Ajker Patrika

চতুর্থ প্রজন্মের চীনা যুদ্ধবিমান কিনতে চায় বাংলাদেশ— ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে যা বলছেন বিশ্লেষকেরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ২৮
Thumbnail image
চীনের তৈরি জে-১০ সি মডেলের একটি চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। ছবি: সংগৃহীত

পুরোনো যুদ্ধবিমানগুলো আধুনিকায়ন করার বিষয়টি বিবেচনা করছে বাংলাদেশ। এমনটাই বলা হয়েছে হংকংভিত্তিক চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে চীনের তৈরি জে-১০সি সম্ভবত একটি বিকল্প হতে পারে। তবে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ফোর পয়েন্ট ফাইভ জেনারেশন বা প্রজন্মের এই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান দেশের বহরে যোগ করা ব্যয়বহুল হবে এবং চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের চীন সফরের পর বিষয়টি সামনে আসে। প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংবাদ সংস্থা ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইং জানিয়েছে, গত মাসে হাসান মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ‘মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার’ সংগ্রহের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আধুনিকায়নের প্রথম ধাপে ১৬টি জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান (জে-১০ সি-এর রপ্তানি সংস্করণ) কেনার কথা বিবেচনা করছে।

সফরে হাসান মাহমুদ খান চীনের ঝুহাই এয়ার শোতে অংশগ্রহণ করেন। এটি চীনের প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যিক এয়ারিয়াল প্ল্যাটফর্মের বৃহত্তম প্রদর্শনী। তবে, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, বিমান বাহিনীর প্রধানের এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল ‘বিদ্যমান সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করা এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করা।’

এ ছাড়া, হাসান মাহমুদ খান চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল অ্যারো-টেকনোলজি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন। এই প্রতিষ্ঠান বিমান প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে।

বাংলাদেশ পাকিস্তানের পর চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা এবং পাকিস্তানই প্রথম দেশ, যারা চীন থেকে জে-১০সি যুদ্ধবিমান অর্ডার করেছে। এর আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী চীনে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানটির কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণের জন্য।

তবে ঢাকা অস্ত্র সংগ্রহে চীনের ওপর নির্ভরশীল থাকার পরও বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুরোনো যুদ্ধবিমান প্রতিস্থাপনে জে-১০ সি-ই বাংলাদেশের একমাত্র বিকল্প নয়। মার্কিন থিংক ট্যাংক র‍্যান্ড করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা গবেষক টিমোথি হিথ বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জে-১০সি কেনার চেষ্টা করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর (যুদ্ধ) বিমানের পুরোনো বহর আছে এবং তাদের বিমান প্রতিস্থাপন প্রয়োজন।’

হিথ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর বর্তমানে যে পরিমাণ জে-৭ যুদ্ধবিমান আছে বহরে, তার চেয়ে কমসংখ্যক জে-১০সি কিনতে হতে পারে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি, ঢাকা অন্যান্য যুদ্ধবিমান কেনার কথাও বিবেচনা করতে পারে। বিমান ব্যবসা নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইটগ্লোবালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বর্তমানে ৩৬টি এফ-৭ এমজি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে। এফ-৭ এমজি হলো জে-৭ সিরিজের একটি সংস্করণ, যা বিশেষভাবে বাংলাদেশের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

জে-১০সি ভিগরাস ড্রাগন যুদ্ধবিমান, যা প্রায়শই আমেরিকান এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে তুলনা করা হয়—২০১৮ সালে চীনের বিমানবাহিনীতে প্রথম প্রবেশ করে। এটি জে-১০-এর একটি সংস্করণ যা চীনের উৎপাদিত ডব্লিউএস-১০বি ইঞ্জিন দিয়ে সজ্জিত।

বাংলাদেশ চীনের তৈরি প্রশিক্ষণ বিমান যেমন কেএ-৮ এবং ট্যাংক, যুদ্ধজাহাজ ও ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, ২০০৬ এবং ২০১৩ সালে চীন বাংলাদেশে ১৬টি এফ-৭ এমজি যুদ্ধবিমান সরবরাহ করেছিল।

ন্যানিয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো কলিন কোহ বলেছেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী রাশিয়ার ডিজাইন করা মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানকে তাদের ‘প্রধান যুদ্ধবিমান’ হিসেবে ব্যবহার করে। এফ-৭ এমজি হলো দ্বিতীয় সারির যুদ্ধবিমান।

কোলিন কোহ বলেন, ‘যদি বাংলাদেশ মিগ-২৯ এবং এফ-৭ প্রতিস্থাপনের কথা ভাবে, তাহলে আরও ব্যয়বহুল পশ্চিমা মডেলের বাইরে চীনা, রুশ বা এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধবিমানের দিকে যেতে পারে দেশটি।’ তিনি আরও বলেন, তবে নিরাপত্তা খাতে ঢাকার সঙ্গে সিউলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার রপ্তানি ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে চীনের জে-১০ সিরিজ একটি ‘যৌক্তিক বিকল্প’ হতে পারে বলে উল্লেখ করেন কোলিন কোহ।

সামরিক বিশ্লেষক ও চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির সাবেক প্রশিক্ষক সাং জংপিং বলেন, ‘চীন বাংলাদেশ থেকে জে-১০সি অর্ডারকে স্বাগত জানাবে, তবে বাংলাদেশের জন্য এত উন্নত যুদ্ধবিমান হয়তো প্রয়োজন নেই।’ তিনি বলেন, জে-৭ প্রতিস্থাপনের জন্য এফসি-১—তৃতীয় প্রজন্মের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান—বাংলাদেশের জন্য ‘বেস্ট চয়েস বা সেরা পছন্দ’ হতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জে-১০সি ব্যবহার করা মানে হবে ‘একটি প্রজন্ম বাদ দেওয়া।’ এ ছাড়া, জে-১০সি যুদ্ধবিমানের দাম এফসি-১-এর প্রায় দ্বিগুণ।

টিমোথি হিথ বলেন, তবে বাংলাদেশ যদি ফোর পয়েন্ট ফাইভ জেনারেশন বা প্রজন্মের জে-১০ সিই বেছে নেয়, এটি ‘দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সংকেত দেবে’। তবে, এটি সম্ভবত ভারতকে ক্ষুব্ধ করবে। কারণ, নয়াদিল্লি তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের সামরিক সহযোগিতা নিয়ে বেশ সংবেদনশীল।

বাংলাদেশ যদি চীন থেকে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনে, তবে ভারতের দ্বিতীয় প্রতিবেশী হিসেবে এই প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের মালিক হবে। বেইজিং ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত