Ajker Patrika

বিমান ছাড়াই পৃথিবীর সব দেশ ঘুরে অভিযাত্রীর ৮ উপলব্ধি

অনলাইন ডেস্ক
কোনো বিমান ছাড়াই ২০৩টি দেশ ঘুরেছেন থর পেডারসেন। ছবি: সংগৃহীত
কোনো বিমান ছাড়াই ২০৩টি দেশ ঘুরেছেন থর পেডারসেন। ছবি: সংগৃহীত

২০১৩ সালে, ৩৪ বছর বয়সে থর পেডারসেন এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তটি শুধু ব্যতিক্রম নয়, এক কঠিন সংকল্পও বটে। কারণ তিনি কোনো উড়োজাহাজে না চড়েই পৃথিবীর প্রতিটি দেশ ঘুরে দেখার পণ করেন। প্রায় এক দশকের ব্যবধানে এভাবেই পৃথিবীর ২০৩টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন পেডারসেন। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের কাছে এই দীর্ঘ যাত্রা নিয়ে আটটি প্রধান শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি—

মানুষের উদারতা আশ্চর্যজনক

শীতার্ত এক রাতে পোল্যান্ডের সুবালকি শহরে ট্রেন থেকে নেমে একবার সাহায্যের খোঁজে রাস্তায় হাঁটছিলেন পেডারসেন। হাতে ছিল একটি নাম ও ফোন নম্বর। তবে কোনো মোবাইল কিংবা সিমকার্ড ছিল না তাঁর কাছে। এমন অসহায় এক পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ এক নারী বাড়ির দরজা খুলে পেডারসেনের দিকে তাকান। পেডারসেন প্রায় দৌড়ে ওই নারীটির দিকে এগিয়ে যান। নারীটি ইংরেজি জানতেন। পেডারসেনকে তিনি বাড়ির ভেতরে ডেকে নেন এবং অতিথির মতো থাকা-খাওয়ার জায়গা দেন। পরদিন সকালে পেডারসেনকে আবার বাসে তুলে দেন। সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন মানুষের এমন আন্তরিকতা তাঁকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

প্রকৃতির গোপন সৌন্দর্য এখনো রয়েছে

১০৬ তম দেশ হিসেবে তিনি পৌঁছেছিলেন লেসোথোতে। ১ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই দেশ তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। সেমনকং নামের এক পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে পেডারসেন ভেবেছিলেন—তিনি কি আইসল্যান্ড, অস্ট্রিয়া নাকি ভুটানে? ঘাসে ঢাকা বিস্তীর্ণ পাহাড়, পাখির ডাক, ঝলমলে রোদ ও নিঃসঙ্গ মালেটসুনিয়ানে জলপ্রপাত তাঁকে অভিভূত করেছিল।

মানুষের সহনশীলতা অতুলনীয়

২০১৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা আক্রান্ত গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওন ভ্রমণকালে তিনি মানুষের প্রাণবন্ত প্রচেষ্টা ও সুখে বাঁচার চেষ্টা প্রত্যক্ষ করেন। গিনির এক ট্যাক্সিচালক বলেছিলেন, ‘আমাদের সবকিছু আছে, কিন্তু কিছুই নেই।’ অথচ সিয়েরা লিওনে নামার এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি বিয়ের দাওয়াত পান! গান, নাচ, খাওয়া—জীবনের যত কঠিন সময়ই আসুক, মানুষ হেসে, প্রেম করে, একসঙ্গে বাঁচে।

নিজেকে আলাদা করে রাখা ভুল

ডেনমার্কে বাসে উঠলে মানুষ যতটা সম্ভব একা বসে। কিন্তু আফ্রিকায় সবাই যেন পরিবারের মতো। সবাই খাবার ভাগ করে, গল্প বলে, একে অপরের বাচ্চা কোলে নেয়। একবার এক চেকপয়েন্টে পেডারসেনকে রেখে যাওয়ার নাটক করেন এক বাসচালক। কারণ ওই চালক এর মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন। এতে কাজও হয়। যাত্রীরা সবাই মিলে যেন এক টিম। সেই অভিজ্ঞতায় পেডারসেন বুঝলেন, একসঙ্গে থাকার কী শক্তি!

প্রয়োজন আর ইচ্ছার পার্থক্য বোঝা জরুরি

একটানা ভ্রমণ খুবই ক্লান্তিকর। দুই বছর পরই তিনি তা অনুভব করেছিলেন। কিন্তু লক্ষ্য পূরণে থেমে যাননি। শিখেছেন অপ্রয়োজনীয় চাহিদা ঝেড়ে ফেলে কীভাবে সামান্যতেই টিকে থাকা যায়। শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করেন, সবচেয়ে মূল্যবান ছিল অসংখ্য অপরিচিত মানুষ আর তাঁদের সঙ্গে কথোপকথন।

ভাষা ছাড়াও সংযোগ সম্ভব

বেলারুশ থেকে মস্কোর ট্রেনে একটানা ১২ ঘণ্টা ভ্রমণে কারও সঙ্গে ভাষা না মেললেও পেডারসেন হাসতে হাসতে সময়টি কাটিয়েছেন। খাবার, ভদকা ভাগাভাগি করেছেন। হাতের ইশারা, হাসি, শিশুদের হাসিমুখ—সবই ছিল মানুষের সঙ্গে সংযোগের সেতু।

ধীরে চলা শেখায় পৃথিবীর বিশালতা

লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্ক যেতে সাতটি জাহাজ ও অনেকগুলো বাস ধরার পরই তিনি বুঝেছেন, পৃথিবী কত বিশাল। ধীর গতিতে ভ্রমণ করলেই মরুভূমি থেকে সবুজ বন, সমতল থেকে পাহাড়—এই পরিবর্তনগুলো দেখা যায়। আকাশ থেকে নয়, মাটির কাছাকাছি এলেই পৃথিবীর রূপ স্পষ্ট হয়।

ভ্রমণ জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা

বিদেশ ভ্রমণের চ্যালেঞ্জগুলো শেখায় বাস্তব জীবন। ভাষা, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক জ্ঞান, এমনকি মানবিক কাজ নিয়েও গভীর বোঝাপড়া তৈরি হয়। ৩৪ বছর বয়সে যাত্রা শুরু করে ৪৪-এ ফিরে এসে পেডারসেন বলেন, ‘আমি কত বছর বাঁচলাম তা নয়, কতটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম সেটাই আসল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত