Ajker Patrika

অ্যাকালেসিয়া: খাদ্যনালি ক্ষতির অন্যতম কারণ

অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল আলম
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ৩০
অ্যাকালেসিয়া: খাদ্যনালি ক্ষতির অন্যতম কারণ

অ্যাকালেসিয়া হলো একটি বিরল রোগ, যা খাদ্যনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাধারণত ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন বেশি। কিছু ক্ষেত্রে এ রোগের প্রভাব অনেক বছর পর প্রকাশ পায়। অ্যাকালেসিয়ার জন্য খাদ্যনালির পেশি ঠিকভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে না। এতে খাবার খাদ্যনালির নিচের অংশে আটকে যায়, ফলে অস্বস্তি দেখা যায়।

রোগের লক্ষণ
এ ধরনের রোগীদের কঠিন ও তরল খাবার গিলতে অসুবিধা হয়। লক্ষণগুলো হলো, বুক জ্বলা, খাবার খেতে অসুবিধা, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, খাওয়ার পর ব্যথা, খাওয়ার পর বমি করা, ওজন কমে যাওয়া। বিনা চিকিৎসায় অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং খাদ্যনালিতে ক্যানসার হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই দেরি না করে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।  

কারণ
অ্যাকালেসিয়ায় খাদ্যনালি গুরুতর ক্ষতির মুখোমুখি হয়। খাদ্যনালির স্নায়ুতে আঘাত লাগলে তা কার্যকারিতা হারিয়ে অ্যাকালেসিয়া দেখা দিতে পারে। আবার যদি পেশির কবাটিকা আর খাদ্যনালি ভালোভাবে কাজ না করে, তার ফলেও এই রোগ হতে পারে। অ্যাকালেসিয়া ভাইরাস সংক্রমণ, অটোইমিউন অবস্থা এবং জন্মগত কারণের সঙ্গে জড়িত।

রোগ নির্ণয়
বেরিয়াম গলাধঃকরণ রোগ নির্ণয়ের একটি সহজ পদ্ধতি। এতে বেরিয়াম সালফেট খাদ্যনালি দিয়ে পাঠানো হয় এবং এক্স-রের মাধ্যমে তার ছবি নেওয়া হয়। কতক্ষণ সময় ধরে খাবার পেটে পৌঁছাচ্ছে তার তথ্য জানতে সহায়তা করে এটি। খাদ্যনালির পেশির শক্তি ও সক্রিয়তা দেখার জন্য ইসোফিগাল ম্যানোমেট্রি পদ্ধতিতেও রোগ নির্ণয় করা যায়। এতে সময় লাগে খুব কম। এর সঙ্গে পেশির কবাটিকার কার্যকারিতাও দেখা হয়। অ্যান্ডোসকপি পদ্ধতিতে একটি সরু বা চিকন নল গলা দিয়ে ঢুকিয়ে খাদ্যনালির ভেতরের ছবি নেওয়া যায়। এটিও রোগ নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি। 

চিকিৎসা
অ্যাকালেসিয়া নিরাময় পুরোপুরি সম্ভব নয়। এ রোগের অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে এবং চিকিৎসায় উপসর্গগুলো দূর করা যায়। নাইট্রেট ও ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারসের সাহায্যে নিম্ন ইসোফিগাল স্পিংকটারের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে—এতে খাবার গিলতে সুবিধা হয়। বোটুলিনাম টক্সিন বা বোটক্স, বৃত্তাকার পেশিতে এন্ডোসকপির মাধ্যমে ইনজেকশনে দেওয়া যায়। এটি পেশিকে আরাম দেয়। অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে একটি বেলুন খাদ্যনালি দিয়ে ঢুকিয়ে ফোলানো হয়। এতে খাদ্যনালির নিচের দিকের কবাটিকা চওড়া হতে পারে। এ ছাড়া আরেকটি চিকিৎসা হচ্ছে পিরিওডিক বেলুন ডাইলেটেশন ও অপারেশন। এই পদ্ধতিতে খাদ্যনালিতে ফুটো করে বা সরাসরি কেটে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর হাসপাতালে অল্প কয়েক দিন থাকতে হয়।  

লেখক: সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং বক্ষব্যাধি, হৃদ্‌রোগ, রক্ত ও খাদ্যনালি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা

চেম্বার: ফরাজি হাসপাতাল, বনশ্রী, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত