Ajker Patrika

দিনে কতবার প্রস্রাব করছেন, তা আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কী বার্তা দেয়

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ৫৪
Thumbnail image
আপনার প্রস্রাবের পরিমাণ যদি স্বাভাবিক সীমার বাইরে যায়, তা হলে এটি আপনার জীবনযাত্রার অভ্যাস কিংবা স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

দিনে কতবার মলত্যাগ করা হলো—সেটাকে আমরা বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। একেবারে না হওয়া কিংবা অতিরিক্ত হওয়া বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে ধরে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি নির্ভর করে কিছু ব্যক্তিগত ও শারীরিক বিষয়ের ওপর। কিন্তু প্রস্রাবের হার কি একই রকম কোনো নির্ধারিত নিয়মের মধ্যে পড়ে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর উত্তর হ্যাঁ। আপনার প্রস্রাবের পরিমাণ যদি স্বাভাবিক সীমার বাইরে যায়, তা হলে এটি আপনার জীবনযাত্রার অভ্যাস কিংবা স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।

এসব তথ্য জানা যায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে।

সাধারণত, সুস্থ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে ছয় থেকে আটবার প্রস্রাব করেন, এমনটাই জানিয়েছেন ইউরোলজিস্ট ডা. জামিন ব্রাহমভাট।

তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষের জন্য দিনের বেলা প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টা অন্তর প্রস্রাব করা স্বাভাবিক। আর রাতের বেলা একবার কিংবা একবারও না ওঠা ভালো। যদি আপনি রাতে বারবার প্রস্রাব করার জন্য ঘুম থেকে ওঠেন, তবে এটি কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।’

কেউ কেউ দিনে ১০ বার পর্যন্ত প্রস্রাব করতে পারেন, বিশেষ করে যদি প্রচুর পানি পান করেন বা এমন পানীয় গ্রহণ করেন যা প্রস্রাবের হার বাড়ায়।

এ ধরনের পানীয়ের মধ্যে রয়েছে অ্যালকোহল, চা ও কফি। এগুলো মূত্রথলিকে উত্তেজিত করে।

ইউরোলজিস্ট ডা. ডেভিড শাস্টেম্যান পরামর্শ দিয়েছেন, যদি এই পানীয়গুলির প্রভাব বিরক্তিকর মনে হয়, তবে আপনি পানীয়ের পরিমাণ কমাতে পারেন বা সেগুলোর হালকা করে পান করতে পারেন।

ডা. ব্রামভাট বলেন, ‘সবার শারীরিক চাহিদা এক নয়। এ ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। গরমের দিনে আপনি কম প্রস্রাব করবেন। কারণ, আপনি ঘামের মাধ্যমে বেশি পানি হারান। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনার স্বাভাবিক অভ্যাস বোঝা। যদি হঠাৎ প্রস্রাবের হার বেড়ে যায় বা কমে যায় এবং এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়, তবে অবশ্যই এটি খতিয়ে দেখা উচিত।’

যেসব কারণ অতিরিক্ত প্রস্রাবের জন্য দায়ী হতে পারে সেগুলোর মধ্যে আছে, ওভারঅ্যাকটিভ ব্লাডার সিনড্রোম, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্‌রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এমন ওষুধ।

মূত্রনালির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা মস্তিষ্ক, মূত্রথলি এবং মূত্রনালির মধ্যে সংকেত আদান-প্রদানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই স্ট্রোক, স্নায়ুর রোগ (যেমন পারকিনসনস) বা মেরুদণ্ডে আঘাতের মতো সমস্যাগুলিও অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।

ডা. জেসন কিম বলেন, মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে কারও প্রস্রাবের হার বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া অ্যাড্রেনালিন হরমোনের নিঃসরণ মূত্রথলির সংকোচন ঘটাতে পারে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

অন্যদিকে, দিনে চারবারের কম প্রস্রাব করা বা ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব করা ইঙ্গিত দিতে পারে যে আপনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন বা আপনার কিডনি কিংবা মূত্রথলির কার্যক্রমে কোনো সমস্যা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব মেডিসিনের সুপারিশ অনুযায়ী, নারীদের প্রতিদিন ২.৭ লিটার (৯১ আউন্স) এবং পুরুষদের ৩.৭ লিটার (১২৫ আউন্স) তরল গ্রহণ করা উচিত। এই পরিমাণের মধ্যে পানি ছাড়াও ফলমূল, শাকসবজি ও স্যুপের মতো পানি-সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত।

যদি কেউ প্রস্রাব করার প্রয়োজন অনুভব করেও তা আটকে রাখেন, তাহলে এটি কিডনি সংক্রমণ বা মূত্রথলির পেশি দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

আপনার প্রস্রাবের অভ্যাস যদি স্বাভাবিক না হয়, তবে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। একজন ইউরোলজিস্ট আপনার সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে ব্লাডার ট্রেনিং, ওষুধ বা অন্যান্য থেরাপি সুপারিশ করতে পারেন।

প্রস্রাবের পরিমাণ বা হার আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে। তাই কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। একটি সঠিক জীবনযাত্রা এবং সঠিক যত্ন আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত