Ajker Patrika

শহর দখল করে চারদিকে তোলা হলো প্রাচীর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দখলকৃত শহরের স্যাটেলাইট মানচিত্র। ছবি: মাক্সার  টেকনোলজিস
দখলকৃত শহরের স্যাটেলাইট মানচিত্র। ছবি: মাক্সার টেকনোলজিস

সুদানের এল-ফাশের শহরে একটি বিশাল মাটির প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, শহরটির প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দাকে ভেতরে আটকে ফেলার উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব (এইচআরএল) দেখতে পেয়েছে, গত মে মাস থেকে আধা-সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) শহরের চারপাশে ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেশ উঁচু মাটির প্রাচীর নির্মাণ করেছে।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ এল-ফাশের হলো দারফুরে সুদানের সেনাবাহিনীর শেষ প্রধান ঘাঁটি। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে আরএসএফ-এর সঙ্গে সুদানের সেনাবাহিনীর যুদ্ধ চলছে। সুদানের চিকিৎসকদের একটি নেটওয়ার্ক বিবিসিকে জানিয়েছে, আরএসএফ সেখানে তাদের আক্রমণ আরও তীব্র করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে।

মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান বিবিসিকে বলেন, শুক্রবার শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি আবাসিক এলাকায় গোলাবর্ষণে ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৫৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন নারী।

তিনি এই হামলাকে ‘পরিকল্পিত’ এবং ‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেন। ডা. ফয়সাল আরও বলেন, ‘তিন দিন আগে তারা এল-ফাশেরের অন্যতম বড় হাসপাতালকে লক্ষ্যবস্তু করে, যার ফলে রোগী ও চিকিৎসা কর্মীরা গণহারে হতাহত হন।’

বিবিসি ভ্যারিফাই জানিয়েছে, এই সংঘর্ষের উভয় পক্ষই প্রতিরক্ষার জন্য এই ধরনের মাটির প্রাচীর ব্যবহার করে আসছে। তবে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচআরএল-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আরএসএফ এল-ফাশেরের চারপাশে আক্ষরিক অর্থেই একটি কিল্লা নির্মাণ করছে।

এইচআরএল এই মাটির প্রাচীর নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায় চিহ্নিত করেছে যেমন:

সবুজ রেখা: ৯ কিলোমিটার প্রাচীর ১৪ থেকে ২৪ জুলাই, ২০২৫ এর মধ্যে নির্মিত হয়েছে।

হলুদ রেখা: ৬ কিলোমিটার প্রাচীর ৩ থেকে ১৯ আগস্ট, ২০২৫ এর মধ্যে নির্মিত হয়েছে।

নীল রেখা: ৭ কিলোমিটার প্রাচীর ৫ মে থেকে ১২ জুলাই, ২০২৫ এর মধ্যে নির্মিত হয়েছে।

লাল রেখা: ৯ কিলোমিটার প্রাচীরের নির্মাণকাজ ১৩ থেকে ২৭ আগস্ট, ২০২৫ এর মধ্যে চলছে।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি মানচিত্র। ছবি: ইয়েল ল্যাব
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি মানচিত্র। ছবি: ইয়েল ল্যাব

এইচআরএল-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অবকাঠামো অবরোধের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে এবং কারা শহরে প্রবেশ বা শহর থেকে বের হতে পারবে তা নিয়ন্ত্রণ করছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দারফুরে আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী আরব মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অনারব জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ উঠেছে। ডা. হাসান বলেন, ‘কিছু বেসামরিক নাগরিক শহর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে আরএসএফ বাহিনীর হাতে তারা লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে এবং নিহত হচ্ছে।’

এই মাটির প্রাচীরের কারণে বেসামরিক নাগরিকদের পালানো এবং খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মানবিক সংস্থাগুলো কয়েক মাস ধরে এল-ফাশেরে প্রবেশ করতে পারছে না এবং অবশিষ্ট বেসামরিক নাগরিকেরা অবিরাম গোলাবর্ষণ, খাদ্য সংকট এবং চিকিৎসা সেবা পেতে অসুবিধায় ভুগছেন।

এল-ফাশেরের পতনের অর্থ হবে দারফুর অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরএসএফ-এর হাতে চলে যাওয়া। পর্যবেক্ষকেরা সতর্ক করেছেন, এমন পরিস্থিতি দেশের বিভাজনের দিকে নিয়ে যেতে পারে, কারণ উভয় যুদ্ধরত পক্ষই নিজেদের সরকার গঠন করেছে।

মাটির প্রাচীর নির্মাণের কাজ এখনো চলছে। গবেষকেরা ২২ কিলোমিটারের একটি প্রাচীর দেখেছেন, যা শহরের পশ্চিম থেকে উত্তর পর্যন্ত একটি অর্ধবৃত্তাকার আকৃতির। আরেকটি প্রায় ৯ কিলোমিটারের প্রাচীর শহরের পূর্ব দিকের একটি প্রধান সড়ক থেকে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, এক শ্রমিক নিহত

সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন কারাগারে

পাকিস্তানকে সমর্থন করায় ভারত এসসিওর সদস্যপদ আটকে দেয়: আজারবাইজান

সোনার দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে

দেশে চালু হলো ৫-জি নেটওয়ার্ক, কী কী সুবিধা মিলবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত