Ajker Patrika

রাশিয়ার কুরস্ক থেকে রাতের আঁধারে যে কৌশলে পালাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা

রাশিয়া থেকে পিছু হটে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করছে ইউক্রেনের বাহিনী। ছবি: দ্য সানডে টাইমস
রাশিয়া থেকে পিছু হটে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করছে ইউক্রেনের বাহিনী। ছবি: দ্য সানডে টাইমস

যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে গত বছরের আগস্টে রাশিয়ার ভেতরে প্রবেশ করে কুরস্কের কিছু অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল ইউক্রেনের বাহিনী। কিন্তু যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে রাশিয়ার দক্ষ যুদ্ধ ইউনিটগুলো কুরস্কে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর ওই অঞ্চলটিতে বিপদের মুখে পড়া ইউক্রেনের পদাতিক বাহিনী ক্রমেই পিছু হটছে এবং আমেরিকার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—রুশ বাহিনীর বিজয়ের মুখে রাশিয়ার কুরস্কে অবস্থান করা ইউক্রেনের নানা কৌশলে পিছু হটছে। বিশেষ করে, সূর্য ডুবে যাওয়ার পর রাতের অন্ধকারে তারা নিজ দেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তাদের কেউ পায়ে হেঁটে, উপত্যকা ও ঝোপঝাড়ের আড়াল দিয়ে দ্রুত দৌড়ে ইউক্রেনের দিকে এগোচ্ছে। শত্রুপক্ষের ড্রোনের নজর এড়াতেই তারা এভাবে পালাচ্ছে।

তবে ইউক্রেনের বাহিনীর এক অফিসার আরও বিপজ্জনক এক কাজ করছিলেন। নিজের ইউনিটের সেনাদের পিছু হটার নির্দেশ দিয়ে তিনি গাড়ি চালিয়েই সর্বোচ্চ গতিতে কুরস্ক থেকে ইউক্রেনের দিকে ছুটছেন। গাড়িতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী ফেলে রেখে যেতে চান না বলেই এই পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। তাঁর একমাত্র প্রতিরক্ষা ছিল গাড়িটির জানালা দিয়ে বন্দুক তাক করে রাখা এক সহযোদ্ধা।

কুরস্কে গত কয়েক দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ইউক্রেনের সেনা বলেছেন, ‘পায়ে হাঁটাই নিরাপদ।’ গত বৃহস্পতিবার তাদের ইউনিট অলৌকিকভাবে পালাতে সক্ষম হয়েছিল, যদিও একজনের গোড়ালি মচকে গিয়েছিল।

এদিকে কুরস্কের কয়েকটি গ্রামে এখনো কিছু ইউক্রেনীয় সেনা রুশ ও উত্তর কোরিয়ার বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা চললেও রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় ফ্রন্ট বর্তমানে বেশ সক্রিয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘পূর্ব সীমান্তে রাশিয়া বড় ধরনের বাহিনী গড়ে তুলছে, যা আমাদের সুমি অঞ্চলে আক্রমণ চালানোর ইঙ্গিত দেয়।’

এ ছাড়া কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের হাজার হাজার সেনা আটকে পড়েছে বলে সম্প্রতি পুতিন যে দাবি করেছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলেনস্কি। তবে ওই অঞ্চলটিতে যুদ্ধের পরিস্থিতি অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। রাশিয়া তাদের দক্ষ ইউনিটগুলোকেই উত্তর ফ্রন্টে পাঠিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার যোদ্ধারাও এখন ইউক্রেনের সেনাদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা ইউক্রেনের ড্রোন হামলার মুখেও পালিয়ে যাচ্ছে না বা আহতদের ফেলে যাচ্ছে না। এক ইউক্রেনীয় সেনা বলেন, ‘রাশিয়ানরা প্রায়ই তাদের আহত সেনাদের গুলি করে মেরে ফেলে। কিন্তু কোরিয়ার সেনারা আহতদের ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সামরিক অগ্রগতি স্পষ্ট। ইউক্রেনের সুমি শহরে প্রবেশের আগে কুরস্কের কিছু এলাকায় কালো ধোঁয়ার স্তম্ভ দেখা গেছে। সেখানে এখনো যুদ্ধ চলছে।

ইউক্রেনের বাহিনী অবশ্য সীমান্তের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করছে। সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা শুধু সীমান্ত পেরিয়ে অভিযান চালাচ্ছি না, বরং সীমান্ত প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করছি।’

ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো এখন প্রায় সময়ই রুশ হামলার শিকার হচ্ছে। এমনই একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম জাপসিলিয়ায় বাস করেন ৪৬ বছর বয়সী লুদমিলা। সম্প্রতি তিনি গ্রাম থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি এক দুঃস্বপ্ন। আমরা এখন গৃহহীন। যা কিছু আমরা বহু বছর ধরে গড়ে তুলেছি, সব ফেলে আসতে হয়েছে।’

লুদমিলার গ্রামে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১১টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। লুদমিলা বলেন, ‘আমাদের বাহিনীর ওপর আমার বিশ্বাস রয়েছে। কিন্তু গোলাগুলির তীব্রতা ছিল ভয়াবহ।’

গত বৃহস্পতিবার সুমি অঞ্চলের আটটি গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। লুদমিলার স্বামী ও ছেলে বর্তমানে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে রয়েছেন। ফেলে আসা বাড়ির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের হাতের পরিশ্রমে যা গড়ে তুলেছি, তা এক ধূসর মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি রাশিয়ার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে, তবে শুধু সীমান্তবর্তী গ্রাম নয়, ইউক্রেনের সুমি শহরও সরাসরি হামলার শিকার হতে পারে। তবে আপাতত, শহরের জীবন স্বাভাবিক ছন্দে চলছে। সুপারমার্কেটের তাকগুলো পূর্ণ, বাসিন্দারা নির্দ্বিধায় কেনাকাটা করছেন।

কিন্তু এই স্বাভাবিক অবস্থা কত দিন বজায় থাকবে? এক ইউক্রেনীয় সেনা মন্তব্য করেন, ‘আমরা প্রতিরক্ষামূলক লাইন ভালোভাবে তৈরি করেছি। কিন্তু এটি কত দিন টিকবে? জানি না। এটা যুদ্ধ, আর শত্রুরা সামনে এগিয়ে আসছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক শক্তি থেকে ক্যানসার চিকিৎসা—দুটি সুপার কম্পিউটার বানাবে যুক্তরাষ্ট্র, প্রযুক্তি সহায়তায় এএমডি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সুপার কম্পিউটারগুলো ব্যবহৃত হবে পারমাণবিক শক্তি, ক্যানসার চিকিৎসা ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। ছবি: সংগৃহীত
সুপার কম্পিউটারগুলো ব্যবহৃত হবে পারমাণবিক শক্তি, ক্যানসার চিকিৎসা ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেসের (এএমডি) সঙ্গে এক বিলিয়ন ডলারের অংশীদারত্বে দুটি সুপার কম্পিউটার নির্মাণ করছে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এই সুপার কম্পিউটারগুলো ব্যবহৃত হবে পারমাণবিক শক্তি, ক্যানসার চিকিৎসা ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণায়।

এই নতুন অংশীদারত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস রাইট ও এএমডির প্রধান নির্বাহী লিসা সু নিশ্চিত করেছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়।

রাইট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো এমন পর্যাপ্ত সুপার কম্পিউটার তৈরি করা, যা ক্রমবর্ধমান জটিল বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনায় সক্ষম হবে। এসব মেশিন বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের গতি বহু গুণে বাড়িয়ে তুলবে।

তাঁর ভাষ্য, এই সিস্টেমগুলো পারমাণবিক শক্তি ও ফিউশন এনার্জি, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং নতুন ওষুধ উদ্ভাবনে ‘অভূতপূর্ব গতি’ আনবে।

বিজ্ঞানীরা এখন সূর্যের জ্বালানি উৎপাদন প্রক্রিয়া অর্থাৎ ফিউশন বিক্রিয়া পৃথিবীতে পুনরুৎপাদনের চেষ্টা করছেন। এর জন্য তাঁরা তীব্র তাপ ও চাপে হালকা পরমাণুগুলোকে একত্র করে বিপুল শক্তি উৎপাদনের চেষ্টা করছেন।

রাইট বলেন, ‘আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, কিন্তু প্লাজমা অত্যন্ত অস্থিতিশীল। আমাদের সূর্যের কেন্দ্রের মতো পরিবেশ পৃথিবীতে তৈরি করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই এআই-চালিত সুপার কম্পিউটারগুলোর মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি অনেক দ্রুত হবে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফিউশন শক্তি ব্যবহারযোগ্য করে তোলার বাস্তব পথ আমরা খুঁজে পাব।’

রাইট জানান, সুপার কম্পিউটারগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করবে এবং ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন ওষুধ উদ্ভাবনের গতি বাড়াবে; অণুস্তরে রোগ নিরাময়ের সম্ভাব্য উপায়গুলো সিমুলেশন করে।

তাঁর আশা, ‘আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে আমরা এমন একপর্যায়ে পৌঁছাব, যেখানে আজ যেসব ক্যানসার মৃত্যুদণ্ডের সমান মনে করা হয়, সেগুলোর অনেকগুলোই নিয়ন্ত্রণযোগ্য দীর্ঘস্থায়ী রোগে পরিণত হবে।’

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হ্যারিকেন মেলিসা: বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ের প্রভাব উপকূলে, জ্যামাইকায় প্রাণহানি ৩

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ক্যারিবীয় অঞ্চলে ধেয়ে আসছে হ্যারিকেন মেলিসা। ছবি: সংগৃহীত
ক্যারিবীয় অঞ্চলে ধেয়ে আসছে হ্যারিকেন মেলিসা। ছবি: সংগৃহীত

ক্যারিবীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে চলা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের বিধ্বংসী প্রভাব ইতিমধ্যেই জ্যামাইকায় অনুভূত হতে শুরু করেছে। দেশটির স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতির সময়ই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এটিকে চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বলা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে জনগণকে চরম সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে যে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় ছাদের ওপর ওঠা, বালুর বস্তা জড়ো করা বা গাছ কাটার মতো কাজগুলো আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও, সামান্য ভুলও মারাত্মক আঘাত বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, জলমগ্ন রাস্তা বা আবর্জনাপূর্ণ এলাকায় গাড়ি চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক। যদিও বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে, তবে হাসপাতালগুলো খোলা আছে এবং ঘূর্ণিঝড়-সম্পর্কিত আঘাতের চিকিৎসা দিচ্ছে।

জ্যামাইকার পানি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ম্যাথিউ সামুদা বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ‘নিউজডে’ অনুষ্ঠানে দেশের পরিস্থিতিকে ‘ভীতিকর’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জ্যামাইকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ সমুদ্র থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে বসবাস করে। এই ঘূর্ণিঝড় রাজধানী কিংস্টন, ওল্ড হারবার বে, রকি পয়েন্ট এবং সেন্ট এলিজাবেথের মতো বেশ কয়েকটি নিচু উপকূলীয় অঞ্চলে সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সামুদা জানান, কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ ধরে দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করেছে এবং বন্যার হাত থেকে নিজেদের ঘরবাড়ি বাঁচাতে বালুর বস্তা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে।

তবে, তিনি স্বীকার করেছেন যে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বহু মানুষ তাদের ‘জীবন রক্ষার চেয়ে সম্পত্তি রক্ষা করাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন’, এটি কর্তৃপক্ষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ।

মন্ত্রী সামুদা এই পরিস্থিতিতে বিদেশে বসবাসরত জ্যামাইকান প্রবাসীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন: ‘সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই’ যেন তাঁরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ফোনকল করে খোঁজ নেন এবং তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে উৎসাহিত করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

হারিকেন মেলিসা স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮২ কিলোমিটার বেগে স্থায়ী বাতাস নিয়ে জ্যামাইকার দিকে ধেয়ে যাচ্ছিল। ধীর গতিতে অগ্রসরমাণ এই ক্যাটাগরি–৫ ঘূর্ণিঝড়টি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঝড় হিসেবে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের (এনএইচসি) তথ্য অনুযায়ী, গ্রিনিচ মান সময় বিকেল ৬টা (বাংলাদেশ সময় মধ্যরাত ১২ টা) পর্যন্ত মেলিসাকে ‘বিপর্যয়কর’ ঝড় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি স্যাফির-সিম্পসন স্কেলের সর্বোচ্চ স্তর, অর্থাৎ ক্যাটাগরি–৫ হারিকেন।

এনএইচসি জানায়, মেলিসা সোমবার গভীর রাতে বা মঙ্গলবার ভোরে জ্যামাইকার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। মঙ্গলবার রাতে পূর্ব কিউবা অতিক্রম করে বুধবারের মধ্যে বাহামা ও টার্কস অ্যান্ড কাইকোস দ্বীপপুঞ্জের দিকে অগ্রসর হবে। ক্যারিবীয় সাগরের অস্বাভাবিক উষ্ণ জলে ধীর গতিতে অগ্রসর হওয়ায় মেলিসার আকার ও শক্তি বেড়ে গেছে বলে এনএইচসি–এর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এর ফলে জ্যামাইকা একাধিক দিনের নজিরবিহীন ঝোড়ো বাতাস ও প্রায় তিন ফুট বৃষ্টিপাতের মুখে পড়তে পারে।

বর্তমানে মেলিসার বাতাসের পরিধি জ্যামাইকার দৈর্ঘ্যের চেয়েও বেশি। কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের সমান আকারের এই দ্বীপটির প্রধান বিমানবন্দরগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থিত—যা বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। দক্ষিণ জ্যামাইকার কিছু অংশে, বিশেষ করে ঐতিহাসিক বন্দরনগর পোর্ট রয়্যালে বাধ্যতামূলক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ জারি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়ে আবেদন জানান। তিনি সতর্ক করেন, ঘূর্ণিঝড়টি কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, সেতু, সড়ক, বন্দর ও বিমানবন্দরের মতো অবকাঠামোর ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে।

সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও অনেক স্থানীয় বাসিন্দা রয়টার্সকে জানান, লুটপাটের আশঙ্কায় তারা ঘর ছাড়তে চান না। কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় ২৮ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হোলনেস বলেন, ‘এই অঞ্চলের কোনো অবকাঠামোই ক্যাটাগরি–৫ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত সহ্য করতে পারবে না।’

স্যাফির–সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী, ক্যাটাগরি–৫ হলো সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের ধাপ। এই স্কেল ঘূর্ণিঝড়ের স্থায়ী বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগের ওপর নির্ভর করে এবং সম্ভাব্য সম্পত্তি ক্ষতির মাত্রা অনুমান করতে ব্যবহৃত হয়। ক্যাটাগরি–৩ বা তদূর্ধ্ব ঘূর্ণিঝড়কে ‘মেজর হারিকেন’ বা বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ধরা হয়।

ক্যাটাগরি–৫ বলতে ঘণ্টায় ২৫২ কিলোমিটার বা তার বেশি বেগের ঝড়কে বোঝানো হয়। এমন ঝড়ে অধিকাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, ছাদ উড়ে যেতে পারে, দেয়াল ধসে পড়তে পারে, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়তে পারে। এই স্কেলে ঝড়ের সঙ্গে আসা জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিধস বা টর্নেডোর মতো অন্যান্য প্রাণঘাতী ঝুঁকি বিবেচনা করা হয় না।

এনএইচসি ১৯৭৩ সাল থেকে এই স্কেল ব্যবহার করছে। এটি প্রণয়ন করেন প্রকৌশলী হারবার্ট স্যাফির ও আবহাওয়াবিদ রবার্ট সিম্পসন। হোলনেস জানান, তাঁর সরকার যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নিয়েছে। ৩৩ মিলিয়ন ডলারের জরুরি বাজেট রাখা হয়েছে, পাশাপাশি গত বছরের ভয়াবহ হারিকেন বেরিলের ক্ষতির চেয়েও বেশি পরিমাণে বিমা ও ঋণ সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে।

বেরিল ছিল আটলান্টিক মহাসাগরে রেকর্ড করা সবচেয়ে দ্রুতগতির ক্যাটাগরি–৫ পর্যায়ে পৌঁছানো হারিকেন। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়গুলো আগের চেয়ে অনেক দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

অ্যাকুওয়েদার–এর প্রধান আবহাওয়াবিদ জোনাথন পোর্টার বলেন, ‘দশ হাজারেরও বেশি পরিবার ঘণ্টায় ১০০ মাইলের বেশি গতির প্রবল দমকা হাওয়ার মুখে পড়বে এবং কয়েক দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে।

পশ্চিম ক্যারিবীয় অঞ্চলের উষ্ণ জলবায়ুর কারণে জ্যামাইকা প্রতি বছরই উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড় ও হারিকেনের মুখোমুখি হয়। জ্যামাইকার হারিকেন মৌসুম জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়, যার চূড়ান্ত সময় অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধে। সাধারণত প্রতি বছর দ্বীপটি দুই থেকে তিনটি ট্রপিক্যাল ঝড় বা হারিকেনের প্রভাব অনুভব করে, তবে সরাসরি আঘাতের ঘটনা বিরল। ১৯৮৮ সালের পর থেকে জ্যামাইকাকে সরাসরি আঘাত করেছে মাত্র তিনটি বড় হারিকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন দিনের বৈঠকেও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি আফগানিস্তান-পাকিস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৪৩
গত ১৯ অক্টোবর দোহায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ ও আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ ইয়াকুব। ছবি: এএফপি
গত ১৯ অক্টোবর দোহায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ ও আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ ইয়াকুব। ছবি: এএফপি

তিন দিনের বৈঠক শেষেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। জানা গেছে, তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় আলোচনা শেষ হলেও সীমান্তে সন্ত্রাস দমনের বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে দুই দেশের। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

বৈঠকের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, অধিকাংশ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলেও আফগান ভূখণ্ড থেকে সক্রিয় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ গ্রহণের প্রক্রিয়াই প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাকিস্তানের এক কূটনৈতিক বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম শিগগির আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারব। এরপর যৌথ বিবৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু সেটি এখনো আমাদের নাগালের বাইরে।’

বৈঠকের প্রথম ভাগে পরিবেশ ছিল বেশ ইতিবাচক। অংশগ্রহণকারীরা তখন আলোচনা সম্পর্কে বেশ অগ্রগতির কথা বলেছিলেন। তবে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশা কমতে থাকে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী এক কূটনীতিক স্বীকার করেন, ‘এখন পরিস্থিতি কঠিন হচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে বৈঠক স্থবির হয়ে পড়ে এবং রাতেও আলোচনায় নতুন কোনো গতি দেখা যায়নি।’

কূটনৈতিক সূত্রটি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, আফগান তালেবান প্রতিনিধিদল এখনো কোনো লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে অনিচ্ছুক। বিশেষত পাকিস্তানবিরোধী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) সমর্থন বন্ধের বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রশ্নে তালেবান প্রতিনিধিদল কোনো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না। একজন পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেন, ‘তুর্কি আয়োজকেরা আমাদের উদ্বেগ বুঝতে পারছেন, কিন্তু কাবুল ও কান্দাহার কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে চাইছে না।’

পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমাদের অবস্থান শুরু থেকেই পরিষ্কার—টিটিপির সমর্থন বন্ধ করতে হবে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।’

সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকেরা জানান, ‘বহিরাগত প্রভাব’ (ভারতের দিকে ইঙ্গিত) সত্ত্বেও পাকিস্তান ও মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো ‘সততা ও গুরুত্বের সঙ্গে’ আলোচনাকে ইতিবাচক দিকে নিতে চেষ্টা করছে। তাই রোববারের বৈঠকের পর যে হতাশা তৈরি হয়েছিল, সোমবার পরিবেশ কিছুটা ইতিবাচক ছিল। রোববার পাকিস্তানি কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইসলামাবাদ তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। আফগান প্রতিনিধিদলও তখন আশাবাদী ছিল। তারা জানিয়েছিল, ইস্তাম্বুলের আলোচনায় অগ্রগতি সম্ভব এবং বাকি মতপার্থক্যগুলো সীমিত কিন্তু সমাধানযোগ্য।

এ সময় তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরাও একই মনোভাব প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, আলোচনার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া জরুরি এবং সেটি যেন ভেঙে না পড়ে। কিন্তু শত চেষ্টা সত্ত্বেও সীমান্তে সন্ত্রাস দমনের বিষয়ে দুই দেশের সমঝোতার বিষয়টি অধরা রয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠক আরও এক দিন বাড়ানো হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত