Ajker Patrika

নীরব ঘাতক শৈশবকালীন স্থূলতা

ডা. সুরাইয়া বেগম
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ১৩: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

স্থূলতা বা ওবেসিটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। কিন্তু এটি বিশ্বব্যাপী উপেক্ষিত এবং অবমূল্যায়িত। এ ক্ষেত্রে শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। ফলে স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, আয়ু কমে যেতে পারে এবং শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য একে নীরব ঘাতক বলা হচ্ছে। শৈশবকালীন স্থূলতা ক্রমবর্ধমান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই শতকের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে একে চিহ্নিত করেছে। শহরের শিশুদের; বিশেষ করে ছেলেশিশুর স্থূলতার পরিমাণ বেশি।

কারণ
বাংলাদেশে স্থূলতা এবং অতিরিক্ত ওজন যথাক্রমে ১৬ ও ২৮ শতাংশ। ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শৈশবকালীন স্থূলতায় ভোগা শিশু প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় স্থূলতায় ভোগে। বডি মাস ইনডেক্সের মাধ্যমে শিশুদের স্থূলতা নিরূপণ করা হয়। অতিরিক্ত ওজনের ক্ষেত্রে বিএমআই ৮৫ থেকে ৯৫ পার্সেন্টাইলের মধ্যে এবং স্থূলতার ক্ষেত্রে বিএমআই ৯৫ পার্সেন্টাইলের বেশি থাকে। প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে শৈশবকালীন স্থূলতার কারণ অতিরিক্ত শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া, দীর্ঘ সময় বসে বা শুয়ে থাকা, হাঁটাচলা কম করা, মা-বাবার স্থূলতা, কৌটাজাত দুধ ও জাংক ফুড, মোবাইলে আসক্তি এবং শরীরচর্চার অভাব।

প্যাথলজিক্যাল স্থূলতার কারণগুলো হলো হাইপোথাইরয়েড, হাইপোথেলামাসের সমস্যা, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়া, জেনেটিক এবং সিনড্রোমিক সমস্যা। স্থূলতা বৃদ্ধির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, মেটাবলিক সিনড্রোম, রক্তে চর্বির আধিক্য, লিভারে চর্বি জমা হওয়া, কিডনি ও চোখের সমস্যা। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় উপহাসের মুখোমুখি হওয়ার ফলে শিশু হীনম্মন্যতায় ভোগে এবং মানসিক সমস্যায় পড়ে।

চিকিৎসা
শৈশবকালীন স্থূলতার প্রধান চিকিৎসা জীবনধারা পরিবর্তন, ওষুধ এবং সার্জারি। এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন, শরীরচর্চা ও মানসিকতার পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন বলতে শর্করাজাতীয় খাদ্য কম খাওয়া, আগের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কম ক্যালরি গ্রহণ এবং নিয়মিত অল্প অল্প খাদ্য গ্রহণ অন্যতম। খাবার গ্রহণের আধা ঘণ্টা আগে পানি পান, বাসায় তৈরি খাবার খাওয়া, জাংক ফুড ও কোমল পানীয় বর্জন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরি।

প্রতিরোধ
শৈশবকালীন স্থূলতা প্রতিরোধের জন্য জরুরি—

» পরিমিত খাদ্যাভ্যাস

» নবজাতক ও শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পান

» সঠিক পরিমাণে ঘুমানো

» নিয়মিত শরীরচর্চা

» জাংক ফুড ও মোবাইল ফোন আসক্তি থেকে দূরে থাকা

» অত্যধিক স্থূলতা এবং শারীরিক জটিলতা থাকলে অপারেশন করানো।

পরামর্শ দিয়েছেন: অধ্যাপক ডা. সুরাইয়া বেগম, শিশু এন্ডোক্রাইনোলজি, চেম্বার: আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ডকেয়ার, মিরপুর-৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত