Ajker Patrika

ব্যারিস্টার সুমন যখন ইউটিউবারদের ভিউ বাণিজ্যের ‘পুঁজি’

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৪, ১০: ৪২
ব্যারিস্টার সুমন যখন ইউটিউবারদের ভিউ বাণিজ্যের ‘পুঁজি’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ–৪ (মাধবপুর–চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে তিনি হারান সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে।

অবশ্য সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনের আগে থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। তাঁর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ইউটিউবে চলছে ভিউ ব্যবসা। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে ইউটিউবে ক্লিকবেইট থাম্বনেইল, এডিটেড ভিডিও, পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করে ভিউ ব্যবসা করছে—এমন অন্তত তিনটি চ্যানেল খুঁজে পেয়েছে।

চ্যানেল তিনটি হলো—তাজ টিভি, এআর রাকিব ব্রো ও নিউজ ৭৫। চ্যানেল তিনটির আজ বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা যথাক্রমে ১২ লাখ ৩০ হাজার, ১ লাখ ৭০ হাজার ও ৫৯ হাজার। এর মধ্যে প্রথম দুটি চ্যানেল ভেরিফায়েড। চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত এসব ভিডিওর মধ্যে লক্ষাধিক ভিউ হওয়া কিছু ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

কী আছে এসব ভিডিওতে?
‘তাজ টিভি’ ইউটিউব চ্যানেলটিতে ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ‘ব্যারিস্টার সুমন এর উপর কি ধরনের জুলুম চলছে || সব কিছু প্রকাশ করলোন সুমন’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ১০ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি শুরু হয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ডিবিসি নিউজের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের ইন্ট্রো দিয়ে। যেখানে ডিবিসি নিউজের উপস্থাপিকা বলেন, ‘মারামারিতে জড়িয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলীয় কয়েকজন এমপি।’ এরপরেই উত্তেজিত জনতার একটি ফুটেজ দেখানো হয়। যেখানে উত্তেজিত জনতা একটি গাড়ি ধাওয়া করছে।

এই সময় নেপথ্য কণ্ঠে একজন বলেন, ‘সংসদ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ব্যারিস্টার সুমনের গাড়ি আটকে দিয়ে হামলা করা হয়েছে।’ এরপরই বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির ফুটেজে ব্যারিস্টার সুমনকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়। পরে ইউটিউব ভিডিওটির উপস্থাপক দাবি করেন, ‘যত দিন যাচ্ছে ব্যারিস্টার সুমনের ওপর হামলা, আক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। বিরোধী দল নয়, তাঁর নিজের দলের লোকেরাই সুমনের বিরুদ্ধে লেগেছে। তিনি নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন এবং সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন।’

ভিডিওটি আজ বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যন্ত ২ লাখ ৭২ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপিত এসব দাবি ও ফুটেজের সত্যতা কী? অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাজ টিভির ভাইরাল এ ভিডিও তিনটি ভিন্ন ঘটনার অংশ বিশেষ যুক্ত করে তৈরি। 

এর মধ্যে ডিবিসি নিউজের সংবাদ প্রতিবেদনের ইন্ট্রোটি গত ২৯ জানুয়ারির মালদ্বীপে মন্ত্রিসভার পরিধি বাড়ানোর ইস্যুতে সংসদে মারামারি নিয়ে। উত্তেজিত জনতার গাড়ি ভাঙচুরের ভিডিওটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কৌস্তভ বাগচীর গাড়ি ভাঙচুরের। সবশেষ এনটিভির ফুটেজটি ২০২৩ সালের ২১ জুলাই দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের। 

অর্থাৎ, তিনটি ভিন্ন সময় ও ঘটনার ফুটেজ যুক্ত করে ভাইরাল ভিডিওটি তৈরি করেছে তাজ টিভি। শুধু এ ভিডিওটিই নয়, চ্যানেলটিতে প্রচারিত একাধিক ভিডিও বিশ্লেষণ করে একই প্রক্রিয়া দেখা গেছে।

 যেমন, গত ২ জুন চ্যানেলটিতে ‘ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছে ব্যারিস্টার সুমন’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ৮ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৬ লাখের বেশি দেখা হয়েছে। ভিডিওটি শুরু হয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম যমুনা টিভি ও একাত্তর টিভির একাধিক ফুটেজ দিয়ে।

এসব ফুটেজে সম্প্রচার মাধ্যম দুটির সংবাদ উপস্থাপকদের বলতে শোনা যায় যে, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সায়েদুল হক সুমনকে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়। এরপরই তাজ টিভির ভিডিওটির উপস্থাপক বলতে শুরু করেন, ‘ব্যারিস্টার সুমন সংসদে দুর্নীতিবাজদের নিয়ে কথা বলায় তাঁর বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে। এসব কারণে ব্যারিস্টার সুমন সংসদে ৫ বছর টিকতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে!’

ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছেন দাবিতে ইউটিউব ভিডিও। ছবি: তাজ টিভি থেকে স্ক্রিনশটভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলার যেসব প্রতিবেদন ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো ২০১৯ সালের ঘটনার। ওই বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কটূক্তি করার অভিযোগে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস–শামস জগলুল হোসেনের আদালতে মামলাটির আবেদন করা হয়।

এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়াও দেন ব্যারিস্টার সুমন। সে সময়কার বিভিন্ন প্রতিবেদনের ফুটেজের সঙ্গে সংসদে ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্য দেওয়ার ভিডিও যুক্ত করে ভাইরাল ভিডিওটি তৈরি করে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তিনি গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছেন।

সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে ইউটিউবে একইভাবে কনটেন্ট তৈরি করা আরেকটি চ্যানেল ‘এআর রাকিব ব্রো (AR Rakib Bro)’। চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ১ লাখ ৭০ হাজার। গত ৬ জুন চ্যানেলটিতে ‘ফাটাকেষ্ট ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক | মুখোমুখি হলে শেখ হাসিনার।’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৪ লাখ ৯১ হাজার বার দেখা হয়েছে।

ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওগুলো মানুষ বিশ্বাসও করছে। ছবি: তাজ টিভির একটি কনটেন্ট থেকে স্ক্রিনশটভিডিওটিতে উপস্থাপক দাবি করেছেন, ব্যারিস্টার সুমনের এমপি পদ নিয়ে তাঁকে ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যারিস্টার সুমনের একটি গোপন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকটি ডাকা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যারিস্টার সুমনের নামে বিচার দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। 

যদিও অনুসন্ধানে দেখা যায়, কথিত বৈঠকের এ ভিডিও তৈরিতেও ভিন্ন ভিন্ন সময়ের একাধিক টিভির ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যারিস্টার সুমনের ফুটেজটি নেওয়া হয়েছে ২০১৯ সালে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম মাছরাঙা টিভির মর্নিং শো ‘মাছরাঙা রাঙা সকাল’ অনুষ্ঠানের ভিডিও থেকে এবং প্রধানমন্ত্রীর ফুটেজটি নেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকসিলারেটিং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানের ভিডিও থেকে। 

বর্তমানে দেশে আলোচিত ইস্যু সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ। বেনজির আহমেদের সঙ্গে ব্যারিস্টার সুমনকে জড়িয়ে গত ২ জুন ‘ব্যারিস্টার সুমন সব গোপন তথ্য ফাঁস করল | বেনজিরকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করে নিউজ ৭৫। প্রায় সাড়ে ২৯ মিনিটের ভিডিওটি আজ বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ বার দেখা হয়েছে।

ভিডিওটিতে ব্যবহার করা ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যটি যাচাই করে দেখা যায়, তাঁর বক্তব্যের ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেন আবদুস সোবহান গোলাপ। তাঁর ওই বক্তব্যে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের কোনো প্রসঙ্গ নেই।

মিথ্যাকে পুঁজি করে ব্যবসা
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারকারী চ্যানেল তিনটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনটি চ্যানেলই মনিটাইজড। অর্থাৎ চ্যানেল তিনটির ভিডিওটিতে গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী ও ব্যারিস্টার সুমনের মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছে দাবিতে ইউটিউব ভিডিও। ছবি: এআর রাকিব ব্রোর একটি কনটেন্ট থেকে স্ক্রিনশটভিডিওগুলোর ব্যাপকতা 
আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ইউটিউব চ্যানেলগুলোর এসব ভিডিও, ক্লিকবেইট থাম্বনেইলগুলো কেবল ইউটিউবেই সীমাবদ্ধ নেই।

ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও। যেমন, টিকটকে ‘এমডি শরিফুল ৮৭’ নামের একটি অ্যাকাউন্টে গত ৬ দিন আগে ‘গ্রেপ্তার ব্যারিস্টার সুমন, প্রধানমন্ত্রীর কঠিন নির্দেশ’ এমন একটি ইউটিউব থাম্বনেইল ভিডিও আকারে পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে লেখা হয়, ‘এনাকে কে কে জেল থেকে মুক্তি পেতে দেখতে চান? ভালো মানুষ বাংলাদেশে থাকাটা হবে না।’ ভিডিওটি আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ লাখ বার দেখা হয়েছে। টিকটকে ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে প্রায় হাজার বার। 

মনিটাইজড চ্যানেল থেকে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনের নামে তৈরি হচ্ছে একের পর এক ভিডিও। ছবি: ওয়াইটিলার্জ ইউটিউব মনিটাইজেশন চেকার আবার দুই দিন আগে তাজ টিভির দুটি ইউটিউব থাম্বনেইল কোলাজের মাধ্যমে ‘ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছে ব্যারিস্টার সুমন’ এবং ‘এইমাত্র সংসদে সুমনকে গণধোলাই, প্রধানমন্ত্রীর সামনেই একি ঘটল’ শিরোনামে টিকটকে ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার বার দেখা হয়েছে। ফেসবুকেও এসব ভিডিও ছড়াতে দেখেছে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান বুম বাংলাদেশ। 

কী বলছেন ব্যারিস্টার সুমন
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের নামে প্রচারিত এসব ভিডিও সম্পর্কে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি সতর্কবার্তা পাওয়া যায়। গত ২৮ এপ্রিল একটি ভিডিও বার্তায় ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘ইউটিউবে আমার নামে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে এডিট করা ভিডিও থেকে সাবধান থাকবেন। আমার বিভিন্ন ভিডিও, বিভিন্ন কথা এডিট করে, কেটে অমুক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বললেন ব্যারিস্টার সুমন, অমুক মন্ত্রীকে ধোলাই দিলেন ব্যারিস্টার সুমন— এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আপনারা এগুলো যাচাই–বাছাই করবেন। এগুলোর অনেকগুলাই ভুয়া। একবারেই সত্য না। আমার নাম বললে ভিউজ হয় বেশি। ভিউজ বাড়ানোর জন্য কাটছাঁট করতেছে।’

ভিডিও বার্তাটিতে তিনি এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

বাসস  
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০৩
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।

আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’

জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’

একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’

এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০০
নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।

গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত