Ajker Patrika

এইডস দিবসের আলোচনা: চলতি বছর দেশে সর্বোচ্চ এইডস রোগী শনাক্ত

  • বছর বছর রোগী শনাক্ত বাড়ছেই।
  • এ বছর এখন পর্যন্ত মৃত্যু ২১৯ জনের।
  • শনাক্তের ১১ শতাংশের বেশি রোহিঙ্গা।
  • শনাক্ত ছাড়া অনেকে, শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ০১
এইডস দিবসের আলোচনা: চলতি বছর দেশে সর্বোচ্চ এইডস রোগী শনাক্ত

বাংলাদেশে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯১ জন এইডস ভাইরাসে (এইচআইভি) আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে। দেশে প্রথম চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে বছরওয়ারি হিসাবে এটাই সর্বোচ্চ এইচআইভি সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা। একই সময়ে দেশে এইডসে মারা গেছে ২১৯ জন। আজ সোমবার বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল শাখা আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ বছরের বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘সব বাধা দূর করি, এইডসমুক্ত সমাজ গড়ি’।

কোনো ব্যক্তি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে একপর্যায়ে তার এইডস হতে পারে। মারাত্মক এই ভাইরাস ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলে। কোনো রোগের বিরুদ্ধেই শরীর লড়তে পারে না। সেই অবস্থাকে বলা হয় এইডস রোগ। এইচআইভির বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর প্রতিষেধক দীর্ঘদিনের চেষ্টায়ও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। প্রতিরোধই এই রোগের বিস্তার ঠেকানোর প্রধান অস্ত্র।

সরকারের তথ্য বলছে, এ বছরের প্রায় ২ হাজার শনাক্তের মধ্যে ২১৭ জনই মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। দেশে বর্তমানে এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মোট সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৮০। দেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর প্রতিবছর এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। দু-এক বছর আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও সামগ্রিকভাবে দিনে দিনে বেড়েছে।

চলতি বছরের আক্রান্তের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরে দেশে এইচআইভি শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ৮১ শতাংশই পুরুষ। এ ছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির অর্ধেক পুরুষ সমকামী ও পুরুষ যৌনকর্মী।

প্রসঙ্গত, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ শারীরিক মিলন, চিকিৎসার সময় এই ভাইরাসে সংক্রমিত রক্ত নেওয়ার মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। অন্যের ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা সেলুনের সংক্রমিত ক্ষুর-কাঁচির মাধ্যমেও ছড়ায় এই ভাইরাস।

অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এইডস/এসটিডি কর্মসূচি) ডা. মো. খায়রুজ্জামান বলেন, ‘দেশে অনুমিত এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৮০। এর ৮১.৮৮ শতাংশকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় আছে। আর যারা চিকিৎসা নিচ্ছে, তাদের ৯১ শতাংশের শরীরে ভাইরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে।’

ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, দেশে এ পর্যন্ত এইচআইভি শনাক্ত মানুষের মধ্যে ৮ হাজার ৩০০ জন চিকিৎসাধীন। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৬৬৬ জন।

সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের বছর

বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। এরপর প্রতিবছর এই ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। ২০২০ সালে করোনার ব্যাপক সংক্রমণের বছর বাদ দিলে গত ১০ বছরে এইচআইভি শনাক্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত বছর শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৮। এ বছর সংখ্যাটি ১ হাজার ৮৯১ জন; যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ৭২৯ জন, ২০২২ সালে ৯৪৭ জন, ২০২৩ সালে ১ হাজার ২৭৬ জন এবং ২০২৪ সালে ১ হাজার ৪৩৮ জন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে যথাক্রমে ২০৫, ২৩২, ২৬৬ এবং ১৯৫ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর শনাক্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৬২.৬১ শতাংশ) হচ্ছে ২৫-৪৯ বছর বয়সের। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৪ শতাংশ পুরুষ সমকামী, এরপর ১৪ শতাংশ পুরুষ যৌনকর্মী, ১২ শতাংশ প্রবাসী, ১১ শতাংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, মাদক সেবনকারী ৬ শতাংশ, তৃতীয় লিঙ্গ ও নারী যৌনকর্মী ১ শতাংশ করে। এ ছাড়া অন্যান্য ১১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৬৫০ জন ভাইরাস বাহক শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭৬ জন ও খুলনা বিভাগে ২০৮ জন।

আলোচনা সভার প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, দেশে এইডস রোগের প্রকৃত পরিস্থিতি কী, যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য—এসব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখন ১৭ হাজারের বেশি এইচআইভির বাহক রয়েছে।

মহাপরিচালক বলেন, ‘শনাক্তের বাইরে এখনো অনেক রোগী রয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে আমাদের খুব সতর্ক হতে হবে। কত রোগী শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছে, তা জানতে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় আরও জোর দিতে হবে।’

বেশির ভাগ এইডস রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাঁরা নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ওষুধ নিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনের মাধ্যমেই কেবল এইডসের ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। তবে দেশে শুধু সরকারি পর্যায়েই এইচআইভির চিকিৎসা রয়েছে। ২৭টি সরকারি কেন্দ্রে শনাক্তকরণ এবং ১৩টি কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ভর্তি থেকে চিকিৎসার সুযোগ আছে কেবল রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...