Ajker Patrika

ফেঁসে গেলেন ১৮০ সন্তানের বাবা হওয়া স্পার্মদাতা

অনলাইন ডেস্ক
স্পার্মদাতা রবার্ট চার্লস অ্যালবন। ছবি: বিবিসি
স্পার্মদাতা রবার্ট চার্লস অ্যালবন। ছবি: বিবিসি

১৮০ টির বেশি সন্তানের বাবা হয়েছেন বলে দাবি করে আসছেন যুক্তরাজ্যে বসবাস করা এক মার্কিন স্পার্মদাতা। এবার তাঁকে অনিয়ন্ত্রিত স্পার্ম দানের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এক ব্রিটিশ আদালতে।

বুধবার বিবিসি জানিয়েছে, রবার্ট চার্লস অ্যালবন নিজেকে ‘জো ডোনার’ নামে পরিচয় দেন। তিনি অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে চীন থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে সন্তান জন্ম দিয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে তাঁর স্পার্ম গ্রহণ করে দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয়েছেন এক দম্পতি। কারণ ওই দম্পতির শিশুর ওপর পিতৃত্বের অধিকার দাবি করে আদালতে একটি মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন রবার্ট।

তবে শেষ পর্যন্ত নিজের করা মামলাতেই ফেঁসে গেছেন রবার্ট। কার্ডিফের পারিবারিক আদালতের বিচারক জনাথন ফার্নেস কেসি এই মামলার রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে—নারীদের অনিয়ন্ত্রিত স্পার্ম দানের সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা করা দরকার। বিশেষ করে রবার্ট অ্যালবনের মতো ব্যক্তিদের কাছ থেকে।

মামলাটি ছিল একটি সমকামী দম্পতির সন্তানকে কেন্দ্র করে। তাঁরা দুজনই নারী। একটি সিরিঞ্জের মাধ্যমে রবার্টের স্পার্ম দিয়ে গর্ভধারণ করেছিলেন তাঁদের একজন। তবে রবার্ট দাবি করেন, তিনি গোপনে গাড়ির ভেতরে শিশুটির জৈবিক মায়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছিলেন। তাঁর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন বিচারক।

বিচারক জানান, রবার্ট শিশুটির জন্য পিতৃত্বের অধিকার, জন্ম সনদে নিজের নাম সংযোজন এবং শিশুর নাম পরিবর্তনের আবেদন করেন। এমনকি শিশুটিকে গর্ভে ধারণ করা মায়ের সঙ্গীকে ‘খালা’ হিসেবে পরিচিত করার দাবি করেন। ওই দম্পতির দুজনই শিশুটির মা হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

এই মামলাটি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে এবং উভয় মা-ই জানান, এর জন্য মানসিক চাপে তাঁদের সম্পর্কও ভেঙে যায়। জৈবিক মা উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতায় ভুগছিলেন। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছিল।

বিচারক তাঁর রায়ে বলেন, ‘তিনি (রবার্ট) দাবি করেন, শিশুর কল্যাণ চান। কিন্তু বাস্তবে তিনি সম্পূর্ণ স্বার্থপর।’

বিচারক আরও বলেন, ‘তিনি (রবার্ট) নারী ও শিশুদের পণ্য হিসেবে দেখেন এবং নিজের সন্তান সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সারা বিশ্বে স্পার্ম দান করে চলেছেন।’

মামলার শুনানিতে আদালত আরও জানতে পারেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রবার্ট বর্তমানে ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বসবাস করছেন এবং যুক্তরাজ্যে থাকার জন্যই এই মামলা করেছিলেন। তবে রবার্ট এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিচারক স্পষ্টভাবে বলেন, ‘তিনি একজন নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি। নারীদের নিয়ন্ত্রণ করাই তার লক্ষ্য।’

আদালত রায় দিয়েছেন—শিশুটির নাম পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই এবং রবার্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শিশুটির কল্যাণের জন্য ক্ষতিকর হবে।

তবে, আদালত ‘চিঠির যোগাযোগ’ অনুমোদন করেছেন। এর মাধ্যমে রবার্ট প্রতি বছর একটি কার্ড বা ইমেইল পাঠাতে পারবেন। শিশুটি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এই চিঠিগুলো সংরক্ষণ করা হবে।

বিচারক বলেন, ‘তিনি (রবার্ট) ভবিষ্যতেও স্পার্ম দান চালিয়ে যেতে চান। তাই অনিয়ন্ত্রিত স্পার্ম দানের ঝুঁকি সম্পর্কে নারীদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের সুরক্ষার জন্য অনিয়ন্ত্রিত স্পার্ম দানের ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের জানতে হবে। বিশেষ করে, রবার্ট অ্যালবনের মতো ব্যক্তিদের ঝুঁকি সম্পর্কে।’

যুক্তরাজ্যের হিউম্যান ফার্টিলাইজেশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি অথোরিটি জানিয়েছে, নিবন্ধন করা ক্লিনিকের মাধ্যমে স্পার্ম গ্রহণ করাই নিরাপদ। নিবন্ধিত ক্লিনিকে একজন দাতার স্পার্ম সর্বোচ্চ ১০টি পরিবারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অ্যালবন এই নিয়ম অনুসরণ করেন না এবং অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট নারীদের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে স্পার্ম দান করেন তিনি। এর মধ্যে কৃত্রিম গর্ভধারণ ছাড়াও নারীদের সঙ্গে তিনি মাঝে মাঝে যৌন সম্পর্কও গড়ে তোলেন।

মামলাটির পর, আদালতের গার্ডিয়ান শিশুর স্বার্থ রক্ষায় এই রায়টি প্রকাশের আবেদন করেন যেন, জনসাধারণ এবং বিশেষত নারীরা অনিয়ন্ত্রিত স্পার্ম দানের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত