Ajker Patrika

বড় পরিবার ভেঙে যাওয়ায় আর্থিক চাপে পড়ছে মানুষ, ঝুঁকিতে বয়স্করা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ২৭
Thumbnail image

বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের সেবাযত্ন নিতে পারে। দাদা-দাদি, নানা-নানি, ফুপু-খালা, চাচা-মামারা ছোট শিশুর দেখাশোনার ক্ষেত্রে মা-বাবার সহায়ক হতে পারেন। মা-বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেলে সন্তানদের পাশাপাশি ভাই-বোনের সন্তানেরাও তাঁদের যত্ন নিতে সহায়তা করতে পারে। স্বজনদের মধ্যে এ ধরনের পারস্পরিক সহায়তার ঐতিহ্য কয়েক শ বর্ষের।

তবে নতুন এক গবেষণা বলছে, মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সন্তান গ্রহণের পরিমাণ কমে আসায় বিশ্বজুড়ে বর্ধিত পরিবারের আকার ক্রমে ছোট হয়ে আসছে।

আন্তর্জাতিক জনমিতির ডেটা ব্যবহার করে গবেষকেরা বিশ্বজুড়ে প্রত্যেক দেশে পরিবারের গঠন বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের অনুমান, ২০৯৫ সাল নাগাদ ৬৫ বছর বয়সী একজন নারীর মাত্র ২৫ জন জীবিত স্বজন থাকবে। অর্থাৎ ১৯৫০ সালে যেখানে তাঁর ৪১ জন জীবিত স্বজন থাকত, সেই সংখ্যা পাঁচ ভাগের দুই ভাগই কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এসব অনুমান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে আগের তুলনায় এখন আরও বেশিসংখ্যক মানুষের ওপর পরিবারের বৃদ্ধ সদস্য ও শিশুদের দেখাশোনার চাপ বাড়বে। এ গবেষণায় প্রাতিষ্ঠানিক সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের প্রোসিডিংস সাময়িকীতে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনমিতি বিশারদ শা জিয়াং বলেন, ‘কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা বা অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তাব্যবস্থার অভাব রয়েছে এমন অনেক দেশে পারিবারিক কাঠামোর পরিবর্তন বোঝাটা জরুরি। এর পরিবর্তে সমাজ বয়স্কদের মতো সবচেয়ে নাজুক জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য প্রায়শই পরিবারের ওপর নির্ভর করে।’

জিয়াং বলেন, এই গবেষণা থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে: বয়স্কদের সহায়তার জন্য ভবিষ্যতে পরিবারে যথেষ্ট সদস্য থাকবে কি না বা আমরা কি স্বজনদের দেখাশোনার জন্য পরিবারের ওপর খুব বেশি চাপ দিচ্ছি?

গবেষকেরা এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। জনমিতিবিদেরা বিশেষ করে, জনমিতি পরিবর্তন সম্পর্কিত তথ্য: উচ্চ জন্মহার ও মৃত্যুহারের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে দেখেছেন।

জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চ ইন রোস্টকের সমাজবিজ্ঞানী এবং গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক দিয়েগো আলবুরেজ-গুতেরেজ বলেন, অনেক গবেষণায় বিশ্বে বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির তথ্য উঠে এলেও, এ ধরনের পরিবর্তন কীভাবে বর্ধিত পরিবারকে এবং এগুলোর গঠনকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে আলোচনা হয়নি।

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে আলবুরেজ-গুতেরেজ এবং সহকর্মীরা পরিবারের গঠন ও স্বজনদের নেটওয়ার্ক নিয়ে তিনটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। প্রথমত, সময়ের সঙ্গে বর্ধিত পরিবারের আকার ক্রমে ছোট হতে থাকবে। দ্বিতীয়ত, পরিবারের কাঠামোও সংকীর্ণ হয়ে আসবে। আলবুরেজ-গুতেরেজ বলেন, ‘একই প্রজন্মের মধ্যে কাছাকাছি বয়সের স্বজনের সংখ্যা কমে আসবে। অর্থাৎ মানুষের ভাই-বোন এবং তুতো ভাই-বোনের চেয়ে দাদা-দাদি, নানা-নানির সম্পর্ক এমন বয়স্ক স্বজনের সংখ্যা বেশি থাকবে। তৃতীয়ত, বেশি বয়সে সন্তান নেওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে বয়সের ব্যবধান বেড়ে যাবে।

পেনসিলভানিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী এবং জনমিতিবিদ অ্যাশটন ভারডারি বলেন, পাঁচ বছর আগেও বৈশ্বিকভাবে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব ছিল না। আগের জনমিতিবিষয়ক গবেষণায় একক পরিবারের (মা-বাবা ও সন্তান নিয়ে গঠিত পরিবার) ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ পরিবারের ভিত্তিতে তথ্য পাওয়া সহজ এবং এর পরিবর্তনগুলোও সহজেই নির্ণয় করা যায়।

ভারডারি বলেন, তুতো ভাই-বোন, খালা, ফুফু, চাচা, মামা এবং অন্যান্য স্বজন নিয়ে গঠিত বর্ধিত পরিবারের সদস্যসংখ্যা পরিবর্তনের ধারা নির্ধারণের পদ্ধতিগুলো গত দশকে ব্যাপক উন্নত হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলোর একটি চমৎকার প্রয়োগ।

গবেষণাটিতে স্বাস্থ্যসেবায় সম্ভাব্য কঠিন সমস্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গবেষণার ফলাফল বলছে, লাতিন আমেরিকা ও সাব-সাহারা আফ্রিকার মতো যেসব অঞ্চলে জন্ম ও মৃত্যুর হার কমতে শুরু করেছে, সেসব দেশে বর্ধিত পরিবার অতি দ্রুত সংকুচিত হতে পারে। এই দেশগুলোর বেশির ভাগেরই বর্তমানে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীর যত্ন নেওয়ার ব্যবস্থা নেই এবং এই দেশগুলো সম্ভবত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাবে বলে উল্লেখ করেন আলবুরেজ-গুতেরেজ।

চিকিৎসা, আর্থিক এবং মানসিক বোঝা যা আগে পরিবারের একাধিক সদস্যের ওপর বণ্টিত হতো, এখন তা একক সদস্যের ঘাড়ে চাপবে। এটি নিম্ন আয়ের এবং সাময়িকভাবে আর্থিক অনটনে থাকা ব্যক্তিদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।

ভারডারি বলেন, জন্ম-মৃত্যুর হার কম এমন কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। চীনে পরিবারভিত্তিক যত্ন এখনো আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। তবে দেশটিতে এখন বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু ওই তুলনায় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নেই। পরিবারের সদস্যরা তাই প্রায়ই একই সঙ্গে নিজের সন্তান এবং মা-বাবার দেখাশোনা করার চাপে পড়ে যান। অনেকের ওপর অর্থনৈতিক চাপও বাড়ছে, কারণ তাঁকে পরিবারের বয়স্কদের দেখাশোনার ব্যয় বহন করতে হয়, সেই সঙ্গে সন্তান লালন-পালনের ব্য়য় সংকুলানও করতে হয়।

পরিবারকে বেশি সময় দেওয়ার জন্য অনেকে বিশেষ করে নারীরা কর্মক্ষেত্র থেকে ছিটকে পড়েন। বর্ধিত পরিবারের আকার ছোট হয়ে আসা মানে পরিবারের কোনো কোনো সদস্য সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন এবং অনেকে একাকিত্বেও ভুগতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত