Ajker Patrika

‘ওজেম্পিক ফেস’ কী—কসমেটিক সার্জারিতে কেন এটি জোয়ার এনেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

প্রায় দুই বছর আগে নিউইয়র্কের সেলিব্রিটি কসমেটিক ডার্মাটোলজিস্ট ড. পল জ্যারড ফ্র্যাঙ্ক খেয়াল করেন—তাঁর ক্লিনিকে নতুন এক ধরনের রোগীর আগমন শুরু হয়েছে। এই রোগীরা সবাই ওজন কমানোর ওষুধ ‘ওজেম্পিক’ বা ‘উইগোভি’ সেবন করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল হারে এই ওষুধের ব্যবহার শুরুর পর থেকেই ফ্র্যাঙ্ক দেখতে পান, অনেকেই ওজন হারালেও মুখের সৌন্দর্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের শিকার হচ্ছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ফ্র্যাঙ্ক বলেন, ‘তারা ওজন কমিয়ে শরীর নিয়ে ভালো বোধ করছিলেন, কিন্তু মুখে বয়সের ছাপ পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছিল।’ মূলত মুখের চর্বি ও পরিধি হ্রাসের ফলেই এমনটি হয়। ফ্র্যাঙ্ক তাই এই ধরনের পরিবর্তনের নাম দেন ‘ওজেম্পিক ফেস’। সামাজিক মাধ্যমে এটি এখন বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। এর মাধ্যমে বোঝায়—ওজন কমানোর ওষুধের কারণে মুখের ত্বক ঢিলে হয়ে যাওয়া ও গালের ভেতর ফাঁপা হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হওয়া।

দ্রুত ওজন কমানো, মুখে ক্লান্ত চেহারা

‘ওজেম্পিক’ ও ‘উইগোভি’ ব্র্যান্ডনামে বিক্রি হলেও এই দুটি ওষুধ মূলত ‘সিমেগ্লুটাইড’। এটি অগ্ন্যাশয়কে উদ্দীপিত করে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ায় এবং ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। ওষুধটি টাইপ–২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত হলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক চিকিৎসক এটিকে ওজন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে ব্যবহার করছেন। ২০২৪ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আটজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন এই ওষুধ ব্যবহার করেছেন এবং তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্য এটি নিয়েছেন।

ড. ফ্র্যাঙ্ক বলেন, ‘যখন কেউ ১০ থেকে ২০ পাউন্ডের বেশি ওজন কমায়, তখন মুখের চর্বি কমে গিয়ে একধরনের নিস্তেজ, বয়স্ক চেহারা দেখা দেয়।’ এ জন্যই তাঁর অনেক রোগী এখন মুখে ডার্মাল ফিলার, ফেসলিফট বা ফ্যাট ট্রান্সফার করাচ্ছেন।

আয়নায় নিজেকে দেখার পর

ওজন কমানোর জন্য যারা ওষুধ সেবন করেছেন তাঁদের একজন হলেন নিউ জার্সির প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিম্বার্লি বংগিওর্নো। ওজেম্পিক ব্যবহারের পর ৫৫ বছর বয়সী এই নারীর ওজন ১৭০ থেকে ১২৫ পাউন্ডে নেমে আসে। কিন্তু এর ফলে তাঁর মুখ ও গলার ত্বক ঝুলে পড়ে, গাল বসে যায়। তিনি বলেন, ‘ছবিতে দেখে মনে হয়েছিল যেন আমি গলে গেছি। নিজেকে আমার অনেক বেশি বয়স্ক মনে হচ্ছিল।’

পরে তিনি সার্জন ড. অ্যান্থনি বারলেটের কাছে গিয়ে ডিপ প্লেন ফেসলিফট ও নেকলিফট করান। তিনি বলেন, ‘এখন লোকেরা ভাবে, আমার বয়স ৪০-এর কোঠায়। আগে আমার মুখে ক্লান্তি ছিল, এখন বলছে—তোমাকে অনেক সুস্থ ও উচ্ছল লাগছে।’

ওপরের দুটি ছবিতে ওজন কমানোর পর কিম্বার্লি বংগিওর্নোর মুখমণ্ডল, নিচের দুটি কসমেটিক সার্জারির পরের ছবি—সিএনএন
ওপরের দুটি ছবিতে ওজন কমানোর পর কিম্বার্লি বংগিওর্নোর মুখমণ্ডল, নিচের দুটি কসমেটিক সার্জারির পরের ছবি—সিএনএন

সার্জারির চাহিদা বেড়েছে

আমেরিকান সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জনস (এএসপিএস)–এর তথ্য বলছে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফেসলিফট সার্জারির সংখ্যা ৮ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ‘হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ফিলার’ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৫২ লাখে পৌঁছেছে। যদিও এই বৃদ্ধির সবটাই ওজেম্পিকের কারণে নয়, তবু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ওষুধ প্লাস্টিক সার্জারির ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে।

এএসপিএস-এর সাবেক সভাপতি ড. স্টিভেন উইলিয়ামস বলেন, ‘এখন আমাদের হাতে এমন একটি ওষুধ আছে যা সার্জারি ছাড়াই ওজন কমাতে সক্ষম। কিন্তু রোগীদের বুঝিয়ে বলতে হয়, ওজন কমার সঙ্গে সঙ্গে আপনার চেহারারও পরিবর্তন আসবে।’

এদিকে ড. ফ্র্যাঙ্ক জানিয়েছেন, ওজেম্পিক ফেসের পাশাপাশি এখন দেখা দিচ্ছে ‘ওজেম্পিক বডি’-এর প্রবণতা। ওজন দ্রুত কমলে শুধু মুখ নয়, শরীরজুড়েই এর প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে পেশি কমে যায়। এর ফলে আরেক ধরনের সার্জারির প্রবণতা বেড়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওজেম্পিক মেকওভার’। এই ধরনের সার্জারির মধ্যে এখন টামি টাক, ব্রেস্ট লিফট, আর্ম ও থাই লিফটও যুক্ত হয়েছে।

ওজেম্পিক ওষুধ সেবন করা কিম্বার্লি বংগিওর্নো নামের সেই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনিও ইতিমধ্যে বাহু ও ঊরুতে অতিরিক্ত ত্বক কেটে ফেলার সার্জারি করেছেন এবং পরবর্তীতে স্তন পুনর্গঠন ও চোখের নিচের ত্বক সংশোধন করাবেন। তাঁর ধারণা, এসব সার্জারিতে মোট ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৮০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই খরচটি প্রায় কোটি টাকা।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো অজানা

তবে ওজেম্পিকের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ওষুধ বন্ধ করার পর অনেকেরই শরীরের ওজন আবারও বেড়ে যাচ্ছে—যাকে বলা হচ্ছে ‘ওজেম্পিক রিবাউন্ড’। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ ব্যবহারকারী এক বছরের মধ্যেই এই ওষুধটি সেবন বন্ধ করেন এবং পরবর্তী ১০ মাসের মধ্যেই আগের ওজন ফিরে পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জুলাই যোদ্ধাকে’ জুলাই ফাউন্ডেশনে পাইপ দিয়ে মারধর, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের হারে বাংলাদেশের বিদায়, হামজার হতাশা

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র

সেনা কর্মকর্তাদের জন্য ‘সাবজেল’ ঘোষণার যৌক্তিকতা কী, টিআইবির প্রশ্ন

ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পরে ভাতিজিকে পিটিয়ে হত্যা করলেন হাবিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত