Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-জেলেনস্কির সঙ্গে নিঃশর্ত আলোচনা–আপসে প্রস্তুত পুতিন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ৫৯
Thumbnail image
রুশ জনগণের সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতায় পুতিন। ছবি: রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয়

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনায় আপস করতে প্রস্তুত। পাশাপাশি তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার ক্ষেত্রে রাশিয়ার তরফ থেকে কোনো শর্ত নেই। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তিনি প্রায়ই নিজেকে চুক্তি সম্পাদনের দক্ষ কারিগর হিসেবে উপস্থাপন করেন। তবে ১৯৮৭ সালের প্রকাশিত বই ‘ট্রাম্প: দ্য আর্ট অব দ্য ডিলের’ লেখক কীভাবে দ্রুত এই যুদ্ধ দ্রুত শেষ করবেন তা এখনো বিস্তারিত জানাননি।

আজ বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে রাশিয়ার জনগণের সঙ্গে সরাসরি এক প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে এক মার্কিন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন’তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রস্তুত, যদিও তিনি বহু বছর ধরে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেননি।

ট্রাম্পকে কী ধরনের প্রস্তাব দিতে পারেন—এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন রণক্ষেত্রে রাশিয়া দুর্বল অবস্থানে আছে সেই ধারণা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ২০২২ সালে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পর থেকে রাশিয়া আরও শক্তিশালী হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় বলেছি, আমরা আলোচনার এবং আপসের জন্য প্রস্তুত।’ এ সময় তিনি আরও জানান, রুশ বাহিনী পুরো রণক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ইউক্রেনে তাদের প্রধান লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগোচ্ছে।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার মতে, শিগগিরই যারা লড়াই করতে চায়—এমন ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা ফুরিয়ে যাবে, শিগগিরই আর কেউ লড়াই করতে চাইবে না। আমরা প্রস্তুত, কিন্তু অন্য পক্ষকেও আলোচনা এবং আপসের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’

রয়টার্স গত মাসে জানিয়েছিল, পুতিন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক, তবে বড় ধরনের কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন এবং কিয়েভকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে বলেছেন।

পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে রাশিয়ার কোনো শর্ত নেই এবং যে কারও সঙ্গে আলোচনার জন্য রাশিয়ার প্রস্তুত। এমনকি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও। তবে তিনি এটাও বলেন, যেকোনো চুক্তি কেবল ইউক্রেনের বৈধ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হতে পারে এবং বর্তমানে ক্রেমলিন ইউক্রেনের পার্লামেন্টকেই বৈধ মনে করে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলেনস্কির মেয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। কিন্তু যিনি যুদ্ধের কারণে নির্বাচন স্থগিত করেছেন। পুতিন বলেন, জেলেনস্কিকে পুনর্নির্বাচিত হতে হবে যাতে মস্কো তাঁকে বৈধ স্বাক্ষরকারী হিসেবে বিবেচনা করে এবং চুক্তি আইনগতভাবে নিশ্চিত হয়। কিয়েভের সঙ্গে কোনো অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার ধারণা পুতিন নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কেবল একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চুক্তিই যথেষ্ট।

রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, যেকোনো আলোচনার প্রাথমিক ভিত্তি হতে হবে যুদ্ধের প্রথম দিকে ইস্তাম্বুলে রুশ ও ইউক্রেনীয় আলোচকদের মধ্যে সম্পন্ন একটি প্রাথমিক চুক্তি, যা কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তবে কিছু ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদ সেই খসড়া চুক্তিকে একপ্রকার আত্মসমর্পণের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা ইউক্রেনের সামরিক ও রাজনৈতিক উচ্চাশাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলত।

২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের ফলে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং মস্কো ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল সংকটের পর থেকে দেখা যায়নি।

রাশিয়া এই সংঘাতকে প্রতিরক্ষামূলক বিশেষ সামরিক অভিযান হিসেবে উল্লেখ করে এবং দাবি করেন, ইউরোপে ন্যাটোর পূর্বমুখী বিপজ্জনক সম্প্রসারণ রোধ করার জন্য এর প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং এ বছর কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে।

চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মস্কোর বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে গ্রাম ধরে ধরে দখল করে চলেছে এবং এখন কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর যেমন পোক্রভস্কের—যা একটি প্রধান সড়ক ও রেল সংযোগকেন্দ্র—শহরগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

পুতিন বলেছেন, ‘এই লড়াইটি জটিল, তাই ভবিষ্যতে কী হবে তা অনুমান করা কঠিন এবং অর্থহীন... (তবে) আমরা, যেমন আপনি বলেছেন, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলো পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যা আমরা বিশেষ সামরিক অভিযানের শুরুতে নির্ধারণ করেছিলাম।’ রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর চলমান উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পুতিন বলেন, ‘কিয়েভের সৈন্যদের সরিয়ে দেওয়া হবে।’ তবে কখন সেটা হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।

অনুষ্ঠানে বিবিসির এক সাংবাদিক পুতিনকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি রাশিয়ার দেখভাল করেছেন কি না—যেমনটা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন তাঁর কাছে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় ১৯৯৯ সালের শেষে বলেছিলেন। উত্তরে পুতিন বলেন, তিনি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্ধকারের কিনারা থেকে সরে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সবকিছু করেছি যাতে রাশিয়া একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম শক্তি হতে পারে, যারা তাদের নিজস্ব স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।’

পুতিন আরও বলেন, রাশিয়া সিরিয়ার নতুন শাসকদের কাছে তাদের সামরিক ঘাঁটি নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে এবং মস্কো যাদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছে, তাদের অধিকাংশই ঘাঁটি থাকার পক্ষে। ঘাঁটিগুলো থাকা উচিত কি না, সে বিষয়ে রাশিয়াকে ভাবতে হবে—বলেও যোগ করেন পুতিন। তবে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাবের অপমৃত্যু সম্পর্কে গুজব বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত