় পাচ্ছেন না। কারণ, আপনার ভয় পাওয়ার সময় নেই। আপনাকে কেবল আপনার ছেলেকে গাড়ির পার্কে নিরাপদে নিয়ে যেতে হবে।
২৭ ফেব্রুয়ারি
রোববার নাগাদ আশপাশের কিছু ছোট দোকান আবার খুলেছে। এই যুদ্ধ আমাদের বাস্তবতাকে রূপান্তরিত করেছিল। ওই সময় একটি খোলা দোকান বা গ্যাস স্টেশনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো মনে হয়েছিল। কিন্তু আপনি এসব স্থানে যখন সারিবদ্ধ হন, তখন আপনাকে হত্যা করা হতে পারে।
দোকানগুলোতে সরবরাহ কম ছিল। কিন্তু শেলফগুলো খালি ছিল না। পূর্ববর্তী গ্রাহকদের ধন্যবাদ। তবে যারা এখনো সারিবদ্ধ রয়েছে, তাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে। আমি গাড়ির পার্কিংয়ে এসে আমাদের পরিবার এবং অন্যান্য লোকেদের মধ্যে খাবার ভাগ করে নিলাম। এখন মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রত্যেকের জন্য আরও খাবার, পানি, টয়লেট পেপার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে শুরু করেছি।
ওই রাতে আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সবাইকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছি যে, তারা নিরাপদে রয়েছে কি না। আমার স্ত্রী এবং ছেলে আমাদের বেডরুমে শুয়েছিল, এবং আমি আমার ছেলের ঘরে শুয়েছিলাম। আমরা ছেলের ঘরের কাছেই সাইরেন ছিল। আমি যে এটি শুনছিলাম সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ঘুমানোর সময় জানালা খোলা রেখেছিলাম। ঠিক আছে, কিন্তু আপনি এটিকে সত্যিই ঘুম বলতে পারবেন না। কারণ, তখন আপনি শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। আপনি নথি এবং খাবারসহ একটি ব্যাগের পাশে ঘুমের পোশাক পরে ঘুমাচ্ছেন। এখানে সবাই ক্লান্ত।
২৮ ফেব্রুয়ারি
সোমবার শহরের কয়েকটি বড় দোকান কয়েক ঘণ্টা খোলা ছিল। আমি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলাম। একা গিয়েছিলাম। তবে আমার স্ত্রীর ফোনে সংযুক্ত ছিলাম, যাতে ক্রমাগত আমার ফোন থেকে আমার অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে।
প্রতিবারই পরিচয়পত্র পরীক্ষার জন্য একটি রাস্তার মোড়ে আমাকে থামানো হয়েছিল। আমি আমাদের সেনাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনাদের কী দরকার?’ আমি তাদের জন্য সিগারেট এবং পানি এনেছিলাম। এই লোকেদের আমি ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের রক্ষা করছেন, ইউক্রেনকে রক্ষা করছেন। ঠান্ডায় বাইরে ঘুম ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছেন।
রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেন ছোট এবং আমাদের সেনাবাহিনী অনেক ছোট। তবে এখানকার মানুষের সাহস বেশি। তারা দেখিয়েছে যে, তারা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত। এটি আমার আশা জোগাচ্ছে।
১ মার্চ
মঙ্গলবার আমি যখন গ্যাস নিয়ে ফিরছিলাম, তখন আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে। সে আমাকে বলে, আমরা হলোকাস্ট মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স থেকে ধোঁয়া আসতে দেখেছি। আমি এ খবর শুনে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। কারণ, আমি ইহুদি। আমার বাবার বয়স ৮৩। তিনি হলোকাস্ট থেকে বেঁচে গেছেন। ওই ঘটনায় আমার পরিবারের অর্ধেক সদস্যই মারা যান। আমরা প্রায়ই স্মৃতিসৌধে যেতাম কারণ, আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে ইতিহাস জানুক।
আমার বাবার বোমা থেকে বাঁচার জন্য মাঠ পেরিয়ে দৌড়ানোর স্মৃতি রয়েছে। এখন আমার ছেলেরও এমন স্মৃতি হবে। তবে এবার হিটলার নয়, এবার মারছে পুতিন। আমি সম্পূর্ণ হতবাক এবং বিষণ্ন। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, ইউক্রেনে আমাদের প্রেসিডেন্ট একজন ইহুদি। আমরা সবাই আমাদের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করি। আমরা তাঁকে নিয়ে খুব গর্বিত।
আমি রাশিয়ার লোকদের চিনি। তাদের অর্ধেকই আর আমার বন্ধু নয়। তাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমি তাদের ব্লক করে দিয়েছি। তারা যে ফালতু লেখা লিখছে, তা আমি পড়তে চাই না। রাশিয়ার টিভি চ্যানেল তাদের মস্তিষ্ক ধুয়ে দিয়েছে। যেমন, এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, ‘এটি টিভি নয়, এটি বিকিরণ।’
২ মার্চ
বুধবার রুশ সেনারা আমাদের বলে যে, কিয়েভ ছেড়ে গেলে ভালো হয়। আমি আর আমার স্ত্রী তখনো যাব কি না, ভাবছিলাম। আমাদের দুটি বিষয় আটকাচ্ছিল। প্রথমটি হলো—আমার স্ত্রীর বাবা-মা চেরনিহাইভে আছেন। আমরা তাদের সেই নরক থেকে বের করে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলাম, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে আসতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমি এখনো এখানে লোকেদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।
আমি খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা যদি আমার বাড়িতে আসে তবে আমার লড়াই করার একমাত্র উপায়—আমি আমার পরিবারকে রক্ষা করব। যারা আমাদের রক্ষা করে এবং যাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদের সাহায্য করার জন্য আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম।
আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, যদি আমাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে যেতে আমরা যদি পশ্চিম ইউরোপে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে আমাদের আলাদা পোশাক দরকার। সেখানে স্কিইং জ্যাকেট এবং শীতের জামাকাপড় লাগবে না। এগুলো আমরা প্রথম দিনে প্যাক করেছিলাম। লিফটটি অকেজো থাকায় আমাকে এক এক করে ১৪ তলায় সিঁড়ি বেয়ে চারটি স্যুটকেস নিয়ে যেতে হয়েছিল।
৩ মার্চ
আমরা অবশেষে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি স্নায়ুচাপে পীড়িত ছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার (ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট) ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে (রুশ প্রেসিডেন্ট) ভ্লাদিমির পুতিনের কথোপকথনের পর এবং সমস্ত ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে শুনে আমরা এখন বুঝতে পেরেছি যে, তিনি এই সমস্ত দেশকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত থামবেন না। আমরা পুতিনের রাশিয়ায় থাকতে প্রস্তুত নই।
তবে সিদ্ধান্তটি বিশেষত আমার ছেলে এবং স্ত্রীর সুরক্ষার জন্য নেওয়া। আমরা তাকে আর যুদ্ধ দেখতে দিতে চাই না। আর চাই না যে, সে বোমা ও গোলার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠুক। তার নানা-নানিকে ছাড়া চলে যাওয়ায় তিনি খুব দুঃখিত ছিলেন। আমরা তাদের ছেড়ে যেতে চাইনি, তবে আমার ছেলের যত্ন নেওয়া দরকার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন ইয়াসিন আরাফাত

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। সময় যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তত বাড়ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে ইউক্রেনীয় এক বাবার ডায়েরিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো—
২৪ ফেব্রুয়ারি-যুদ্ধের প্রথম দিন
হামলার প্রথম দিনটি ছিল আমার ১৫ তম বিয়ে বার্ষিকী। আমরা বন্ধুদের সঙ্গে একটি পার্টির পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা একটি রেস্তোরাঁয় একটি টেবিলও বুক করেছিলাম। কিন্তু খুব সকালে ৫টার মতো হবে তখন—আমার পরিবার এবং ১০ বছরের শিশু রুশ রকেটের শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। প্রথম চিন্তা ছিল, আমরা যা নিতে পারি, তা নিয়ে চলে যাব। কিন্তু সমস্ত রাস্তা যানবাহনে অবরুদ্ধ ছিল, এবং তারা সারাক্ষণ আমাদের ওপর গোলাবর্ষণ করছিল। এটা ভয়ংকর ছিল। পরে আমরা কাছাকাছি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কে গিয়েছিলাম এবং সেখানে সারা দিন কাটিয়েছিলাম।
প্রথম দিনে সেখানে প্রায় ৬০ জন লোক ছিল। সেখানে ঠান্ডা ছিল। সেখানে কোনো গরম হওয়ার উপায় ছিল না এবং মানুষ মেঝের ওপর শুয়ে ছিল। মাঝেমধ্যে আমরা বিভিন্ন জিনিস নিতে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাই। আমরা ১৪ তলায় থাকতাম এবং লিফটটি তখনো কাজ করছিল। সেই প্রথম দিন আমরা কুকিজ এবং ক্রিস্পের মতো জিনিস খাচ্ছিলাম। আমরা ওই দিন আমাদের গাড়িতে পার্কিংয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমার ছেলে পেছনের সিটে, আমার স্ত্রী এবং আমি সামনে, অর্ধেক বসে এবং অর্ধেক শুয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা। এটি আমার জন্য আরামদায়ক ছিল না।
ওই সময় আমরা আমাদের বিয়ে বার্ষিকী সম্পর্কে চিন্তা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের একসঙ্গে থাকা দুর্দান্ত ১৫ বছর সম্পর্কে ভাবছিলাম। আমাদের ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট ১০ বছরের ছেলে রয়েছে, যাকে আমরা খুব ভালোবাসি। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিনটি ছিল শুধু ভয়ের।
২৫ ফেব্রুয়ারি
গাড়িতে ঘুম থেকে উঠে ভয়ংকর অনুভূতি হয়েছিল। আমার পিঠে এমন ব্যথা হচ্ছিল, যা আগে কখনো হয়নি। সকালে বোমা বিস্ফোরণ ছিল না। প্রায় শান্তই ছিল। ‘শান্ত’ শব্দের অর্থ হলো—তখন ১০ টির বদলে মাত্র দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল। এই সুযোগে আমরা বাড়িতে গিয়ে তাড়াতাড়ি সকালের নাশতা করে নিলাম। ইউক্রেনীয়রা বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ এবং আমরা আমাদের প্রায় সব প্রতিবেশীকে খুব ভালোভাবে চিনি। তাই যারা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেনি, তাদের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা শুরু করি। এই কাজের মধ্যে ছিল অ্যাপার্টমেন্টে পানির বোতল ভর্তি করা, খাবার আনা, মায়েরা যাতে শিশুদের খাওয়াতে পারে, তার জন্য গাড়ির পার্কিংয়ে জায়গা তৈরি করা এবং নারীদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য জায়গা তৈরি করা।
ওই দিনই আমরা বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু ট্রাফিকের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আর আমরা ভাবছিলাম, হয়তো এই পাগলামি বন্ধ হবে। কিন্তু সেই রাতে আমরা আবার আন্ডারগ্রাউন্ডে ঘুমালাম।
২৬ ফেব্রুয়ারি
তৃতীয় দিন কিছু বন্ধু গাড়ি পার্কে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাওয়ার এবং স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা গোসল করতে, খাবার রান্না করতে, ছেলেকে পড়াতে এবং তাকে অনলাইনে দাবা খেলতে দিতে চেয়েছি। আমরা আমাদের জানালা টেপ দিয়ে আবৃত করে দিই। এদিন থেকে লিফট আর কাজ করছিল না। আমার ছেলে খুব সাহসী। সে কান্না না করার চেষ্টা করছে। সে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতবারই জানালার বাইরে থেকে সাইরেন বাজছে, আমরা ততবারই আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ছুটছিলাম। আমি দেখতে পাচ্ছি আমার ছেলে ভয় পেয়েছে। কিন্তু সে আতঙ্কিত হচ্ছে না।
সেদিন আমি আমাদের উঠোনের বাইরে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমরা কাছাকাছি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। পরে আমি টেলিগ্রামের মাধ্যমে খবরটি পড়লাম যে, রুশ সেনারা শহরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তাতে বলা হয়েছিল যে, রুশ সেনারা শহরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
যে মুহূর্তে আপনি গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন, আপনি ভয় পাচ্ছেন না। কারণ, আপনার ভয় পাওয়ার সময় নেই। আপনাকে কেবল আপনার ছেলেকে গাড়ির পার্কে নিরাপদে নিয়ে যেতে হবে।
২৭ ফেব্রুয়ারি
রোববার নাগাদ আশপাশের কিছু ছোট দোকান আবার খুলেছে। এই যুদ্ধ আমাদের বাস্তবতাকে রূপান্তরিত করেছিল। ওই সময় একটি খোলা দোকান বা গ্যাস স্টেশনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো মনে হয়েছিল। কিন্তু আপনি এসব স্থানে যখন সারিবদ্ধ হন, তখন আপনাকে হত্যা করা হতে পারে।
দোকানগুলোতে সরবরাহ কম ছিল। কিন্তু শেলফগুলো খালি ছিল না। পূর্ববর্তী গ্রাহকদের ধন্যবাদ। তবে যারা এখনো সারিবদ্ধ রয়েছে, তাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে। আমি গাড়ির পার্কিংয়ে এসে আমাদের পরিবার এবং অন্যান্য লোকেদের মধ্যে খাবার ভাগ করে নিলাম। এখন মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রত্যেকের জন্য আরও খাবার, পানি, টয়লেট পেপার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে শুরু করেছি।
ওই রাতে আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সবাইকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছি যে, তারা নিরাপদে রয়েছে কি না। আমার স্ত্রী এবং ছেলে আমাদের বেডরুমে শুয়েছিল, এবং আমি আমার ছেলের ঘরে শুয়েছিলাম। আমরা ছেলের ঘরের কাছেই সাইরেন ছিল। আমি যে এটি শুনছিলাম সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ঘুমানোর সময় জানালা খোলা রেখেছিলাম। ঠিক আছে, কিন্তু আপনি এটিকে সত্যিই ঘুম বলতে পারবেন না। কারণ, তখন আপনি শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। আপনি নথি এবং খাবারসহ একটি ব্যাগের পাশে ঘুমের পোশাক পরে ঘুমাচ্ছেন। এখানে সবাই ক্লান্ত।
২৮ ফেব্রুয়ারি
সোমবার শহরের কয়েকটি বড় দোকান কয়েক ঘণ্টা খোলা ছিল। আমি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলাম। একা গিয়েছিলাম। তবে আমার স্ত্রীর ফোনে সংযুক্ত ছিলাম, যাতে ক্রমাগত আমার ফোন থেকে আমার অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে।
প্রতিবারই পরিচয়পত্র পরীক্ষার জন্য একটি রাস্তার মোড়ে আমাকে থামানো হয়েছিল। আমি আমাদের সেনাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনাদের কী দরকার?’ আমি তাদের জন্য সিগারেট এবং পানি এনেছিলাম। এই লোকেদের আমি ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের রক্ষা করছেন, ইউক্রেনকে রক্ষা করছেন। ঠান্ডায় বাইরে ঘুম ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছেন।
রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেন ছোট এবং আমাদের সেনাবাহিনী অনেক ছোট। তবে এখানকার মানুষের সাহস বেশি। তারা দেখিয়েছে যে, তারা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত। এটি আমার আশা জোগাচ্ছে।
১ মার্চ
মঙ্গলবার আমি যখন গ্যাস নিয়ে ফিরছিলাম, তখন আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে। সে আমাকে বলে, আমরা হলোকাস্ট মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স থেকে ধোঁয়া আসতে দেখেছি। আমি এ খবর শুনে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। কারণ, আমি ইহুদি। আমার বাবার বয়স ৮৩। তিনি হলোকাস্ট থেকে বেঁচে গেছেন। ওই ঘটনায় আমার পরিবারের অর্ধেক সদস্যই মারা যান। আমরা প্রায়ই স্মৃতিসৌধে যেতাম কারণ, আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে ইতিহাস জানুক।
আমার বাবার বোমা থেকে বাঁচার জন্য মাঠ পেরিয়ে দৌড়ানোর স্মৃতি রয়েছে। এখন আমার ছেলেরও এমন স্মৃতি হবে। তবে এবার হিটলার নয়, এবার মারছে পুতিন। আমি সম্পূর্ণ হতবাক এবং বিষণ্ন। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, ইউক্রেনে আমাদের প্রেসিডেন্ট একজন ইহুদি। আমরা সবাই আমাদের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করি। আমরা তাঁকে নিয়ে খুব গর্বিত।
আমি রাশিয়ার লোকদের চিনি। তাদের অর্ধেকই আর আমার বন্ধু নয়। তাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমি তাদের ব্লক করে দিয়েছি। তারা যে ফালতু লেখা লিখছে, তা আমি পড়তে চাই না। রাশিয়ার টিভি চ্যানেল তাদের মস্তিষ্ক ধুয়ে দিয়েছে। যেমন, এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, ‘এটি টিভি নয়, এটি বিকিরণ।’
২ মার্চ
বুধবার রুশ সেনারা আমাদের বলে যে, কিয়েভ ছেড়ে গেলে ভালো হয়। আমি আর আমার স্ত্রী তখনো যাব কি না, ভাবছিলাম। আমাদের দুটি বিষয় আটকাচ্ছিল। প্রথমটি হলো—আমার স্ত্রীর বাবা-মা চেরনিহাইভে আছেন। আমরা তাদের সেই নরক থেকে বের করে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলাম, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে আসতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমি এখনো এখানে লোকেদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।
আমি খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা যদি আমার বাড়িতে আসে তবে আমার লড়াই করার একমাত্র উপায়—আমি আমার পরিবারকে রক্ষা করব। যারা আমাদের রক্ষা করে এবং যাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদের সাহায্য করার জন্য আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম।
আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, যদি আমাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে যেতে আমরা যদি পশ্চিম ইউরোপে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে আমাদের আলাদা পোশাক দরকার। সেখানে স্কিইং জ্যাকেট এবং শীতের জামাকাপড় লাগবে না। এগুলো আমরা প্রথম দিনে প্যাক করেছিলাম। লিফটটি অকেজো থাকায় আমাকে এক এক করে ১৪ তলায় সিঁড়ি বেয়ে চারটি স্যুটকেস নিয়ে যেতে হয়েছিল।
৩ মার্চ
আমরা অবশেষে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি স্নায়ুচাপে পীড়িত ছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার (ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট) ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে (রুশ প্রেসিডেন্ট) ভ্লাদিমির পুতিনের কথোপকথনের পর এবং সমস্ত ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে শুনে আমরা এখন বুঝতে পেরেছি যে, তিনি এই সমস্ত দেশকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত থামবেন না। আমরা পুতিনের রাশিয়ায় থাকতে প্রস্তুত নই।
তবে সিদ্ধান্তটি বিশেষত আমার ছেলে এবং স্ত্রীর সুরক্ষার জন্য নেওয়া। আমরা তাকে আর যুদ্ধ দেখতে দিতে চাই না। আর চাই না যে, সে বোমা ও গোলার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠুক। তার নানা-নানিকে ছাড়া চলে যাওয়ায় তিনি খুব দুঃখিত ছিলেন। আমরা তাদের ছেড়ে যেতে চাইনি, তবে আমার ছেলের যত্ন নেওয়া দরকার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন ইয়াসিন আরাফাত

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। সময় যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তত বাড়ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে ইউক্রেনীয় এক বাবার ডায়েরিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো—
২৪ ফেব্রুয়ারি-যুদ্ধের প্রথম দিন
হামলার প্রথম দিনটি ছিল আমার ১৫ তম বিয়ে বার্ষিকী। আমরা বন্ধুদের সঙ্গে একটি পার্টির পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা একটি রেস্তোরাঁয় একটি টেবিলও বুক করেছিলাম। কিন্তু খুব সকালে ৫টার মতো হবে তখন—আমার পরিবার এবং ১০ বছরের শিশু রুশ রকেটের শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। প্রথম চিন্তা ছিল, আমরা যা নিতে পারি, তা নিয়ে চলে যাব। কিন্তু সমস্ত রাস্তা যানবাহনে অবরুদ্ধ ছিল, এবং তারা সারাক্ষণ আমাদের ওপর গোলাবর্ষণ করছিল। এটা ভয়ংকর ছিল। পরে আমরা কাছাকাছি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কে গিয়েছিলাম এবং সেখানে সারা দিন কাটিয়েছিলাম।
প্রথম দিনে সেখানে প্রায় ৬০ জন লোক ছিল। সেখানে ঠান্ডা ছিল। সেখানে কোনো গরম হওয়ার উপায় ছিল না এবং মানুষ মেঝের ওপর শুয়ে ছিল। মাঝেমধ্যে আমরা বিভিন্ন জিনিস নিতে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাই। আমরা ১৪ তলায় থাকতাম এবং লিফটটি তখনো কাজ করছিল। সেই প্রথম দিন আমরা কুকিজ এবং ক্রিস্পের মতো জিনিস খাচ্ছিলাম। আমরা ওই দিন আমাদের গাড়িতে পার্কিংয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমার ছেলে পেছনের সিটে, আমার স্ত্রী এবং আমি সামনে, অর্ধেক বসে এবং অর্ধেক শুয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা। এটি আমার জন্য আরামদায়ক ছিল না।
ওই সময় আমরা আমাদের বিয়ে বার্ষিকী সম্পর্কে চিন্তা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের একসঙ্গে থাকা দুর্দান্ত ১৫ বছর সম্পর্কে ভাবছিলাম। আমাদের ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট ১০ বছরের ছেলে রয়েছে, যাকে আমরা খুব ভালোবাসি। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিনটি ছিল শুধু ভয়ের।
২৫ ফেব্রুয়ারি
গাড়িতে ঘুম থেকে উঠে ভয়ংকর অনুভূতি হয়েছিল। আমার পিঠে এমন ব্যথা হচ্ছিল, যা আগে কখনো হয়নি। সকালে বোমা বিস্ফোরণ ছিল না। প্রায় শান্তই ছিল। ‘শান্ত’ শব্দের অর্থ হলো—তখন ১০ টির বদলে মাত্র দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল। এই সুযোগে আমরা বাড়িতে গিয়ে তাড়াতাড়ি সকালের নাশতা করে নিলাম। ইউক্রেনীয়রা বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ এবং আমরা আমাদের প্রায় সব প্রতিবেশীকে খুব ভালোভাবে চিনি। তাই যারা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেনি, তাদের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা শুরু করি। এই কাজের মধ্যে ছিল অ্যাপার্টমেন্টে পানির বোতল ভর্তি করা, খাবার আনা, মায়েরা যাতে শিশুদের খাওয়াতে পারে, তার জন্য গাড়ির পার্কিংয়ে জায়গা তৈরি করা এবং নারীদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য জায়গা তৈরি করা।
ওই দিনই আমরা বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু ট্রাফিকের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আর আমরা ভাবছিলাম, হয়তো এই পাগলামি বন্ধ হবে। কিন্তু সেই রাতে আমরা আবার আন্ডারগ্রাউন্ডে ঘুমালাম।
২৬ ফেব্রুয়ারি
তৃতীয় দিন কিছু বন্ধু গাড়ি পার্কে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাওয়ার এবং স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা গোসল করতে, খাবার রান্না করতে, ছেলেকে পড়াতে এবং তাকে অনলাইনে দাবা খেলতে দিতে চেয়েছি। আমরা আমাদের জানালা টেপ দিয়ে আবৃত করে দিই। এদিন থেকে লিফট আর কাজ করছিল না। আমার ছেলে খুব সাহসী। সে কান্না না করার চেষ্টা করছে। সে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতবারই জানালার বাইরে থেকে সাইরেন বাজছে, আমরা ততবারই আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ছুটছিলাম। আমি দেখতে পাচ্ছি আমার ছেলে ভয় পেয়েছে। কিন্তু সে আতঙ্কিত হচ্ছে না।
সেদিন আমি আমাদের উঠোনের বাইরে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমরা কাছাকাছি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। পরে আমি টেলিগ্রামের মাধ্যমে খবরটি পড়লাম যে, রুশ সেনারা শহরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তাতে বলা হয়েছিল যে, রুশ সেনারা শহরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
যে মুহূর্তে আপনি গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন, আপনি ভয় পাচ্ছেন না। কারণ, আপনার ভয় পাওয়ার সময় নেই। আপনাকে কেবল আপনার ছেলেকে গাড়ির পার্কে নিরাপদে নিয়ে যেতে হবে।
২৭ ফেব্রুয়ারি
রোববার নাগাদ আশপাশের কিছু ছোট দোকান আবার খুলেছে। এই যুদ্ধ আমাদের বাস্তবতাকে রূপান্তরিত করেছিল। ওই সময় একটি খোলা দোকান বা গ্যাস স্টেশনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো মনে হয়েছিল। কিন্তু আপনি এসব স্থানে যখন সারিবদ্ধ হন, তখন আপনাকে হত্যা করা হতে পারে।
দোকানগুলোতে সরবরাহ কম ছিল। কিন্তু শেলফগুলো খালি ছিল না। পূর্ববর্তী গ্রাহকদের ধন্যবাদ। তবে যারা এখনো সারিবদ্ধ রয়েছে, তাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে। আমি গাড়ির পার্কিংয়ে এসে আমাদের পরিবার এবং অন্যান্য লোকেদের মধ্যে খাবার ভাগ করে নিলাম। এখন মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রত্যেকের জন্য আরও খাবার, পানি, টয়লেট পেপার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে শুরু করেছি।
ওই রাতে আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সবাইকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছি যে, তারা নিরাপদে রয়েছে কি না। আমার স্ত্রী এবং ছেলে আমাদের বেডরুমে শুয়েছিল, এবং আমি আমার ছেলের ঘরে শুয়েছিলাম। আমরা ছেলের ঘরের কাছেই সাইরেন ছিল। আমি যে এটি শুনছিলাম সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ঘুমানোর সময় জানালা খোলা রেখেছিলাম। ঠিক আছে, কিন্তু আপনি এটিকে সত্যিই ঘুম বলতে পারবেন না। কারণ, তখন আপনি শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। আপনি নথি এবং খাবারসহ একটি ব্যাগের পাশে ঘুমের পোশাক পরে ঘুমাচ্ছেন। এখানে সবাই ক্লান্ত।
২৮ ফেব্রুয়ারি
সোমবার শহরের কয়েকটি বড় দোকান কয়েক ঘণ্টা খোলা ছিল। আমি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলাম। একা গিয়েছিলাম। তবে আমার স্ত্রীর ফোনে সংযুক্ত ছিলাম, যাতে ক্রমাগত আমার ফোন থেকে আমার অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে।
প্রতিবারই পরিচয়পত্র পরীক্ষার জন্য একটি রাস্তার মোড়ে আমাকে থামানো হয়েছিল। আমি আমাদের সেনাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনাদের কী দরকার?’ আমি তাদের জন্য সিগারেট এবং পানি এনেছিলাম। এই লোকেদের আমি ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের রক্ষা করছেন, ইউক্রেনকে রক্ষা করছেন। ঠান্ডায় বাইরে ঘুম ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছেন।
রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেন ছোট এবং আমাদের সেনাবাহিনী অনেক ছোট। তবে এখানকার মানুষের সাহস বেশি। তারা দেখিয়েছে যে, তারা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত। এটি আমার আশা জোগাচ্ছে।
১ মার্চ
মঙ্গলবার আমি যখন গ্যাস নিয়ে ফিরছিলাম, তখন আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে। সে আমাকে বলে, আমরা হলোকাস্ট মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স থেকে ধোঁয়া আসতে দেখেছি। আমি এ খবর শুনে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। কারণ, আমি ইহুদি। আমার বাবার বয়স ৮৩। তিনি হলোকাস্ট থেকে বেঁচে গেছেন। ওই ঘটনায় আমার পরিবারের অর্ধেক সদস্যই মারা যান। আমরা প্রায়ই স্মৃতিসৌধে যেতাম কারণ, আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে ইতিহাস জানুক।
আমার বাবার বোমা থেকে বাঁচার জন্য মাঠ পেরিয়ে দৌড়ানোর স্মৃতি রয়েছে। এখন আমার ছেলেরও এমন স্মৃতি হবে। তবে এবার হিটলার নয়, এবার মারছে পুতিন। আমি সম্পূর্ণ হতবাক এবং বিষণ্ন। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, ইউক্রেনে আমাদের প্রেসিডেন্ট একজন ইহুদি। আমরা সবাই আমাদের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করি। আমরা তাঁকে নিয়ে খুব গর্বিত।
আমি রাশিয়ার লোকদের চিনি। তাদের অর্ধেকই আর আমার বন্ধু নয়। তাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমি তাদের ব্লক করে দিয়েছি। তারা যে ফালতু লেখা লিখছে, তা আমি পড়তে চাই না। রাশিয়ার টিভি চ্যানেল তাদের মস্তিষ্ক ধুয়ে দিয়েছে। যেমন, এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, ‘এটি টিভি নয়, এটি বিকিরণ।’
২ মার্চ
বুধবার রুশ সেনারা আমাদের বলে যে, কিয়েভ ছেড়ে গেলে ভালো হয়। আমি আর আমার স্ত্রী তখনো যাব কি না, ভাবছিলাম। আমাদের দুটি বিষয় আটকাচ্ছিল। প্রথমটি হলো—আমার স্ত্রীর বাবা-মা চেরনিহাইভে আছেন। আমরা তাদের সেই নরক থেকে বের করে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলাম, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে আসতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমি এখনো এখানে লোকেদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।
আমি খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা যদি আমার বাড়িতে আসে তবে আমার লড়াই করার একমাত্র উপায়—আমি আমার পরিবারকে রক্ষা করব। যারা আমাদের রক্ষা করে এবং যাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদের সাহায্য করার জন্য আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম।
আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, যদি আমাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে যেতে আমরা যদি পশ্চিম ইউরোপে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে আমাদের আলাদা পোশাক দরকার। সেখানে স্কিইং জ্যাকেট এবং শীতের জামাকাপড় লাগবে না। এগুলো আমরা প্রথম দিনে প্যাক করেছিলাম। লিফটটি অকেজো থাকায় আমাকে এক এক করে ১৪ তলায় সিঁড়ি বেয়ে চারটি স্যুটকেস নিয়ে যেতে হয়েছিল।
৩ মার্চ
আমরা অবশেষে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি স্নায়ুচাপে পীড়িত ছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার (ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট) ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে (রুশ প্রেসিডেন্ট) ভ্লাদিমির পুতিনের কথোপকথনের পর এবং সমস্ত ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে শুনে আমরা এখন বুঝতে পেরেছি যে, তিনি এই সমস্ত দেশকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত থামবেন না। আমরা পুতিনের রাশিয়ায় থাকতে প্রস্তুত নই।
তবে সিদ্ধান্তটি বিশেষত আমার ছেলে এবং স্ত্রীর সুরক্ষার জন্য নেওয়া। আমরা তাকে আর যুদ্ধ দেখতে দিতে চাই না। আর চাই না যে, সে বোমা ও গোলার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠুক। তার নানা-নানিকে ছাড়া চলে যাওয়ায় তিনি খুব দুঃখিত ছিলেন। আমরা তাদের ছেড়ে যেতে চাইনি, তবে আমার ছেলের যত্ন নেওয়া দরকার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন ইয়াসিন আরাফাত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পর ১২৩ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশ। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোলেসনিকোভা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী আলেস বিয়ালিয়াতস্কি। বেলারুশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জন কোয়ালের সঙ্গে আলোচনার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া
১ ঘণ্টা আগে
রাতভর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দেশটির অন্তত ১০ লাখ পরিবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
২ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পর ১২৩ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশ। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোলেসনিকোভা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী আলেস বিয়ালিয়াতস্কি। বেলারুশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জন কোয়ালের সঙ্গে আলোচনার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দী মুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার মিত্রদেশ বেলারুশের ওপর আরোপিত কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সার উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পটাশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা। পটাশ বেলারুশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য।
১২৩ বন্দী মুক্তির পর জন কোয়াল বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে পর্যায়ক্রমে আরও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।’ বেলারুশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পটাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে তুলে নেওয়া হবে।
২০২০ সাল থেকে কারাবন্দী বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোলেসনিকোভা দীর্ঘ সময় একাকী বন্দিত্বে ছিলেন। মুক্তির পর তাঁর বোন তাতিয়ানা খোমিচ ভিডিও কলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং বিষয়টি নিশ্চিত করেন। খোমিচ বলেন, ‘সে মুক্ত। তাকে ভালো ও সুস্থই দেখাচ্ছে। তাকে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায় আছি।’ তিনি আরও জানান, কোলেসনিকোভা প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আলোচনায় অংশ নেওয়া বেলারুশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, বেলারুশের একটি আদালত ২০২৩ সালের মার্চে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী অ্যালেস বিলিয়াতস্কিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। সে সময় দেশটির আদালত চোরাচালান ও জনজীবনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কর্মকাণ্ডে অর্থায়নে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
৬৩ বছর বিলিয়াতস্কি ২০২২ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী তিনজনের একজন। ২০২১ সালে বেলারুশের বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়লে বিলিয়াতস্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী দলকে সহযোগিতার জন্য অবৈধভাবে বাইরে থেকে বেলারুশে অর্থ আনার অভিযোগে আনা হয়।
মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকজনকে শিগগিরই লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বাইরে লোকজন জড়ো হচ্ছেন।
এই সমঝোতাকে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর জন্য বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই তাঁকে বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনের পর ব্যাপক বিক্ষোভ নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে দমন করে। সে সময় শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হন, তাঁদের মধ্যেই ছিলেন কোলেসনিকোভা।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর বেলারুশের বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরও কড়া হয়। কারণ, দেশটির ভূখণ্ড ব্যবহার করেই রুশ সেনা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত কোয়াল জানান, আলোচনায় তিনি লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও কথা বলেছেন এবং সম্ভাব্য শান্তি আলোচনায় মিনস্ক কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়েও মতবিনিময় হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মিনস্কের সঙ্গে ওয়াশিংটনের এই সম্পৃক্ততা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যা ইউরোপের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইউরোপ যেখানে এখনো বেলারুশকে বিচ্ছিন্ন ও নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চাপে রাখতে চায়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পর ১২৩ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশ। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোলেসনিকোভা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী আলেস বিয়ালিয়াতস্কি। বেলারুশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জন কোয়ালের সঙ্গে আলোচনার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দী মুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার মিত্রদেশ বেলারুশের ওপর আরোপিত কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সার উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পটাশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা। পটাশ বেলারুশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য।
১২৩ বন্দী মুক্তির পর জন কোয়াল বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে পর্যায়ক্রমে আরও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।’ বেলারুশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পটাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে তুলে নেওয়া হবে।
২০২০ সাল থেকে কারাবন্দী বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোলেসনিকোভা দীর্ঘ সময় একাকী বন্দিত্বে ছিলেন। মুক্তির পর তাঁর বোন তাতিয়ানা খোমিচ ভিডিও কলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং বিষয়টি নিশ্চিত করেন। খোমিচ বলেন, ‘সে মুক্ত। তাকে ভালো ও সুস্থই দেখাচ্ছে। তাকে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায় আছি।’ তিনি আরও জানান, কোলেসনিকোভা প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আলোচনায় অংশ নেওয়া বেলারুশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, বেলারুশের একটি আদালত ২০২৩ সালের মার্চে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী অ্যালেস বিলিয়াতস্কিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। সে সময় দেশটির আদালত চোরাচালান ও জনজীবনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কর্মকাণ্ডে অর্থায়নে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
৬৩ বছর বিলিয়াতস্কি ২০২২ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী তিনজনের একজন। ২০২১ সালে বেলারুশের বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়লে বিলিয়াতস্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী দলকে সহযোগিতার জন্য অবৈধভাবে বাইরে থেকে বেলারুশে অর্থ আনার অভিযোগে আনা হয়।
মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকজনকে শিগগিরই লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বাইরে লোকজন জড়ো হচ্ছেন।
এই সমঝোতাকে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর জন্য বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই তাঁকে বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনের পর ব্যাপক বিক্ষোভ নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে দমন করে। সে সময় শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হন, তাঁদের মধ্যেই ছিলেন কোলেসনিকোভা।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর বেলারুশের বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরও কড়া হয়। কারণ, দেশটির ভূখণ্ড ব্যবহার করেই রুশ সেনা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত কোয়াল জানান, আলোচনায় তিনি লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও কথা বলেছেন এবং সম্ভাব্য শান্তি আলোচনায় মিনস্ক কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়েও মতবিনিময় হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মিনস্কের সঙ্গে ওয়াশিংটনের এই সম্পৃক্ততা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যা ইউরোপের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইউরোপ যেখানে এখনো বেলারুশকে বিচ্ছিন্ন ও নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চাপে রাখতে চায়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। সময় যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তত বাড়ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে ইউক্রেনীয় এক বাবার ডায়েরিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো—
০৫ মার্চ ২০২২
রাতভর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দেশটির অন্তত ১০ লাখ পরিবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
২ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাতভর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দেশটির অন্তত ১০ লাখ পরিবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেঙ্কোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রাতভর চালানো এসব হামলায় দেশের পাঁচটি অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এতে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আগুন নেভানো এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো রাশিয়ার হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। তবে শীতকাল ঘনিয়ে আসায় সাম্প্রতিক সময়ে এসব হামলার মাত্রা আরও বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে জার্মানি সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করবেন। বার্লিনে প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির সর্বশেষ খসড়া নিয়েই মূলত আলোচনা হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, রাতভর হামলায় রাশিয়া ৪৫০টির বেশি ড্রোন ও ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লাইমেঙ্কো জানান, হামলার শিকার অঞ্চলগুলো হলো—দনিপ্রোপেত্রোভস্ক, কিরোভোহরাদ, মাইকোলাইভ, ওডেসা ও চেরনিহিভ।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করছে, এসব হামলায় তারা কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মাঝপথে দিক পরিবর্তন করতে পারে, ফলে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সারা রাত বিচ্ছিন্ন ছিল। হামলার কারণে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে আবার বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বর্তমানে চালু নেই, তবে রিঅ্যাক্টর ঠান্ডা রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন।
এদিকে রাশিয়ার সারাতোভ অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গভর্নর রোমান বুসারগিন।

রাতভর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দেশটির অন্তত ১০ লাখ পরিবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেঙ্কোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রাতভর চালানো এসব হামলায় দেশের পাঁচটি অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এতে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আগুন নেভানো এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো রাশিয়ার হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। তবে শীতকাল ঘনিয়ে আসায় সাম্প্রতিক সময়ে এসব হামলার মাত্রা আরও বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে জার্মানি সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করবেন। বার্লিনে প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির সর্বশেষ খসড়া নিয়েই মূলত আলোচনা হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, রাতভর হামলায় রাশিয়া ৪৫০টির বেশি ড্রোন ও ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লাইমেঙ্কো জানান, হামলার শিকার অঞ্চলগুলো হলো—দনিপ্রোপেত্রোভস্ক, কিরোভোহরাদ, মাইকোলাইভ, ওডেসা ও চেরনিহিভ।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করছে, এসব হামলায় তারা কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মাঝপথে দিক পরিবর্তন করতে পারে, ফলে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সারা রাত বিচ্ছিন্ন ছিল। হামলার কারণে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে আবার বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বর্তমানে চালু নেই, তবে রিঅ্যাক্টর ঠান্ডা রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন।
এদিকে রাশিয়ার সারাতোভ অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গভর্নর রোমান বুসারগিন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। সময় যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তত বাড়ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে ইউক্রেনীয় এক বাবার ডায়েরিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো—
০৫ মার্চ ২০২২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পর ১২৩ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশ। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোলেসনিকোভা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী আলেস বিয়ালিয়াতস্কি। বেলারুশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জন কোয়ালের সঙ্গে আলোচনার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া
১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চলমান সংঘর্ষের জেরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সব সীমান্তপথ বন্ধ করে দিয়েছে কম্বোডিয়া। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ থাকবে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে।
শুক্রবার রাতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, দুই দেশ ‘আজ সন্ধ্যা থেকে সংঘর্ষ বন্ধ করতে’ এবং অক্টোবরে তাঁর সামনে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ফিরে যেতে সম্মত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘উভয় দেশ শান্তির জন্য প্রস্তুত।’
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পরও থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়া কেউই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ করেনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুলের বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে—তিনি (থাই প্রধানমন্ত্রী) ট্রাম্পকে বলেছেন, কম্বোডিয়া তাদের সব সেো প্রত্যাহার করলে এবং সীমান্ত থেকে ভূমি মাইন অপসারণ করলেই কেবল যুদ্ধবিরতি সম্ভব।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমাদের দেশের ক্ষতি ও দেশের মানুষের ওপর হুমকি অব্যাহত রয়েছে। আমরা যত দিন পর্যন্ত নিরাপদ বোধ করছি না, তত দিন থাইল্যান্ড সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। আমি এই কথাটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই। আজ সকালে আমাদের সামরিক পদক্ষেপই তার প্রমাণ।’
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার সরকার জানিয়েছে, তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের অবশ্যই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এতে স্পষ্ট হয়, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির তোয়াক্কা না করে আজ শনিবারও সীমান্তে বোমা ও ভারী হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থাই যুদ্ধবিমান সীমান্তের আশপাশের হোটেল ও একটি সেতুতে বোমা হামলা করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার রকেট হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
কম্বোডিয়া আরও জানিয়েছে, থাই সামরিক বাহিনী দুইটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সাতটি বোমা ফেলেছে। তারা এখনো বোমা হামলা বন্ধ করেনি।
নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে এবং উভয় পক্ষের প্রায় ৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই দুই দেশ তাদের ৮০০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত নিয়ে বিরোধে লিপ্ত। ১৯০৭ সালে ফ্রান্স যখন কম্বোডিয়ার ঔপনিবেশিক শাসক ছিল, তখন ফরাসি মানচিত্রকারদের আঁকা সীমান্তরেখা থেকেই এই বিরোধের সূত্রপাত।
গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর ট্রাম্প ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় দেশ দুটি একটি ‘তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছিল। কিন্তু এরপর উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে থাকে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়ার সেনারা ভূমি মাইন স্থাপন করছে, যার ফলে সাতজন থাই সৈন্য হাত-পা হারিয়েছে। কম্বোডিয়া অবশ্য দাবি করেছে, মাইনগুলো ১৯৮০-এর দশকের গৃহযুদ্ধের সময়কার।
এদিকে, থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে যে তারা যেন এই সংঘাতকে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত না করে, যেমনটা গত জুলাইয়ে ট্যারিফ ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছিল।

চলমান সংঘর্ষের জেরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সব সীমান্তপথ বন্ধ করে দিয়েছে কম্বোডিয়া। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ থাকবে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে।
শুক্রবার রাতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, দুই দেশ ‘আজ সন্ধ্যা থেকে সংঘর্ষ বন্ধ করতে’ এবং অক্টোবরে তাঁর সামনে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ফিরে যেতে সম্মত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘উভয় দেশ শান্তির জন্য প্রস্তুত।’
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পরও থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়া কেউই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ করেনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুলের বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে—তিনি (থাই প্রধানমন্ত্রী) ট্রাম্পকে বলেছেন, কম্বোডিয়া তাদের সব সেো প্রত্যাহার করলে এবং সীমান্ত থেকে ভূমি মাইন অপসারণ করলেই কেবল যুদ্ধবিরতি সম্ভব।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমাদের দেশের ক্ষতি ও দেশের মানুষের ওপর হুমকি অব্যাহত রয়েছে। আমরা যত দিন পর্যন্ত নিরাপদ বোধ করছি না, তত দিন থাইল্যান্ড সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। আমি এই কথাটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই। আজ সকালে আমাদের সামরিক পদক্ষেপই তার প্রমাণ।’
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার সরকার জানিয়েছে, তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের অবশ্যই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এতে স্পষ্ট হয়, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির তোয়াক্কা না করে আজ শনিবারও সীমান্তে বোমা ও ভারী হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থাই যুদ্ধবিমান সীমান্তের আশপাশের হোটেল ও একটি সেতুতে বোমা হামলা করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার রকেট হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
কম্বোডিয়া আরও জানিয়েছে, থাই সামরিক বাহিনী দুইটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সাতটি বোমা ফেলেছে। তারা এখনো বোমা হামলা বন্ধ করেনি।
নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে এবং উভয় পক্ষের প্রায় ৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই দুই দেশ তাদের ৮০০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত নিয়ে বিরোধে লিপ্ত। ১৯০৭ সালে ফ্রান্স যখন কম্বোডিয়ার ঔপনিবেশিক শাসক ছিল, তখন ফরাসি মানচিত্রকারদের আঁকা সীমান্তরেখা থেকেই এই বিরোধের সূত্রপাত।
গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর ট্রাম্প ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় দেশ দুটি একটি ‘তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছিল। কিন্তু এরপর উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে থাকে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়ার সেনারা ভূমি মাইন স্থাপন করছে, যার ফলে সাতজন থাই সৈন্য হাত-পা হারিয়েছে। কম্বোডিয়া অবশ্য দাবি করেছে, মাইনগুলো ১৯৮০-এর দশকের গৃহযুদ্ধের সময়কার।
এদিকে, থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে যে তারা যেন এই সংঘাতকে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত না করে, যেমনটা গত জুলাইয়ে ট্যারিফ ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছিল।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। সময় যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তত বাড়ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে ইউক্রেনীয় এক বাবার ডায়েরিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো—
০৫ মার্চ ২০২২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পর ১২৩ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশ। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোলেসনিকোভা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী আলেস বিয়ালিয়াতস্কি। বেলারুশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জন কোয়ালের সঙ্গে আলোচনার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া
১ ঘণ্টা আগে
রাতভর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দেশটির অন্তত ১০ লাখ পরিবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
২ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, দুই দেশ ‘আজ সন্ধ্যা থেকে সংঘর্ষ বন্ধ করতে’ এবং অক্টোবরে তাঁর সামনে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ফিরে যেতে সম্মত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘উভয় দেশ শান্তির জন্য প্রস্তুত।’
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পরও থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়া কেউই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ করেনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুলের বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে—তিনি (থাই প্রধানমন্ত্রী) ট্রাম্পকে বলেছেন, কম্বোডিয়া তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করলে এবং সীমান্ত থেকে ভূমি মাইন অপসারণ করলেই কেবল যুদ্ধবিরতি সম্ভব।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমাদের দেশের ক্ষতি ও দেশের মানুষের ওপর হুমকি অব্যাহত রয়েছে। আমরা যত দিন পর্যন্ত নিরাপদ বোধ করছি না, তত দিন থাইল্যান্ড সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। আমি এই কথাটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই। আজ সকালে আমাদের সামরিক পদক্ষেপই তার প্রমাণ।’
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার সরকার জানিয়েছে, তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের অবশ্যই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এতে স্পষ্ট হয়, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির তোয়াক্কা না করে আজ শনিবারও সীমান্তে বোমা ও ভারী হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থাই যুদ্ধবিমান সীমান্তের আশপাশের হোটেল ও একটি সেতুতে বোমা হামলা করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার রকেট হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
কম্বোডিয়া আরও জানিয়েছে, থাই সামরিক বাহিনী দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সাতটি বোমা ফেলেছে। তারা এখনো বোমা হামলা বন্ধ করেনি।
নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে এবং উভয় পক্ষের প্রায় সাত লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই দুই দেশ তাদের ৮০০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত নিয়ে বিরোধে লিপ্ত। ১৯০৭ সালে ফ্রান্স যখন কম্বোডিয়ার ঔপনিবেশিক শাসক ছিল, তখন ফরাসি মানচিত্রকারদের আঁকা সীমান্তরেখা থেকেই এই বিরোধের সূত্রপাত।
গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর ট্রাম্প ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় দেশ দুটি একটি ‘তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছিল। কিন্তু এরপর উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে থাকে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়ার সৈন্যরা ভূমি মাইন স্থাপন করছে, যার ফলে সাতজন থাই সৈন্য হাত-পা হারিয়েছে। কম্বোডিয়া অবশ্য দাবি করেছে, মাইনগুলো ১৯৮০-এর দশকের গৃহযুদ্ধের সময়কার।
এদিকে, থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে যে তারা যেন এই সংঘাতকে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত না করে, যেমনটা গত জুলাইয়ে ট্যারিফ ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, দুই দেশ ‘আজ সন্ধ্যা থেকে সংঘর্ষ বন্ধ করতে’ এবং অক্টোবরে তাঁর সামনে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ফিরে যেতে সম্মত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘উভয় দেশ শান্তির জন্য প্রস্তুত।’
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পরও থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়া কেউই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ করেনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুলের বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে—তিনি (থাই প্রধানমন্ত্রী) ট্রাম্পকে বলেছেন, কম্বোডিয়া তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করলে এবং সীমান্ত থেকে ভূমি মাইন অপসারণ করলেই কেবল যুদ্ধবিরতি সম্ভব।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমাদের দেশের ক্ষতি ও দেশের মানুষের ওপর হুমকি অব্যাহত রয়েছে। আমরা যত দিন পর্যন্ত নিরাপদ বোধ করছি না, তত দিন থাইল্যান্ড সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। আমি এই কথাটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই। আজ সকালে আমাদের সামরিক পদক্ষেপই তার প্রমাণ।’
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার সরকার জানিয়েছে, তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের অবশ্যই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এতে স্পষ্ট হয়, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির তোয়াক্কা না করে আজ শনিবারও সীমান্তে বোমা ও ভারী হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থাই যুদ্ধবিমান সীমান্তের আশপাশের হোটেল ও একটি সেতুতে বোমা হামলা করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার রকেট হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
কম্বোডিয়া আরও জানিয়েছে, থাই সামরিক বাহিনী দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সাতটি বোমা ফেলেছে। তারা এখনো বোমা হামলা বন্ধ করেনি।
নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে এবং উভয় পক্ষের প্রায় সাত লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই দুই দেশ তাদের ৮০০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত নিয়ে বিরোধে লিপ্ত। ১৯০৭ সালে ফ্রান্স যখন কম্বোডিয়ার ঔপনিবেশিক শাসক ছিল, তখন ফরাসি মানচিত্রকারদের আঁকা সীমান্তরেখা থেকেই এই বিরোধের সূত্রপাত।
গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর ট্রাম্প ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় দেশ দুটি একটি ‘তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছিল। কিন্তু এরপর উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে থাকে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়ার সৈন্যরা ভূমি মাইন স্থাপন করছে, যার ফলে সাতজন থাই সৈন্য হাত-পা হারিয়েছে। কম্বোডিয়া অবশ্য দাবি করেছে, মাইনগুলো ১৯৮০-এর দশকের গৃহযুদ্ধের সময়কার।
এদিকে, থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে যে তারা যেন এই সংঘাতকে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত না করে, যেমনটা গত জুলাইয়ে ট্যারিফ ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছিল।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। সময় যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তত বাড়ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে ইউক্রেনীয় এক বাবার ডায়েরিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো—
০৫ মার্চ ২০২২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পর ১২৩ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশ। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোলেসনিকোভা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী আলেস বিয়ালিয়াতস্কি। বেলারুশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জন কোয়ালের সঙ্গে আলোচনার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া
১ ঘণ্টা আগে
রাতভর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দেশটির অন্তত ১০ লাখ পরিবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
২ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোর থেকে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু রয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে