Ajker Patrika

গেরিলাযুদ্ধের চেয়ে দেশ শাসন কঠিন: সাবেক তালেবান স্নাইপার

আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২২, ১৮: ৪১
গেরিলাযুদ্ধের চেয়ে দেশ শাসন কঠিন: সাবেক তালেবান স্নাইপার

গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এর পরই বদলে যায় বহু আফগানের জীবন। গত এক বছরে হাজার হাজার আফগান দেশ ছেড়েছেন, এখনো অনেক স্থানে মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ রয়েছে, দিনে দিনে দারিদ্র্য বাড়ছে। 

তবে আশার কথা হচ্ছে, চার দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানে আর উল্লেখযোগ্য সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। আগের মার্কিন মদদপুষ্ট সরকারের দুর্নীতির মহামারিও দৃশ্যমানভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিবিসির সংবাদদাতা সেকেন্দার কেরমানি আগস্টের উত্তাল সময়ে আফগানিস্তানেই ছিলেন। গত বছর যাঁদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আবার ফিরে এসেছেন কাবুলে। তাঁর বর্ণনায় উঠে এসেছে তালেবান শাসনাধীন বর্তমান আফগানিস্তানের চিত্র। 

গত গ্রীষ্মে যখন তালেবানরা আফগানিস্তানজুড়ে একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে রাজধানী কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন বলখের উত্তরের একটি জেলায় চৌকস তালেবান যোদ্ধা আইনুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন সাংবাদিক সেকেন্দার। 

আইনুদ্দিন কথা বলছিলেন স্থির দৃষ্টিতে, সাপের মতো ঠান্ডা গলায়। ‘আমরা বেসামরিক লোকদের ক্ষতি না করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, কিন্তু এটি তো লড়াই এবং কিছু মানুষ মারা যাবে।’ বলছিলেন আইনুদ্দিন। 

যুদ্ধ তখনো চলছিল এবং আফগান সরকারের বিমান হামলার আশঙ্কা প্রবল হচ্ছিল। ফলে এই কথোপকথন সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছিল। 

এর কয়েক মাস পরে তালেবান সরকার তখন কেবল গুছিয়ে নিচ্ছে—আফগানিস্তান ও উজবেকিস্তানকে বিভক্ত করে বয়ে যাওয়া আমু দরিয়া নদী থেকে ধরা টাটকা ভাজা মাছ খেতে খেতে আইনুদ্দিন বলেন, ‘আমি ছিলাম তালেবান স্নাইপার!’ তাঁর অনুমান, অন্তত ১০টি আক্রমণে তিনি আফগান নিরাপত্তাবাহিনীর কয়েক ডজন সদস্যকে হত্যা করেছেন। 

সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলছেন আইনুদ্দিনতালেবান ক্ষমতা দখলের পর বলখ প্রদেশের ভূমি ও নগর উন্নয়ন পরিচালক নিযুক্ত হন আইনুদ্দিন। নতুন সরকারের প্রথম দিকে যখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয়, তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল—এত দিন যে ‘জিহাদ’ তিনি করছিলেন, সেটি মিস করেন কি না। আইনুদ্দিন ছোট্ট করে বলেন, ‘হ্যাঁ’।

তালেবানের এই দক্ষ স্নাইপার বলেন, যুদ্ধ করার সময় খুশিই ছিলেন। এখন ডেস্কের পেছনে বসে নথিপত্র নিয়ে কাজ করতেও খারাপ লাগে না।

আইনুদ্দিনের অফিসরুমের এক কোনায় রাখা ইসলামিক আমিরাতের সাদা-কালো পতাকা, তিনি কাঠের টেবিলের পেছনে বসা। এই এক বছর পরেও নতুন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে যে কাজটি করছেন, সেটির গুরুত্ব তিনি বোঝেন। ‘আমরা বন্দুক দিয়ে আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলাম, আল্লাহকে ধন্যবাদ, আমরা তাদের পরাজিত করেছি এবং এখন আমরা কলম দিয়ে আমাদের জনগণের সেবা করার চেষ্টা করছি।’ বলেন আইনুদ্দিন। 

অবশ্য অন্য কিছু তালেবান সদস্য যাঁরা সামনের সারিতে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাঁরা স্বীকার করেছেন, এসব অফিশিয়াল কাজ নিয়ে তারা কিছুটা বিরক্ত! 

আইনুদ্দিনের তত্ত্বাবধানে থাকা বেশির ভাগ স্টাফই কিন্তু বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া। এই পদে নিজেকে যোগ্য মনে করেন কি না—এমন প্রশ্নে আইনুদ্দিন বলেন, ‘আমরা সামরিক ও আধুনিক শিক্ষা উভয়ই পেয়েছি। যদিও আমরা একটি সামরিক পটভূমি থেকে এসেছি এবং এখন এ ক্ষেত্রে কাজ করছি, আপনি আগের সরকারের সঙ্গে ফলাফলের তুলনা করতে পারেন এবং দেখতে পারেন কে ভালো ফল দিচ্ছে।’ 

তবে আইনুদ্দিনের সরল স্বীকারোক্তি, ‘গেরিলাযুদ্ধের কষ্টের তুলনায়, দেশ শাসন করা কঠিন...যুদ্ধ সহজ ছিল, কারণ সেখানে দায়িত্ব কম ছিল।’ 

স্পষ্টতই বোঝা যায়, তালেবানদের জন্য দেশ চালানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী বলতে গেলে খুব কম সময়ের মধ্যে শাসকে রূপান্তরিত হয়েছে। 

আফগানিস্তানের প্রধান শহরগুলো বারবার বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এ কারণেই দেশটি প্রায়ই মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কাবুলের দক্ষিণ-পূর্বে লোগার প্রদেশের পাদখওয়াব গ্রামে গিয়েছিলেন সাংবাদিক সেকেন্দার। সেখানে বাসিন্দারা যুদ্ধের ক্ষত দেখাতে আগ্রহী ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত কীভাবে তাঁদের জীবন বিষিয়ে তুলেছিল সেটি বলতে চাইছিলেন তাঁরা। 

টালি কারিগর সামিউল্লাহ বলেন, ‘পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। আমরা কিছুই করতে পারতাম না, এমনকি দোকান বা বাজারে যেতেও পারিনি। এখন আল্লাহকে ধন্যবাদ, আমরা সব জায়গায় যেতে পারি।’ 

শহরাঞ্চলের তুলনায় পাদখওয়াবের মতো গ্রামে তালেবানের আদর্শ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠভাবে আত্তীকৃত। এমনকি পূর্ববর্তী সরকারের আমলেও নারীরা সাধারণত প্রকাশ্যে তাঁদের মুখ ঢেকে রাখতেন এবং খুব কমই স্থানীয় বাজারে যেতেন। স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তার উন্নতির জন্য তালেবানের প্রতি কৃতজ্ঞ। 

দরজির কাজ করেন গুল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘(তৎকালীন আফগান বাহিনী) অনেক মানুষকে আহত ও হত্যা করার আগে বহু কৃষক ও দোকানদারকেও গুলি করা হয়েছিল।’ 

জননিরাপত্তার উন্নতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। বিদেশি অনুদান কমে গেছে, যার প্রায় ৭৫ শতাংশই ব্যয় করা হতো জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা মেটাতে। নিষেধাজ্ঞার বিধি লঙ্ঘিত হবে এই ভয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের রিজার্ভ স্থানান্তর প্রক্রিয়াকরণ বন্ধ করে দিয়েছে। 

আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা অজুহাত হিসেবে তালেবানের দমনমূলক নীতির কথা বলে আসছেন। 

সংকটের ফলস্বরূপ, পূর্বাঞ্চলে শহুর এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আয় নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। সরকারি খাতের কর্মীরা কয়েক মাস বেতন পাননি। উপরন্তু, বেতন কমানো হয়েছে। আগে থেকেই যাঁদের দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থা ছিল, তাঁদের অবস্থা এখন আরও করুণ। 

টালি কারিগর সামিউল্লাহ তাঁর গ্রামে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তালেবানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেও স্বীকার করেন অর্থনীতি ‘ধ্বংস হয়েছে’। সামিউল্লাহ বলেন, ‘অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে, কাজ নেই, চাকরি নেই। সবাই বিদেশে থাকা আত্মীয়দের ওপর নির্ভর করছে।’ 

তবু সামিউল্লাহ বলেন, ‘এটা সত্য যে তখন (আশরাফ ঘানি সরকারের সময়) অনেক বেশি টাকা ছিল, কিন্তু আমরা অনেক নিপীড়নের শিকার হয়েছি। গ্রামে আফগান সরকারি সৈন্যরা মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাকিস্তানের চর সন্দেহে আসামে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দীর্ঘদিন নজরদারির পর কুলেন্দ্র শর্মাকে গ্রেপ্তার করেছে আসাম পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘদিন নজরদারির পর কুলেন্দ্র শর্মাকে গ্রেপ্তার করেছে আসাম পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে আসাম পুলিশ ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে। আটক ব্যক্তির নাম কুলেন্দ্র শর্মা। তিনি তেজপুরের পাতিয়া এলাকার বাসিন্দা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ দীর্ঘদিন নজরদারির পর শুক্রবার রাতে কুলেন্দ্র শর্মাকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুলেন্দ্র শর্মা পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থার ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং তাঁদের কাছে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ করতেন। তাঁর মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ থেকে সন্দেহজনক নথি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সন্দেহ করা হচ্ছে, ল্যাপটপ থেকে কিছু ডেটা মুছে ফেলা হয়েছে।

আসামের শোণিতপুর জেলার উপপুলিশ সুপার (ডিএসপি) হরিচরণ ভূমিজ জানিয়েছেন, কুলেন্দ্র শর্মার সঙ্গে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার যোগসাজশের সন্দেহ প্রবল। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কোনো কিছু বলা যাবে না।

জানা গেছে, অবসরের আগে কুলেন্দ্র শর্মা তেজপুরের এয়ার ফোর্স স্টেশনে জুনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই স্টেশনে সুখোই-৩০ স্কোয়াড্রনসহ ভারতীয় বিমানবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রয়েছে। তিনি ২০০২ সালে অবসর গ্রহণ করেন এবং এরপর অল্প সময়ের জন্য তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও কাজ করেছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, কুলেন্দ্র শর্মার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বিভিন্ন ধারায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। আজ শনিবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাইডেনের সময় ইসরায়েলকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফিলিস্তিনের গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলের আগ্রাসনে মারা যায় প্রায় ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলের আগ্রাসনে মারা যায় প্রায় ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগের কারণে বিগত বাইডেন প্রশাসনের সময় দেশটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আদান-প্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বিষয়টির সঙ্গে অবগত ছয়জন ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছে।

২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে গাজার ওপর দিয়ে ওড়া মার্কিন ড্রোন থেকে পাওয়া লাইভ ভিডিও সংযোগ সে সময় বিচ্ছিন্ন করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জিম্মি উদ্ধার ও হামাস যোদ্ধাদের খুঁজে বের করতে ইসরায়েলি সরকার এই ভিডিও ব্যবহার করছিল। পাঁচটি সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, এই স্থগিতাদেশ অন্তত কয়েক দিন স্থায়ী ছিল।

দুটি সূত্র জানিয়েছে, গাজায় উচ্চপর্যায়ের সামরিক লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করার ক্ষেত্রে ইসরায়েল কীভাবে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করবে, সে বিষয়েও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তবে এই সিদ্ধান্ত কখন নেওয়া হয়েছিল, তা তারা নির্দিষ্ট করে জানায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে আলোচনার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সব সূত্রই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছে রয়টার্সের সঙ্গে।

বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে বেসামরিক নাগরিক নিহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তীব্র হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত আসে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত ফিলিস্তিনি বন্দীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে—এমন আশঙ্কার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।

তিনটি সূত্র বলছে, মার্কিন তথ্য ব্যবহারের বিনিময়ে ইসরায়েল যুদ্ধের আইন মেনে চলবে—এমন পর্যাপ্ত নিশ্চয়তা না দেওয়ায় কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। মার্কিন আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের আগে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অবশ্যই এ ধরনের নিশ্চয়তা নিতে হয়।

বাইডেন প্রশাসন গোয়েন্দা তথ্য ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন দেওয়ার নীতি বজায় রাখলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য আটকে রাখার সিদ্ধান্তটি ছিল সীমিত এবং কৌশলগত।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য ছিল এটি নিশ্চিত করা, ইসরায়েল যুদ্ধের আইন মেনেই মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করবে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একজন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের সরাসরি আদেশ ছাড়াই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান-সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

অপর একজন জানিয়েছেন, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে নতুন করে নিশ্চয়তা প্রদানের প্রয়োজন ছিল।

রয়টার্স এসব সিদ্ধান্তের সঠিক তারিখগুলো নির্ধারণ করতে পারেনি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে জানতেন কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়।

বাইডেনের একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে কোনো সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার ডিজেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করল ইরান, বাংলাদেশিসহ ১৮ ক্রু আটক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৩
ইরান ৬০ লাখ লিটার ডিজেলবাহী একটি ট্যাংকার আটক করেছে। এতে থাকা ১৮ ক্রুর মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও আছে। তাদের সবাইকে আটক করেছে ইরান। ছবি: সংগৃহীত
ইরান ৬০ লাখ লিটার ডিজেলবাহী একটি ট্যাংকার আটক করেছে। এতে থাকা ১৮ ক্রুর মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও আছে। তাদের সবাইকে আটক করেছে ইরান। ছবি: সংগৃহীত

ওমান উপসাগরে চোরাচালানের ডিজেল বহনকারী একটি ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। ট্যাংকারটি থেকে ১৮ জন ক্রুকেই আটক করেছে তারা। আটককৃত ক্রুদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও আছেন। তবে ঠিক কতজন বাংলাদেশি এই বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। চীনা রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইরানের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আইআরআইবি শুক্রবার জানায়, ওমান উপসাগর থেকে ৬০ লাখ লিটার চোরাচালান করা ডিজেল বহনকারী একটি বিদেশি তেল ট্যাংকার জব্দ করা হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ হুরমুজগান প্রদেশের প্রধান বিচারপতি মুজতবা গাহরেমানিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, মূল জ্বালানি চোরাচালান চক্র এবং চোরাকারবারিদের মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় জাসক বন্দর শহরের কাছাকাছি জলসীমায় ইরানের বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা ট্যাংকারটি বাজেয়াপ্ত করেন।

মুজতবা গাহরেমানি বলেন, জাহাজটির প্রয়োজনীয় সামুদ্রিক নথিপত্র এবং জ্বালানি চালানের ‘বিল অব ল্যাডিং’ ছিল না। তিনি আরও জানান, জাহাজটি সব নেভিগেশন ও দিকনির্দেশনা সহায়ক ব্যবস্থা বন্ধ করে রেখেছিল। তিনি উল্লেখ করেন, ট্যাংকারটিতে ১৮ জন ক্রু ছিলেন এবং তাঁরা ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের নাগরিক।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চলমান তদন্তের অধীনে আটককৃতদের মধ্যে ট্যাংকারটির ক্যাপ্টেনও আছেন। আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, ক্রুরা ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের সাবেক নাগরিক। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্যাংকারটি একাধিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘থামার নির্দেশ অগ্রাহ্য করা, পালানোর চেষ্টা করা এবং নেভিগেশন ও কার্গোর নথিপত্র না থাকা।’

ব্যাপক ভর্তুকি এবং স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়ার কারণে জ্বালানির দাম বিশ্বের সর্বনিম্নগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানে স্থলপথে প্রতিবেশী দেশগুলোতে এবং জলপথে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোতে ব্যাপক হারে জ্বালানি চোরাচালান ঠেকানোর লড়াই চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইরানে দুইবার সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন: মার্কিন দূত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন দূত টম বারাক। ছবি: এএফপি
মার্কিন দূত টম বারাক। ছবি: এএফপি

মার্কিন দূত টম বারাক বলেছেন, ওয়াশিংটন বিগত সময়ে দুই দুইবার ইরানে সরকার বদলের চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো ফল হাতে আসেনি। আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালকে দেওয়া মন্তব্যে বারাক জোর দিয়েই জানান, এমন কৌশল কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। তাই এ পথে আর হাঁটা উচিত নয়।

বারাকের অভিযোগ, ওয়াশিংটন নাকি এখন আর সরকার বদলানোর মতো নীতি অনুসরণ করছে না। তাঁর কথায়, ইরানের সঙ্গে কোনো অমীমাংসিত বিষয় থাকলে তা মিটমাট করতে হবে এই অঞ্চলের মধ্যেই। তিনি আঞ্চলিক আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘বাইরের শক্তির নাক গলানো কোনোমতেই কাম্য নয়।’ তাঁর মতে, ‘স্থানীয় সমাধানই যে বেশি স্থায়ী হবে, তা নিয়ে একরকম ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে।’

বারাক বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের প্রেসিডেন্ট তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন।’ তিনি আরও যোগ করলেন, ‘তিনি সত্যিকারের আলোচনায় রাজি।’ কিন্তু কোনো অর্থহীন ‘গড়িমসি’ বা সময় কাটানোর খেলায় তিনি নেই, আর ‘তিনি সব জানেন।’ ইরানের জনগণকে উদ্দেশ্য করে বারাক বলেন, ‘ইরানিরা যদি এই (ট্রাম্প) প্রশাসন (পরমাণু) সমৃদ্ধকরণ এবং তাদের প্রক্সিদের অর্থায়ন বন্ধ করা নিয়ে যা বলছে—তা শুনতে চায়, তবে সেটাই একমাত্র পথ।’

বারাক আরও দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সরকার বদলের কোনো পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন না। তার চেয়ে বরং তিনি চান, সরাসরি সংশ্লিষ্ট দেশগুলির নেতৃত্বে আঞ্চলিক উদ্যোগেই সব সমস্যার সমাধান হোক। তাঁর কথায়, মার্কিন প্রশাসন তেহরানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে প্রস্তুত, যদি ইরানের কর্তৃপক্ষ ‘গুরুত্ব’ এবং গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার দেখায়।

বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের নিরাপত্তার দিকে তাকিয়ে বারাক দ্য ন্যাশনালকে জানান, ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে চুক্তি করতে চান, তবে তেহরানকে সিরিয়াস হতে হবে। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমাদের প্রেসিডেন্ট এই ইস্যুর দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করেছেন। ইরানের ৫০ বছরের দৃষ্টিকোণ রয়েছে। আমাদের প্রেসিডেন্ট এতই চতুর যে তিনি জানেন, শুধু সংলাপে বসার জন্য তাঁকে উত্ত্যক্ত করা এবং এই অর্থহীন খুনে মদদ দেওয়া চলতে পারে না।’

এর আগে, গত অক্টোবরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি অভিযোগ করেছিলেন, নিউ ইয়র্কে আলোচনায় ওয়াশিংটন বাধা দিচ্ছে এবং ই-৩ ও আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার মূল কারণ মার্কিন কার্যকলাপই। ১ অক্টোবর সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরাঘচি বলেন, মার্কিন ‘বাধার’ জন্যই জাতিসংঘের সাধারণ সভার পার্শ্ব-আলোচনা কোনো বাস্তব ফল দিতে পারেনি।

তিনি নিউ ইয়র্ক সফরের আগে ও পরে ইউরোপীয় আধিকারিক এবং আমেরিকান প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের একটি রিপোর্ট পেশ করেন। সেখানে জোর দিয়ে বলেন, আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইরান প্রয়োজনীয় নমনীয়তা দেখিয়েছিল। তবে, ‘যেমনটা শুরুতেই অনুমান করা গিয়েছিল, আমেরিকানদের অনমনীয়তার জন্য এই পথ আর গড়ায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত