
গত জুলাই মাসের কোনো একদিন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে রফিক গোপনে পালিয়ে ছোট একটি নৌকায় করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। তাঁর গন্তব্য ছিল গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত রাখাইন। যেখান থেকে তিনি ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিলেন।
কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে রফিকের মতো হাজারো বিদ্রোহী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর সেখানে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম ও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে—রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র। এ ছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
রফিক (৩২) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের ভূমি ফিরে পেতে, আমাদের লড়াই করতেই হবে।’ রফিক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে ফিরে এসেছেন। কারণ, সেখানে তিনি যুদ্ধ করার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।’
ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে রোহিঙ্গারা মূলত মুসলিম এবং তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘রাষ্ট্রহীন’ জনগোষ্ঠী। ২০১৬ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গাই তাদের পূর্বতন নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির—যারা আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ—বিরুদ্ধে লড়ছে। রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী এই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রয়টার্স প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার সহযোগিতা সম্পর্কেও নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ সরকার রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেয়নি। তবে মিয়ানমারের জান্তা এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়নি। জান্তা বলেছে, ‘মুসলিম বাসিন্দারা সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)—কক্সবাজারের শিবিরে খুব একটা সমর্থন পায় না।’ তবে এই বিষয়ে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে অসন্তুষ্ট শরণার্থীরা সহজেই অরাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উগ্রপন্থী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং অপরাধের জগতে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন শাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব আঞ্চলিক দেশগুলোতেও পড়বে।’

গত বর্ষায় নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি রয়টার্সকে জানান, সেখানে পৌঁছার পর জান্তা সেনারা তাঁকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে। তিনি জানান, মংডুর সৈকতঘেঁষা এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জান্তাবাহিনী ও রোহিঙ্গা যোদ্ধারা একই সঙ্গে থেকেছেন।
আবু আফনা বলেন, ‘জান্তার সঙ্গে থাকাকালে আমার মনে হতো, আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’ আবার আরাকান আর্মি মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট—যাদের কেউ কেউ রোহিঙ্গা নিধনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতিটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এক ধরনের সমঝোতা’ এবং তারা একসঙ্গে লড়াই করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে লড়াইয়ে যোগদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও, তাদের অনেকে অনেক আগে থেকেই তাদের নিপীড়নকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীর হয়েই লড়ছেন।
আবু আফনার ভাষ্য, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দেয়। একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং জোরপূর্বক জান্তার হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের একটি নথিপত্র দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গার জন্য এটি একটি শক্তিশালী প্রলোভন। কারণ, কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ এবং তারা এখন বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা চাইছিলাম নাগরিকত্বের কার্ড।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় কাজ করা একটি সহায়তা সংস্থার জুন মাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আশ্রয়শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন ‘আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী এবং আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জোরপূর্বকভাবে’ জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধা ও জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ বছরের কয়েকজন শিশুকেও জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তাবাহিনী।

অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন—সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায়। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে বলেও তাঁরা মনে করেন।
বাংলাদেশের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুর কাদের রয়টার্সকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যাবে, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করবে।’
রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি বেশ ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মংডুর দখল নেওয়ার জন্য চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে ছয় মাস কেটে গেছে। রোহিঙ্গা যোদ্ধারা জানিয়েছেন, তাদের অ্যামবুশ কৌশল আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা ধীর করেছে।
এ বিষয়ে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল, তারা খুব দ্রুতই একটি বিশাল জয় পাবে। কিন্তু মংডু প্রমাণ করেছে যে, রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তবে, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মনজুর কাদের ও আরেকটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সেই আলোচনা দ্রুতই ভেস্তে যায়। দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মির তরফ থেকে কৌশলে রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার কারণে ঢাকার ক্ষোভ বাড়ছে। এ ধরনের সহিংসতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর প্রচেষ্টায় জটিলতা তৈরি করছে।

আরাকান আর্মি অবশ্য রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য না করে বেসামরিকদের সাহায্য করে। অন্যদিকে, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চলছে অস্থিরতা। আরএসও ও আরসা শিবিরের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। গোলাগুলি ও সংঘর্ষ সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা, যা শরণার্থীদের আতঙ্কিত করছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেছেন, ‘শিবিরগুলোতে সহিংসতার মাত্রা ২০১৭ সালে শিবির স্থাপনের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ ফোর্টিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে, পাশাপাশি বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন এবং সমালোচকদের চুপ করাতে হুমকি ও হয়রানি চালিয়েছে।
বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককান্স বলেছেন, ‘শিবিরে আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি শরণার্থীদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তা না হলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা সংগঠিত গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।’
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপিত অনূদিত

গত জুলাই মাসের কোনো একদিন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে রফিক গোপনে পালিয়ে ছোট একটি নৌকায় করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। তাঁর গন্তব্য ছিল গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত রাখাইন। যেখান থেকে তিনি ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিলেন।
কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে রফিকের মতো হাজারো বিদ্রোহী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর সেখানে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম ও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে—রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র। এ ছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
রফিক (৩২) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের ভূমি ফিরে পেতে, আমাদের লড়াই করতেই হবে।’ রফিক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে ফিরে এসেছেন। কারণ, সেখানে তিনি যুদ্ধ করার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।’
ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে রোহিঙ্গারা মূলত মুসলিম এবং তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘রাষ্ট্রহীন’ জনগোষ্ঠী। ২০১৬ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গাই তাদের পূর্বতন নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির—যারা আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ—বিরুদ্ধে লড়ছে। রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী এই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রয়টার্স প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার সহযোগিতা সম্পর্কেও নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ সরকার রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেয়নি। তবে মিয়ানমারের জান্তা এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়নি। জান্তা বলেছে, ‘মুসলিম বাসিন্দারা সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)—কক্সবাজারের শিবিরে খুব একটা সমর্থন পায় না।’ তবে এই বিষয়ে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে অসন্তুষ্ট শরণার্থীরা সহজেই অরাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উগ্রপন্থী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং অপরাধের জগতে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন শাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব আঞ্চলিক দেশগুলোতেও পড়বে।’

গত বর্ষায় নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি রয়টার্সকে জানান, সেখানে পৌঁছার পর জান্তা সেনারা তাঁকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে। তিনি জানান, মংডুর সৈকতঘেঁষা এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জান্তাবাহিনী ও রোহিঙ্গা যোদ্ধারা একই সঙ্গে থেকেছেন।
আবু আফনা বলেন, ‘জান্তার সঙ্গে থাকাকালে আমার মনে হতো, আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’ আবার আরাকান আর্মি মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট—যাদের কেউ কেউ রোহিঙ্গা নিধনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতিটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এক ধরনের সমঝোতা’ এবং তারা একসঙ্গে লড়াই করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে লড়াইয়ে যোগদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও, তাদের অনেকে অনেক আগে থেকেই তাদের নিপীড়নকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীর হয়েই লড়ছেন।
আবু আফনার ভাষ্য, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দেয়। একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং জোরপূর্বক জান্তার হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের একটি নথিপত্র দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গার জন্য এটি একটি শক্তিশালী প্রলোভন। কারণ, কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ এবং তারা এখন বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা চাইছিলাম নাগরিকত্বের কার্ড।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় কাজ করা একটি সহায়তা সংস্থার জুন মাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আশ্রয়শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন ‘আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী এবং আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জোরপূর্বকভাবে’ জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধা ও জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ বছরের কয়েকজন শিশুকেও জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তাবাহিনী।

অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন—সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায়। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে বলেও তাঁরা মনে করেন।
বাংলাদেশের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুর কাদের রয়টার্সকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যাবে, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করবে।’
রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি বেশ ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মংডুর দখল নেওয়ার জন্য চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে ছয় মাস কেটে গেছে। রোহিঙ্গা যোদ্ধারা জানিয়েছেন, তাদের অ্যামবুশ কৌশল আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা ধীর করেছে।
এ বিষয়ে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল, তারা খুব দ্রুতই একটি বিশাল জয় পাবে। কিন্তু মংডু প্রমাণ করেছে যে, রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তবে, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মনজুর কাদের ও আরেকটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সেই আলোচনা দ্রুতই ভেস্তে যায়। দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মির তরফ থেকে কৌশলে রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার কারণে ঢাকার ক্ষোভ বাড়ছে। এ ধরনের সহিংসতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর প্রচেষ্টায় জটিলতা তৈরি করছে।

আরাকান আর্মি অবশ্য রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য না করে বেসামরিকদের সাহায্য করে। অন্যদিকে, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চলছে অস্থিরতা। আরএসও ও আরসা শিবিরের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। গোলাগুলি ও সংঘর্ষ সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা, যা শরণার্থীদের আতঙ্কিত করছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেছেন, ‘শিবিরগুলোতে সহিংসতার মাত্রা ২০১৭ সালে শিবির স্থাপনের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ ফোর্টিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে, পাশাপাশি বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন এবং সমালোচকদের চুপ করাতে হুমকি ও হয়রানি চালিয়েছে।
বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককান্স বলেছেন, ‘শিবিরে আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি শরণার্থীদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তা না হলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা সংগঠিত গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।’
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপিত অনূদিত

গত জুলাই মাসের কোনো একদিন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে রফিক গোপনে পালিয়ে ছোট একটি নৌকায় করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। তাঁর গন্তব্য ছিল গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত রাখাইন। যেখান থেকে তিনি ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিলেন।
কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে রফিকের মতো হাজারো বিদ্রোহী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর সেখানে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম ও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে—রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র। এ ছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
রফিক (৩২) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের ভূমি ফিরে পেতে, আমাদের লড়াই করতেই হবে।’ রফিক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে ফিরে এসেছেন। কারণ, সেখানে তিনি যুদ্ধ করার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।’
ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে রোহিঙ্গারা মূলত মুসলিম এবং তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘রাষ্ট্রহীন’ জনগোষ্ঠী। ২০১৬ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গাই তাদের পূর্বতন নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির—যারা আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ—বিরুদ্ধে লড়ছে। রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী এই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রয়টার্স প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার সহযোগিতা সম্পর্কেও নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ সরকার রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেয়নি। তবে মিয়ানমারের জান্তা এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়নি। জান্তা বলেছে, ‘মুসলিম বাসিন্দারা সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)—কক্সবাজারের শিবিরে খুব একটা সমর্থন পায় না।’ তবে এই বিষয়ে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে অসন্তুষ্ট শরণার্থীরা সহজেই অরাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উগ্রপন্থী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং অপরাধের জগতে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন শাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব আঞ্চলিক দেশগুলোতেও পড়বে।’

গত বর্ষায় নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি রয়টার্সকে জানান, সেখানে পৌঁছার পর জান্তা সেনারা তাঁকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে। তিনি জানান, মংডুর সৈকতঘেঁষা এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জান্তাবাহিনী ও রোহিঙ্গা যোদ্ধারা একই সঙ্গে থেকেছেন।
আবু আফনা বলেন, ‘জান্তার সঙ্গে থাকাকালে আমার মনে হতো, আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’ আবার আরাকান আর্মি মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট—যাদের কেউ কেউ রোহিঙ্গা নিধনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতিটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এক ধরনের সমঝোতা’ এবং তারা একসঙ্গে লড়াই করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে লড়াইয়ে যোগদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও, তাদের অনেকে অনেক আগে থেকেই তাদের নিপীড়নকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীর হয়েই লড়ছেন।
আবু আফনার ভাষ্য, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দেয়। একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং জোরপূর্বক জান্তার হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের একটি নথিপত্র দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গার জন্য এটি একটি শক্তিশালী প্রলোভন। কারণ, কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ এবং তারা এখন বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা চাইছিলাম নাগরিকত্বের কার্ড।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় কাজ করা একটি সহায়তা সংস্থার জুন মাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আশ্রয়শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন ‘আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী এবং আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জোরপূর্বকভাবে’ জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধা ও জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ বছরের কয়েকজন শিশুকেও জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তাবাহিনী।

অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন—সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায়। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে বলেও তাঁরা মনে করেন।
বাংলাদেশের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুর কাদের রয়টার্সকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যাবে, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করবে।’
রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি বেশ ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মংডুর দখল নেওয়ার জন্য চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে ছয় মাস কেটে গেছে। রোহিঙ্গা যোদ্ধারা জানিয়েছেন, তাদের অ্যামবুশ কৌশল আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা ধীর করেছে।
এ বিষয়ে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল, তারা খুব দ্রুতই একটি বিশাল জয় পাবে। কিন্তু মংডু প্রমাণ করেছে যে, রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তবে, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মনজুর কাদের ও আরেকটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সেই আলোচনা দ্রুতই ভেস্তে যায়। দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মির তরফ থেকে কৌশলে রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার কারণে ঢাকার ক্ষোভ বাড়ছে। এ ধরনের সহিংসতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর প্রচেষ্টায় জটিলতা তৈরি করছে।

আরাকান আর্মি অবশ্য রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য না করে বেসামরিকদের সাহায্য করে। অন্যদিকে, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চলছে অস্থিরতা। আরএসও ও আরসা শিবিরের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। গোলাগুলি ও সংঘর্ষ সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা, যা শরণার্থীদের আতঙ্কিত করছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেছেন, ‘শিবিরগুলোতে সহিংসতার মাত্রা ২০১৭ সালে শিবির স্থাপনের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ ফোর্টিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে, পাশাপাশি বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন এবং সমালোচকদের চুপ করাতে হুমকি ও হয়রানি চালিয়েছে।
বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককান্স বলেছেন, ‘শিবিরে আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি শরণার্থীদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তা না হলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা সংগঠিত গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।’
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপিত অনূদিত

গত জুলাই মাসের কোনো একদিন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে রফিক গোপনে পালিয়ে ছোট একটি নৌকায় করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। তাঁর গন্তব্য ছিল গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত রাখাইন। যেখান থেকে তিনি ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিলেন।
কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে রফিকের মতো হাজারো বিদ্রোহী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর সেখানে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম ও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে—রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র। এ ছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
রফিক (৩২) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের ভূমি ফিরে পেতে, আমাদের লড়াই করতেই হবে।’ রফিক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে ফিরে এসেছেন। কারণ, সেখানে তিনি যুদ্ধ করার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।’
ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে রোহিঙ্গারা মূলত মুসলিম এবং তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘রাষ্ট্রহীন’ জনগোষ্ঠী। ২০১৬ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গাই তাদের পূর্বতন নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির—যারা আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ—বিরুদ্ধে লড়ছে। রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী এই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রয়টার্স প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার সহযোগিতা সম্পর্কেও নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ সরকার রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেয়নি। তবে মিয়ানমারের জান্তা এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়নি। জান্তা বলেছে, ‘মুসলিম বাসিন্দারা সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)—কক্সবাজারের শিবিরে খুব একটা সমর্থন পায় না।’ তবে এই বিষয়ে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে অসন্তুষ্ট শরণার্থীরা সহজেই অরাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উগ্রপন্থী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং অপরাধের জগতে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন শাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব আঞ্চলিক দেশগুলোতেও পড়বে।’

গত বর্ষায় নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি রয়টার্সকে জানান, সেখানে পৌঁছার পর জান্তা সেনারা তাঁকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে। তিনি জানান, মংডুর সৈকতঘেঁষা এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জান্তাবাহিনী ও রোহিঙ্গা যোদ্ধারা একই সঙ্গে থেকেছেন।
আবু আফনা বলেন, ‘জান্তার সঙ্গে থাকাকালে আমার মনে হতো, আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’ আবার আরাকান আর্মি মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট—যাদের কেউ কেউ রোহিঙ্গা নিধনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতিটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এক ধরনের সমঝোতা’ এবং তারা একসঙ্গে লড়াই করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে লড়াইয়ে যোগদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও, তাদের অনেকে অনেক আগে থেকেই তাদের নিপীড়নকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীর হয়েই লড়ছেন।
আবু আফনার ভাষ্য, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দেয়। একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং জোরপূর্বক জান্তার হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের একটি নথিপত্র দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গার জন্য এটি একটি শক্তিশালী প্রলোভন। কারণ, কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ এবং তারা এখন বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা চাইছিলাম নাগরিকত্বের কার্ড।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় কাজ করা একটি সহায়তা সংস্থার জুন মাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আশ্রয়শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন ‘আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী এবং আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জোরপূর্বকভাবে’ জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধা ও জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ বছরের কয়েকজন শিশুকেও জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তাবাহিনী।

অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন—সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায়। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে বলেও তাঁরা মনে করেন।
বাংলাদেশের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুর কাদের রয়টার্সকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যাবে, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করবে।’
রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি বেশ ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মংডুর দখল নেওয়ার জন্য চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে ছয় মাস কেটে গেছে। রোহিঙ্গা যোদ্ধারা জানিয়েছেন, তাদের অ্যামবুশ কৌশল আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা ধীর করেছে।
এ বিষয়ে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল, তারা খুব দ্রুতই একটি বিশাল জয় পাবে। কিন্তু মংডু প্রমাণ করেছে যে, রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তবে, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মনজুর কাদের ও আরেকটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সেই আলোচনা দ্রুতই ভেস্তে যায়। দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মির তরফ থেকে কৌশলে রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার কারণে ঢাকার ক্ষোভ বাড়ছে। এ ধরনের সহিংসতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর প্রচেষ্টায় জটিলতা তৈরি করছে।

আরাকান আর্মি অবশ্য রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য না করে বেসামরিকদের সাহায্য করে। অন্যদিকে, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চলছে অস্থিরতা। আরএসও ও আরসা শিবিরের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। গোলাগুলি ও সংঘর্ষ সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা, যা শরণার্থীদের আতঙ্কিত করছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেছেন, ‘শিবিরগুলোতে সহিংসতার মাত্রা ২০১৭ সালে শিবির স্থাপনের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ ফোর্টিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে, পাশাপাশি বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন এবং সমালোচকদের চুপ করাতে হুমকি ও হয়রানি চালিয়েছে।
বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককান্স বলেছেন, ‘শিবিরে আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি শরণার্থীদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তা না হলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা সংগঠিত গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।’
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপিত অনূদিত

দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
২৪ মিনিট আগে
সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ডটি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
২৬ মিনিট আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এক সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে ‘এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তবে এসপিওনাজে এজেন্ট বলতে যেমনটা বোঝানো হয়, সিআইএ তাঁকে সেভাবে কাজে লাগাতে চায়নি। বরং, সিআইএ উইনস্টন চার্চিলকে দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনি
২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে ১০ অক্টোবর ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এটি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে গাজা পুনর্গঠনের পথ খুলে দিয়েছে। কিন্তু এই পুনর্গঠনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা—এই বিপুল ধ্বংসাবশেষ সরানো।
২০২৫ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। জাতিসংঘের স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ সংস্থা ইউএনওস্যাটের তথ্যমতে, এটি গাজার মোট স্থাপনার প্রায় ৭৮ শতাংশ। ২০২৫ সালের ২২-২৩ সেপ্টেম্বর তোলা গাজা সিটির ছবির বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ জানায়, শহরটির আরও ভয়াবহ অবস্থা। সেখানে ৮৩ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
গাজার এই ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ৬ কোটি ১৫ লাখ টন। তুলনা করলে এটি নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ওজনের প্রায় ১৭০ গুণ এবং গাজার প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ১৬৯ কেজি ধ্বংসাবশেষ জমে আছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) তথ্যমতে, এই ধ্বংসাবশেষের দুই-তৃতীয়াংশই তৈরি হয়েছে যুদ্ধের প্রথম পাঁচ মাসে। যুদ্ধবিরতির আগের কয়েক মাসে ধ্বংসযজ্ঞ আরও বেড়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে শুধু রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৮০ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্টে প্রকাশিত ইউএনইপির প্রাথমিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই ধ্বংসাবশেষ গাজার জনগণের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, অন্তত ৪৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ পুরোনো ভবনের অ্যাসবেস্টস দ্বারা দূষিত হতে পারে, বিশেষ করে শরণার্থীশিবিরগুলোর আশপাশে—উত্তরের জাবালিয়া, মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত ও আল-মাঘাজি, এবং দক্ষিণের রাফাহ ও খান ইউনিসে।
এ ছাড়া অন্তত ২৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ শিল্পাঞ্চল থেকে আসা ‘বিপজ্জনক বর্জ্যে’ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইসরায়েল যে তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করে, তাতে গাজায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। এই সংখ্যা হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া, যা জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য হিসেবে গণ্য করে।

দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে ১০ অক্টোবর ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এটি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে গাজা পুনর্গঠনের পথ খুলে দিয়েছে। কিন্তু এই পুনর্গঠনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা—এই বিপুল ধ্বংসাবশেষ সরানো।
২০২৫ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। জাতিসংঘের স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ সংস্থা ইউএনওস্যাটের তথ্যমতে, এটি গাজার মোট স্থাপনার প্রায় ৭৮ শতাংশ। ২০২৫ সালের ২২-২৩ সেপ্টেম্বর তোলা গাজা সিটির ছবির বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ জানায়, শহরটির আরও ভয়াবহ অবস্থা। সেখানে ৮৩ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
গাজার এই ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ৬ কোটি ১৫ লাখ টন। তুলনা করলে এটি নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ওজনের প্রায় ১৭০ গুণ এবং গাজার প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ১৬৯ কেজি ধ্বংসাবশেষ জমে আছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) তথ্যমতে, এই ধ্বংসাবশেষের দুই-তৃতীয়াংশই তৈরি হয়েছে যুদ্ধের প্রথম পাঁচ মাসে। যুদ্ধবিরতির আগের কয়েক মাসে ধ্বংসযজ্ঞ আরও বেড়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে শুধু রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৮০ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্টে প্রকাশিত ইউএনইপির প্রাথমিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই ধ্বংসাবশেষ গাজার জনগণের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, অন্তত ৪৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ পুরোনো ভবনের অ্যাসবেস্টস দ্বারা দূষিত হতে পারে, বিশেষ করে শরণার্থীশিবিরগুলোর আশপাশে—উত্তরের জাবালিয়া, মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত ও আল-মাঘাজি, এবং দক্ষিণের রাফাহ ও খান ইউনিসে।
এ ছাড়া অন্তত ২৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ শিল্পাঞ্চল থেকে আসা ‘বিপজ্জনক বর্জ্যে’ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইসরায়েল যে তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করে, তাতে গাজায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। এই সংখ্যা হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া, যা জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য হিসেবে গণ্য করে।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার...
২৫ নভেম্বর ২০২৪
সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ডটি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
২৬ মিনিট আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এক সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে ‘এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তবে এসপিওনাজে এজেন্ট বলতে যেমনটা বোঝানো হয়, সিআইএ তাঁকে সেভাবে কাজে লাগাতে চায়নি। বরং, সিআইএ উইনস্টন চার্চিলকে দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনি
২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ড দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
আড়াই বছরের সংঘাতে জর্জরিত সুদানের ২৫ মিলিয়ন মানুষ (জনসংখ্যার অর্ধেক) তীব্র খাদ্যের সংকটে ভুগছে। জাতিসংঘের মতে, ৬ লাখের বেশি মানুষ সরাসরি দুর্ভিক্ষকবলিত। তখন জেবেল মারার কৃষকেরা অতিরিক্ত ফলন নিয়ে বিপাকে।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মতো অনুকূল জলবায়ু এবং অতি-উর্বর মাটির কারণে জেবেল মারা হলো ফলের স্বর্গ। প্রতিদিন সকালে নারীরা উজ্জ্বল পোশাকে, শিশুদের সঙ্গে নিয়ে গাধার পিঠে চড়ে ফসলের খেতে যান। সেখানে জন্মায় দেশের দুর্লভ ফসল—বাদাম, কমলা, আপেল ও স্ট্রবেরি। এই অঞ্চলের অরগানিক কমলা স্বাদের জন্য একসময় গোটা সুদানে প্রশংসিত ছিল।
কিন্তু এই প্রাচুর্যই এখন অভিশাপ। গলো শহরের একজন কমলা বিক্রেতা হাফিজ আলী হতাশা নিয়ে বলেন, ‘আমরা প্রায় বিনা মূল্যে কমলা বিক্রি করি, এমনকি কখনো কখনো পচে যাওয়ার ভয়ে বাজারে যাওয়ার পথেই ফেলে দিতে হয়।’
এ পার্বত্য অঞ্চলটি হলো সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ ভূখণ্ড। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বর্তমান যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও ২০০৩ সালে দারফুর সংঘাতের সময় থেকেই তারা খার্তুম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো শান্তিচুক্তি সই করেনি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে তারা এখানকার ‘মুক্ত এলাকা’ নিয়ন্ত্রণ করছে।

বর্তমানে চারদিকে যুদ্ধ চলায় জেবেল মারা ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। পশ্চিম ও উত্তরে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং তাদের সহযোগী আরব মিলিশিয়ারা প্রধান রাস্তাগুলো অবরোধ করে রেখেছে। দক্ষিণে সুদান সেনাবাহিনী প্রায় প্রতি সপ্তাহে আরএসএফের অবস্থানে বোমা হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে বেসামরিক লোকেরাও প্রাণ হারাচ্ছে। আগে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণ এখনো অক্ষত।
এর ফলে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এল-ফাশের (১৩০ কিলোমিটার দূরে) বা চাদ সীমান্তের তিনের (২৭৫ কিলোমিটার দূরে) মতো জাতীয় বাজারগুলোতে পণ্য পৌঁছাতে পারছেন না।
পণ্য পরিবহনের এই দুঃস্বপ্ন নতুন নয়। তাভিলাতে ফল বিক্রেতা ইউসুফ তার অভিজ্ঞতা জানান: ‘মাত্র ১২ কিলোমিটার পথ পেরোতেও পাহাড় এবং কাদামাটির কারণে সারা দিন গাড়ি চালাতে হতো।’ এখন অনিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের ঠিক প্রান্তে অবস্থিত তাভিলা এখন একটি অস্থায়ী বাজারে পরিণত হয়েছে। আরএসএফের অবরোধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে ফলের দাম কম। কিছু সাহসী ব্যবসায়ী এই বাজার থেকে পণ্য কিনে চরম বিপজ্জনক পথে অবরুদ্ধ এল-ফাশের শহরে পাচারের চেষ্টা করেন।
মধ্য দারফুরে, প্রধান ফুর জাতিগোষ্ঠী এবং আরব যাযাবর নেতাদের মধ্যে সম্প্রতি একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ায় কিছু এলাকায় সীমিত ব্যবসা শুরু হয়েছে। সুদান লিবারেশন আর্মি নিয়ন্ত্রিত নেরতিতি শহরে বাজার আবার চালু হয়েছে, সেখানে আরব নারীরা টক দই এবং ফুর কৃষকেরা ফল ও সবজি আনছেন।
তবে বাজারের একজন ব্যবসায়ী সতর্ক করে বলেন, ‘বাজার সপ্তাহে মাত্র একবার খোলে। চুক্তি হওয়ার পরেও রাস্তায় এখনো সশস্ত্র ডাকাতি হয়, ভ্রমণ এখনো বিপজ্জনক।’
প্রতি বৃহস্পতিবার, বাজার দিনে, নেরতিতি এবং আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত জালিঙ্গেইয়ের মধ্যে চেকপয়েন্টের সংখ্যা বেড়ে দুই ডজনের বেশি হয়। এই চেকপয়েন্টগুলো আরএসএফ যোদ্ধা, আরব মিলিশিয়া বা কখনো কখনো একজন সাদা পোশাকের সশস্ত্র ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। যারা জোর করে চাঁদা দাবি করে। যাত্রীরা নীরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকলেও চালকেরা দর-কষাকষি করার চেষ্টা করেন।
জেবেল মারা অঞ্চলে ফেরার পথে পাহাড়ের প্রতিটি রাস্তায় সুদান লিবারেশন আর্মির নিজস্ব চেকপয়েন্ট রয়েছে। সেখানেও সশস্ত্র লোকেরা চাঁদা দাবি করে এবং ব্যাগ তল্লাশি করে। সুদানের অন্যান্য অঞ্চলে বহুল ব্যবহৃত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মতো ‘নিষিদ্ধ’ জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়।
জেবেল মারা অঞ্চলে আপেক্ষিক শান্তি থাকলেও অন্য এলাকার সংঘাতের স্পষ্ট ছাপ এখানে বিদ্যমান। প্রতিদিন এল-ফাশেরসহ অন্যান্য যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকা থেকে মানুষ বোঝাই লরি গলোর দিকে আসছে। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এতগুলো চেকপয়েন্ট পেরিয়ে আসতে না পারায় এই শরণার্থীরা স্কুল, ক্লিনিক এবং অন্যান্য পাবলিক স্পেসে আশ্রয় নিলেও খুব সামান্য বা কোনো সাহায্যই পাচ্ছে না।
সুদান লিবারেশন আর্মির নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের কার্যত রাজধানী গলো শহরে, এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসা এক নারী তাঁর ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি এখন ২৫টি সদ্য আগত পরিবারের সঙ্গে একটি শ্রেণিকক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো আয়রোজগার নেই, কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি নার্স ছিলাম, আমি চাষাবাদও করতে পারি, কিন্তু এখানকার জমি সব ব্যক্তিগত। আমরা জানি না কী করব।’
যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন অসুস্থ, বয়স্করা মেঝেতে শুয়ে ছিলেন, শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল। তবে কিছুটা স্বস্তি এই যে, গলো থেকে যে খাবার বের করা যায়নি, অর্থাৎ নিরাপত্তার কারণে খাদ্যপণ্য দূরবর্তী বাজারে না নিতে পারার কারণে যে বাড়তি সরবরাহ, তা অন্তত এই শরণার্থীদের কাজে আসবে।
এই হলো জেবেল মারা অঞ্চলের বাস্তবতা—এক সবুজ পাহাড়ের অদ্ভুত জগৎ! ঝরনার নদী, রসালো ফলের প্রাচুর্য, কিন্তু চারদিকে যুদ্ধ এবং আতঙ্কিত শরণার্থীদের ভিড়। এক ফল ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে বলেন, ‘আমরা এই দুই যুদ্ধরত পক্ষের ওপর থেকে সব আশা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শুধু আমাদের কমলাগুলো বেচতে চাই।’

সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ড দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
আড়াই বছরের সংঘাতে জর্জরিত সুদানের ২৫ মিলিয়ন মানুষ (জনসংখ্যার অর্ধেক) তীব্র খাদ্যের সংকটে ভুগছে। জাতিসংঘের মতে, ৬ লাখের বেশি মানুষ সরাসরি দুর্ভিক্ষকবলিত। তখন জেবেল মারার কৃষকেরা অতিরিক্ত ফলন নিয়ে বিপাকে।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মতো অনুকূল জলবায়ু এবং অতি-উর্বর মাটির কারণে জেবেল মারা হলো ফলের স্বর্গ। প্রতিদিন সকালে নারীরা উজ্জ্বল পোশাকে, শিশুদের সঙ্গে নিয়ে গাধার পিঠে চড়ে ফসলের খেতে যান। সেখানে জন্মায় দেশের দুর্লভ ফসল—বাদাম, কমলা, আপেল ও স্ট্রবেরি। এই অঞ্চলের অরগানিক কমলা স্বাদের জন্য একসময় গোটা সুদানে প্রশংসিত ছিল।
কিন্তু এই প্রাচুর্যই এখন অভিশাপ। গলো শহরের একজন কমলা বিক্রেতা হাফিজ আলী হতাশা নিয়ে বলেন, ‘আমরা প্রায় বিনা মূল্যে কমলা বিক্রি করি, এমনকি কখনো কখনো পচে যাওয়ার ভয়ে বাজারে যাওয়ার পথেই ফেলে দিতে হয়।’
এ পার্বত্য অঞ্চলটি হলো সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ ভূখণ্ড। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বর্তমান যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও ২০০৩ সালে দারফুর সংঘাতের সময় থেকেই তারা খার্তুম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো শান্তিচুক্তি সই করেনি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে তারা এখানকার ‘মুক্ত এলাকা’ নিয়ন্ত্রণ করছে।

বর্তমানে চারদিকে যুদ্ধ চলায় জেবেল মারা ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। পশ্চিম ও উত্তরে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং তাদের সহযোগী আরব মিলিশিয়ারা প্রধান রাস্তাগুলো অবরোধ করে রেখেছে। দক্ষিণে সুদান সেনাবাহিনী প্রায় প্রতি সপ্তাহে আরএসএফের অবস্থানে বোমা হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে বেসামরিক লোকেরাও প্রাণ হারাচ্ছে। আগে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণ এখনো অক্ষত।
এর ফলে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এল-ফাশের (১৩০ কিলোমিটার দূরে) বা চাদ সীমান্তের তিনের (২৭৫ কিলোমিটার দূরে) মতো জাতীয় বাজারগুলোতে পণ্য পৌঁছাতে পারছেন না।
পণ্য পরিবহনের এই দুঃস্বপ্ন নতুন নয়। তাভিলাতে ফল বিক্রেতা ইউসুফ তার অভিজ্ঞতা জানান: ‘মাত্র ১২ কিলোমিটার পথ পেরোতেও পাহাড় এবং কাদামাটির কারণে সারা দিন গাড়ি চালাতে হতো।’ এখন অনিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের ঠিক প্রান্তে অবস্থিত তাভিলা এখন একটি অস্থায়ী বাজারে পরিণত হয়েছে। আরএসএফের অবরোধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে ফলের দাম কম। কিছু সাহসী ব্যবসায়ী এই বাজার থেকে পণ্য কিনে চরম বিপজ্জনক পথে অবরুদ্ধ এল-ফাশের শহরে পাচারের চেষ্টা করেন।
মধ্য দারফুরে, প্রধান ফুর জাতিগোষ্ঠী এবং আরব যাযাবর নেতাদের মধ্যে সম্প্রতি একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ায় কিছু এলাকায় সীমিত ব্যবসা শুরু হয়েছে। সুদান লিবারেশন আর্মি নিয়ন্ত্রিত নেরতিতি শহরে বাজার আবার চালু হয়েছে, সেখানে আরব নারীরা টক দই এবং ফুর কৃষকেরা ফল ও সবজি আনছেন।
তবে বাজারের একজন ব্যবসায়ী সতর্ক করে বলেন, ‘বাজার সপ্তাহে মাত্র একবার খোলে। চুক্তি হওয়ার পরেও রাস্তায় এখনো সশস্ত্র ডাকাতি হয়, ভ্রমণ এখনো বিপজ্জনক।’
প্রতি বৃহস্পতিবার, বাজার দিনে, নেরতিতি এবং আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত জালিঙ্গেইয়ের মধ্যে চেকপয়েন্টের সংখ্যা বেড়ে দুই ডজনের বেশি হয়। এই চেকপয়েন্টগুলো আরএসএফ যোদ্ধা, আরব মিলিশিয়া বা কখনো কখনো একজন সাদা পোশাকের সশস্ত্র ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। যারা জোর করে চাঁদা দাবি করে। যাত্রীরা নীরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকলেও চালকেরা দর-কষাকষি করার চেষ্টা করেন।
জেবেল মারা অঞ্চলে ফেরার পথে পাহাড়ের প্রতিটি রাস্তায় সুদান লিবারেশন আর্মির নিজস্ব চেকপয়েন্ট রয়েছে। সেখানেও সশস্ত্র লোকেরা চাঁদা দাবি করে এবং ব্যাগ তল্লাশি করে। সুদানের অন্যান্য অঞ্চলে বহুল ব্যবহৃত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মতো ‘নিষিদ্ধ’ জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়।
জেবেল মারা অঞ্চলে আপেক্ষিক শান্তি থাকলেও অন্য এলাকার সংঘাতের স্পষ্ট ছাপ এখানে বিদ্যমান। প্রতিদিন এল-ফাশেরসহ অন্যান্য যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকা থেকে মানুষ বোঝাই লরি গলোর দিকে আসছে। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এতগুলো চেকপয়েন্ট পেরিয়ে আসতে না পারায় এই শরণার্থীরা স্কুল, ক্লিনিক এবং অন্যান্য পাবলিক স্পেসে আশ্রয় নিলেও খুব সামান্য বা কোনো সাহায্যই পাচ্ছে না।
সুদান লিবারেশন আর্মির নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের কার্যত রাজধানী গলো শহরে, এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসা এক নারী তাঁর ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি এখন ২৫টি সদ্য আগত পরিবারের সঙ্গে একটি শ্রেণিকক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো আয়রোজগার নেই, কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি নার্স ছিলাম, আমি চাষাবাদও করতে পারি, কিন্তু এখানকার জমি সব ব্যক্তিগত। আমরা জানি না কী করব।’
যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন অসুস্থ, বয়স্করা মেঝেতে শুয়ে ছিলেন, শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল। তবে কিছুটা স্বস্তি এই যে, গলো থেকে যে খাবার বের করা যায়নি, অর্থাৎ নিরাপত্তার কারণে খাদ্যপণ্য দূরবর্তী বাজারে না নিতে পারার কারণে যে বাড়তি সরবরাহ, তা অন্তত এই শরণার্থীদের কাজে আসবে।
এই হলো জেবেল মারা অঞ্চলের বাস্তবতা—এক সবুজ পাহাড়ের অদ্ভুত জগৎ! ঝরনার নদী, রসালো ফলের প্রাচুর্য, কিন্তু চারদিকে যুদ্ধ এবং আতঙ্কিত শরণার্থীদের ভিড়। এক ফল ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে বলেন, ‘আমরা এই দুই যুদ্ধরত পক্ষের ওপর থেকে সব আশা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শুধু আমাদের কমলাগুলো বেচতে চাই।’

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার...
২৫ নভেম্বর ২০২৪
দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
২৪ মিনিট আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এক সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে ‘এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তবে এসপিওনাজে এজেন্ট বলতে যেমনটা বোঝানো হয়, সিআইএ তাঁকে সেভাবে কাজে লাগাতে চায়নি। বরং, সিআইএ উইনস্টন চার্চিলকে দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনি
২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
গত শুক্রবার নিজের ‘ওয়ার রুম’ পডকাস্টে ব্যানন বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর তথাকথিত ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ বা ‘বৃহত্তর ইসরায়েলের’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধারণা বাইবেলে উল্লিখিত ভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যা নীলনদ থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। সমালোচকদের মতে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং পশ্চিম তীরে দখলদার বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনাই বাস্তবে চালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যানন বলেন, ‘নেতানিয়াহুর এই গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প তাঁর নিজের মুখেই বিস্ফোরিত হয়েছে…এটা ইসরায়েলকেই ধ্বংস করেছে। তাই এখন তিন-রাষ্ট্র সমাধানের পথে যেতে হবে। এর একটি রাষ্ট্র হতে হবে জেরুজালেমের খ্রিষ্টান রাষ্ট্র। আমাদের পবিত্র ভূমিতে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র দরকার। এতে অন্তত আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে সবকিছু কিছুটা গুছিয়ে যাবে।’
এর আগেও ব্যানন এমন মন্তব্য করেছিলেন। চলতি মাসের শুরুতে তিনি বলেন, গাজায় শান্তি সম্ভব নয়, যদি ‘শুধু মুসলমান আর ইহুদিরাই’ এখানে থাকে। তবে কীভাবে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠন করা হবে বা সেটি কীভাবে অঞ্চলে স্থিতি আনবে, সে বিষয়ে তিনি কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
ব্যাননের মতে, ইসরায়েল এখন ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভেসেল স্টেট বা রক্ষিত রাষ্ট্র’, আর হামাস ‘একটি ক্ষুদ্র খেলোয়াড়।’ তিনি বলেন, গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না এদের কেউই। বরং কাতার গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন করবে, আর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে তুরস্ক।
তিনি আরও দাবি করেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা না বললেও, সেটির কাঠামোতে এক ধরনের ‘প্রোটো-ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের’ বা ‘আদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের’ ইঙ্গিত রয়েছে। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
উল্লেখ্য, চলতি অক্টোবরের শুরুর দিকে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার আওতায় ইসরায়েল ও হামাস একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। পরিকল্পনাটিতে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, এবং আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিসের’ তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী ফিলিস্তিনি প্রশাসনের অধীনে একটি নিরস্ত্রীকৃত গাজার কথা বলা হয়েছে।
যদিও উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে, তবু এই সপ্তাহে তারা আবারও অস্ত্রবিরতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
গত শুক্রবার নিজের ‘ওয়ার রুম’ পডকাস্টে ব্যানন বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর তথাকথিত ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ বা ‘বৃহত্তর ইসরায়েলের’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধারণা বাইবেলে উল্লিখিত ভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যা নীলনদ থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। সমালোচকদের মতে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং পশ্চিম তীরে দখলদার বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনাই বাস্তবে চালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যানন বলেন, ‘নেতানিয়াহুর এই গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প তাঁর নিজের মুখেই বিস্ফোরিত হয়েছে…এটা ইসরায়েলকেই ধ্বংস করেছে। তাই এখন তিন-রাষ্ট্র সমাধানের পথে যেতে হবে। এর একটি রাষ্ট্র হতে হবে জেরুজালেমের খ্রিষ্টান রাষ্ট্র। আমাদের পবিত্র ভূমিতে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র দরকার। এতে অন্তত আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে সবকিছু কিছুটা গুছিয়ে যাবে।’
এর আগেও ব্যানন এমন মন্তব্য করেছিলেন। চলতি মাসের শুরুতে তিনি বলেন, গাজায় শান্তি সম্ভব নয়, যদি ‘শুধু মুসলমান আর ইহুদিরাই’ এখানে থাকে। তবে কীভাবে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠন করা হবে বা সেটি কীভাবে অঞ্চলে স্থিতি আনবে, সে বিষয়ে তিনি কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
ব্যাননের মতে, ইসরায়েল এখন ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভেসেল স্টেট বা রক্ষিত রাষ্ট্র’, আর হামাস ‘একটি ক্ষুদ্র খেলোয়াড়।’ তিনি বলেন, গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না এদের কেউই। বরং কাতার গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন করবে, আর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে তুরস্ক।
তিনি আরও দাবি করেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা না বললেও, সেটির কাঠামোতে এক ধরনের ‘প্রোটো-ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের’ বা ‘আদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের’ ইঙ্গিত রয়েছে। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
উল্লেখ্য, চলতি অক্টোবরের শুরুর দিকে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার আওতায় ইসরায়েল ও হামাস একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। পরিকল্পনাটিতে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, এবং আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিসের’ তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী ফিলিস্তিনি প্রশাসনের অধীনে একটি নিরস্ত্রীকৃত গাজার কথা বলা হয়েছে।
যদিও উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে, তবু এই সপ্তাহে তারা আবারও অস্ত্রবিরতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার...
২৫ নভেম্বর ২০২৪
দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
২৪ মিনিট আগে
সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ডটি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
২৬ মিনিট আগে
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এক সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে ‘এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তবে এসপিওনাজে এজেন্ট বলতে যেমনটা বোঝানো হয়, সিআইএ তাঁকে সেভাবে কাজে লাগাতে চায়নি। বরং, সিআইএ উইনস্টন চার্চিলকে দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনি
২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এক সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে ‘এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তবে এসপিওনাজে এজেন্ট বলতে যেমনটা বোঝানো হয়, সিআইএ তাঁকে সেভাবে কাজে লাগাতে চায়নি। বরং, সিআইএ উইনস্টন চার্চিলকে দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে চেয়েছিল। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নতুন করে প্রকাশিত নথিতে দেখা গেছে, পূর্ব ইউরোপে সিআইএ-সমর্থিত সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও লিবার্টি তৎকালীন সোভিয়েত নাগরিকদের নিজেদের কমিউনিস্ট নেতাদের বিরুদ্ধে উসকে দিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫৮ সালে রেডিও স্টেশনটির নিয়ন্ত্রকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ল্যাংলিতে অবস্থিত সিআইএ সদর দপ্তরে জানায়, তারা কার্ল মার্কসের মৃত্যুর ৭৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে সময় রাশিয়ায় ‘সংস্কারপন্থীদের’ উত্থান ঘটছিল। এদের আলোচনা সোভিয়েত মার্কসবাদ-লেনিনবাদের কট্টর কাঠামো থেকে বিপরীতে ছিল অনেকটা।
আমেরিকান গোয়েন্দারা এই সংস্কারপন্থী চিন্তকদের কাজে লাগাতে চেয়েছিল। এরা মস্কোকেন্দ্রিক একক সোভিয়েত ব্লকের ধারণার বিরোধিতা করে স্বাধীন কমিউনিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। রেডিও লিবার্টির অনুষ্ঠানগুলো তৈরি করা হয় ‘নতুন ও অপ্রচলিত রাজনৈতিক চিন্তার পরিবেশকে কাজে লাগাতে’ এবং পশ্চিমা চিন্তাবিদদের তুলে ধরতে, যাতে সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভাবাদর্শকে দুর্বল করা যায়।
সিআইএ—এর তথ্য অধিকার আইনে প্রকাশিত এক ব্রিফ্রিং নোটে দেখা যায়, ১৯৫৮ সালের ১৪ মার্চ থেকে ৫ মে পর্যন্ত সময়জুড়ে একটি বিশেষ প্রচারণা অভিযান পরিচালিত হয়। এই প্রচারণার লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে ‘বিপরীতধর্মী চিন্তাভাবনা উসকে দেওয়া’ এবং ‘মার্কসবাদের মূল ভিত্তি, ইতিহাস পদ্ধতি ও ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করে যে কোনো ধরনের মার্কসবাদের ওপর আস্থা নষ্ট করা।’
তৎকালীন সোভিয়েত নাগরিকদের কাছে এটা বোঝা সম্ভব ছিল না যে রেডিও লিবার্টি আসলে সিআইএ অর্থায়িত ও ওয়াশিংটন নিয়ন্ত্রিত একটি মাধ্যম। চার্চিল ছিলেন সেই কয়েকজন ব্রিটিশ ব্যক্তিত্বের একজন, যাদের রেডিও লিবার্টি তাদের সম্প্রচারে অংশগ্রহণের আশা করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
চার্চিল সম্পর্কিত ওই ব্রিফিং নোটে তাঁর সম্ভাব্য সম্প্রচারের বিস্তারিত না থাকলেও উল্লেখ করা আছে, মিউনিখের বিশেষ ইভেন্ট টিম নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের কাছে লিখবে এবং কয়েকজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে।’ সেই তালিকায় ছিলেন আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশ ব্যক্তি—সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি, আনিউরিন বেভান ও হিউ গেইটস্কেল—যাঁরা ছিলেন যুদ্ধ-পরবর্তী প্রভাবশালী লেবার পার্টির নেতা। পাশাপাশি ছিলেন বামপন্থী বুদ্ধিজীবী আর্থার কোয়েস্টলার ও আর্নল্ড টয়েনবি।
অন্য দেশ থেকেও কিছু সম্ভাব্য অতিথির নাম ছিল—মার্কিন দার্শনিক সিডনি হুক, রুশ বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ইউজিন লায়ন্স, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট অরিওল এবং অস্ট্রিয়ার ভাইস-চ্যান্সেলর ব্রুনো পিটারম্যান।
রেডিও লিবার্টি নিজেকে উপস্থাপন করত এক ধরনের প্রবাসী রেডিও স্টেশন হিসেবে, যা সোভিয়েত নাগরিকদের বিশ্ব ঘটনা সম্পর্কে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিত। ১৯৫১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত স্টেশনটি গোপনে সিআইএ অর্থায়নে চলেছে এবং পরবর্তীতে ‘রেডিও ফ্রি ইউরোপ’ এর সঙ্গে একীভূত হয়, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যাটেলাইট স্টেট বা রাষ্ট্রগুলোকে লক্ষ্য করে কাজ করত। বর্তমানে স্টেশনটি এখনো সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থেই পরিচালিত।
চার্চিল ব্যক্তিগতভাবে সিআইএ–এর পরিচালক অ্যালেন ডালেস এবং তাঁর ভাই, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন ফস্টার ডালেসের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তিনি ওয়াশিংটন ও লন্ডনে একাধিকবার ছবি তুলেছেন। ১৯৫৮ সালের বসন্তে, যখন তাঁকে রেডিও লিবার্টির ক্যাম্পেইনের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছিল, তিনি অসুস্থতার কারণে ওয়াশিংটনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন।
তখন তাঁর বয়স ছিল ৮৩ বছর। পরের বছর তিনি শেষবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে। এরপর ১৯৬৫ সালে মৃত্যুর আগে আর কখনো আমেরিকায় যাননি। ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও গোয়েন্দা ইতিহাসের অধ্যাপক ররি কোরম্যাক বলেন, ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েতবিরোধী কর্মকৌশলের দিক থেকে চার্চিলকে সিআইএ কর্তৃক টানার চেষ্টা ছিল স্বাভাবিক পদক্ষেপ।
তিনি বলেন,১ শীতল যুদ্ধের সময় প্রচারণার মূল লক্ষ্য ছিল কর্তৃত্ব দুর্বল করা, প্রতিষ্ঠিত ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, আর চিন্তার ভেতর সন্দেহের জন্ম দেওয়া।’ প্রফেসর কোরম্যাকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সে সময় ‘বিশ্বাসযোগ্য বক্তা’ খুঁজছিল, যারা সোভিয়েত নাগরিকদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে পারবে। সিআইএ অনেক সময় সরাসরি নয়, বরং রেডিও লিবার্টির মতো মাধ্যম বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে সেই কাজ করত।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এক সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে ‘এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তবে এসপিওনাজে এজেন্ট বলতে যেমনটা বোঝানো হয়, সিআইএ তাঁকে সেভাবে কাজে লাগাতে চায়নি। বরং, সিআইএ উইনস্টন চার্চিলকে দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে চেয়েছিল। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নতুন করে প্রকাশিত নথিতে দেখা গেছে, পূর্ব ইউরোপে সিআইএ-সমর্থিত সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও লিবার্টি তৎকালীন সোভিয়েত নাগরিকদের নিজেদের কমিউনিস্ট নেতাদের বিরুদ্ধে উসকে দিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫৮ সালে রেডিও স্টেশনটির নিয়ন্ত্রকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ল্যাংলিতে অবস্থিত সিআইএ সদর দপ্তরে জানায়, তারা কার্ল মার্কসের মৃত্যুর ৭৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে সময় রাশিয়ায় ‘সংস্কারপন্থীদের’ উত্থান ঘটছিল। এদের আলোচনা সোভিয়েত মার্কসবাদ-লেনিনবাদের কট্টর কাঠামো থেকে বিপরীতে ছিল অনেকটা।
আমেরিকান গোয়েন্দারা এই সংস্কারপন্থী চিন্তকদের কাজে লাগাতে চেয়েছিল। এরা মস্কোকেন্দ্রিক একক সোভিয়েত ব্লকের ধারণার বিরোধিতা করে স্বাধীন কমিউনিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। রেডিও লিবার্টির অনুষ্ঠানগুলো তৈরি করা হয় ‘নতুন ও অপ্রচলিত রাজনৈতিক চিন্তার পরিবেশকে কাজে লাগাতে’ এবং পশ্চিমা চিন্তাবিদদের তুলে ধরতে, যাতে সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভাবাদর্শকে দুর্বল করা যায়।
সিআইএ—এর তথ্য অধিকার আইনে প্রকাশিত এক ব্রিফ্রিং নোটে দেখা যায়, ১৯৫৮ সালের ১৪ মার্চ থেকে ৫ মে পর্যন্ত সময়জুড়ে একটি বিশেষ প্রচারণা অভিযান পরিচালিত হয়। এই প্রচারণার লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে ‘বিপরীতধর্মী চিন্তাভাবনা উসকে দেওয়া’ এবং ‘মার্কসবাদের মূল ভিত্তি, ইতিহাস পদ্ধতি ও ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করে যে কোনো ধরনের মার্কসবাদের ওপর আস্থা নষ্ট করা।’
তৎকালীন সোভিয়েত নাগরিকদের কাছে এটা বোঝা সম্ভব ছিল না যে রেডিও লিবার্টি আসলে সিআইএ অর্থায়িত ও ওয়াশিংটন নিয়ন্ত্রিত একটি মাধ্যম। চার্চিল ছিলেন সেই কয়েকজন ব্রিটিশ ব্যক্তিত্বের একজন, যাদের রেডিও লিবার্টি তাদের সম্প্রচারে অংশগ্রহণের আশা করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
চার্চিল সম্পর্কিত ওই ব্রিফিং নোটে তাঁর সম্ভাব্য সম্প্রচারের বিস্তারিত না থাকলেও উল্লেখ করা আছে, মিউনিখের বিশেষ ইভেন্ট টিম নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের কাছে লিখবে এবং কয়েকজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে।’ সেই তালিকায় ছিলেন আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশ ব্যক্তি—সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি, আনিউরিন বেভান ও হিউ গেইটস্কেল—যাঁরা ছিলেন যুদ্ধ-পরবর্তী প্রভাবশালী লেবার পার্টির নেতা। পাশাপাশি ছিলেন বামপন্থী বুদ্ধিজীবী আর্থার কোয়েস্টলার ও আর্নল্ড টয়েনবি।
অন্য দেশ থেকেও কিছু সম্ভাব্য অতিথির নাম ছিল—মার্কিন দার্শনিক সিডনি হুক, রুশ বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ইউজিন লায়ন্স, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট অরিওল এবং অস্ট্রিয়ার ভাইস-চ্যান্সেলর ব্রুনো পিটারম্যান।
রেডিও লিবার্টি নিজেকে উপস্থাপন করত এক ধরনের প্রবাসী রেডিও স্টেশন হিসেবে, যা সোভিয়েত নাগরিকদের বিশ্ব ঘটনা সম্পর্কে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিত। ১৯৫১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত স্টেশনটি গোপনে সিআইএ অর্থায়নে চলেছে এবং পরবর্তীতে ‘রেডিও ফ্রি ইউরোপ’ এর সঙ্গে একীভূত হয়, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যাটেলাইট স্টেট বা রাষ্ট্রগুলোকে লক্ষ্য করে কাজ করত। বর্তমানে স্টেশনটি এখনো সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থেই পরিচালিত।
চার্চিল ব্যক্তিগতভাবে সিআইএ–এর পরিচালক অ্যালেন ডালেস এবং তাঁর ভাই, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন ফস্টার ডালেসের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তিনি ওয়াশিংটন ও লন্ডনে একাধিকবার ছবি তুলেছেন। ১৯৫৮ সালের বসন্তে, যখন তাঁকে রেডিও লিবার্টির ক্যাম্পেইনের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছিল, তিনি অসুস্থতার কারণে ওয়াশিংটনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন।
তখন তাঁর বয়স ছিল ৮৩ বছর। পরের বছর তিনি শেষবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে। এরপর ১৯৬৫ সালে মৃত্যুর আগে আর কখনো আমেরিকায় যাননি। ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও গোয়েন্দা ইতিহাসের অধ্যাপক ররি কোরম্যাক বলেন, ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েতবিরোধী কর্মকৌশলের দিক থেকে চার্চিলকে সিআইএ কর্তৃক টানার চেষ্টা ছিল স্বাভাবিক পদক্ষেপ।
তিনি বলেন,১ শীতল যুদ্ধের সময় প্রচারণার মূল লক্ষ্য ছিল কর্তৃত্ব দুর্বল করা, প্রতিষ্ঠিত ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, আর চিন্তার ভেতর সন্দেহের জন্ম দেওয়া।’ প্রফেসর কোরম্যাকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সে সময় ‘বিশ্বাসযোগ্য বক্তা’ খুঁজছিল, যারা সোভিয়েত নাগরিকদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে পারবে। সিআইএ অনেক সময় সরাসরি নয়, বরং রেডিও লিবার্টির মতো মাধ্যম বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে সেই কাজ করত।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার...
২৫ নভেম্বর ২০২৪
দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
২৪ মিনিট আগে
সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ডটি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
২৬ মিনিট আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
১ ঘণ্টা আগে