Ajker Patrika

ইউক্রেনে সহায়তার চেয়ে রাশিয়ার তেল-গ্যাস কিনতে বেশি খরচ করেছে ইউরোপ

অনলাইন ডেস্ক
গত বছর ইউরোপ ইউক্রেন সহায়তা দেওয়ার চেয়ে রাশিয়ার তেল-গ্যাস কিনতে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
গত বছর ইউরোপ ইউক্রেন সহায়তা দেওয়ার চেয়ে রাশিয়ার তেল-গ্যাস কিনতে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ইউক্রেনে যে পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে তারা রাশিয়ার জ্বালানি তথা তেল-গ্যাস কিনেছে। কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে দেওয়া আর্থিক সহায়তার তুলনায় রুশ জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি।

জ্বালানি ও স্বচ্ছ বাতাস বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার—এর অনুমান অনুযায়ী, যুদ্ধের তৃতীয় বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার কাছ থেকে ২১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরোর তেল ও গ্যাস কিনেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিলেও এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছে।

আর ইউরোপীয় দেশগুলো ২০২৪ সালে ইউক্রেনে সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ করেছে ১৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল-গ্যাস কিনতে ইউরোপ যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, তার চেয়ে অন্তত এক-ষষ্ঠাংশ কম অর্থ সহায়তা দিয়েছে ইউক্রেনকে।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার-এর বিশ্লেষক ও প্রতিবেদনের সহ-লেখক বৈভব রঘুনন্দন বলেন, ‘রুশ জীবাশ্ম জ্বালানি কেনা মূলত ক্রেমলিনকে অর্থায়ন করার এবং তাদের আগ্রাসন সক্ষম করার শামিল। এটি এমন একটি অনৈতিক প্রক্রিয়া যা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার, শুধু ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য নয়, বরং ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্যও।’

গবেষকেরা বাণিজ্য সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে অনুমান করেছেন, যুদ্ধের তৃতীয় বছরে বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানি থেকে মোট কত রাজস্ব এসেছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির তথ্য এখনো পাওয়া না গেলেও, জানুয়ারি মাসের দেশগুলোর জ্বালানি আমদানি প্রবণতার ভিত্তিতে তারা পূর্বাভাস তৈরি করেছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির জন্য যে অর্থ ব্যয় করেছে, তা ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। তবে এই সহায়তার অঙ্কে সামরিক ও মানবিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত নয়।

কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টোফ ট্রেবেশ বলেন, অতীতের অন্যান্য যুদ্ধের তুলনায় ইউক্রেনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ইউরোপীয় দেশগুলো গড়ে বছরে তাদের জিডিপির শূন্য দশমিক ১ শতাংশের কম ব্যয় করেছে ইউক্রেনের জন্য।

ট্রেবেশ বলেন, ‘অনেক দেশ অতীতে আরও উদারভাবে সহায়তা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি ১৯৯০-৯১ সালে কুয়েতের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য তুলনামূলকভাবে দ্রুত ও বেশি সহায়তা দিয়েছিল, যা ইউক্রেনের জন্য করা সহায়তার তুলনায় বেশি।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়া জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানি থেকে এখন পর্যন্ত ২৪২ বিলিয়ন ইউরো উপার্জন করেছে এবং এই আয় ধীরে ধীরে এক ট্রিলিয়ন ইউরোর দিকে এগোচ্ছে। কারণ, দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর নতুন উপায় অবলম্বন করছে।

রাশিয়ার মোট কর রাজস্বের প্রায় অর্ধেকই অর্জিত হয় তেল ও গ্যাস খাত থেকে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে দেশটি পুরোনো ও অপর্যাপ্ত বিমাকৃত ট্যাংকারের মাধ্যমে ‘ছায়া নৌবহর’ ব্যবহার করে জ্বালানি পরিবহন করছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানি আয়ের এক-তৃতীয়াংশই এসব নৌযানের মাধ্যমে আসে।

এদিকে, গত বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতেরা রাশিয়ার ছায়া নৌবহরকে লক্ষ্য করে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তা হবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পর রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত ১৬ তম নিষেধাজ্ঞা।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার-এর গবেষকেরা অনুমান করেছেন, বর্তমান নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোর করা হলে এবং বিদ্যমান ফাঁকফোকর বন্ধ করা হলে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি রাজস্ব ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসতে পারে। এ সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পরিশোধন সংক্রান্ত ফাঁকফোকর’ বন্ধ করা, যার মাধ্যমে ইউরোপ অন্য দেশে পরিশোধিত রুশ তেল কিনতে পারে এবং তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস প্রবাহ সীমিত করা।

প্রতিবেদনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করা হয়েছে। ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউরোপ রাশিয়ার পাইপলাইনের গ্যাস আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমালেও, তারা এখনো কিছু পরিমাণ এলএনজি আমদানি করে নিজেদের ঘাটতি পূরণ করেছে।

গ্যাস বিশ্লেষক ইয়ান-এরিক ফ্যানরিখ বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে এলএনজির ভূমিকা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০১৯ সালে ইউরোপের দেশগুলো ৮১ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করলেও ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৯ মিলিয়ন টনে। তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর রাশিয়া ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলএনজি সরবরাহকারী হিসেবে স্থান দখল করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত