Ajker Patrika

হাইড্রোসিল: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডা. রতন লাল সাহা
হাইড্রোসিল: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

হাইড্রোসিল হলো শরীরের গহ্বরে সিরাস তরল জমা হওয়া। হাইড্রোসিলের সবচেয়ে সাধারণ রূপ হলো হাইড্রোসিল টেস্টিস, যা অণ্ডকোষের চারপাশে তরল জমা হওয়া। এটি অণ্ডকোষের চারপাশে আবৃত একটি স্তরের মধ্যে তরল জমা হওয়ার কারণে ঘটে, যাকে টিউনিকা ভ্যাজাইনালিস বলা হয়। যদি কোনো হার্নিয়া না থাকে, তবে এটি প্রথম বছরেই চিকিৎসা ছাড়াই ঠিক হয়ে যায়। যদিও হাইড্রোসিল সাধারণত পুরুষদের মধ্যে বিকাশ ঘটে। তবে নাকের খালে মহিলাদের মধ্যে বিরল ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।

জটিলতা

হাইড্রোসিলের জটিলতার মধ্যে রয়েছে:

  • সাধারণত আঘাতের ফলে ফেটে যায়।
  • থলিটি ক্যালসিফাই হতে পারে।
  • সংক্রমণ, যা পাইওসিল হতে পারে।
  • দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে অণ্ডকোষের ক্ষয়।

কারণ

হাইড্রোসিল চারটি উপায়ে উৎপন্ন হতে পারে:

  • থলির ভেতরে অতিরিক্ত তরল উৎপাদনের মাধ্যমে, যেমন সেকেন্ডারি হাইড্রোসিল।
  • ত্রুটিপূর্ণ তরল শোষণের মাধ্যমে।
  • জন্মগত জাতের পেরিটোনিয়াল গহ্বরের হার্নিয়ার সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে।

প্রাথমিক হাইড্রোসিল: অণ্ডকোষের পাশে একধরনের ফোলা দেখা যায় হাইড্রোসিল হলে। এই ফোলাটা সাধারণত নরম বা কোমল থাকে না, একটু টানটান মনে হয়। অনেক সময় এত বড় হয়ে যায় যে অণ্ডকোষ আলাদা করে বোঝা যায় না। চিকিৎসক যখন আলো ফেলে পরীক্ষা করেন, তখন ফোলার ভেতরে তরল স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই ধরনের হাইড্রোসিল অনেক সময় খুব বড় আকার ধারণ করতে পারে এবং এতে প্রচুর তরল জমে থাকে। যেহেতু এতে সাধারণত ব্যথা হয় না, অনেকে বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। দীর্ঘদিন ধরে বড় আকারের হাইড্রোসিল থাকলে, চাপের কারণে কিংবা রক্ত চলাচলে বাধা পড়ে অণ্ডকোষ শুকিয়ে যেতে পারে। এটাই হলো এর প্রধান জটিলতা।

সেকেন্ডারি হাইড্রোসিল: স্টিকুলার রোগের কারণে সেকেন্ডারি হাইড্রোসিল ক্যানসার আঘাত অথবা অর্কাইটিসের ফলে হতে পারে। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস করানো শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি ঘটতে পারে। প্রাথমিক ক্ষত ঠিক হয়ে গেলে সেকেন্ডারি হাইড্রোসিল কমে যায়।

শিশুদের হাইড্রোসিল: শিশুদের মধ্যে হাইড্রোসিল সাধারণত জন্মগত হয়। গর্ভাবস্থায় অণ্ডকোষ যখন পেট থেকে নিচে নামে, তখন একটি ছোট নালি বা পথ তৈরি হয়।

জন্মগত হাইড্রোসিল: এটি জন্মের পরপরই দেখা দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় চিকিৎসা ছাড়াই ১-২ বছরের মধ্যে নিজে থেকে সেরে যায়। তবে যদি আকার বাড়তে থাকে কিংবা হার্নিয়ার মতো ওঠানামা করে, তখন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

নাড়ির এনসিস্টেড হাইড্রোসিল: এ ক্ষেত্রে তরল জমে থাকে শুক্রনালি বা কর্ডের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে, অণ্ডকোষের চারপাশে নয়। এটি ছোট, নরম ফোলা আকারে দেখা যায় এবং সাধারণত ব্যথাহীন। অনেক সময় এটি নিজে থেকে সেরে যায়, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা

হাইড্রোসিলের স্থায়ী সমাধান হলো অস্ত্রোপচার। সাধারণত দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়—ইনসিশন এবং ইভারশন: স্ক্রোটামে কেটে তরল বের করে সেলাই করা হয়, যাতে আবার তরল না জমে। এটি সহজ, নিরাপদ। এ ছাড়া পুনরায় হাইড্রোসিল হওয়ার ঝুঁকি কম।

এক্সিশন অব হাইড্রোসিল স্যাক: যখন থলিটি মোটা অথবা বারবার তরল জমে, তখন পুরো হাইড্রোসিল থলি কেটে ফেলে দেওয়া হয়। এতে সমস্যা স্থায়ীভাবে দূর হয়।

অস্ত্রোপচার হওয়ার পর কয়েক দিন বিশ্রাম এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।

কনসালন্ট্যাট, জেনারেল এবং ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি, আলোক হাসপাতাল, মিরপুর-৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...