Ajker Patrika

গুগল থেকে ২৪০ কোটি ইউরো আদায় করে ছাড়ল যেই দম্পতি

শিভাউন র‍্যাফ ও তাঁর স্বামী অ্যাডাম। ছবি: সংগৃহীত
শিভাউন র‍্যাফ ও তাঁর স্বামী অ্যাডাম। ছবি: সংগৃহীত

শিভাউন র‍্যাফ ও তাঁর স্বামী অ্যাডাম ২০০৬ সালের জুনে ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে শপিং কম্পারিজন ওয়েবসাইট ‘ফাউন্ডেম’ চালু করেন। শুরুতে ঢাক গুড়গুড় করে চলছিল তাঁদের নতুন ওয়েব সাইট। কিছুদিন পর যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে সেরা শপিং কম্পারিজন ওয়েবসাইটে পরিণত হয়।

তবে হঠাৎ করেই তাঁদের সাইট ধীর গতির হয়ে পড়ে ও গুগল সার্চের ফলাফলে তাঁদের সাইট অনেক নিচে আসতে থাকে। এ নিয়ে তাঁরা গুগলের কাছে অভিযোগ করেন। তবে গুগল তাঁদের থোড়াই কেয়ার করে, একপর্যায়ে গিয়ে গুগলের সঙ্গেই তাঁদের বাঁধে দ্বন্দ্ব। শেষমেশ এই দম্পতি মামলায় জিতলে গুগলকে গুনতে হয় ২৪০ কোটি ইউরো।

তবে কি এমন অপরাধে এই টেক জায়ান্টকে এত বড় জরিমানা দিতে হয়?

ওয়েব সাইট চালু করার পর ২০০৮ সালে ক্রিসমাসের তিন সপ্তাহ আগে তাঁদের ওয়েবসাইট হঠাৎ ধীর গতির হয়ে যায়। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন কোনো সাইবার আক্রমণ, কিন্তু আদতে তা ছিল না। অ্যাডাম হাসতে হাসতে বলেন, ‘আসলে অনেক বেশি ব্যবহারকারী ওয়েবসাইট ভিজিট করতে শুরু করেছিল।’

কিন্তু এটি সহ্য হয়নি গুগলের। নিজস্ব শপিং কম্পারিজন সার্ভিস ব্যবহার করে বাজারে আধিপত্য বিস্তারের জন্য গুগলের স্বয়ংক্রিয় স্প্যাম ফিল্টার ফাউন্ডেম ওয়েবসাইটকে সার্চ ফলাফলের নিচের দিকে ঠেলে দেয়। এটি এমনভাবে সাইটটির অবস্থান নিচে নামিয়ে দেয় যে সাধারণ ব্যবহারকারীরা তাঁদের সাইট খুঁজে পায় না।

ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পণ্যের তুলনামূলক তালিকা থেকে অন্য সাইটে প্রবেশ করলে ক্লিক থেকে আয় করত ফাউন্ডেম। তবে গুগলের স্প্যাম ফিল্টারের কারণে তাঁদের আয়ে ভাটা পড়ে। অ্যাডাম বলেন, ‘যখন আপনি ট্রাফিক (ব্যবহারকারী) হারান, তখন আপনার ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যায়। আমাদেরও তাই হয়েছিল।’

শিভাউন ও অ্যাডাম প্রথমে কল্পনাই করতে পারেননি গুগল এমন কিছু করতে পারে। শিভাউন বলেন, ‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এটি যান্ত্রিক ত্রুটি ও দ্রুত সমাধান সম্ভব।’ দম্পতিটি গুগলের কাছে বারবার এর সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন। তবে দুই বছরেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি গুগল, তখন তাঁদের সন্দেহ আরও গভীর হয়।

এরই মধ্যে দম্পতিটি খেয়াল করেন, অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে তাঁদের ওয়েবসাইট ঠিকঠাকভাবে সামনে আসছিল, শুধু গুগল সার্চেই তাঁরা অনেক নিচে। তখন তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের মতো আরও অনেক কোম্পানি গুগলের এই সুষম প্রতিযোগিতা বিরোধী আচরণের শিকার হয়েছে।

এরপর ২০০৮ সালে অ্যাডাম নিশ্চিত হন, গুগল প্রতিযোগিতার মাঠ থেকে তাদের সরাতে ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটকে নিচের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ওই বছর যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফাইভের ‘দ্য গ্যাজেট শো’তে ফাউন্ডেমকে যুক্তরাজ্যের সেরা পণ্যর মূল্য তুলনা ওয়েবসাইট ঘোষণা করা হয়। এরপর গুগল সার্চে সাইটটির ট্রাফিক আরও কমে যায়।

র‍্যাফ দম্পতির শপিং কম্পারিজন ওয়েবসাইট ‘ফাউন্ডেম’। ছবি: সংগৃহীত
র‍্যাফ দম্পতির শপিং কম্পারিজন ওয়েবসাইট ‘ফাউন্ডেম’। ছবি: সংগৃহীত

শিভাউন বলেন, ‘আমরা তখন গুগলকে বলেছিলাম, আমাদের ওয়েবসাইট তলানিতে চলে যাওয়া ব্যবহারকারীদের জন্য মোটেই সহায়ক নয়। কিন্তু গুগলের কাছ থেকে তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া আসেনি।’

এরপর ২০০৯ সালে ফাউন্ডেমের প্রতিষ্ঠাতা দম্পতি বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ করতে শুরু করেন এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন। ইউরোপীয় কমিশন ২০১০ সালে মামলা আমলে নিয়ে গুগলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। অবশেষে ২০১৭ সালে প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গুগলকে ২৪০ কোটি ইউরো জরিমানা করা হয়, যা প্রযুক্তি বিশ্বে সাড়া ফেলে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিযোগিতা বিষয়ক প্রধান মার্গারেথ ভেস্টাগার এই রায় দেন। রায়ে গুগল ও তাঁর মাদার প্রতিষ্ঠান আলফাবেটকে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ ও ইউরোপীয় কমিশনের মামলাসংক্রান্ত খরচ পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়ে। এই রায়ের পর প্রায় ২০টি সংস্থা দাবি করেছে, তাঁরাও গুগলের প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের শিকার হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে কেলকু, ট্রিভাগো ও ইয়েল্পের মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান।

তবে গুগল তখন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। গুগলের দাবি ছিল, ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তাদের শপিং পরিষেবাগুলো যেভাবে দেখানো হতো, সেটি তাঁরা এরই মধ্যে সংশোধন করেছে। কিন্তু ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় বিচারিক আদালত গুগলের আপিল খারিজ করে দেয় এবং ফাউন্ডেমের পক্ষে রায় ঘোষণা করে।

দম্পতিটি বিশ্বাস করেন, গুগলের সার্চ অ্যালগরিদম এখনো প্রতিযোগিতাবিরোধী রয়ে গেছে এবং ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) এ বিষয়ে তদন্ত করছে। চলতি বছরের মার্চ ইসি নতুন ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্টের অধীনে গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা গুগল সার্চ রেজাল্টে এখনো নিজস্ব পণ্য ও সেবা অগ্রাধিকার দিচ্ছে কিনা—তা খতিয়ে দেখছে।

এ বিষয়ে গুগলের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘২০২৪ সালের আপিলি রায়ে ইউরোপীয় বিচারিক আদালতের (সিজেইইউ) শুধুমাত্র ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আমাদের পণ্য সার্চের ফলাফল বিবেচনা করেছে। অথচ ২০১৭ সালে ইউরোপীয় কমিশনের শপিং সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত মেনে আমরা অ্যালগরিদমে পরিবর্তন এনেছি। গত সাত বছর ধরে সেটি সফলভাবে কাজ করে আসছে, যা ৮০০-রও বেশি ‘কমপারিজন শপিং সাইটে’ কোটি কোটি ক্লিক এনে দিয়েছে। এ কারণেই আমরা ফাউন্ডেমের আনা দাবির বিরুদ্ধে জোরালোভাবে বিরোধিতা করছি এবং এটি অব্যাহত রাখব।’

যে কারণে গুগলকে ২৪০ কোটি ইউরো জরিমানা করলেন ইউরোপের আদালত 

দম্পতিটি গুগলের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ক্ষতিপূরণের দাবিতে আরেকটি মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে শুরু হওয়ার কথা। তবে এই মামলায় চূড়ান্ত বিজয় এলেও তা তাঁদের জন্য হয়তো বড় ধরনের সাফল্য হবে না—কারণ ২০১৬ সালেই তাঁরা ফাউন্ডেম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।

এই মামলা তাঁদের জন্য এটি এক কঠিন লড়াই। দীর্ঘদিন কোর্ট-কাছারি ঘুরে এখন ক্লান্ত অ্যাডাম। তিনি ক্লান্তির স্বরে বলেন, ‘যদি আমরা জানতাম যে, এত দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলবে, তাহলে হয়তো আমরা এই আইনি লড়াইয়ে যেতাম না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দীপাবলিতে ভারতীয়দের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশি হাইকমিশনের ভিডিও প্রকাশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভিডিও থেকে নেওয়া
ভিডিও থেকে নেওয়া

কালীপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষে ভারতীয়দের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ। গতকাল রোববার (১৯ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অ্যানিমেশন ভিডিও শেয়ার করে এ শুভেচ্ছা জানান।

ভিডিওটি শেয়ার করে রিয়াজ হামিদুল্লাহ লেখেন, ‘আমি এটি শেয়ার করছি কারণ এটি বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের লালিত মূল্যবোধের পাশাপাশি সংস্কৃতিগত বহুত্ববাদ ও সহনশীলতার প্রতিফলন ঘটায়। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনকেও তুলে ধরে।’

প্রকাশিত অ্যানিমেশন ভিডিওটিতে দেখা যায় ভাইফোঁটা, কালীপূজা ও দীপাবলির প্রতীক হিসেবে প্রদীপ জ্বালানোর দৃশ্য।

ভিডিওটির সঙ্গে সংযুক্ত লেখায় বলা হয়েছে, ‘বাংলা কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাতে বাংলাদেশজুড়ে হাজারো প্রদীপ জ্বলে ওঠে—যেন দেবী কালী মুণ্ডমালিনীর ত্রিনয়নের অগ্নিতেজে অন্ধকার ভেদ করে অসংখ্য তারা জেগে উঠছে। মায়ের আহ্বানের মন্ত্রধ্বনিতে নদীমাতৃক এই ভূখণ্ডে মেয়েরা ভাইদের কপালে শুভচিহ্ন এঁকে দেয়। ভারতের, বাংলাদেশের ও বিশ্বের প্রত্যেক হিন্দু ভাই-বোনকে জানাই শুভ দীপাবলি, কালীপূজা ও ভাইফোঁটার শুভেচ্ছা।’

ভিডিওতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধী কংগ্রেসসহ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যমকে ট্যাগ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র: দ্য প্রিন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি নারীকে মুখোশধারী ইসরায়েলির বেধড়ক পিটুনি ভাইরাল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ৫২
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

পশ্চিমতীরের তুরমুস আয়া গ্রামে মুখোশধারী এক ইসরায়েলি দখলদারের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি নারী। রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে জলপাই সংগ্রহের সময় ওই নারীকে একটি লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। এই ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জ্যাসপার ন্যাথানিয়েল।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক যুবক বড় কাঠের লাঠি দিয়ে এক নারীর মাথায় আঘাত করে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় ওই নারীকে আরও দুইবার আঘাত করেন তিনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আহত নারীর নাম উম সালেহ আবু আলিয়া।

ভিডিও ধারণ করা ন্যাথানিয়েল বলেছেন, ‘প্রথম আঘাতেই আলিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারপরও হামলাকারী নির্মমভাবে লাঠি চালিয়ে যায়।’

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের সদস্যরা পৌঁছানোর পর ঘটনাস্থল ছত্রভঙ্গ করা হয়। অবৈধ বসতি নির্মাণকারীদের যে কোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দাও জানায় এই বাহিনী। তবে ন্যাথানিয়েল অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা হামলার আগেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এবং সাংবাদিক ও সহায়তাকারীদের আটকে রেখেছিল। সৈন্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুখোশধারী উপনিবেশকারীরা আক্রমণ চালায়।

পাঁচ সন্তানের মা আবু আলিয়া বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার মাথার দুই জায়গায় গুরুতর আঘাত পাওয়া গেছে। তিনি আগে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন, এখন স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন।

তুরমুস আয়া গ্রামে এদিন অন্তত ১৫ জন মুখোশধারী উপনিবেশকারীকে আরও কয়েকজন ফিলিস্তিনি কৃষক ও সহায়তাকারীদের ওপর পাথর ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় তারা ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং কয়েকটির জানালা ভেঙে দেয়।

জলপাই সংগ্রহ ফিলিস্তিনি সংস্কৃতি ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে প্রতিবছর এই মৌসুমে দখলদারদের হামলা, রাস্তা বন্ধ এবং জমিতে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। জাতিসংঘের মানবিক দপ্তর জানিয়েছে, ৭ থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিম তীরে ৭১টি উপনিবেশকারী হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার অর্ধেকই জলপাই সংগ্রহ মৌসুমে।

২০২৫ সালেই পশ্চিমতীর জুড়ে উপনিবেশকারীদের হাতে ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই হামলাগুলোর মূল লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনিদের ভয় দেখিয়ে জমি ছাড়তে বাধ্য করা—যাতে ইসরায়েলি উপনিবেশকারীরা তা দখল করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীন যাবেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০১৭ সালের নভেম্বরে চীনের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
২০১৭ সালের নভেম্বরে চীনের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বছরের শুরুর দিকে চীন সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আজ সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আগামী বছরের শুরুতে চীন সফরে যাব।’

এর আগের দিন ফক্স বিজনেসের সংবাদ উপস্থাপক মারিয়া বার্টিরোমোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি আসন্ন অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, যা নভেম্বরের শুরু থেকে কার্যকর হতে পারে বলে জানান। চীনা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের প্রতিক্রিয়ায় নতুন এ পদক্ষেপের কথা বলেন তিনি। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে বার্টিরোমোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, এত উচ্চমাত্রার শুল্ক দীর্ঘ মেয়াদে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমি চীনকে ধ্বংস করতে চাই না।’

উল্লেখ্য, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই পরস্পরের ওপর অন্তত ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিল। পরে আলোচনার মাধ্যমে চীনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১০ শতাংশ আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে চীনা পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক বজায় রয়েছে, যা আগের শুল্কের ওপর যুক্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পরীক্ষায় সফল ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস, আরও যেসব অস্ত্রে শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পরীক্ষায় সফল ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস, আরও যেসব অস্ত্রে শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত

প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে যাচ্ছে ভারত। দেশটি নতুন প্রজন্মের ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োগের উপযোগী হবে বলে জানিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের এই উন্নত সংস্করণে পরিবর্তিত র‍্যামজেট ইঞ্জিন ও অত্যাধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ এটি সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

বর্তমানে ভারতের হাতে থাকা ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর গতি শব্দের গতির প্রায় তিন গুণ (মাক ২.৮)। এই ক্ষেপণাস্ত্রই গত মে মাসে পাকিস্তানে চালানো অপারেশন সিঁদুরের সময় ব্যবহার করা হয়েছিল।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মসের র‍্যামজেট ইঞ্জিনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন প্রায় শেষ। এখন কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ইনর্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম (আইএনএস) ও বৈশ্বিক স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমের নির্ভুলতা যাচাই করা হচ্ছে, যাতে শত্রুপক্ষের জ্যামিং প্রতিরোধ করা যায়।

তিনি আরও জানান, নৌবাহিনী ও স্থল বাহিনীর হাতে থাকা ইতিমধ্যে ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র আছে। এগুলোর সফটওয়্যার ও ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমে সামান্য পরিবর্তন করে নতুন ৮০০ কিলোমিটার সংস্করণে উন্নীত করা যাবে। মৌলিক ক্ষেপণাস্ত্র ও লঞ্চার একই থাকবে, শুধু সফটওয়্যারের কিছু অংশে পরিবর্তন আনলেই হবে।

এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) তাদের ‘অস্ত্র’ (Astra) সিরিজের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। অস্ত্র মার্ক-২ সংস্করণের পাল্লা আগের ১৬০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ২০০ কিলোমিটারের বেশি করা হচ্ছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনী ইতিমধ্যে ১০০ কিলোমিটার পাল্লার ২৮০টিরও বেশি অস্ত্র মার্ক-১ ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। নতুন মার্ক-২ সংস্করণের উৎপাদন ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও উন্নত অস্ত্র মার্ক-৩ সংস্করণ তৈরির কাজও চলছে, যা সলিড-ফুয়েল ডাকটেড র‍্যামজেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৩৫০ কিলোমিটার দূরের টার্গেটে আঘাত করতে পারবে। তবে এটি কার্যকর হতে তিন বছর সময় লাগবে। রাশিয়া, ফ্রান্স ও ইসরায়েল থেকে আমদানি করা ব্যয়বহুল ‘পিএল-১৫ বিভিআরএএএম’ ক্ষেপণাস্ত্রের বিকল্প এই ‘অস্ত্র’ মার্ক-৩ সিরিজ।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, গত ৭ মে পাকিস্তানের নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলার সময় পাকিস্তানি বাহিনী চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে ২০০ কিলোমিটার পাল্লার পিএল-১৫ বিভিআরএএএম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এতে শুরুর দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনী বিপাকে পড়ে। তবে ব্রহ্মস ব্যবহারের পর সফল হয় ভারতীয় বাহিনী।

ইতিমধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রায় ২০টি যুদ্ধজাহাজে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে গত বছর ১৯ হাজার ৫১৯ কোটি রুপি ব্যয়ে নৌবাহিনীর জন্য ২২০টিরও বেশি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অপারেশন সিঁদুরের পর বিমানবাহিনীর জন্যও ১১০টি আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের অনুমোদন দেয় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, যার মূল্য প্রায় ১০ হাজার ৮০০ কোটি রুপি।

ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ভবিষ্যতে ভারতের প্রস্তাবিত ইন্টিগ্রেটেড রকেট ফোর্সের (আইআরএফ) অংশ হবে। এতে প্রলয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (৪০০ কিলোমিটার পাল্লা) এবং নির্ভয় ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ (১,০০০ কিলোমিটার পাল্লা) অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত