Ajker Patrika

১১ বছরেও খোঁজ মেলেনি সেই মালয়েশিয়ান বিমানের, আবারও অনুসন্ধান স্থগিত

অনলাইন ডেস্ক
২০১৪ সালের ১২ মার্চ ভারতের পুরী সমুদ্রসৈকতে নিখোঁজ মালয়েশিয়ান বিমান এমএইচ৩৭০-এর সমর্থনে একটি বালির ভাস্কর্য তৈরি করেন সুদর্শন পট্টনায়েক। ছবি: এএফপি
২০১৪ সালের ১২ মার্চ ভারতের পুরী সমুদ্রসৈকতে নিখোঁজ মালয়েশিয়ান বিমান এমএইচ৩৭০-এর সমর্থনে একটি বালির ভাস্কর্য তৈরি করেন সুদর্শন পট্টনায়েক। ছবি: এএফপি

মনে আছে, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের সেই এমএইচ৩৭০ বিমানটির কথা? বিমান চলাচলের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত ‘সবচেয়ে রহস্যময়’ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। প্রায় ১১ বছর আগে ২০১৪ সালের ৮ মার্চে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার ৪০ মিনিটের মধ্যে সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিমানটির কী হয়েছে, তা আজও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। বিমানটিতে ছিলেন ২৩৯ জন যাত্রী ও ক্রু। তাঁরা কোথায় বা বিমানটি কোথায়, আজ পর্যন্ত এই খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনার পর থেকে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী অ্যান্থনি লক বলেছেন, নিখোঁজ ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর সর্বশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার এক দশক পর তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে অনুসন্ধানের উপযুক্ত মৌসুম না থাকায়’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার এএফপিকে পাঠানো ভয়েস রেকর্ডিংয়ে অ্যান্থনি লক বলেন, সাময়িকভাবে অনুসন্ধান অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। বছরের শেষে আবার শুরু হবে। এখন অনুসন্ধানের উপযুক্ত সময় নয়।

কয়েক সপ্তাহ আগে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, নতুন করে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কিন্তু ভারত মহাসাগরের বিশাল এলাকাজুড়ে অনুসন্ধান চালানো হলেও বিমানটির সন্ধান মেলেনি।

২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রথম অনুসন্ধানে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে ভারত মহাসাগরের ১ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা খুঁজে দেখা হয়। তবে বিমানের মাত্র কয়েকটি ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। এরপর ২০১৮ সালে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামুদ্রিক অনুসন্ধান কোম্পানি ‘ওশান ইনফিনিটি’ও ব্যর্থ হয়। গত মাসে তারা আবারও অনুসন্ধান শুরু করে।

ওশান ইনফিনিটির সাম্প্রতিক অনুসন্ধান কার্যক্রম ‘খুঁজে না পেলে অর্থ দিতে হবে না’ এই নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ বিমানটি খুঁজে পাওয়া গেলে কেবল মালয়েশিয়া সরকার কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দেবে।

তবে বিমানের ধ্বংসাবশেষ মিলবে কি না, এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী অ্যান্থনি লক বলেন, এটি অনুসন্ধানের ওপর নির্ভর করবে। কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারবে না।

এদিকে এমএইচ৩৭০-এর রহস্যজনক নিখোঁজ নানা তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ অভিজ্ঞ পাইলট জাহারি আহমদ শাহের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বিমানের গতিপথ বদলানো হয়েছিল। তবে ৪৯৫ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনেও বিমানটি কেন নিখোঁজ হলো, তার স্পষ্ট কোনো কারণ ছিল না।

ঘটনার পরে থেকে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনেরা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের কাছে উত্তর চেয়ে আসছেন। এই বিমানের দুই-তৃতীয়াংশ যাত্রী ছিলেন চীনা নাগরিক। বাকিরা ছিলেন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশের নাগরিক।

গত মাসে এমএইচ৩৭০ বিমান নিখোঁজ হওয়ার ১১তম বার্ষিকীতে চীনা যাত্রীদের স্বজনেরা বেইজিংয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা ‘আমাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দাও!’ স্লোগান দেন। কেউ কেউ হাতে প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন, যাতে লেখা ছিল— ‘এই ১১ বছরের অপেক্ষা ও যন্ত্রণার শেষ কবে?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত