Ajker Patrika

ফ্যাক্টচেক /ট্রেনের নিচে পড়া ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি বেঁচে আছেন

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ১৭: ২৮
চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে ফোন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে পালানোর সময় চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে ফোন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে পালানোর সময় চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে মোবাইল ফোন চুরি করতে গিয়ে যাত্রীদের হাতে ধরা পড়েন এক ব্যক্তি। পালাতে গিয়ে একপর্যায়ে ট্রেনের চাকায় নিচে পড়ে তিনি মারা গেছেন।—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। একই ক্যাপশনে ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে ছড়ানো হয়েছে।

ভিডিওতে একটি চলন্ত ট্রেনের দরজায় এক যুবককে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। পরক্ষণেই তাঁর পা মাটি স্পর্শ করতে দেখা যায়। দ্রুত গতিতে চলমান ট্রেনের গতির সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু না পেরে আবার ঝুলে যান। ট্রেনটি একপর্যায়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে। দরজায় ঝুলন্ত অবস্থায়ই প্ল্যাটফর্মে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু একপর্যায়ে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। ওই সময় দেখা যায়, দরজার ভেতর থেকে কেউ তাঁর হাত ধরে রেখেছে। ট্রেনটি প্লাটফর্মে প্রবেশ করার পরপরই স্টেশনের নামফলকে ‘নশরৎপুর’ লেখা দেখা যায়।

হৃদয়ে বাংলাদেশ’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘আহ্, চুরি করতে গিয়ে নিজের প্রাণটা বিলিয়ে দিল। চোর হলেও তার পরিবারের কথা ভেবে মায়া লাগছে। ট্রেনের জানালা দিয়ে চুরি করতে গিয়ে যাত্রীদের হাতে ধরা পড়ে যায় যুবক, অতঃপর পালানোর জন্য চেষ্টা করতে গেলে একপর্যায়ে ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে যায়।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Khan Saddam নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) রাত ৮টা ২০ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এর ক্যাপশনে লেখা, ‘মোবাইল ফোন চুরি করতে গিয়ে মৃত্যু!’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ভিডিওটি ২০ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ২৮৯টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৪৫টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৬২।

Md Eamin HossanH M Jonayed Ahmad নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে একই ভিডিও একাধিক সোশ্যাল মিডিয়াতে পাওয়া যায়। তবে এসব পোস্ট থেকে ঘটনাটির বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ ট্রেনের প্ল্যাটফর্মের নামফলকে ‘নশরৎপুর’ লেখার সূত্র ধরে ঘটনাস্থল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নশরতপুর (নশরৎপুর) রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। নশরৎপুর রেল স্টেশন সেখানেই অবস্থিত।

এর সূত্র ধরে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তাঁকে ঘটনার বিবরণ দিলে বলেন, ঘটনার বিষয়ে জানেন।

তিনি বলেন, ‘ট্রেনের নিচে পড়ে যাওয়া ব্যক্তি মারা যাননি। গতকাল তিনি আমাদের থানায় অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু ঘটনাটি রেলস্টেশনে ঘটেছে তাই এটি আমাদের আওতাধীন নয়। তাই আমরা তাঁকে জিআরপির (রেলওয়ে পুলিশ) কাছে অভিযোগ করতে বলি। পরবর্তীতে তিনি সান্তাহার রেলওয়ে পুলিশের কাছে যান।’

তবে ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি ওসি মোস্তাফিজুর রহমান।

আজককের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ আদমদীঘি থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমানের ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করে। এ বিষয়ে ওসি হাবিবুর রহমানের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি বেঁচে আছেন। তিনি প্রথমে আদমদীঘি থানায় গিয়েছিলেন। আদমদীঘি থানা যখন বলেছে এটা রেলওয়ে পুলিশের বিষয় তখন এখানে আসেন। এসে এখানে শুধু প্রহরীর (সেন্ট্রি) সঙ্গে দেখা হয়। পরে ওনাকে আদমদীঘি থেকে ফোন করলে উনি আবার চলে যান।’

পরে আদমদীঘি থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে আবার ফোন কল করে সেই ব্যক্তি তাঁর থানায় দ্বিতীয়বার এসেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘না’ সূচক জবাব দেন।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে MD Rana Islam নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) রাত ৯টা ০২ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। এই পোস্টে একটি ভিডিও ও একটি ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ভিডিওটির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে এটি ভিন্ন দিক থেকে ধারণ করা। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ট্রেনে ঝুলে থাকা ব্যক্তি, তাঁর পোশাক, ট্রেন, রেললাইন, প্ল্যাটফর্ম, প্ল্যাটফর্মের নাম ফলক— এসবের মিল পাওয়া যায়।

MD Rana Islam নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
MD Rana Islam নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

এই পোস্টে মো. রানা ইসলাম ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিকে নিজের বাবা দাবি করে লিখেছেন, ‘আমার বাবা চোর না। তিনি আদম বাপারীর ব্যাবসা করতো। যাকে বিদেশ পাটাইছে তার শালা ও তার বন্ধু রা মিলে তাকে মারার চেষ্টা করে ছিল। আপনারা দয়া করে আমার বাবা কে চোর মনে করবেন বা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

এ বিষয়ে জানতে রানা ইসলামকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে নক দেওয়া হয়। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই পোস্টের কমেন্টের সূত্র ধরে Tarek Rahman গতকাল রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে একই ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেন, ভিডিওর ব্যক্তিটি তাঁর ফুপা। তিনি বেঁচে আছেন।

Tarek Rahman নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
Tarek Rahman নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, ‘আমরা কোন কিছু না বুঝে সবকিছু শেয়ার দেই এটা ঠিক না সম্পর্কে উনি আমার ফুপা উনি একজন আদম বেপারী কিছু ঝামেলার কারণে কয়দিন ধরে সমস্যা ছিল আজকে তাকে পেয়ে ট্রেনের মধ্যে মারধর করা শুরু করে পরে তিনি জীবন রক্ষাতে ট্রেন থেকে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাকে জানে মারার চেষ্টা করে তার কাছে টাকা ছিল অনেক সেই টাকা তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তারা_ আর ফেসবুকে তাকে চোর বানানো হয়েছে হায়রে সমাজ। বর্তমানে উনি বেঁচে আছেন কিন্তু এর পিছনে যাদের হাত আছে তাদের কঠোরতম শাস্তি দাবী জানাচ্ছি।’ (বানান অপরিবর্তিত)

এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টে উল্লেখিত ফোন নম্বরে কল করা হলে অপর প্রান্ত থেকে তারেক রহমান পরিচয়ে একজন কথা বলেন। ঘটনার ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান। তিনি সম্পর্কে তাঁর ফুপা। তিনি বেঁচে আছেন।

ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, ‘ওনার বাড়ি নওগাঁ জেলার রাণীনগর থানার পারইল গ্রামে। ওনার বাবা পারইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গতকাল (রোববার) উনি বগুড়া থেকে আসার সময় কিছু লোক ওনাকে ফলো করে। পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে মোবাইল চুরির অপবাদ দেয় এবং মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। একপর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়।’

তারেক রহমানের কাছ থেকে মতিউর রহমানের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁকে কল করলে অপর প্রান্ত থেকে একজন নারী রিসিভ করেন। তিনি মতিউর রহমানের স্ত্রী পরিচয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেন। মতিউর রহমান আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ফোনটি মতিউর রহমানের কাছে দেন।

ঘটনার বিবরণ শুনে মতিউর রহমান আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘আমিই সেই ব্যক্তি।’

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমি বগুড়া থেকে ট্রেনে করে আসছিলাম। আমার সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা ছিল। সেই সময় ৭ জন আমাকে ফলো করছিল। তা আমি জানতাম না। যখন ট্রেন আলতাফনগর পার হয় তখন তারা আমাকে অ্যাটাক করে। আমাকে কিল ঘুষি দেয়। তারা সবাই মাস্ক পরা ছিল। একপর্যায়ে তারা চাকু বের করে মেরে ফেলার প্ল্যান করে। তখন তারা আমার হাতে চাকু দিয়ে আঘাত করে। তবে তাদের একজন বলে যে তারা ফেঁসে যাবে। তাই তারা ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার কথা বলছিল। তারা আমার হাত ছেড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি আবার ধরার চেষ্টা করি। একপর্যায়ে আমি বাইরে পড়ে যাই এবং ট্রেনের নিচে চলে যাই। সেসময় তারা আমাকে মোবাইল চোর হিসেবে সম্বোধন করেছিল।’

মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘আমার পরিবারকে নিয়ে এই ঘটনায় আদমদীঘি থানা অভিযোগ দিতে গেলে থানা থকে জানানো হয় এটি রেল স্টেশনের ঘটনা, তাই অভিযোগ জিআরপিতে করতে হবে। পরে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় গেলে সেখান থেকে জানান হয় আদমদীঘি থানায় যেতে। এখন পর্যন্ত কোনো থানাতেই অভিযোগ করতে পারিনি।’

ট্রেনে বিবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি একজন আদম ব্যবসায়ী। আক্রমণকারীদের আত্মীয়ের একজন আমার মাধ্যমে বিদেশ গিয়েছিল। যিনি বিদেশ গেছেন, তিনি সেখানে গিয়ে চাকরি করেছেন। সেটা তারা না জেনেই আমার ওপর হামলা করেছে।’

তাঁর বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গেছি। তবে পায়ে কিছুটা ব্যথা পেয়েছি। একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। আজকে ছুটি হয়ে যাবে।’

সুতরাং, চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে ফোন চুরি করার সময় যাত্রীদের কাছে ধরা পড়ে পালানোর সময় ট্রেনের চাকার নিচে পড়ে একজনের মৃত্যুর খবরটি সঠিক নয়। ওই ব্যক্তি বেঁচে আছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

বাসস  
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০৩
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।

আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’

জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’

একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’

এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০০
নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।

গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১৯: ০০
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।

৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাত বাঁধা অবস্থায় কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশেই একজন মধ্যবয়সী তরুণীটির বাবা পরিচয়ে আর্তনাদ করছেন। তাঁকে আরেকজন যুবক সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি তরুণীকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভিডিওর শেষাংশে পুলিশকে তরুণীর মরদেহ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়।

‘Md Nishad Hossain’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ। বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে। মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪ ’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৫১৫টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৮৫ বার।

এসব কমেন্টে অনেকে ভিডিওটি নাটক উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছে। Shilvi Akther নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘আহারে জীবন! মানুষ কিভাবে এতো নির্মম হয়? একজন বাবার আর্তনাদ কি কারো মনকে মর্মাহত করে না?’ (বানান অপরিবর্তিত) Narayon Saha লিখেছে,’ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট বাবার কান্দে সন্তানের লাশ হায়রে দুনিয়া।’ (বানান অপরিবর্তিত)

S M Salam Patwari, গর্জে ওঠো আরেকবার বাংলাদেশ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ‘Short Film BD’ নামে একটি লোগো লক্ষ করা যায়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ২০ জুনে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মেঝেতে পড়ে থাকা তরুণী, পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, আহাজারি করা ব্যক্তি ও আশপাশের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘মৌসুমীর সাথে কি হলো।’ ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে বোঝা যায়, এটি একটি নাটিকার দৃশ্য।

Short Film BD নামে ফেসবুক পেজটিতে একই তারিখে একই ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মেয়ের কি হইছে জানতে চায় অসহায় বাবা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

Short Film BD ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অভিনয় করা একাধিক ব্যক্তিকে অন্যান্য ভিডিওতেও (, ) দেখা গেছে।

এ ছাড়া এই পেজের ইন্ট্রোতে লেখা, ‘শর্টফিল্ম ও নাটক দেখুন এবং উপভোগ করুন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

সুতরাং, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে একটি নাটক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত