Ajker Patrika

‘ফ্রিজ, বই, খেলনা, লাশ’—ইউক্রেনের যত্রতত্র মাইন পুঁতছে রাশিয়া

আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২: ১১
‘ফ্রিজ, বই, খেলনা, লাশ’—ইউক্রেনের যত্রতত্র মাইন পুঁতছে রাশিয়া

ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। পশ্চিমা বিশ্ব এবং ইউক্রেনের দাবি তাঁরা রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের বিরাট একটি অংশ এরই মধ্যে উদ্ধার করেছে। কিন্তু উদ্ধার করা মানে এই নয় যে, বিপদ পুরোপুরি চলে গেছে। বরং রুশ বাহিনীর রেখে যাওয়া মাইন, বুবি ট্র্যাপ এবং অন্যান্য বিস্ফোরক পরিস্থিতি আরও বেশি কঠিন করে তুলেছে।

সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরোর সদস্যরা বলেছেন, রাশিয়া কার্যত সবকিছুতেই মাইন ফেলে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে—তাঁরা রণক্ষেত্রে তো মাইন রেখেছেই, এমনকি নিষ্ঠুরভাবে আবাসিক এলাকার রেফ্রিজারেটর, খেলনা এবং শিশুদের বইয়ের মতো দৈনন্দিন গৃহস্থালি সামগ্রীতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রেখে গেছে। তাদের লক্ষ্য হলো, ইউক্রেনের যতটা সম্ভব ক্ষতি সাধন করা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ২০২২ সালের এপ্রিলে সতর্ক করে বলেছিলেন, রাশিয়ার সৈন্যরা পশ্চাদপসরণের সময় পেছনে বিপুল পরিমাণ মাইন রেখে যাচ্ছে, যার ফলে একটি ‘পূর্ণাঙ্গ বিপর্যয়’ তৈরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘তারা পুরো অঞ্চলটিতেই মাইন ফেলে গেছে। এমনকি তারা ঘর, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং তারা যাদের হত্যা করেছে, সেই মরদেহেও তারা মাইন রেখে গছে।’

গত ২২ জুলাই মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সংঘাতের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাইন বিছানো দেশে পরিণত হয়েছে ইউক্রেন। পূর্ণ উদ্যমে এসব মাইন অপসারণ করতে গেলেও অন্তত ৭৫৭ বছর লাগবে।

স্লোভাকিয়াভিত্তিক থিংক-ট্যাংক গ্লোবসেকের দেওয়া তথ্যানুসারে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সংঘাতের কারণে ১ লাখ ৭৩ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা সক্রিয় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু ইউক্রেনীয় কর্মকর্তার ধারণা, ইউক্রেনের প্রায় ৪০ শতাংশ অঞ্চলেই কোনো না কোনো ধরনের মাইন এবং বুবি ট্র্যাপ রেখে গেছে রাশিয়া। এই এলাকায় বর্তমানে বিপুলসংখ্যক গোলা, বোমা ও মাইন অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এসব কারণেই মূলত ইউক্রেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাইনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

রণক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় সেনাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মাইন একটি বড় সমস্যা। মাইনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় বিপুল পরিমাণ ইউক্রেনীয় সৈন্য প্রাণ হারাচ্ছে। মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি গত জুলাইয়ে বলেছিলেন, এটি (মাইন) ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা এবং কিয়েভের সেনাদের হতাহত হওয়ার প্রধান কারণ।

এদিকে, যুদ্ধক্ষেত্রে যে রাশিয়া কেবল একাই মাইন ব্যবহার করছে তা নয়, বরং ইউক্রেনও নিজেদের সুবিধার্থে মাইন ব্যবহার করছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধে উভয় পক্ষই সমান তালে মাইন ব্যবহার করেছে। এই মাইনগুলোর অধিকাংশই অবিস্ফোরিত রয়ে গেছে।

জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত এসব অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ বিস্ফোরিত হয়ে ২২ শিশুসহ প্রায় ৩০০ বেসামরিক ইউক্রেনীয় নাগরিক মারা গেছে। একই সময়ের মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ৬৩২ জন।

বিভিন্ন মাইন অপসারণবিষয়ক সংস্থার অনুমানের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বলছে, এই মাইনগুলো অপসারণ করতে গেলে অন্তত ৭৫৭ বছর লাগবে। এমনকি পাঁচ শতাধিক মাইন অপসারণ দল নিয়োগ যদি অনবরত কাজ করে যায়, তার পরও এই সময় লাগবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, এই মাইনগুলো অপসারণে পরবর্তী ১০ বছরে অন্তত ৩ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার লাগবে, যেখানে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন মাইন অপসারণের জন্য মাত্র সাড়ে ৯ কোটি ডলার সহায়তা দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লেবাননে ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত করল জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন (ইউএনআইএফআইএল) জানিয়েছে, রোববার (২৬ অক্টোবর) দক্ষিণ লেবাননে টহলরত বাহিনীর ওপর আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে উড়তে থাকা একটি ইসরায়েলি ড্রোন তারা গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ঘটনাটি সীমান্তবর্তী শহর কফর কিলার কাছে ঘটেছে।

বিবৃতিতে ইউএনআইএফআইএল জানায়, ড্রোনটি শান্তিরক্ষী দলের খুব কাছাকাছি চলে আসায় প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ড্রোনটি ছিল তাদের নিয়মিত গোয়েন্দা তৎপরতার অংশ।

ইসরায়েলের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শোশানি এক্স-এ লিখেছেন, ‘ইউএনআইএফআইএল ইচ্ছাকৃতভাবে ড্রোনটিতে গুলি চালায়, যদিও এটি কোনো হুমকি তৈরি করেনি।’

শোশানি জানান, পরে ইসরায়েলি বাহিনী ওই এলাকায় একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে যেখানে ড্রোনটি পড়ে ছিল। তবে এ সময় শান্তিরক্ষীদের দিকে কোনো গুলি চালানো হয়নি। ঘটনাটি সামরিক সমন্বয় চ্যানেলের মাধ্যমে তদন্তাধীন আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইউএনআইএফআইএল জানিয়েছে, এরপর আরেকটি ইসরায়েলি ড্রোন কাছাকাছি এলাকায় একটি গ্রেনেড ফেলে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে একটি ইসরায়েলি ট্যাংক শান্তিরক্ষীদের দিকে গুলি চালায়। সৌভাগ্যক্রমে এতে কেউ আহত হয়নি।

গত বছরের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল নিয়মিতভাবে লেবাননের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। তাঁরা দাবি করে, এসব হামলার লক্ষ্য হিজবুল্লাহর পুনর্গঠন রোধ করা। তবে জাতিসংঘ ও লেবানন সরকার বলছে, এসব অভিযান লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করছে।

১৯৭৮ সালে গঠিত ইউএনআইএফআইএলের হাতে ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের অক্টোবরে—সে সময় ইউনিফিলের অংশ হিসেবে থাকা একটি জার্মান নৌযান লেবাননের উপকূলে একটি ড্রোন আটক করেছিল।

এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিবিসি জানিয়েছে, বর্তমান উত্তেজনা সীমান্তজুড়ে আবারও সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। আগামী সপ্তাহে মার্কিন, ফরাসি ও আরব কূটনীতিকদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে যুদ্ধবিরতি পুনরুজ্জীবিত করা ও দক্ষিণ লেবাননে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ জোরদারের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সে একবারও আমার চোখে তাকায়নি—হামলাকারী সম্পর্কে সালমান রুশদি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সালমান রুশদি। ছবি: ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড
সালমান রুশদি। ছবি: ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড

নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে এক চোখ হারানো লেখক সালমান রুশদি বলেছেন, তিনি কখনোই ওই আক্রমণের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন না। ট্যাটলার ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে জীবন বদলে দেওয়া ওই হামলার কথা স্মরণ করেন সামলান।

২০২২ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের চাটাকুয়া ইনস্টিটিউশনে বুকার পুরস্কারজয়ী এই লেখকের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে তিনি এক চোখে অন্ধ হয়ে যান এবং তাঁর এক হাত আংশিকভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

ঘটনার তিন বছর পর, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হাদি মাতারকে হত্যাচেষ্টা ও হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। চলতি বছরের মে মাসে তাঁকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সাক্ষাৎকারে ট্যাটলার ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘ওকে (আক্রমণকারী) আমি খুবই তুচ্ছ একজন মানুষ মনে করেছি—এই ছোট্ট বোকা লোকটা। এতে আমার মনে ঘৃণা জাগে। পরে ভাবলাম, এমন তুচ্ছ লোকও মানুষকে হত্যা করতে পারে—আমাকেও প্রায় মেরে ফেলেছিল। সে একবারও আমার চোখের দিকে তাকায়নি।’

রুশদি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘যখন বিচার শুরু হয়, তখন আক্রমণের পর প্রায় তিন বছর কেটে গেছে। এত দিনে বিষয়টা হজম করতে, ভাবতে ও কিছুটা সেরে উঠতে সময় লেগেছে। তাই আমি শুধু আমাকে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছি এবং বাড়ি ফিরে এসেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি চোখ হারানো আর একটি হাত সঠিকভাবে কাজ না করা—এই বিষয়গুলো প্রতিদিনই অনুভব করি। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবি, ধুর! আমি তো ডান চোখে কিছুই দেখতে পাই না। আমি কখনোই এর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারব না। এটা শুধু মেনে নিয়ে বাঁচতে হয়। কিন্তু আমি ভাবি না যে, ঠিক আছে, আরেকটা চোখ তো আছেই।’

তবে এসব সত্ত্বেও রুশদি জানালেন, তিনি লেখালেখি চালিয়ে যাবেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমি এখনো নতুন নতুন বিষয় নিয়ে ভাবি। তাই যত দিন বাঁচি, লিখে যেতে চাই।’

সোমবার (২৭ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইভনিং টাইমস জানিয়েছে, সালমান রুশদির এই পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হবে ট্যাটলার ম্যাগাজিনের ডিসেম্বর সংখ্যায়। তবে ৩০ অক্টোবর থেকে এটি ম্যাগাজিনের ডিজিটাল সংস্করণেও পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিএনএ বিশ্লেষণে বেরিয়ে এল নেপোলিয়নের সেনাদের মৃত্যুর নতুন রহস্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চিত্রকর্মে দুর্দশাগ্রস্ত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
চিত্রকর্মে দুর্দশাগ্রস্ত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

১৮১২ সালে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট রাশিয়া আক্রমণের উদ্দেশ্যে অর্ধ লক্ষাধিক সেনা নিয়ে যাত্রা করেন। কিন্তু ছয় মাস পর সেই অভিযানের এমন পরিণতি হয় যে, এটিকে ইউরোপের ইতিহাসের এক ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যুদ্ধ, অনাহার, তীব্র শীত ও টাইফাস মহামারির কারণে লাখ লাখ সৈন্য মারা যায়। অবশেষে মাত্র কয়েক হাজার সৈন্য ফ্রান্সে বেঁচে ফিরতে সক্ষম হয়।

তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা নেপোলিয়নের সৈন্যদের দেহাবশেষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে নতুন তথ্য পেয়েছেন। ২০০১ সালে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে উদ্ধার হওয়া একটি গণকবর থেকে পাওয়া দাঁতের নমুনা পরীক্ষা করে তারা আবিষ্কার করেছেন, সৈন্যদের মৃত্যু শুধু টাইফাস মহামারিতে হয়নি—বরং আরও অন্তত দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া তখন মারাত্মক ভূমিকা রেখেছিল।

গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ‘কারেন্ট বায়োলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় ব্যাকটেরিয়া দুটিকে ‘সালমোনেলা এন্টেরিকা’ ও ‘বোরেলিয়া রিকারেন্টিস’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘সালমোনেলা এন্টেরিকা’ প্যারাটাইফয়েড জ্বর ঘটায় এবং ‘বোরেলিয়া রিকারেন্টিস’ রিল্যাপসিং বা পুনরাবৃত্ত জ্বর ঘটায়।

গবেষণার প্রধান লেখক ও বর্তমানে এস্তোনিয়ার টার্টু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রেমি বারবিয়েরি বলেন, ‘আগে মনে করা হতো টাইফাসই ছিল সৈন্যদের মৃত্যুর একমাত্র কারণ। কিন্তু নতুন ডিএনএ বিশ্লেষণ প্রমাণ করছে, সেখানে একাধিক সংক্রমণ একযোগে কাজ করেছিল।’

২০০৬ সালে প্রথমবার টাইফাস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছিল নেপোলিয়নের সৈন্যদের দাঁতে। তবে তখনকার প্রযুক্তি সীমিত ছিল। এবার গবেষকেরা ব্যবহার করেছেন ‘হাই-থ্রুপুট সিকোয়েন্সিং’ পদ্ধতি, যা একসঙ্গে লাখ লাখ ডিএনএ খণ্ড বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। ফলে দুই শতাব্দীরও পুরোনো জিনগত উপাদান থেকেও নতুন তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

গবেষণায় ১৩টি দাঁতের নমুনা বিশ্লেষণ করা হলেও তাতে টাইফাসের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গবেষক নিকোলাস রাসকোভান জানান, এটি আগের গবেষণাকে অস্বীকার করছে না, বরং নতুন প্রমাণ দিচ্ছে যে নেপোলিয়নের সৈন্যদের মধ্যে একাধিক সংক্রামক রোগ ছড়িয়েছিল। হয়তো আরও অনেক অজানা রোগ তখন ছিল, যা এখনো শনাক্ত হয়নি।

বিশেষজ্ঞ সিসিল লুইস বলেন, এই গবেষণা ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। কারণ প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ এখন অতীতের রোগবালাই ও তার বিবর্তন সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিচ্ছে।

প্যারাটাইফয়েড ও রিল্যাপসিং জ্বর পৃথিবীতে এখনো বিরাজমান। তবে এই জ্বরগুলো অতীতের মতো আর প্রাণঘাতী নয়। নেপোলিয়ন নিজে বেঁচে গেলেও তাঁর পরাজিত ও রুগ্‌ণ সেনাবাহিনীই শেষ পর্যন্ত তাঁর পতনের পথ তৈরি করে দিয়েছিল।

গবেষকদের মতে, মাত্র এক দশকের মধ্যেই ডিএনএ প্রযুক্তির এই অগ্রগতি ভবিষ্যতে ইতিহাস ও জীববিজ্ঞানের আরও বহু অজানা রহস্য উন্মোচনের সুযোগ এনে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংবিধানে নেই, তবু তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানবিরোধী হলেও তিনি তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। সোমবার (২৭ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাহন এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়ে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ওই ইঙ্গিত দেন তিনি।

সম্প্রতি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিভ ব্যানন বলেছেন, ‘ট্রাম্প ২০২৮ সালেও প্রেসিডেন্ট থাকবেন’। এই বিষয়টি উল্লেখ করে এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি আদালতে গিয়ে সংবিধানিক বাধাকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী কি না।

উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি এ নিয়ে ভাবিনি। আমাদের কিছু চমৎকার মানুষ আছে। তবে আমার জনপ্রিয়তা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে।’

প্রেসিডেন্ট যখন তাঁর ‘চমৎকার মানুষদের’ কথা বলছিলেন, তখন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নাম উল্লেখ করেন।

তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়ে তিনি যোগ করেন, ‘আমি নিশ্চিত নই অন্য কেউ আবার প্রার্থী হতে চাইবে কি না। যদি সুযোগ থাকে, আমি মনে করি সেটা অপ্রতিরোধ্য হবে। আমি অবশ্যই করতে চাই। এখন আমার রেটিং সবচেয়ে ভালো।’

মার্কিন সংবিধানের ২২ তম সংশোধনী অনুযায়ী, কেউ দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। এতে বলা আছে—‘কোনো ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।’

একজন সাংবাদিক জানতে চান, তিনি কি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেতে পারেন? ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাইলে পারতাম, কিন্তু সেটা করব না। এটা খুব চতুর শোনায়, যা মানুষ পছন্দ করবে না। ঠিকও হবে না।’

এই পর্যায়ে ট্রাম্প নিজের অর্জন গুনে জানান, তিনি ‘আটটি যুদ্ধের সমাধান’ করেছেন—যার মধ্যে সম্প্রতি কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড শান্তিচুক্তিও অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, ‘আমি কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছি। এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

উল্লেখ্য, স্টিভ ব্যানন সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্ট-এর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ট্রাম্প ২০২৮ সালেও প্রেসিডেন্ট হবেন। এর জন্য একটা পরিকল্পনা আছে, সময়মতো সেটি জানানো হবে।’

এর আগে ট্রাম্পও একাধিকবার এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের তিনি বলেন, ‘হয়তো আমি আর প্রার্থী হব না, যদি না আপনারা বলেন—ও এত ভালো, আমাদের কিছু করতে হবে।’

তবে গত বছর টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি সংবিধান চ্যালেঞ্জ করে তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থী হতে চান না। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চার বছর পূর্ণ মেয়াদে কাজ করতে চাই এবং সেটাই যথেষ্ট।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত