Ajker Patrika

মা হতে যাচ্ছেন, দেখে নিন খাদ্যতালিকা

ইতি খন্দকার
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ২৯
মা হতে যাচ্ছেন, দেখে  নিন খাদ্যতালিকা

গর্ভকালীন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সুষম, পুষ্টিসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি পরিবারের সব সদস্যের উচিত গর্ভবতীর প্রতি বিশেষ যত্নশীল হওয়া। এটি গর্ভবতী ও গর্ভের শিশুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গর্ভের শিশুর উপযুক্ত গঠন ও বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্যজটিলতা প্রতিরোধে একটি সুষম খাদ্যতালিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কতটুকু বেশি খাবার
গর্ভকালকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একজন সুস্থ-স্বাভাবিক ওজনের নারীর গর্ভাবস্থায় প্রথম মাস থেকে তৃতীয় মাসে কোনো বাড়তি খাবারের প্রয়োজন নেই। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ মাসে সুস্থ-স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতীদের দৈনিক ক্যালরির চেয়ে ৩৪০ ক্যালরি বাড়তি খেতে হবে। সপ্তম থেকে নবম মাসে সুস্থ-স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতীদের দৈনিক ক্যালরির চেয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৪৫০ ক্যালরি খাবার খেতে হবে। গর্ভে যমজ শিশু থাকলে ৬০০ ক্যালরি এবং তিনটি থাকলে বাড়তি ৯০০ ক্যালরি খাবার যুক্ত করতে হবে। যাঁরা সুস্থ-স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতী নন এবং যাঁদের গর্ভকালীন জটিলতা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।

গর্ভকালে কোন ধরনের খাবার গ্রহণ করবেন
গর্ভকালে দৈনিক খাদ্যতালিকায় ছয় ধরনের খাবার খেতে হবে। খাবার তিন বেলা না খেয়ে ছয় বেলায় ভাগ করে খেতে হবে। অর্থাৎ তিনবেলায় একেবারে বেশি খাবার না খেয়ে একটু পরপর খেতে হবে। পাশাপাশি খাবারে বিভিন্নতা আনতে হবে। এতে গর্ভকালে খাবারে অনীহা ও বমি ভাব অনেকাংশে দূর হবে। 

খাদ্যতালিকায় যা রাখতে হবে
শর্করাজাতীয় খাবার: ভাত, রুটি, সুজি, খিচুড়ি, ওটস, ব্রেড, নুডলস, সিরিয়াল বা কর্নফ্লেক্স, আলু ইত্যাদি শর্করাজাতীয় খাদ্য গর্ভবতীর অতিরিক্ত ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে।

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: শিশুর শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধির জন্য দৈনিক খাবারের তালিকায় অবশ্যই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। বিভিন্ন ছোট-বড় মাছ, মাংস, ডিম, মটরশুঁটি, বাদাম ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস। সপ্তাহে ২৮০ গ্রামের বেশি তৈলাক্ত মাছ না খাওয়া এবং প্রতিদিন কলিজা খাওয়া যাবে না। এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’। এগুলো অতিরিক্ত খেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল: রঙিন শাকসবজি ও ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি গর্ভবতীর ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করে। পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় শিশুর দৈহিক গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রঙিন ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকে, যা গর্ভবতীর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ফলের ক্ষেত্রে কলা, বাঙ্গি, কমলা, মাল্টা, বেদানা, জাম্বুরা, আমলকী, আমড়া, জামরুল, আতা এবং বিভিন্ন মৌসুমি ফল খেতে হবে। শাকসবজির ক্ষেত্রে পালংশাক, ডাঁটা, লালশাক, মটর, হেলেঞ্চা, কলমি কিংবা কচুশাক, পটোল, লাউ, কুমড়া, মিষ্টি আলু, ঝিঙা, কাঁকরোল, করলা, বরবটি, টমেটো, ধুন্দল, মুখী কচু ইত্যাদি খেতে হবে। 

ছবি: স্বপ্না মণ্ডল  ও ওমাম রায়হানদুধজাতীয় খাবার: গর্ভকালে দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শিশুর দাঁত ও হাড় গঠনে সহযোগিতা করে। তাই কম চর্বিযুক্ত দুধ, শক্ত পনির এবং দই খেতে পারেন। তবে পাস্তুরিত নয় এমন দুধ ও পনির খাওয়া যাবে না।

তরল খাবার: গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা নিশ্চিত করতে হবে।

ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান: গর্ভকালীন খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’, ভিটামিন ‘সি’জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। যাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা ও অন্যান্য জটিলতা রয়েছে, তাঁদের এ সময়ে অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্ট ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

গর্ভকালে যে খাবারগুলো খাওয়া যাবে না
হারবাল কিংবা ভেষজ ওষুধ, অপাস্তুরিত দুধ, কাঁচা কিংবা অর্ধসেদ্ধ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও সবজি, ক্যাফেইনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন চা বা কফি, অ্যালকোহলজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড ও ট্রান্সফ্যাটজাতীয় খাবার, বাইরের প্যাকেটজাত ও খোলা খাবার না খাওয়াই ভালো।ছবি: স্বপ্না মণ্ডল  ও ওমাম রায়হানগর্ভকালীন বিশেষ নির্দেশিকা 
গর্ভকালে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। পাশাপাশি চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। সব সময় ভালো চিন্তা করতে হবে, তাহলে শরীরে 
ভালো হরমোন তৈরি হবে, যা গর্ভের শিশুর জন্য উপকারী। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। কোনোভাবেই কুসংস্কারমূলক কথা ও কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যাঁদের সুস্থ ও স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা, তাঁরা সারা দিন শুয়ে-বসে না থেকে পরিমিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি মা ও শিশু—দুজনের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে ব্যায়াম বা পরিশ্রমের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক: পুষ্টিবিদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে এক দিনে আরও ৬ জনের মৃত্যু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে এক দিনে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৯৮৩ জন।

এ ছাড়া এক সপ্তাহে সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছে ১০ জন এবং আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১২৬ জন। আর চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৬৯ জন এবং আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৩ জন।

এ বছরের শুরু থেকে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছিল সেপ্টেম্বর মাসে, ১৫ হাজার ৮৬৬ জনের। চলতি অক্টোবরের সপ্তাহখানেক বাকি থাকতেই সংক্রমণের সংখ্যা তা ছাড়িয়ে গেছে। অক্টোবর মাসেই সবচেয়ে বেশি ১৯ হাজার ৮১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে সংক্রমণ গত মাসের রেকর্ড ছাড়াল, এক দিনে মৃত্যু আরও ৪

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ৩১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। কিছুদিন ধরেই কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কয়েকজন করে মারা যাচ্ছে মশাবাহিত এ রোগে। চলতি বছর এ পর্যন্ত মশাবাহিত রোগটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৩ জনে।

ডেঙ্গুবিষয়ক হালনাগাদ তথ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী। মৃত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরগুনার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তির হারও ঊর্ধ্বমুখী। গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৪৩ জন রোগী। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৪৪০ জনে।

এ বছরের শুরু থেকে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছিল সেপ্টেম্বর মাসে, ১৫ হাজার ৮৬৬ জনের। চলতি অক্টোবরের সপ্তাহখানেক বাকি থাকতেই সংক্রমণের সংখ্যা তা ছাড়িয়ে গেছে। অক্টোবর মাসেই সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৯৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৩১৯ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায়। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ২৮১, ময়মনসিংহে ৫৬, চট্টগ্রামে ১২১, খুলনায় ৬৫, রাজশাহীতে ৫৬, রংপুরে ৫০, বরিশালে ১৮৬ এবং সিলেটে ৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২ হাজার ৭৩৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৩০, আর রাজধানীর বাইরে ১ হাজার ৮০৩ জন ভর্তি রয়েছে।

দেশে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে বছর মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন রোগী। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১১,২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২,২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯,২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ এবং ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দাঁতের যত্নে অবহেলায় হতে পারে বিপদ

ডা. পূজা সাহা
দাঁতের যত্নে অবহেলায় হতে পারে বিপদ

দাঁতের সমস্যা এখন আর শুধু বয়স্কদের নয়, সব বয়সে দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, বয়স বাড়লে দাঁত দুর্বল হয়। আসলে তা নয়। তবে দাঁতের সমস্যায় বেশির ভাগ কারণই প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত যত্ন নিলে আর সঠিক অভ্যাসেই দাঁত সুস্থ রাখা সম্ভব।

দাঁতে ব্যথা হলে আগে কারণ জানা

দাঁতে ব্যথা মানেই শুধু ক্যাভিটি নয়। দাঁতের গোড়ায় পাথর জমে যাওয়া, স্নায়ুতে প্রদাহ, মাড়ির সংক্রমণ কিংবা দাঁতের ক্ষয়—এসব কারণেও ব্যথা হতে পারে। তাই দাতে ব্যথা হলে প্রথমে কারণটা জানা জরুরি। অস্থায়ী স্বস্তির জন্য দিনে কয়েকবার কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করা যেতে পারে। দাঁতের সেনসিটিভিটি কমানোর টুথপেস্টও কিছুটা সহায়ক। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য অবশ্যই দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দাঁতের যত্ন মানেই সার্বিক সুস্থতা

দাঁতের যত্ন শুধু সুন্দর হাসির জন্য নয়, শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অংশও। দাঁতের ক্ষয় বা সংক্রমণ অবহেলা করলে তা মাড়ি, হাড় এমনকি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। সঠিক যত্নে এই সমস্যা অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়।

টক খাবারে দাঁতের ক্ষয়

অতিরিক্ত টক বা অ্যাসিডযুক্ত খাবার দাঁতের এনামেল দুর্বল করে দেয়। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল, লেবু, টমেটো বা টক স্যুপ নিয়মিত খেলে দাঁতের বাইরের স্তর ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। এতে দাঁত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, ব্যথা বা ঝাঁজালো অনুভূতি দেখা দেয়। যাদের পারিবারিকভাবে দাঁত দুর্বল, তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। দাঁতের ক্ষয় পুরোপুরি বন্ধ না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে তা মেরামত করা অনেকটা সম্ভব। ক্ষয়ের পরিমাণ অনুযায়ী ফিলিং বা অন্যান্য চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। এই অবস্থায় টক খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আর দাঁত ব্রাশ করার আগে অন্তত ৩০ মিনিট বিরতি দিন। অ্যাসিডজাতীয় খাবার খাওয়ার পরপরই দাঁত ব্রাশ করলে এনামেল আরও নরম হয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ায়।

স্কেলিং নিয়ে ভুল ধারণা

অনেকের ধারণা, দাঁতের স্কেলিং করালে দাঁত নরম বা আলগা হয়ে যায়। বাস্তবে এ তথ্য ভুল। স্কেলিংয়ের সময় দাঁতের পাথর বা ক্যালকুলাস সরানো হয়। স্কেলিংয়ের পর কিছু সময়ের জন্য দাঁত আলগা মনে হতে পারে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। দাঁতে দাগ বা পাথর দেখা দিলে স্কেলিং করানো উচিত। তবে দাঁত সাদা করতে চাইলে আলাদা ব্লিচিং বা হোয়াইটেনিং চিকিৎসা লাগে।

দাঁত আঁকাবাঁকা হলে করণীয়

শিশুদের ক্ষেত্রে দুধদাঁত সময়ের আগে কিংবা পরে পড়লে স্থায়ী দাঁত সোজাভাবে ওঠে না। ফলে দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। এতে শুধু চেহারার সৌন্দর্য নয়, উচ্চারণেও প্রভাব পড়তে পারে। এ সমস্যা থাকলে দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শে অর্থোডন্টিক চিকিৎসা (ব্রেস অথবা অ্যালাইনার) নেওয়া যায়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিশুর বয়স, দাঁতের অবস্থা এবং মুখের গঠন বিবেচনা করা জরুরি।

কিছু সাধারণ পরামর্শ

  • দিনে অন্তত দুবার নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করুন।
  • প্রতি তিন মাসে একবার টুথব্রাশ পরিবর্তন করুন।
  • আঁশযুক্ত ও ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।
  • চিনি বা টক খাবার খাওয়ার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • বছরে অন্তত একবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করান।
  • দাঁতের ব্যথা, ক্ষয় অথবা সেনসিটিভিটি দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন। কারণ, দাঁত হারানো মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলা। নিয়মিত যত্ন নিলে দাঁত থাকবে মজবুত, আর হাসিও হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।

লেখক: ডেন্টাল সার্জন, সিকদার ডেন্টাল কেয়ার, মিরপুর, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্পন্ডিলাইটিস: মেরুদণ্ডের নীরব ব্যথা

ডা. মো. নূর আলম
স্পন্ডিলাইটিস: মেরুদণ্ডের নীরব ব্যথা

স্পন্ডিলাইটিস হলো মেরুদণ্ডের বাত অথবা আর্থ্রাইটিস। এতে কশেরুকা (মেরুদণ্ড গঠন করে এমন হাড়) ও মেরুদণ্ড ও শ্রোণি চক্রের মাঝের সন্ধিতে প্রদাহ দেখা দেয়। ফলে মেরুদণ্ডের চারপাশের রগ, লিগামেন্ট বা সন্ধি বন্ধনীতে ব্যথা শুরু হয়।

কশেরুকা কী

মানবদেহের মেরুদণ্ড অনেক কশেরুকা দিয়ে গঠিত। প্রতিটি কশেরুকা অস্থি ও তরুণাস্থির সমন্বয়ে তৈরি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স কিংবা ক্ষয়ের কারণে কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়, শুকিয়ে যায় এবং ফেটে যেতে পারে। এতে দুই কশেরুকা একে অপরের সঙ্গে ঘষা খায় এবং হাড়ে ধারালো দানা তৈরি হয়, যা এক্স-রেতে দেখা যায়। এ দানাগুলো স্নায়ুতে চাপ দিলে হাত বা পায়ে তীব্র ব্যথা ও অসাড়তা দেখা দিতে পারে।

ডিস্ক যখন তার জায়গা থেকে সরে যায়, সেটাকে বলে ‘স্লিপড ডিস্ক’। সাধারণত দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া কিংবা ঘাড়ে আঘাতের কারণে এটি হয়। ডিস্কের স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে মেরুদণ্ডের নড়াচড়া কঠিন হয়ে পড়ে।

কেন বাড়ছে এই রোগ

আগের তুলনায় এখন স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে; বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন; যেমন আইটি কিংবা বিপিও খাতের কর্মীরা—তাঁদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। এখন প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৭ জন কোনো না কোনোভাবে ঘাড়, পিঠ বা কোমরের ব্যথায় ভুগছেন।

স্পন্ডিলাইটিসের প্রধান ধরন

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলাইটিস: ঘাড়ের অংশে এই ব্যথা শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে কাঁধ, কলারবোন ও ঘাড়সংলগ্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ঘাড় ঘোরাতে কষ্ট হয়, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা হতে পারে।

লাম্বার স্পন্ডিলাইটিস: এতে কোমরের নিচের অংশে ব্যথা হয়, যা পিঠ ও পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস: এটি একধরনের প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস, যা মেরুদণ্ড এবং শ্রোণির সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্টকে প্রভাবিত করে। এতে নিতম্ব, কোমর এবং পিঠে ক্রমাগত

ব্যথা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের হাড়গুলো একত্রে মিশে যেতে পারে, যাকে বলে ‘Bamboo Spine’। এতে রোগী ধীরে ধীরে চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

সাধারণ লক্ষণ

  • ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • স্নায়ুর চাপে ব্লাডার কিংবা বাওয়েলের নিয়ন্ত্রণ হারানো।
  • আঙুল অবশ হয়ে যাওয়া অথবা ঝিনঝিন ভাব।
  • কোমর থেকে পা পর্যন্ত দুর্বলতা ও শক্ত ভাব।
  • বুকে ব্যথা ও মাংসপেশির সমস্যা।
  • ঘাড় থেকে পিঠের ওপরের অংশ পর্যন্ত টান ধরা ব্যথা।

সম্ভাব্য কারণ

  • ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের ঘাটতি।
  • ভুল ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো।
  • বয়সজনিত হাড়ের দুর্বলতা।
  • নিয়মিত শরীরচর্চার অভাব।
  • দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা অথবা অলস জীবনযাপন।
  • অপর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার।

পরামর্শ

যদি ঘাড়, পিঠ অথবা কোমরে দীর্ঘদিন ব্যথা থাকে, আঙুল অবশ হয় বা চলাফেরায় অসুবিধা দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো চিকিৎসা নিলে স্পন্ডিলাইটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়।

লেখক: জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত