Ajker Patrika

চুক্তি হলেও রাশিয়াকে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে: পুতিন 

চুক্তি হলেও রাশিয়াকে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে: পুতিন 

রাশিয়া ওই ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি করেছিল মস্কো–কিয়েভ। চুক্তি অনুসারে রাশিয়া ইউক্রেনকে খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে দিলেও রাশিয়াকে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন বলেছেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। 

বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখোর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে এই অভিযোগ করেন পুতিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ক্রেমলিন থেকে পাঠানো এক বিবৃতে এই তথ্য জানিয়েছে। 

ক্রেমলিনের বিবৃতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখোকে বলেছেন, গত মাসে ইস্তাম্বুলে হওয়া চুক্তি অনুসারে খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারছে না রাশিয়া। ক্রমাগত ‘বাধা’র সম্মুখীন হচ্ছে। বিবৃতিতে রাশিয়ার খাদ্যশস্যের পাশাপাশি সার রপ্তানিতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। 

মাঁখোর সঙ্গে আলাপকালে পুতিন বলেছেন, রুশ নিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিঝিয়ায় ইউক্রেনের হামলা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এবং যেকোনো সময় ‘বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে বলেও সতর্ক করেন পুতিন। 

পুতিন জোর দিয়ে বলেন, ‘জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ একটি বড় আকারের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।’ এ সময় উভয় দেশের নেতাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফিলিপাইনে টাইফুন কালমায়েগিতে ৬৬ জনের প্রাণহানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এ টাইফুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ সেবু দ্বীপ। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস
এ টাইফুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ সেবু দ্বীপ। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

বছরের অন্যতম শক্তিশালী টাইফুন কালমায়েগির তাণ্ডবে ফিলিপাইন বিপর্যস্ত। এ পর্যন্ত দেশটিতে ৬৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

আজ বুধবার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কার্যালয়ের উপপ্রশাসক রাফায়েলিতো আলেহান্দ্রো স্থানীয় রেডিও স্টেশন ডিজেডএমএমকে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় তিনি জানান, এ টাইফুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ সেবু দ্বীপ। এই দ্বীপে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ২৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাতে বিবিসি জানায়, টাইফুনের সঙ্গে পাহাড়ি ঢল নেমে অনেক গ্রাম ও শহর তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে ডুবে যাওয়ার কারণে।

সেবু দ্বীপের আবাসিক এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বহু ছোট ভবন বন্যার জলে ভেসে গেছে এবং পানি নামার পর পুরো এলাকাজুড়ে ঘন কাদার স্তর পড়ে রয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা নৌকা ব্যবহার করে আটকে পড়া মানুষদের ঘর থেকে বের করে আনছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকাগুলো। বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। পানিতে ভেসে গিয়েছে সড়কে থাকা গাড়িগুলো।

উদ্ধারকর্মীরা জানান, আকাশ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সহায়তা পৌঁছে দিতে পারছেন না। এক কর্মকর্তা জানান, সড়কে ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ আর গাড়িগুলো সমস্যা তৈরি করছে। এগুলো সরাতেই অনেক সময় লাগবে।

এই দুর্যোগে ৪ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সেবু প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন সেবু প্রদেশের গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘সেবুর পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ। আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই সবচেয়ে বিপজ্জনক হবে, কিন্তু বাস্তবে পানিই এখন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় হুমকি। বন্যার পানিতে বিপর্যস্ত সবকিছু।’

এদিকে ত্রাণ দিতে গিয়ে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ছয় সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। সেবুর দক্ষিণে মিন্দানাও দ্বীপে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তাঁরা। গতকাল মঙ্গলবার হেলিকপ্টারটি আগুসান দেল সুর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। ত্রাণ সহায়তার জন্য পাঠানো চারটি সামরিক হেলিকপ্টারের মধ্যে একটি ছিল এটি।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এরপরই তৎক্ষণাৎ অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। পরে একজন মুখপাত্র জানান, ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো পাইলট ও ক্রুদের বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে স্থলভাগে আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে টাইফুনটি। তবে এখনো ঘণ্টায় ৮০ মাইল (১৩০ কিমি) বেগে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। টাইফুনটি আজ বুধবারের মধ্যে ভিসায়াস দ্বীপমালা অঞ্চল পেরিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে চলে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। তারা আরও জানান, এখন ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে টাইফুন কালমায়েগি।

প্রতি বছর গড়ে ২০টি ঝড় ও টাইফুন ফিলিপাইনে আঘাত হানে। টাইফুন কালমায়েগির এক মাস আগে পরপর দুটি ঝড়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল দেশটি। ১২ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। অবকাঠামো ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে গণহত্যার প্রমাণ লোপাটে ‘গণকবর খুঁড়ে’ মরদেহ চাপা দিচ্ছে আরএসএফ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দারফুর অঞ্চলের এল–ফাশেরে আরএসএফ বাহিনীর কিছু সদস্য। ছবি: এএফপি
দারফুর অঞ্চলের এল–ফাশেরে আরএসএফ বাহিনীর কিছু সদস্য। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক বলেছেন, সুদানের পশ্চিম দারফুর অঞ্চলের শহর আল-ফাশেরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) গণকবর খুঁড়ছে। গত মাসে আরএসএফ শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সেখানে গণহত্যা ও গণ–উচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। মূলত গণহত্যার প্রমাণ লোপাট করতে তারা এসব গণকবর খুঁড়ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইয়েলের স্কুল অব পাবলিক হেলথের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক ন্যাথানিয়েল রেমন্ড মঙ্গলবার আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আরএসএফ শহরজুড়ে গণকবর খনন শুরু করেছে এবং মরদেহ সংগ্রহ করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা গণহত্যার চিহ্ন মুছে ফেলছে।’

গত ২৬ অক্টোবর আরএসএফ উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশেরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর আগে সুদানি সেনাবাহিনী (এসএএফ) শহরটি থেকে সরে যায়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সংঘাতের পর থেকে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছে।

জাতিসংঘের হিসাবে, আরএসএফ শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আল-ফাশের ও আশপাশের এলাকা থেকে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সেখানে ‘তাৎক্ষণিক হত্যাকাণ্ড’, যৌন সহিংসতা ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে।

ইয়েলের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের ২৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরএসএফ শহরটি দখলের পর থেকে ‘গণহত্যার প্রমাণ’ মিলেছে। স্যাটেলাইট চিত্রে রক্তের দাগ ও দেহ টেনে নেওয়ার চিহ্নও দেখা গেছে। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে সতর্ক করেছেন, শহরটিতে হাজার হাজার মানুষ এখনো আটকা পড়ে আছে।

সুদানে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জ্যাকুলিন উইলমা পারলেভলিয়েট বলেন, ‘বর্তমান অস্থিতিশীলতা শহরে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। ফলে আটকে পড়া মানুষদের কাছে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানো যাচ্ছে না।’

সুদানি সাংবাদিক আবদাল্লাহ হুসেইন আল-জাজিরাকে বলেন, আরএসএফ পুরোপুরি দখল নেওয়ার আগেই আল-ফাশের শহরটি ১৮ মাস ধরে তাদের অবরোধে ছিল। তিনি বলেন, ‘কোনো ত্রাণ শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। কোনো হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্র চালু ছিল না। এখন অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে গেছে, যারা শহরে রয়ে গেছে তাদের জন্য।’

বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে আরএসএফ ও তাদের সমর্থকেরা আল-ফাশেরের হত্যাযজ্ঞের দায় অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। আরএসএফের নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—ঘটনার তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কিন্তু ইয়েলের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের রেমন্ড বলেন, ‘যদি তারা সত্যিই তদন্ত করতে চায়, তাহলে শহর থেকে সরে যেতে হবে। জাতিসংঘ, রেডক্রস ও মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর কর্মীদের প্রবেশ করতে দিতে হবে, ঘরে ঘরে গিয়ে দেখতে দিতে হবে কে বেঁচে আছে।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা আরএসএফকে তাদের কৃতকর্মের তদন্ত নিজেদেরই করতে দিতে পারি না।’ রেমন্ড আরও বলেন, জাতিসংঘের তথ্য ও আল-ফাশেরে যেটা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে গত ১০ দিনে সেখানে যত মানুষ মারা গেছে, তা গত দুই বছরে গাজায় নিহতের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন ভয়াবহতার কথাই বলছি, এটা কোনো অতিরঞ্জন নয়।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ এখনই জরুরি সহায়তা দরকার।’ জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজায় ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্কের মেয়র ছাড়াও নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর পদে জিতল ডেমোক্র্যাটরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গতকাল রাতের নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন জোহরান মামদানি, নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনে মিকি শেরিল ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনে অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার। ছবি: সংগৃহীত
গতকাল রাতের নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন জোহরান মামদানি, নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনে মিকি শেরিল ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনে অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শহর নিউইয়র্কের মেয়র পদে প্রথম মুসলিম হিসেবে জয়ী হয়েছেন নিজেকে এক সময় ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক’ বলে পরিচয় দেওয়া জোহরান মামদানি। তাঁকে সরাসরি সমর্থন দিয়েছে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি। একই দিনে, মার্কিন দুই অঙ্গরাজ্য নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর পদেও জয়ী হয়েছে বিরোধী দলটির প্রার্থীরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, নিউ জার্সিতে ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্য মিকি শেরিল জয় পেয়েছেন। সাবেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ও ব্যবসায়ী জ্যাক সিয়াতারেল্লিকে হারিয়ে তিনি গভর্নর নির্বাচনে জয়ী হন। শেরিল ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রথমবার কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন, তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও মধ্যপন্থী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। এই নির্বাচনের মূল ইস্যু ছিল রাজ্যের জীবনযাত্রার ব্যয় ও মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী নীতিনির্ধারণ।

ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্র্যাট দলের সাবেক কংগ্রেস সদস্য অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার রাজ্যের প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। জয়ী হয়ে স্প্যানবার্গার বলেন, তিনি বাস্তববাদী নীতি অনুসরণ করবেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের টার্গেটে থাকা রাজ্যের সরকারি কর্মীদের সুরক্ষা দেবেন। তিনি জানান, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সহনীয় করা হবে তাঁর প্রথম দিনের অগ্রাধিকার।

বিপরীতে রিপাবলিকান প্রার্থী রাজ্যের বর্তমান লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসোম আর্ল-সিয়ার্স নির্বাচনে নিজের রক্ষণশীল ভোটার ঘাঁটিকে কেন্দ্র করে প্রচারণা চালান এবং স্প্যানবার্গারের রাজনৈতিক রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে বিষয়টি নিয়ে খুব একটা সফল হয়নি।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন জোহরান মামদানি। ভোট শেষে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পরপরই বার্তা সংস্থা এপি তাঁর বিজয়ের খবর নিশ্চিত করে। বিশ্বের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া উত্তেজনাপূর্ণ এ নির্বাচনে তার জয় ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ৮৪ লাখের বেশি মানুষের এই শহর অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বৈশ্বিক শক্তিকেন্দ্র। সেই শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া নেতা হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখালেন মামদানি।

বহুধর্মী ও বহুজাতির এই মহানগরের ভোটারেরা মামদানির জয়কে ঐতিহাসিক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। তবে তাঁর নিবেদিত সমর্থকেরা বলছেন, এটি কেবল ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের জয় নয়—এটি জীবনের ব্যয় সামাল দেওয়ার বাস্তব সমস্যায় তার তীক্ষ্ণ ও স্পষ্ট অবস্থানের প্রতিফলন।

এই নির্বাচন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকনির্দেশক হিসেবেও দেখা হচ্ছে। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো অনেকের কাছে পুরোনো ধনবান দাতানির্ভর রাজনীতির প্রতীক। আর নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া মামদানি দলটির জন্য নতুন এক পথের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৯
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন জোহরান মামদানি। ভোট শেষে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পরপরই বার্তা সংস্থা এপি তাঁর বিজয়ের খবর নিশ্চিত করে। বিশ্বের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া উত্তেজনাপূর্ণ এই নির্বাচনে তাঁর জয় ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ৮৪ লাখের বেশি মানুষের এই শহর অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বৈশ্বিক শক্তির কেন্দ্র। সেই শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া নেতা হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখালেন মামদানি।

বহুধর্মী ও বহুজাতির এই মহানগরের ভোটাররা মামদানির জয়কে ঐতিহাসিক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। তবে তাঁর নিবেদিত সমর্থকেরা বলছেন, এটি শুধু ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের জয় নয়, এটি জীবনের ব্যয় সামাল দেওয়ার বাস্তব সমস্যায় তাঁর তীক্ষ্ণ ও স্পষ্ট অবস্থানের প্রতিফলন।

এই নির্বাচন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকনির্দেশক হিসেবেও দেখা হচ্ছে। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো অনেকের কাছে পুরোনো ধনবান দাতানির্ভর রাজনীতির প্রতীক। আর নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া মামদানি দলটির জন্য নতুন এক পথের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।

মঙ্গলবার ভোট দেওয়ার সময় কুমো বলেন, এটি ‘ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরের এক গৃহযুদ্ধ, যা বহুদিন ধরে জ্বলছিল।’ তিনি বলেন, ‘চরমপন্থী বামপন্থীরা, যারা নিজেদের সমাজতন্ত্রী বলে, তারা মাঝারি ডেমোক্র্যাটদের চ্যালেঞ্জ করছে। তোমরা যেটা এখানে দেখছ, সেটাই সেই সংঘর্ষ।’

তবে ব্রংক্সের মোট হ্যাভেন এলাকার সমাজকর্মী জোশুয়া উইলসন মামদানিকে ভোট দিয়েছেন। তাঁর মতে, কুমো যা বলেছেন, তা আংশিক সত্য। তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকালে এখন সবার নজর নিউইয়র্কে, নজর যুক্তরাষ্ট্রে। সবকিছু রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে, ঘৃণা আর তিক্ততা বেড়ে গেছে।’ ৩৩ বছর বয়সী উইলসন বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কণ্ঠ আসছে, এটা অনেককে ভয় দেখাচ্ছে। তারা পুরোনো অবস্থা ধরে রাখতে চায়, যেন কিছুই না বদলায়।’

একই এলাকার ৬৮ বছর বয়সী লুসি করদেরো বললেন, ‘আমরা কুমোকে চিনি, তিনি খুব ভালো মানুষ নন। আমি মামদানিকে বেছে নিয়েছি। কারণ, তিনি নতুন, তরতাজা। হয়তো তিনি পরিবর্তন আনতে পারবেন, যা এখন খুব দরকার।’

নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প কুমোকে সমর্থন দিয়েছিলেন, যাতে রক্ষণশীল ভোটারদের উজ্জীবিত করা যায়। কিন্তু সেটি উল্টো ফল দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কুমোর সাবেক সমর্থকেরাও মামদানির প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়েছেন। ৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশি ইফতিখার খান বলেন, মামদানি মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় ভোটারদের এক বিশাল ঐক্য গড়ে তুলেছেন। অনেকেই মনে করছেন, তাঁর এই বিজয় নিউইয়র্কের মুসলিমদের জন্য নতুন রাজনৈতিক জাগরণের সূচনা। কারণ, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর মুসলিমরা এই শহরে বৈষম্যের কঠিন সময় পার করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত