Ajker Patrika

সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর পেছনে রাশিয়া সংযোগ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৩, ১১: ০৯
সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর পেছনে রাশিয়া সংযোগ

সুইডেনের স্টকহোমে মসজিদের বাইরে একটি বিক্ষোভে কোরআন পোড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় তুরস্ক খুবই ক্ষুব্ধ, যার ফলে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানে বিলম্বিত সম্ভাবনা আরও কমে গেল। মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পোড়ানোর আয়োজনের পেছনে রাশিয়ার সংযোগ থাকতে পারে বলে খবর মিলেছে। 

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলছে, এই আয়োজনে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে অতি ডানপন্থী এক সাংবাদিক, যার সঙ্গে রাশিয়ার সরকার সমর্থিত একটি গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। 

এর আগে গত জানুয়ারিতে তুরস্কের দূতাবাসের কাছে কোরআনে আগুন দেন অতি ডানপন্থী রাজনীতিক ও ইসলামবিদ্বেষী উসকানিদাতা রাসমুস পলুদান। ড্যানিশ-সুইডিশ দ্বৈত নাগরিক পলুদান এ ধরনের কাজের জন্য সুপরিচিত।          

সুইডেনের গণমাধ্যের খবরে বলা হয়, পলুদানের এই বিক্ষোভের অনুমোদনের জন্য ৩২০ সুইডিশ ক্রোনা পরিশোধ করেন ক্রেমলিনের মদদপুষ্ট টিভি চ্যানেল আরটির সাবেক প্রতিবেদক চ্যাং ফ্রিক। এই ব্যক্তি এখন অতি ডানপন্থী সুইডেন ডেমোক্র্যাটদের হয়ে নিয়মিত গণমাধ্যমে হাজির হন। ফ্রিক এই বিক্ষোভের অনুমোদন ফি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও কাউকে কোরআন পোড়াতে বলার কথা অস্বীকার করেন। 

কোরআন পোড়ানোর ঘটনা মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলে দিয়েছেন, তিনি এ ঘটনা বরদাস্ত করবেন না। তুরস্ক কোনোভাবেই সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য হওয়াকে সমর্থন করবে না।

সব সদস্য দেশ মেনে না নিলে কোনো নতুন দেশ ন্যাটোর সদস্য হতে পারে না।  ফলে একা তুরস্ক বিরোধিতা করলেই সুইডেনের আর ন্যাটোর সদস্য হওয়া হবে না। এ ঘটনার পর তাদের সেই সম্ভাবনা আর থাকে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। 

ন্যাটোর সদস্য হতে আগ্রহী আরেক সদস্য ফিনল্যান্ডের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে তুরস্ককে বারবার আহ্বান জানালেও পাত্তা দিচ্ছে না দেশটি। এর মধ্যে ‘বিদ্বেষমূলক অপরাধে’ মদদ দেওয়ার অভিযোগে ড্যানিশ দূতকে তলব করেছে তুরস্ক।

নিজের কাজের সমর্থনে স্থানীয় গণমাধ্যমকে পলুদান বলেন, ‘সুইডিশরা কেউ কেউ তাকে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে কোরআন পোড়াতে বলেছিলেন’ বলে তিনি কাজটি করেছেন। 

দ্য ইনসাইডার ওয়েবসাইটকে এক সাক্ষাৎকারে বিক্ষোভে অর্থ জোগানোর কথা স্বীকার করে সাংবাদিক ফ্রিক বলেন, কিন্তু কোরআন পোড়ানো ‘আমার আইডিয়া ছিল না’। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের পর রাশিয়া টুডের (আরটি) সঙ্গে তিনি নেই। সেই সঙ্গে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তি তিনি সমর্থন করেন না। 

সুইডেন ডেমোক্র্যাট দলের সাবেক নেতা ফ্রিক অতি ডানপন্থী এই ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেন। এর মূল কাজই ছিল সুইডেনে অভিবাসনের বিরোধিতা করা। ২০১৯ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে মজাও করেন তিনি। রাশিয়ার সাম্প্রতিক সফরের সময় সংগ্রহ করা রুবল নোট দেখিয়ে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ইনি আমার আসল বস! ইনি পুতিন!’

সুইডেন ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যুক্ত একটি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন ফ্রিক। সুইডেনের তিন দলের জোটের প্রতি এর সমর্থন থাকলেও এটি সরকারের অংশ নয়।

সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোবিয়ান বিলস্ট্রোম বলেন, ইসলামবিদ্বেষী এসব উসকানি ভয়াবহ। ‘সুইডেনে মত প্রকাশের অধিকারের চর্চা দীর্ঘদিনের। তাই বলে এটা দিয়ে প্রমাণিত হয় না, সুইডিশ সরকার বা আমি নিজে প্রকাশিত সেই সব মত সমর্থন করি।’

ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে তুরস্কের সমর্থনের জন্য গত বছর ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে। সুইডেনের সরকার বলেছে, সন্ত্রাস প্রতিরোধের বিধি জোরদারের জন্য প্রতিশ্রুত যা কিছু তার সবটাই করবে তারা।

তবে তুরস্কের চাওয়া আরও বেশি। সুইডেনে সন্ত্রাসী হিসেবে আটক ১৩০ নাগরিককে ফেরত চায় তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত