Ajker Patrika

পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ক্যানসারের মতো ছড়াচ্ছে সাইবার অপরাধ: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

অনলাইন ডেস্ক
গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের কাইন রাজ্যে সাইবার অপরাধে যুক্ত বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়। ছবি: এএফপি
গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের কাইন রাজ্যে সাইবার অপরাধে যুক্ত বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়। ছবি: এএফপি

প্রতিবছর সাইবার প্রতারণার মুখে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খোয়াতে হচ্ছে। আর এ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির পেছনে রয়েছে শক্তিশালী এশীয় অপরাধচক্র। গতকাল সোমবার জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি)–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অপরাধচক্র প্রতারণামূলক বিনিয়োগ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, প্রেমের ফাঁদসহ নানা ধরনের অনলাইন স্ক্যামের মাধ্যমে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অপরাধচক্রগুলো মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর জীর্ণ আবাসন এলাকা এবং কম্বোডিয়া ও লাওসের তথাকথিত ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ থেকে কার্যক্রম চালায়। এসব চক্র মূলত কাজের প্রলোভনে পাচার হওয়া মানুষদের অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করে। প্রতিবেদনে যদিও ২০২৩ সালে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ বলা হয়েছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার, তবে জাতিসংঘের ধারণা, বৈশ্বিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, এই অপরাধচক্র এখন দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ইউএনওডিসি–এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হফম্যান বলেন, ‘আমরা দেখছি, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রগুলো বৈশ্বিকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। তার মানে, এই অপরাধের বিকাশ থেমে নেই, সেই সঙ্গে তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়ানোর কৌশলও শিখে যাচ্ছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই চক্রগুলো আফ্রিকার জাম্বিয়া, অ্যাঙ্গোলা এবং নামিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ঘাঁটি গেড়েছে। এমনকি ফিজি ও ভানুয়াতুর মতো দ্বীপরাষ্ট্রেও পৌঁছে গেছে তারা। আর অর্থপাচারের জন্য তারা এখন দক্ষিণ আমেরিকার মাদক চক্র, ইতালির মাফিয়া ও আয়ারল্যান্ডের অপরাধচক্রগুলোর সঙ্গেও জোট গড়েছে।

নতুন ডিজিটাল মুদ্রা (ক্রিপ্টোকারেন্সি) তৈরি ও লেনদেন যাচাইয়ের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি—ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিংকে এই অপরাধীরা বেআইনি অর্থ আড়াল করার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ২০২৩ সালের জুনে লিবিয়ার এক সশস্ত্র গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একটি বেআইনি ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং কেন্দ্র থেকে ৫০ জন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। একই সময়ে চীনের সহায়তায় মিয়ানমারে পরিচালিত এক অভিযানে পাচার হওয়া প্রায় ৭ হাজার শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়।

তবে জাতিসংঘ বলছে, এসব অভিযান সাময়িকভাবে কার্যক্রম ব্যাহত করলেও অপরাধচক্রগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নতুন এবং অভিনব সব উপায় খুঁজে বের করছে। হফম্যান বলেন, ‘এটি ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এক জায়গায় দমন করা হলেও শিকড় উপড়ে ফেলা যাচ্ছে না।’

অপরাধচক্রগুলো এখন নিজেদের ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করছে—যেখানে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ, পেমেন্ট অ্যাপ এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে।

ইউএনওডিসি সতর্ক করেছে, এটি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেখানে এই অপরাধচক্রগুলো স্বাধীনভাবে যেকোনো জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং তাদের গতিবিধি ঠেকানো ক্রমেই আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।

এই নেটওয়ার্কগুলোর অর্থায়ন বন্ধে সব দেশকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত