Ajker Patrika

‘এক মেরু আধিপত্যের দিন শেষ’, ইউরোপকে গণতন্ত্রের সবক দিলেন পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ২৩
বৃহস্পতিবার ভালদাই ফোরামে বক্তৃতা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার ভালদাই ফোরামে বক্তৃতা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব এখন ‘বহু মেরু যুগে’ প্রবেশ করছে, যেখানে আর কোনো একক শক্তি তাদের নিয়ম চাপিয়ে দিতে পারবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার ভালদাই ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ মন্তব্য করেন। তিনি ইউরোপকে সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে দায়ী করেন এবং গাজা-সংক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতি শর্ত সাপেক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন।

পুতিন বলেন, ভালদাই ফোরামের আলোচনা বিশ্বজুড়ে পরিস্থিতি বস্তুনিষ্ঠ ও ব্যাপকভাবে মূল্যায়নের সুযোগ দেয়। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, বহু-মেরুকরণ একটি ‘গুণগতভাবে নতুন ঘটনা’, যা সুযোগ ও ঝুঁকি উভয়ই তৈরি করে। তিনি যুক্তি দেন, ‘দূরবর্তী কোনো একক ব্যক্তির নির্ধারণ করে দেওয়া নিয়মে কেউ খেলতে প্রস্তুত নয়।’

পুতিন দাবি করেন, একটি বহুমেরু বিশ্ব আরও বেশি গণতান্ত্রিক, কারণ এটি ‘বিশালসংখ্যক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খেলোয়াড়কে’ ফলাফল প্রভাবিত করার সুযোগ দেয়। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার বা করতে চাওয়ার মতো এত বেশিসংখ্যক দেশ সম্ভবত এর আগে কখনো ছিল না।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পরিবেশে যেকোনো সমাধান অবশ্যই ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতে হবে। ‘সব আগ্রহী পক্ষ বা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠকে সন্তুষ্ট করে এমন চুক্তির ভিত্তিতেই কেবল যেকোনো সমাধান সম্ভব। অন্যথায়, কোনো কার্যকর সমাধান থাকবে না।

রুশ নেতা আরও অভিযোগ করেন, পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল আদেশ থেকে সরে আসে এবং ‘রাজনৈতিক বক্তৃতার প্ল্যাটফর্মে’ পরিণত হওয়ায় তাদের ‘তাৎপর্য হারিয়েছে’। তিনি ব্রিকস এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মতো সংস্থাগুলোর প্রশংসা করে বলেন, এগুলো সদস্যদের মধ্যে প্রকৃত ঐকমত্য ও ভারসাম্যকে প্রতিফলিত করে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর ‘আধিপত্যবাদী’ প্রবণতার বিপরীত।

পুতিন ইউরোপের প্রতি বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেন, এই মহাদেশের অভিজাতরা অভ্যন্তরীণ সংকট (যেমন ক্রমবর্ধমান ঋণ, অভিবাসন সমস্যা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংকট) আড়াল করার জন্য রাশিয়ার একটি শত্রুভাবাপন্ন ভাবমূর্তি তৈরি করছে।

তিনি ন্যাটো আক্রমণ করার রুশ পরিকল্পনার দাবিগুলোকে ‘অমূলক’ এবং ‘বিশ্বাস করা অসম্ভব’ বলে খারিজ করে দেন। তবে তিনি সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা ইউরোপের ক্রমবর্ধমান সামরিকীকরণের ওপর নিবিড় নজর রাখছি। রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া আসতে বেশি দেরি হবে না। এই হুমকিগুলোর প্রতিক্রিয়া, কম করে বলতে গেলেও, খুবই জোরালো হবে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুর্বলতা গ্রহণযোগ্য বিষয় নয়, কারণ এটি এই বিভ্রম তৈরি করে যে ‘আমাদের সঙ্গে যেকোনো সমস্যার সমাধান জোরজবরদস্তি করে করা যেতে পারে।’

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে পুতিন একে ‘একটি ইউক্রেনীয় ট্র্যাজেডি...যা ইউক্রেনীয় এবং রুশদের জন্য, আমাদের সবার জন্য বেদনাদায়ক’ বলে অভিহিত করেন। তিনি মস্কোর পুরোনো যুক্তি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনকে ‘তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্র প্রসারিত করার’ একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং কিয়েভকে ‘খরচ যোগ্য উপাদান’-এ পরিণত করা হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তের দিকে অগ্রসর না হলে এবং পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিলে এই সংঘাত এড়ানো যেত। রুশ বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগত উদ্যোগ ধরে রেখেছে দাবি করে তিনি কিয়েভকে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ থামাতে না পারার দায় সংখ্যাগরিষ্ঠের নয়, বরং সংখ্যালঘুর, ‘প্রধানত ইউরোপের’।

পুতিন গাজার সংঘাতকে ‘আধুনিক ইতিহাসের একটি ভয়াবহ ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি গাজায় মানবিক পরিস্থিতিকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এমনকি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও গাজাকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম শিশুদের কবরস্থান’ বলে অভিহিত করেছেন।

ট্রাম্পের উদ্যোগের বিষয়ে পুতিন বলেন, এটি ‘সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে কিছু আলো আনতে পারে।’ তিনি দুটি প্রস্তাবকে ‘সমর্থনের যোগ্য’ বলে বিবেচনা করেন: ১. গাজার নিয়ন্ত্রণ প্যালেস্টাইন অথোরিটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে তুলে দেওয়া ‘একটি ভালো বিকল্প’। ২. গাজায় আটক সব জিম্মিকে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার ট্রাম্পের ধারণা ‘সমর্থনের যোগ্য।’

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যেকোনো পরিকল্পনা অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের নিজেদের দ্বারা, হামাসসহ এবং বৃহত্তর ইসলামিক বিশ্ব দ্বারা গৃহীত হতে হবে। পুতিন পুনরায় উল্লেখ করেন, একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন সামগ্রিক দীর্ঘমেয়াদি নিষ্পত্তির একটি মূল ভিত্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জুলাই যোদ্ধাকে’ জুলাই ফাউন্ডেশনে পাইপ দিয়ে মারধর, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের হারে বাংলাদেশের বিদায়, হামজার হতাশা

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র

সেনা কর্মকর্তাদের জন্য ‘সাবজেল’ ঘোষণার যৌক্তিকতা কী, টিআইবির প্রশ্ন

ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পরে ভাতিজিকে পিটিয়ে হত্যা করলেন হাবিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত