Ajker Patrika

আলট্রাসাউন্ডে অস্ত্রোপচারমুক্ত ক্যানসার চিকিৎসার সম্ভাবনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ২৪
অস্ত্রোপচার ছাড়াই ব্যথামুক্ত ক্যানসার চিকিৎসার সম্ভাবনা এনেছে আলট্রাসাউন্ড। ছবি: সংগৃহীত
অস্ত্রোপচার ছাড়াই ব্যথামুক্ত ক্যানসার চিকিৎসার সম্ভাবনা এনেছে আলট্রাসাউন্ড। ছবি: সংগৃহীত

শরীরের ভেতরের অংশ পরীক্ষা করতে দীর্ঘদিন ধরে আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে আসছেন চিকিৎসকেরা। এখন এই আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে ক্যানসারের চিকিৎসাও সম্ভব হবে। এই হাই ফ্রিকোয়েন্সি শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে এবার ক্যানসার চিকিৎসার নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, এই নতুন সম্ভাবনার ধারক যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। বিশের দশকের গোড়ার দিকে ঝেন সু যখন পিএইচডির ছাত্রী ছিলেন, সে সময় এ গবেষণা শুরু করেন তিনি। গবেষণায় সু এমন একটা উপায় খুঁজছিলেন, যার মাধ্যমে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার ছাড়াই রোগাক্রান্ত টিস্যু ধ্বংস ও অপসারণ করতে পারবেন। হাই ফ্রিকোয়েন্সি শব্দতরঙ্গ অর্থাৎ আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে টিস্যু ভেঙে ফেলার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ঝেন সু প্রথমে এ পরীক্ষা চালান শূকরের হৃৎপিণ্ডের ওপর।

আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত
আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত আলট্রাসাউন্ড মানুষের শ্রবণযোগ্য হওয়ার কথা নয়, কিন্তু সু তাঁর পরীক্ষায় এত শক্তিশালী অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করেছিলেন যে, গবেষণাগারে থাকা অন্য গবেষকেরা শব্দ নিয়ে অভিযোগ দিতে থাকেন। ঝেন সু বলেন, তখন পর্যন্ত কোনো কাজ হচ্ছিল না। তাই তিনি সহকর্মীদের শান্ত করতে আলট্রাসাউন্ড পালসের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যা শব্দের মাত্রা মানুষের শ্রবণসীমার বাইরে নিয়ে যাবে।

অপ্রত্যাশিতভাবে প্রতি সেকেন্ডে পালসের সংখ্যা বাড়ানো কেবল সহকর্মীদের বিরক্তিই কমাল না, বরং তিনি যে পদ্ধতিতে চেষ্টা করেছিলেন, তারচেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হলো। তিনি দেখতে পেলেন, আলট্রাসাউন্ড প্রয়োগের এক মিনিটের মধ্যে শূকরের হৃৎপিণ্ডের টিস্যুতে একটি গর্ত তৈরি হলো।

সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অধ্যাপক সু বলেন, ‘আমি ভাবলাম, আমি স্বপ্ন দেখছি।’

সুর এই আবিষ্কার ‘হিস্টোট্রিপসি’ নামে পরিচিত। এই আবিষ্কার কয়েক দশক পরে এসে আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে উন্নত ক্যানসার চিকিৎসার নতুন যুগের সূচনা করছে। অস্ত্রোপচার ছাড়া শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে ক্যানসার রোগীদের শরীর থেকে টিউমার নির্মূলের সুযোগ দিচ্ছে।

হিস্টোট্রিপসি ২০২৩ সালের অক্টোবরে লিভার টিউমারের চিকিৎসার জন্য মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদন পায়। পরের বছর এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য গঠিত কোম্পানি হিস্টোসোনিক্সের অর্থায়নে একটি ছোট গবেষণায় দেখা যায়, পদ্ধতিটি ৯৫ শতাংশ লিভার টিউমারের বিরুদ্ধে প্রযুক্তিগতভাবে সফল। যদিও পেটে ব্যথা থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, তবুও গবেষণায় দেখা গেছে, জটিলতাগুলো বিরল এবং পদ্ধতিটি তুলনামূলক নিরাপদ।

গত জুন মাসে প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে হিস্টোট্রিপসিকে অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। ক্লিনিক্যাল চাহিদা পূরণের জন্য দেশটির ইনোভেশন ডিভাইস অ্যাকসেস পাথওয়ের পাইলট পর্বের অধীনে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) চিকিৎসা হিসেবে সহজলভ্য করা হয়।

স্পেনের রামন ই কাজাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চের গবেষক সুলি আর্ল বলেন, মানুষ মনে করে আলট্রাসাউন্ড কেবল ইমেজিং বা শরীরের ভেতরের ছবি তোলার কাজ করে। আর্ল জানান, গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, এটি কেবল টিউমারই ধ্বংস করতে পারে না, বরং মেটাস্ট্যাটিক রোগ (শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসার) নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অন্যান্য ক্যানসার চিকিৎসার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতেও সক্ষম, তা-ও রোগীকে অস্ত্রোপচারের টেবিলে না নিয়ে।

আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত
আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত

আলট্রাসাউন্ড যেভাবে কাজ করে

সাধারণ সোনোগ্রামের মতো আলট্রাসাউন্ড হ্যান্ডহেল্ড ট্রান্সডিউসারের মাধ্যমে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি শব্দতরঙ্গ পাঠায় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলোকে চিত্রে রূপান্তর করে। ক্যানসার চিকিৎসায় আলট্রাসাউন্ড তরঙ্গগুলোকে টিউমারের একটি ছোট অংশের ওপর কেন্দ্রীভূত করা হয় সেটিকে ধ্বংস করার জন্য।

এই পালসগুলো ছোট ছোট মাইক্রোবাবল তৈরি করে, যা কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডের মধ্যে প্রসারিত হয় এবং তারপর ভেঙে যায়। এই প্রক্রিয়ায় তারা টিউমারের টিস্যুকেও ভেঙে ফেলে। লিভার ক্যানসারে ট্রান্সডিউসার রোবটিক আর্ম দিয়ে টিউমারের এলাকা চিহ্নিত করে কাজ করা হয়।

অধ্যাপক সু জানান, এ কাজে ব্যবহৃত হিস্টোট্রিপসি ডিভাইসগুলো হয় কালারিং পেনের ডগার সাইজের। পুরো প্রক্রিয়াটি এত ছোট যে, রোগীরা ওই দিনই বাড়ি ফিরতে পারেন। হিস্টোসোনিক্সের তথ্য অনুসারে, বেশির ভাগ প্রক্রিয়া এক থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

হিস্টোট্রিপসির সুবিধাগুলো আশা জাগালেও এই চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে এখনো কিছু প্রশ্ন রয়েছে। চিকিৎসার পর আবারও ক্যানসার হতে পারে কি না, এ নিয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে কিছু গবেষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, হিস্টোট্রিপসির মাধ্যমে টিউমার ভাঙার সময় শরীরের ভেতরে ভেঙে যাওয়ায় তা নতুন ক্যানসার কোষের জন্ম দিতে পারে। আর এগুলো শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে প্রাণীদের ওপর করা গবেষণাগুলোতে এখন পর্যন্ত সে ধরনের আশঙ্কার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

গবেষণা বলছে, হিস্টোট্রিপসি সব ধরনের ক্যানসারের জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। হাড় আলট্রাসাউন্ডকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারে, ফলে নির্দিষ্ট স্থানে থাকা টিউমার ধ্বংস করা সম্ভব নাও হতে পারে। এ ছাড়া ফুসফুসের মতো গ্যাসযুক্ত অঙ্গের ক্ষেত্রে হিস্টোট্রিপসি ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে, যা আশপাশের স্বাভাবিক টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে হিস্টোসোনিক্স বর্তমানে কিডনি ও প্যানক্রিয়াসের টিউমারের সম্ভাব্য চিকিৎসা হিসেবে হিস্টোট্রিপসি নিয়ে গবেষণা করছে।

তবে ক্যানসার চিকিৎসায় হিস্টোট্রিপসি আলট্রাসাউন্ডের প্রথম ব্যবহার নয়। টিউমারের ওপর প্রয়োগের একটি পুরোনো ও প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি হাই-ইনটেনসিটি ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড (এইচআইএফইই)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড ক্যানসার ইমিউনোথেরাপি সেন্টারের সহপরিচালক রিচার্ড প্রাইস বলেন, টিউমারের ওপর আলট্রাসাউন্ডের একটি কেন্দ্রীভূত বিস্ফোরণের মাধ্যমে তাপ উৎপন্ন করা হয়, যা টিস্যুটিকে মূলত ‘রান্না’ করে ফেলে।

প্রাইস আরও বলেন, ‘আপনি যদি একটি ম্যাগনিফাইং গ্লাস হাতে নিয়ে রোদের দিনে একটি শুকনো পাতার ওপর ধরেন, তাহলে কিন্তু পাতাটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব। এইচআইএফইউ মূলত একই কাজ করে, তবে ক্যানসারের টিস্যুর ওপর তাপ তৈরির জন্য এটি শব্দশক্তি ব্যবহার করে।’

অনকোলজি বা ক্যানসার চিকিৎসাবিজ্ঞানে অস্ত্রোপচার ছাড়াই প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা করতে সবচেয়ে বেশি পরিচিত চিকিৎসাপদ্ধতি এইচআইএফইউ। ২০২৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি অস্ত্রোপচারের মতোই কার্যকর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীরা ঘুম থেকে ওঠার পর কিছুটা ব্যথা ও মূত্রসংক্রান্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেন, তবে সাধারণত অস্ত্রোপচারের মতো নিবিড় চিকিৎসার তুলনায় আরোগ্য লাভ দ্রুত হয়।

হিস্টোট্রিপসি ও এইচআইএফইউ থেরাপি দুটিই সাধারণত জেনারেল অ্যানেসথেসিয়ার অধীনে করা হয়, যাতে চিকিৎসার সময় রোগীরা নড়াচড়া না করেন এবং এর ফলে আশপাশের অঙ্গ বা টিস্যুর দুর্ঘটনাক্রমে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়। তবে হিস্টোট্রিপসিতে আশপাশের সুস্থ টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে, এমন তাপ উৎপন্ন হয় না।

আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত
আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত

তবে এইচআইএফইউ দিয়ে সব ধরনের ক্যানসার চিকিৎসা সম্ভব নয়। যাঁদের প্রোস্টেট ক্যানসার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে গেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সাধারণত এটি কাজ করে না। তবুও বিভিন্ন দেশের গবেষকেরা এটিকে স্তন ক্যানসারের মতো কিছু কিছু ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহার করে দেখছেন।

গবেষকেরা বলছেন, ক্যানসারের অন্যান্য বিদ্যমান চিকিৎসার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করলে আলট্রাসাউন্ডের সফলতার মাত্রা বাড়তে পারে।

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিচার্ড প্রাইস সতর্ক করে বলেন, আলট্রাসাউন্ড নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো তুলনামূলকভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ নিয়ে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন।

তবে বর্তমানে ব্যবহৃত আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতিগুলো অনকোলজিতে (ক্যানসার চিকিৎসায়) এক নতুন যুগ নিয়ে আসছে। অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের মতো কার্যকর কিন্তু মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত চিকিৎসাগুলোকে প্রতিস্থাপন ও সেগুলোর উন্নতি ঘটানো এর লক্ষ্য।

ঝেন সু বলেন, ক্যানসার খুবই মারাত্মক। কিন্তু যা এটিকে আরও খারাপ করে তোলে, তা হলো ক্যানসারের চিকিৎসা।

সুর মতে, আলট্রাসাউন্ড ক্যানসারের ‘জাদুকরী নিরাময় পদ্ধতি’ নয়। যেকোনো চিকিৎসার মতোই এরও খারাপ দিক ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে যেমন তিনি কয়েক দশক আগে তাঁর গবেষণাগারের সহকর্মীদের বিরক্তিকর শব্দ থেকে বাঁচিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই সু আশা করেন, তাঁর আবিষ্কার ও অন্য বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার আগামী বছরগুলোতে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় কষ্ট থেকে রেহাই দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতিতে দিনভর দুর্ভোগ

  • ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি।
  • আজ থেকে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা আসতে পারে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

এদিকে দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা রয়েছে আন্দোলনকারীদের। তবে কঠোর এই কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে গতকাল রাতে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতির কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়লেও দাবি আদায়ে দিনভর কঠোর অবস্থানে ছিলেন তাঁরা। কর্মবিরতির সময় হাসপাতালের জরুরি সেবা চালু থাকলেও অনেককে সেবা না পেয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।

আন্দোলনরতরা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিনেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। এর আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে দাবি আদায়ে এবার কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। এসব সেবাপ্রার্থীর বড় অংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসে। টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের গতকালের কর্মবিরতির কারণে অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে চলে যায়।

বিভিন্ন স্থানে দিনভর ভোগান্তি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সেবা বন্ধ রেখে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

কর্মবিরতি চলাকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ফার্মেসিতে বিনা মূল্যে সরকারি ওষুধ বিতরণ, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামসহ রোগনির্ণয়ের বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এ সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সেবাকেন্দ্রগুলোয় কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলছিল। তবে হাসপাতালের অন্যান্য সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। চমেক হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের একজন কর্মচারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কর্মবিরতির ফলে এক্স-রে করা সাময়িক বন্ধ ছিল।

একই দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও নার্সদের মতো তাঁদেরও চাকরিগত মর্যাদা দশম গ্রেডে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদরে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ বিতরণ বন্ধ ছিল।

আবদুল্লাহ নামের এক রোগী বলেন, ‘সিটি স্ক্যান করানোর জন্য এসেছিলাম। এসে শুনি, কর্মবিরতি দিয়েছে। এ জন্য ফিরে যাচ্ছি।’

উল্লাপাড়ার আনিসুর নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘কোমরে ব্যথা। তাই ডাক্তারের কাছে এসেছি। এসে শুনি, দুপুরের আগে চিকিৎসা হবে না।’

একই দাবিতে রাজবাড়ীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। কর্মবিরতি কর্মসূচিতে দাবি আদায় না হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে হাসপাতাল শাটডাউন ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শৌচাগার সুবিধা: হাসপাতালে বিড়ম্বনায় প্রতিবন্ধীরা

  • ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়।
  • শৌচাগারগুলোর দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, প্রবেশে র‍্যাম্প সুবিধা নেই।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালে। আজকের পত্রিকা
ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালে। আজকের পত্রিকা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র। কারণ হাসপাতালে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগার ১ শতাংশেরও কম।

হাসপাতাল পরিচালনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার একটি হাসপাতালের মৌলিক পরিকাঠামোর অংশ হওয়া উচিত। তবে দেশে এ ধরনের সুবিধার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঘাটতি বেশি। ফলে রোগীরা শুধু ভোগান্তিতেই পড়ছেন না; বরং গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিরও সম্মুখীন হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় শৌচাগার ব্যবহার করতে না পারার ফলে কিডনি জটিলতা, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (মূত্রনালি সংক্রমণ) ও পানিশূন্যতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের প্লস ওয়ান সাময়িকীতে বাংলাদেশে হাসপাতালের শৌচাগার নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়। গবেষণার শিরোনাম ‘ইনঅ্যাডিক্যুইট স্যানিটেশন ইন হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ: অ্যা কম্প্রিহেনসিভ ইভ্যালুয়েশন অব টয়লেটস ইন মেজর হাসপাতাল ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’। গবেষণাটি করেছেন অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের নয়জন গবেষক।

গবেষণায় রাজধানীর ১০টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪৫৯টি শৌচাগার পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ১০টি, যা ১ শতাংশেরও কম বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। প্রায় ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী বা চলাফেরায় সীমাবদ্ধ রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়। অধিকাংশ শৌচাগারে দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, গ্র্যাব-বার বা হাতল নেই এবং প্রবেশপথে র‍্যাম্পের সুবিধাও নেই। ফলে প্রতিবন্ধী রোগীরা শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি এবং নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন।

দেশে ক্যানসার রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘুরে এখানকার দুটি ভবনের কোথাও প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার পাওয়া যায়নি।

একইভাবে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য সরকারের বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তিনটি ভবনের কোথাও নেই প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। তাঁদের জন্য আলাদা শৌচাগার না থাকার কথা স্বীকার করেন এই হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে ভর্তি রোগীরা বেডসাইড টয়লেট ব্যবহার করেন। বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য শৌচাগার, হুইলচেয়ার বা শয্যাসহ ওঠানামার জন্য প্রয়োজনীয় র‍্যাম্প রাখা প্রয়োজন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার ২-৩ গুণ রোগী ভর্তি থাকেন। দৈনিক বহির্বিভাগে রোগী আসেন সক্ষমতার ৪-৫ গুণ। স্বাভাবিক রোগীদের জন্য উন্নত শৌচাগারের ব্যবস্থাপনা নেই। প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্যও আলাদা শৌচাগার রাখা যায়নি। তবে আমরা এ বিষয়ে পরিকল্পনা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৬৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৬৫

দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন আক্রান্ত ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এ নিয়ে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩৮৬ জনের মৃত্যু হলো। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৫ হাজার ৫৭৭। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।

আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানানো হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা পুরুষ। তাঁদে বয়স যথাক্রমে ৫৫ ও ৬৫ বছর।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নভেম্বর মাসে। ওই মাসে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে অক্টোবর মাসে ৮০ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৫, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১২৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৮৮ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৫, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩০, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) তিন ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এইডস দিবসের আলোচনা: চলতি বছর দেশে সর্বোচ্চ এইডস রোগী শনাক্ত

  • বছর বছর রোগী শনাক্ত বাড়ছেই।
  • এ বছর এখন পর্যন্ত মৃত্যু ২১৯ জনের।
  • শনাক্তের ১১ শতাংশের বেশি রোহিঙ্গা।
  • শনাক্ত ছাড়া অনেকে, শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ০১
এইডস দিবসের আলোচনা: চলতি বছর দেশে সর্বোচ্চ এইডস রোগী শনাক্ত

বাংলাদেশে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯১ জন এইডস ভাইরাসে (এইচআইভি) আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে। দেশে প্রথম চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে বছরওয়ারি হিসাবে এটাই সর্বোচ্চ এইচআইভি সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা। একই সময়ে দেশে এইডসে মারা গেছে ২১৯ জন। আজ সোমবার বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল শাখা আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ বছরের বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘সব বাধা দূর করি, এইডসমুক্ত সমাজ গড়ি’।

কোনো ব্যক্তি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে একপর্যায়ে তার এইডস হতে পারে। মারাত্মক এই ভাইরাস ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলে। কোনো রোগের বিরুদ্ধেই শরীর লড়তে পারে না। সেই অবস্থাকে বলা হয় এইডস রোগ। এইচআইভির বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর প্রতিষেধক দীর্ঘদিনের চেষ্টায়ও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। প্রতিরোধই এই রোগের বিস্তার ঠেকানোর প্রধান অস্ত্র।

সরকারের তথ্য বলছে, এ বছরের প্রায় ২ হাজার শনাক্তের মধ্যে ২১৭ জনই মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। দেশে বর্তমানে এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মোট সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৮০। দেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর প্রতিবছর এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। দু-এক বছর আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও সামগ্রিকভাবে দিনে দিনে বেড়েছে।

চলতি বছরের আক্রান্তের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরে দেশে এইচআইভি শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ৮১ শতাংশই পুরুষ। এ ছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির অর্ধেক পুরুষ সমকামী ও পুরুষ যৌনকর্মী।

প্রসঙ্গত, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ শারীরিক মিলন, চিকিৎসার সময় এই ভাইরাসে সংক্রমিত রক্ত নেওয়ার মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। অন্যের ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা সেলুনের সংক্রমিত ক্ষুর-কাঁচির মাধ্যমেও ছড়ায় এই ভাইরাস।

অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এইডস/এসটিডি কর্মসূচি) ডা. মো. খায়রুজ্জামান বলেন, ‘দেশে অনুমিত এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৮০। এর ৮১.৮৮ শতাংশকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় আছে। আর যারা চিকিৎসা নিচ্ছে, তাদের ৯১ শতাংশের শরীরে ভাইরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে।’

ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, দেশে এ পর্যন্ত এইচআইভি শনাক্ত মানুষের মধ্যে ৮ হাজার ৩০০ জন চিকিৎসাধীন। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৬৬৬ জন।

সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের বছর

বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। এরপর প্রতিবছর এই ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। ২০২০ সালে করোনার ব্যাপক সংক্রমণের বছর বাদ দিলে গত ১০ বছরে এইচআইভি শনাক্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত বছর শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৮। এ বছর সংখ্যাটি ১ হাজার ৮৯১ জন; যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ৭২৯ জন, ২০২২ সালে ৯৪৭ জন, ২০২৩ সালে ১ হাজার ২৭৬ জন এবং ২০২৪ সালে ১ হাজার ৪৩৮ জন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে যথাক্রমে ২০৫, ২৩২, ২৬৬ এবং ১৯৫ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর শনাক্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৬২.৬১ শতাংশ) হচ্ছে ২৫-৪৯ বছর বয়সের। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৪ শতাংশ পুরুষ সমকামী, এরপর ১৪ শতাংশ পুরুষ যৌনকর্মী, ১২ শতাংশ প্রবাসী, ১১ শতাংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, মাদক সেবনকারী ৬ শতাংশ, তৃতীয় লিঙ্গ ও নারী যৌনকর্মী ১ শতাংশ করে। এ ছাড়া অন্যান্য ১১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৬৫০ জন ভাইরাস বাহক শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭৬ জন ও খুলনা বিভাগে ২০৮ জন।

আলোচনা সভার প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, দেশে এইডস রোগের প্রকৃত পরিস্থিতি কী, যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য—এসব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখন ১৭ হাজারের বেশি এইচআইভির বাহক রয়েছে।

মহাপরিচালক বলেন, ‘শনাক্তের বাইরে এখনো অনেক রোগী রয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে আমাদের খুব সতর্ক হতে হবে। কত রোগী শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছে, তা জানতে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় আরও জোর দিতে হবে।’

বেশির ভাগ এইডস রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাঁরা নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ওষুধ নিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনের মাধ্যমেই কেবল এইডসের ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। তবে দেশে শুধু সরকারি পর্যায়েই এইচআইভির চিকিৎসা রয়েছে। ২৭টি সরকারি কেন্দ্রে শনাক্তকরণ এবং ১৩টি কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ভর্তি থেকে চিকিৎসার সুযোগ আছে কেবল রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত