Ajker Patrika

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড, ৪৬ বছর পর সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৩৪
Thumbnail image
সুসান বার্টলেট ও সুজান আর্মস্ট্রং। ছবি: বিবিসি

১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন দুই নারী। ‘ইজি স্ট্রিট মার্ডার’ নামে পরিচিত ৪৬ বছর আগের এই ঘটনা দেশটির সবচেয়ে আলোচিত ঠান্ডা মাথার খুন।

মঙ্গলবার বিবিসি জানিয়েছে, আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র সন্দেহভাজনকে প্রত্যর্পণের মাধ্যমে ইতালি থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ঘটনার সময় বর্তমানে ৬৫ বছর বয়সী পেরি কুরুম্বলিসের বয়স ছিল ১৭ বছর। গত সেপ্টেম্বরে ইতালিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাঁকে।

জানা যায়, ১৯৭৭ সালে মেলবোর্নের একটি বাড়িতে ২৭ বছরের সুজান আর্মস্ট্রং এবং ২৮ বছর বয়সী সুসান বার্টলেট ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছিলেন। হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই তাঁরা দুজন বন্ধু ছিলেন। হত্যার তিন দিন পর তাঁদের মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়েছিল। ঘটনাটি এখনো পুরো জাতিকে নাড়া দেয়।

অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিএনএ পরীক্ষায় অগ্রগতির ফলে তাদের তদন্তের কেন্দ্রে চলে এসেছেন পেরি। তবে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগও আনা হয়নি।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, যদি অভিযোগ গঠন করা হয়, তবে চলতি সপ্তাহেই আদালতের মুখোমুখি হবেন পেরি।

বিবিসি জানিয়েছে, হত্যার তিন দিন পর দুই বান্ধবীর মরদেহ পাওয়া গেলেও সুজানের এক বছরের ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় তার শয্যায়ই পাওয়া গিয়েছিল।

পুলিশের তথ্যমতে, সুজান ও সুসানকে একের পর এক ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছিল এবং হত্যার আগে সুজানকে যৌন নিপীড়নও করা হয়েছিল।

সেই সময়ের ১৭ বছর বয়সী পেরি প্রথমবারের মতো পুলিশের নজরে এসেছিলেন হত্যাকাণ্ডটির এক সপ্তাহ পর। কারণ তিনি ঘটনাস্থলের কাছে একটি রক্তমাখা ছুরি পাওয়ার কথা বলেছিলেন।

পেরি একই সঙ্গে গ্রিস ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিক। সাত বছর আগে তিনি অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করে গ্রিসে চলে যান। কিন্তু এর মধ্যেই তদন্তে তাঁর নামটি সামনে চলে আসে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি হত্যা এবং একটি ধর্ষণের অভিযোগে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে।

গ্রিসের আইন অনুযায়ী, হত্যার অভিযোগ ২০ বছরের মধ্যে আনতে না পারলে গ্রেপ্তার সম্ভব নয়। ধারণা করা হয়, এ কারণেই গ্রিসে বসবাস করে আসছিলেন পেরি। যদিও পরবর্তীতে কোনো কারণে ইতালিতে পা রেখেছিলেন তিনি।

পেরির গ্রেপ্তারের পর নিহত দুই নারীর পরিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সুজান এবং সুসানের এই নৃশংস মৃত্যুর সঙ্গে আমরা এখনো মানিয়ে নিতে পারিনি। এ ঘটনা আমাদের জীবনকে চিরতরে বদলে দিয়েছে।’

বিবৃতিতে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের ধৈর্য এবং কখনো হাল না ছাড়ার জন্য আমরা শুধু বলতে পারি, ধন্যবাদ।’

ভিক্টোরিয়া পুলিশের কমিশনার শেন প্যাটন এই হত্যাকাণ্ডকে ‘চরম নিষ্ঠুর এবং ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের সমাজের হৃদয়ে আঘাত করেছিল। কারণ নিজের ঘরে নারীদের নিরাপদ অনুভব করার কথা ছিল।’

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বহু বই, পডকাস্ট এবং পুলিশের তদন্ত হয়েছে। ২০১৭ সালে এই মামলাটির তথ্যের জন্য ভিক্টোরিয়া পুলিশ ১০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

পেরি কুরুম্বলিসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হলে এবং প্রমাণিত হলে এটি হবে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত হত্যার বিচার। পুলিশ এবং নিহতদের পরিবার আশা করছে, এত বছর পর হলেও সুবিচার নিশ্চিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত